পায়ে হেঁটে হজ্জে যাওয়ার বিধান

কোন ব্যক্তি শুধু পায়ে হেঁটে হজ্জব্রত পালনে যেতে ইচ্ছা পোষণ করলে সে ভুল সিন্ধান্ত নিবে। কেননা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাহনে ও পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ  ‘‘আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্ব প্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে‘’ (হজ্জ ২২/২৭)।

শুধু পায়ে হেঁটে হজ্জে যাওয়ার মানত করে নিজেকে কষ্ট দেওয়া সমীচীন নহে। কেননা এধরনের কষ্টকর পথ গমন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন পড়ে না। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের উপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেনঃ তার কী হয়েছে? তারা বললেন, তিনি পায়ে হেঁটে হাজ্জ করার মানত করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ إِنَّ اللهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ ’’লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা‘আলার এর কোন দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন’’ (বুখারী হা/১৮৬৫ ও মুসলিম হা/১৬৪২)

যদি কোন ব্যক্তি পায়ে হেঁটে হজ্জে যাওয়ার মানত করে, তাহলে তার উচিৎ হবে সামনে নদী পথ বা কঠিন কষ্টদায়ক পথ পড়ে তবে সেখানে যান-বাহন ব্যবহার করা। উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) বলেন, আমার বোন পায়ে হেঁটে হাজ্জ করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে ফাতাওয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ لِتَمْشِ وَلْتَرْكَبْ ’’পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ারও হোক’’ (বুখারী হা/১৮৬৬ ও মুসলিম হা/১৬৪৪)

নিয়াতের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ বলেন— رب عمل صغير تعظمه النية، ورب عمل كبير تصغره النية. ‘নিয়াত অনেক ক্ষুদ্র আমলকে মহৎ আমলে রূপান্তরিত করে। পক্ষান্তরে, নিয়াত অনেক বৃহৎ আমলকেও ক্ষুদ্র আমলে পরিণত করে দেয়’

নিয়াতের উপর আমলের পূর্ণতা ও পরিশুদ্ধতা নির্ভরশীল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ ، وَمَنْ يُرَائِى يُرَائِى اللَّهُ بِهِ . ‘যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের ইচ্ছায় নেক আমাল করে আল্লাহ তা’আলাও তার কৃতকর্মের অভিপ্রায়ের কথা লোকেদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতা (লোক দেখানোর নিয়াত) উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকেদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন (বুখারী হা/৬৪৯৯; মুসলিম হা/২৯৮৬; মিশকাত হা/৫৩১৬; আহমাদ হা/২০৪৭০)
ইবনু রজব হাম্বালী (৭৩৬-৭৯৫হি.) (রহিঃ) বলেন, وَرَائِحَةُ الْرِيَاءِ كَدُخَانِ الْحِطَبِ، يَعِلُوْ إِلَى الْجَو ثُمَّ يَضْمِحَل وَتَبْقِى رَائحته الكَرِيْهَة ‘রিয়া বা লৌকিকতা (লোক দেখানোর) ঘ্রাণ (উপমা) হ’ল কয়লার ধুঁয়োর ন্যায়। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু তার দূর্গন্ধ কেবল অবশিষ্ট থাকে’ (মাজমূঊর রাসায়িল, পৃষ্ঠা-৭৫৮)

পরিশেষে, এ ধরনের কষ্টকর মানতের ঘোষণা নিজেকে যেমন কষ্ট দেয়, তেমনি হজ্জের মতন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে রিয়াও প্রদর্শিত হয়। আর রিয়া মানুষের ইবাদত নষ্ট করে ফেলে, এ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জরুরী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top