নেতৃত্বের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়

অজ্ঞ, অক্ষম, যালেম, খেয়ানতকারী, অযোগ্য নেতার নেতৃত্বের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। নেতৃত্ব গ্রহণের পূর্বে আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথ ভয় করা উচিৎ। নেতা হয়ে যা ইচ্ছে তাই করার চেয়ে বা যথাযথ দায়িত্ব পালণে অক্ষম হলে এর চেয়ে মৃত্যু কাম্য। কেননা দায়িত্ব যেমন শ্রেষ্ঠ্যত্ব প্রকাশ করে, তেমনি দায়িত্ব সম্পর্কে ছোট বড় সকল হিসেব আল্লাহ বিচার দিবসে গ্রহণ করবেন। নিজের দায়িত্ব নেয়া সহজ, কিন্তু অন্যের দায়িত্ব নেয়া বেশ কঠিন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হাতে নেতৃত্বের ক্ষমতা দিয়ে চেয়ে থাকেন বান্দা কী আমলটা করে। অতএব সাবধান! নেতৃত্ব পেয়ে দায়িত্ব যথাসাধ্য পালনে ব্যর্থ হলে আপনি নিজের প্রতি ও অন্যের প্রতি যুলুম করবেন। আর কিয়ামতের মাঠে যালেম নেতা হয়ে উঠবেন। নেতৃত্ব বিশাল একটি আমানত। এই আমানত সবায় গ্রহণের যোগ্যতা রাখে না। মনে রাখবেন, মানুষ দুনিয়াতে এসেছে খলীফা হিসেবে। আর আমানত হিসেবে পেয়েছে দ্বীন ইসলাম।
সদা মনে রাখবেন, প্রত্যেক নেতার দুজন গোপন পরামর্শদাতা নিযুক্ত থাকে- (১) ফেরেশতা ও (২) শয়তান। এজন্য নেতাদের উচিৎ আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন,  مَا بَعَثَ اللَّهُ مِنْ نَبِيٍّ وَلَا اسْتَخْلَفَ مِنْ خَلِيفَةٍ إِلَّا كَانَتْ لَهُ بِطَانَتَانِ: بِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ وَبِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالشَّرِّ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ وَالْمَعْصُومُ مَنْ عصمَه اللَّهُ . ‘আল্লাহ তা’আলা যাঁকে নবী অথবা খলীফাহ্ নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন, তখন তাঁর জন্য দু’জন অদৃশ্য পরামর্শদাতা থাকে। এক পরামর্শদাতা তাকে সর্বদা সৎ ও ন্যায়সঙ্গত কাজ করার উৎসাহ-অনুপ্রাণিত করে। আর অপর পরামর্শদাতা তাকে অন্যায় ও অসৎকাজের প্রতি উৎসাহ-উদ্দীপনা দেয়। আর নিষ্পাপ থাকবে সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা’আলা রক্ষা করবেন। (ছহীহুল জামি‘ হা/৫৫৭৯)

 ‘‘দুই গোপন পরামর্শদাতা’’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মালাক (ফেরেশতা) এবং শায়ত্বন। এরা উভয়ে মানুষের মাঝে থাকে। মালাক ভালো কাজের আদেশ দেয়। আর পক্ষান্তরে শায়ত্বন মন্দ কাজ করার পরামর্শ দেয় এবং নিকৃষ্ট কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

কিরমানী (রহঃ) বলেছেনঃ (بِطَانَتَانِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, নাফসে আম্মারাহ্, নাফ্সে লাওয়ামাহ্ যা উৎসাহিত করে ভালো কাজের উপরে। যখন উভয়ের মাঝে পাওয়া যাবে ফেরেশতার শক্তি এবং পশুর শক্তি। ত্ববারী (রহঃ) বলেছেনঃ পরামর্শদাতা হলো অভিভাবক এবং একনিষ্ঠ বন্ধু। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭১৯৮)

ছাহাবাগণ নেতৃত্বকে ভয় পেতেন :
‘আমের বিন সা‘দ (রহঃ) বলেন, আমার পিতা সা‘দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর একটি ছাগলের পাল ছিল। একবার তার ছেলে ওমর তার নিকট আসলেন। তিনি দূর থেকে ছেলে দেখেই বললেন, আমি আল্লাহর নিকট এ অশ্বারোহীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর ছেলে পিতার কাছে এসে বলল, হে পিতা! আপনি এভাবে গ্রাম্য লোকদের মতো ছাগলের পাল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন! অথচ মদীনায় মানুষ নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়া করছে! একথা শুনে তিনি ছেলের বুকে আঘাত করে বলেন, চুপ! আমি রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, إن اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ العَبْدَ التَّقِيَّ، الغَّنِيَّ، الخَفِيَّ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী (ধনী) ও আত্মগোপনকারী (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৭১-৭২; মুসলিম হা/২৯৬৫)।

আব্দুর রহমান বিন আযহার (রহঃ) বলেন, একবার হযরত ওছমান (রাঃ)-এর নাক দিয়ে অনর্গল রক্ত বের হ’তে থাকে। তিনি স্বীয় গোলাম হুমরানকে ডেকে বললেন, লিখে নাও, আমার পর খলীফা হিসাবে আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফের নাম লিখে নাও। হুমরান তৎক্ষণাৎ তা লিখে নেন। অতঃপর পত্রটি নিয়ে হুমরান আব্দুর রহমান বিন আওফের কাছে গিয়ে বললেন, আপনার জন্য সুসংবাদ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কীসের সুসংবাদ? সে বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন ওছমান (রাঃ) তাঁর মৃত্যুর পর আপনাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছেন।
একথা শোনামাত্র আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ রাসূল (রাঃ)-এর কবর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়িয়ে যান এবং দু-হাত তুলে দো‘আ করেন বলেন- اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مِنْ تَوْلِيَةِ عُثْمَانَ إِيَّايَ هَذَا الأَمْرَ فَأَمِتْنِي قَبْلَهُ ‘হে আল্লাহ, যদি ওছমান তার পরে আমাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে আপনি তাঁর পূর্বেই আমাকে উঠিয়ে নিন। এরপর মাত্র ছয় মাস তিনি জীবিত ছিলেন! (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৬৩-৬৪)।

আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) নেতৃত্বের চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top