প্রগতির নামে আধুনিকতা না-কি অশ্লীলতা

লিলবর আল-বারাদী
ইসলাম হলো মহান আল্লাহ মনোনীত ধর্ম এবং সার্বিক সুস্থ্যতা ও সমাধানের একমাত্র নির্ভুল ও স্বচ্ছ  পথপ্রর্দশক। সুস্থ্য উপায়ে বাঁচার গ্যারান্টিসহ সমস্ত জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আছে একমাত্র ইসলামের কল্যাণকর জীবন বিধানে। কারণ ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাত মানব জাতির কল্যাণার্থে প্রেরিত হয়েছে। আর এই জীবন বিধানে যত প্রকার আদেশ নির্দেশ প্রদান করেছে তা যেমন মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবে প্রমাণ করেছে যে চিরস্থায়ী সাফল্যের যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, তেমন অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ অনুরূপ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের এই পরিপূর্ণ সাফল্যের কারণেই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে মানব জীবনের পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে পরিগণিত করা হয়।

ইসলাম মানেই শান্তি। অর্থাৎ এর আইন কানূন, আদেশ, নিষেধ, অনূসরণ ও অনুকরণ মানব জীবনের ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় সর্বক্ষেত্রে সমাধান পূর্বক শান্তি এবং শৃংখলা বয়ে আনে যা আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-তর্ক, বিচার বিশ্লেষণসহ একটি পরীক্ষিত সত্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী আজ আবারও আইয়্যামে জাহিলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে মানব সমাজ বিশৃংখলতায় নিপতিত হয়ে অনিবার্য ধ্বংসের সম্মুখীন
যারা পথভ্রষ্ট ও ইসলাম ধর্ম থেকে বহির্ভূত প্রগতির নামে প্রহসনের কর্ণধার তাদের চিন্তা ধারায় প্রতিপালিত, সর্বদা ‘আধুনিক সভ্যতা থেকে মুসলিমরা পিছ পা ও সেকেলের’ এ রকম ইঙ্গিত করছে। আর এমনটাই ইসলামের প্রতি তাদের ধারণা। তারা এ সমস্ত নিকৃষ্ট কথা ও কাজ দ্বারা ইসলামের রূপকে বিকৃত করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মস্তিষ্ক ধোলাই করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তেমনি অশ্লীলতা মানুষ মস্তিষ্ককে বিকৃত করে উন্মাদ বানিয়ে নিলর্জ্জ করে চলেছে।
মানব প্রকৃতির মধ্যে লজ্জা প্রবণতা জন্মগত এক অতিব স্বাভাবিক প্রবণতা। আর এই লজ্জাশীলতা মানুষকে তার তাক্বওয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা ও শালীনতা প্রবৃদ্ধি করে। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা মানুষকে আল্লাহভীতি থেকে বিরত রাখে ও অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করে। যার ফলে মানুষ পশুর পর্যায়ে চলে যায়। শালীনতা  ও অশালীনতার মধ্যে পার্থক্য ভুলে যায়। বিবেক নামের স্বচ্ছ যন্ত্রটি অকেজো হয়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। এছাড়াও মানব শরীরের যে সকল অংশ নারী পুরুষের জন্য যৌন আকর্ষন আছে, তা প্রকাশ্যে লজ্জা বোধের সাথে আচ্ছাদিত রাখার প্রচেষ্টা করা মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বভাব। যদি কেউ তা না করে নির্লজ্জ বেহায়ার মত নিজের কুরুচি প্রকাশ করে, যা ইসলামী শরিয়তে গর্হিত কাজ তাই অশ্লীলতা। অবশ্য শয়তানের ইচ্ছা, যেন মানুষ লজ্জাকে পিছনে ফেলে নিজের নির্লজ্জতা প্রকাশ করে। শয়তান মানুষকে এব্যাপারে প্ররোচিত করে এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন,فَ“سْ“سَ لَهُمَا الش­يْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا ““رِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَ“آَتِهِمَا  ‘অতঃপর শয়তান আদম ও তার স্ত্রীকে প্ররোচিত করলো, যেন তাদের যে অংশ আচ্ছাদিত ছিল তা তারা উন্মুক্ত করে’ (সূরা আরাফ, ৭/২০)।
বর্তমান বিশ্বে নারীদেরকে পণ্য হিসাবে পরিগণিত করেছে। তথাকথিত সুশিক্ষিত সুসভ্য জাতি ও প্রগতির ধ্বজাধারীরা ইসলামে অশ্লীলতা বিস্ফোরনে মূল উপাদান নারীদেরকে দেয়া মান সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে তাদেরকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে নানা ধরনের নারী ঘটিত অপরাধ প্রবণতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘিœত হচ্ছে নারী জাতির নিরাপত্তা। প্রকোটভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা।
নারীদেরকে সিনেমা, টেলিভিশন, থিয়েটার, বিজ্ঞাপন, পত্র-পত্রিকায় নগ্ন, অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। নায়ক নায়িকাদের যৌন আবেদন মূলক অশ্লীল, অশোভন অভিনয়, নাচ-গান, বেহায়াপনা, স্পর্শকাতর গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গসহ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দেহ প্রদর্শন করার ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কুৎসিত চিন্তা চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে কামোদ্দীপনা সৃষ্টি করে যুবসামজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নারী জাতির এ বেহাল অবস্থা দর্শন করে সর্বস্তরের জনসাধারণ হারিয়ে ফেলেছে নারীদেরকে মা বোনদের মত সম্মান করার মন মানসিকতা, তারা হারাতে বাধ্য হয়েছে তাদের হৃদয়ের পবিত্রতা। মানুষ কত নীচে নামতে পারে এবং তাদের নগ্নতা ও অশ্লীলতা কিভাবে দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করা যায় তার প্রতিযোগীতা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রীতা টেম্পিলটন নামে জৈনক মহিলা চার সন্তানের জননী পেশায় একজন লেখিকা। সে তার সন্তানদের নারী শরীর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দিতে নগ্ন হবেন তাদের সম্মূখে। নারী শরীরকে পণ্য করে তোলার প্রতিবাদে রীতার এই অভিনব ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বহু প্রগতিশীল মানুষ।
হায়রে সমাজ ব্যবস্থা ভাবতে আবাক লাগে, যারা নারী জাতির বারোটা বাঁজিয়ে ছেড়েছে তারাই আবার নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্য সভা-সমিতি করে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলছে নানা রকম ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে। নারীর আর কি মুক্তি চায় তারা? তারা তো তাদের দেশের নারীদেরকে মুক্ত ভাবে ছেড়ে দিয়ে সর্বনাশের শেষ সীমায় নামিয়ে দিয়েছে।
পাশ্চাত্য সমাজে সাম্যের দিক বিবেচনা করে যে, নারী ও পুরুষ নৈতিক মর্যাদা এবং মানবীয় অধিকারের দিক দিয়ে শুধু সমান নয়, বরং পুরুষ যে কাজ করে নারীও তাই করবে। সাম্যের ভ্রান্ত ধারণার জন্য অফিস, আদালত কল কারখানার চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে তাদের দাম্পত্য জীবনের গুরুদায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন ও গৃহের সু-ব্যবস্থা প্রভৃতি যাবতীয় করণীয় বিষয়গুলো নারীর কর্মসূচী হতে বাদ পড়ছে। তাদের প্রকৃতিগত কাজকর্মের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে। সংসার জীবনের সুখ শান্তি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেনই বা হবে না? যে নারী নিজে উপার্জন করে যাবতীয় প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম, সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, সে শুধু যৌন সম্ভোগের জন্য পুরুষের অধীন থাকবে কেন? এর ফলে পারিবারিক শান্তি না থাকায় তাদের জীবন তিক্ত হতে তিক্ততর হচ্ছে এবং একটি চিরন্তন দুর্ভাবনা তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিতে পারছে না। এটাই ইহলৌকিক জাহান্নাম যা লোকেরা তাদের নির্বূদ্ধিতা ও লোভ লালসার উন্মাদনায় ক্রয় করে নেয়।
জার্মান স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইধনবষ স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন “পুরুষ ও নারী তো পশুর মতই। পশু দম্পত্তির মধ্যে কি কখনো স্থায়ী বিবাহের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?”
সামাজিক নির্দেশের মধ্যে ইসলামের প্রথম কাজ নগ্নতার মূলোচ্ছেদ করা এবং নারী পুরুষের জন্য সতরের সীমারেখা নির্ধারণ করা। এ ব্যাপারে আরব জাহিলিয়াতের যে অবস্থা ছিল বর্তমান জাতিগুলোর অবস্থা প্রায় অনুরূপ। তারা একে অপরের সম্মুখে বিনা দ্বিধায় উলংগ হত, গোসল ও মল ত্যাগের সময় পর্দা করা তারা নি¯প্রয়োজন মনে করত। সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে কা’বা ঘরের তাওয়াফ করত এবং একে তারা উৎকৃষ্ট ইবাদত মনে করত। নারীরাও তাওয়াফের সময় উলঙ্গ হয়ে যেত। তাদের স্ত্রীলোকদের পোশাক এমন হত যে, বুকের কিছু অংশ, বাহু, কোমর এবং হাটুর নীচের কিছু অংশ অনাবৃত থাকত। এ অবস্থা ইউরোপ আমেরিকা এবং জাপানে দেখা যায়। শরীরের কোন অংশ অনাবৃত ও কোন অংশ আবৃত থাকবে তা নির্ধারণকারী সমাজ ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশ সমূহে নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَا بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُ“ارِي    سَ“آَتِكُمْ “رِيشًا  ‘হে মানব সন্তান! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শরীর আবৃত করার জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছেন এবং ইহা তোমাদের শোভাবর্ধক’ ( সূরা আরাফ-৭/২৬)। নারী পর্দা করে সারাক্ষণ ঘরে বসে থাবকে তেমনটি নয়। বরং শালিনতা বজায় রেখে নারীরা বাড়ীর বাহিরে কিভাবে চরাফেরা করবে সেই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَي­هَا الن­بِي­ قُلْ لِأَزْ“اجِكَ “بَنَاتِكَ “نِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِن­ مِنْ جَلَابِيبِهِن­ تلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْتيْنَ  ‘হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম নারীগণকে বলে দিন, তারা যেন আপন চাদর দ্বারা নিজের ঘোমটা টেনে দেয়। এ ব্যবস্থার দ্বারা আশা করা যায় যে, তাদেরকে চিনতে পারা যাবে, অতঃপর তাদেরকে বিরক্ত করা হবে না’ (সূরা আহযাব-৩৩/৫৯)।
আল্লাহ তা‘আলা শরীয়তের সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যাতে মানুষের কার্যাবলী একটা নিয়ম শৃঙখলার অধীন হয়। আর এর মাধ্যমে সামাজের শালীনতা বজায় থাকে।
পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা তথা ইসলামী জীবন বিধান ও চিন্তা চেতনা থেকে মানুষ বহু দূরে সরে যাওয়ার কারণেই মানব সভ্যতার আজ এ অধঃপতন। তাই আজ তারা (মানবতা) লাঞ্ছিত, অপমানিত, পদদলিত হচ্ছে পদে পদে। বৈজ্ঞানিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পাশ্চাত্য তথা উন্নত বিশ্বকে ঐশ্বর্য দান করেছে, প্রচুর বিত্তশালী করেছে, কিন্তু ঐ সমস্ত ঐশ্বর্য সুখ সামগ্রী তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক শান্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আজ বড়ই প্রয়োজন কুরআনকে গভীর ভাবে উপলদ্ধি করা ও রাসূলুল্লাল্লহ (ছা:)এর বাণীকে বুদ্ধি ও বিজ্ঞানের নিরপেক্ষ উজ্জ্বল আলোকে বিশ্লেষণ করে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। মানব জাতির জন্য অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,“لَا تَقْرَبُ“ا الز­نَا إِن­هُ كَانَ فَا—شَةً “سَاءَ سَبِيلًا  ‘তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ’ (সূরা আল-ইসরা-১৭/৩২)। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোনভাবেই এই অশ্লীলতার নিকটে গমন করা যাবে না, এসম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “لَا تَقْرَبُ“ا الْفَ“ا—شَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا “مَا بَطَنَ ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটবর্তী হবে না, তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা অপ্রকাশ্যে হোক’ (সুরা আনআম-৬/১৫১)।
যেনা মানব সমাজে বল্গাহীনভাবে প্রসার লাভ করে চলেছে। ইংল্যান্ডে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৮৬ জন নারী বিয়ে ছাড়াই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। অবৈধ সন্তান জন্মের সময় এদের শতকরা  ৪০ জন নারীর বয়স ১৮-১৯ বছর, ৩০ জন নারীর বয়স ২০ বছর এবং ২০ জন নারীর বয়স ২১ বছর।
Sehwarz Oswald, The
Psycology of Sex (London : 1951), P. 50.
সেখানে প্রতি তিন জন নারীর একজন বিয়ের পূর্বে সতীত্ব সম্পদ হারিয়ে বসে। ডাঃ চেসার তার রচিত ‘সতীত্ব কি অতীতের স্মৃতি?’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায় বর্ণনা করেছেন’।
Cheser Is Chastity
Outmoded, (Londen : 1960), P. 75.
Indian
Council for Medical Research
-এর ডিরেক্টর জেনারেল অবতার সিংহ পেইন্টাল বলেন,
We used to think our women were chaste, But people would be horrified at the level
of promise culty here.
  অর্থাৎ আমাদের নারীদেরকে আমরা সতী বলে মনে করতাম। কিন্তু অবৈধ যৌনকর্ম এখানে এতবেশী বৃদ্ধি পেয়েছে যে, লোকে এতে ভীত না হয়ে পারে না। নারী ৯৭ পৃঃ; হাফেয মাসঊদ আহমদ; আত-তাহরীক (বিশ্বে বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারী : একটি সমীক্ষা-) (৬ষ্ঠ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা জানুয়ারী ২০০৩), পৃঃ ৪। আমেরিকার বিদ্যালয় সমূহে অশ্লীল সাহিত্যের চাহিদা সর্বাপেক্ষা বেশী। যুবক-যুবতীরা এসব অধ্যয়ন করে অশালীন কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়া হাইস্কুলের শতকরা ৪৫ জন ছাত্রী স্কুল ত্যাগ করার পূর্বে চরিত্রভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। আর এদের যৌন তৃষ্ণা অনেক বেশী। এ
George Lindsey, Revolt of
Modern Youth P-82-83.
বৃটেনেও শতকরা ৮৬ জন যুবতী বিয়ের সময় কুমারী থাকে না। দৈনিক ইনকিলাব, ৬ই জুন ১৯৯৮ ইং।  প্রাশ্চাত্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তাদের শিক্ষা ব্যয়ের প্রায় অধিকাংশ খন্ডকালীন যৌনকর্মী হিসাবে অর্জন করে থাকে। মঙ্গোলয়েড দেশসমূহে যৌন সম্পর্কীয় বিধি-বিধান অত্যন্ত শিথিল। থাইল্যান্ডের ছাত্রীদের বিপুল যৌনতা লক্ষ্য করা যায়। মাসিক পৃথিবী (প্রশ্চাত্যে যৌন বিকৃতি, জুলাই ২০০১ইং, পৃঃ ৫২-৫৩। চীনের ক্যান্টন শহরে কুমারীদের প্রেম বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার জন্য বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। জহুরী, খবরের খবর, ১ খন্ড, ১১৬ পৃঃ। পশ্চিমা সভ্যতার পূজারীরা সর্বজনীন অবৈধ যৌন সম্পর্কে মহামারীর পথ প্রশস্ত করেছে। মরিয়ম জামিলা, ইসলাম ও আধুনিকতা, ৯৯ পৃঃ। চীনে যৌন স্বাধীনতার দাবী সম্বলিত পোষ্টারে যার সাথে খুশী যৌন মিলনে কুণ্ঠিত না হবার আহবান জানানো হয়। খবরের খবর, ১ খন্ড, ১১৬ পৃঃ। ইউরোপে যৌন স্বাধীনতার দাবীতে পুরুষের মত নারীরাও নৈতিকতা হারিয়ে উচ্ছৃংখল ও অনাচারী এবং সুযোগ পেলেই হন্যে হয়ে তৃপ্ত করত যৌনক্ষুধা। অশুভ এই প্রবণতার ফলে বৈবাহিক জীবন ও পরিবারের প্রতি চরম অনিহা সৃষ্টি হয়। সায়্যেদ কুতুব, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম, ৯৮ পৃঃ। অর্থ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে আমেরিকার ৭৫ লাখ নারী পুরুষ বিবাহ ব্যতীত ‘লিভ টুগেদার’-এ। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৬ এপ্রিল ২০১১, পৃঃ ৫। পুরান ঢাকায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী খুন হওয়ার পর জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাসা ভাড়া নিয়ে লিভটুগেদার করতেন। নিহত ছাত্রীর মা-বাবা জানতেন তিনি কলেজের হোস্টেলে থাকেন।
প্রাশ্চাত্যে ক্রমবর্ধমান অবৈধ যৌন স্বাধীনতাই সবচাইতে ক্ষতি সাধন করেছে। নারীর দেহকে বাণিজ্যিক রূপ দেয়ার কোন প্রচেষ্টাই বাকী রাখা হয়নি। অবিবাহিত মহিলাদের গর্ভধারণের সংখ্যা বৃদ্ধি, অবৈধ সন্তান জন্ম, গর্ভপাত, তালাক, যৌন অপরাধ ও যৌন ব্যাধিই এর প্রমাণ। অপর দিকে অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফলে কোন আইন-বিচার ও আইনী শাস্তির বিধান নেই। বরং এটাকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে বিবেচনা করা হয়। ইসলাম ও আধুনিকত, পৃঃ ২৩। সম্প্রতি ভারতেও অবৈধ যৌন সম্প্রীতি ও হিন্দু-মুসলমান যুবক-যুবতীর নির্বিঘে বিবাহ বন্ধন আবদ্ধ হওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে।
এরকম বেহায়া লজ্জাষ্কর পরিবেশ বিধ্বংষীতা অনৈতিক ও অনাচার সম্পর্কে অভিভাবকরা কয়েক বছর আগে চিন্তা করতে পারতেন না। বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি যেভাবে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজ। প্রযুক্তির প্রসার ও সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে তরুণ সমাজে খুব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ও দোস্ত কালচার, এমনকি তা গড়িয়ে যাচ্ছে পরোকিয়ায়। পর্নোগ্রাফির বিস্তার ও সংস্পর্শে আসার কারণে লজ্জা এবং নৈতিকতার বাঁধন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ছে লজ্জাহীনতা, খোলামেলা ও অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। একসময় মা-বাবার উদ্বেগ ছিল ছেলেমেয়েদের মোবাইলে কথা বলা এবং এসএমএস বিনিময়ে সময় ব্যয় করা নিয়ে। কিন্তু এখন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্কাইপ, ট্যাংগো, উইচ্যাট, হটসআপ ইত্যাদি ওয়েবক্যামের কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরী এবং কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি অবারিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, দোস্ত কালচারের বিস্তৃতি, পর্নো আগ্রাসন, অবাধ মেলামেশার ফলে তরুণ সমাজ জড়িয়ে পড়ছে প্রেম-ধর্ষণ-পরকীয়ার মতো অনেক ঘটনায়। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন ত্রিমুখী, চতুর্মুখী সম্পর্কে। এ নিয়ে বন্ধু-বান্ধবের মধ্যেও অনেক সময় ঘটছে সঙ্ঘাত হানাহানির ঘটনা। এসবের রেশ ধরে ঘটছে নানা অনাকাক্ষিত ঘটনা। ঘটছে আত্মহত্যা ও খুনের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনার খবরে প্রায়ই বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছে গোটা দেশবাসী। বর্তমানে অশ্লীল ভিডিও প্রসার লাভ করে হাতের মোবাইলে ইন্টারনেট। চোখের পলক ফেলতে যত দেরী তার চেয়েও দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে তাদের কাংখিত পর্ণোগ্রাফি। ইউটিউব, ইউপর্ণ, ও লাইপেজের বাংলা চটি নামে নানারকম মিথ্যে গল্প-কাহিনী প্রকাশ করে ব্লগাররা। এই সব মিথ্যে গল্প-কাহিনী পড়ে পুরুষ মহিলা জড়িয়ে যাচ্ছে নানা প্রকার অনৈতিক প্রেমালাপে। আর এই অশ্লিলতার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ বর্তমান ও ভবিষ্যতে এবং ইহকালিন ও পরকালিন জীবনেও।
মস্তিষ্ক হ’ল মানব দেহের প্রদান কার্যালয়। এখান থেকে সারা শরীরের যাতবীয় চাহিদা মোতাবেক সংবেদনশীল সকল প্রকার নির্দেশ গৃহীত হয়। আর স্নায়ুবিজ্ঞান (Neurosciences) এখন স্বীকার করে যে, মানুষের মস্তিষ্ক অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যদিয়ে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং আমরা যা দেখি, শুনি বা জানি, তার সবকিছুর সাথেই মস্তিষ্কের সংযোগ গড়ে ওঠে। আপাতদৃষ্টিতে অশ্লীল কার্মে লিপ্ত হলে মস্তিষ্কের তাৎক্ষনিক সংযোগ গড়ে ওঠে। অনুরূপভাবে অশ্লীল গান শোনা, টেলিভিশন, পর্নোগ্রাফীর মত নোংরা ছবি দর্শন একটি নীরব প্রতিচ্ছায়া অথচ ভিষম ভয়ঙ্কর সমস্যা যা সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারন করেছে। এতে নারী পুরুষ যুবসমাজ নিরবে অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যার  ক্ষতিগ্রস্থ অপূরণীয়।
মানুষের শেখা ও মনে রাখার ভিত্তি হলো সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি
(Synaptic Plasticity) যা মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ক তার নিউরন কোষ সমূহের মধ্যকার সংযোগগুলোর শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কোন ধরণের স্নায়বিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং সেইসাথে কি পরিমাণ নিউরোট্রান্সমিটারের
(Neurotransmitter – আনবিক গঠন সম্পন্ন স্নায়ুবিক সংবাহক) নির্গমন ঘটবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাও এই ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। মস্তিষ্কের একটি অত্যাবশ্যক নিউরোট্রান্সমিটার হলো  ডোপামিন (Dopamine)। এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সচেতন অঙ্গসঞ্চালন, অনুপ্রেরণা দান, আনন্দ অনুভব, প্রতিদান, শাস্তি দেওয়া  ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের এডিএইচডি (ADHD – Attention Deficit-Hyperactivity Disorder), বার্ধক্যজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস
(Cognitive Decline) এবং বিষন্নতার (Depression) ক্ষেত্রেও ডোপামিনের সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোকেইনের মতো ড্রাগগুলোর কার্যকারিতা ডোপামিনারজিক সিস্টেম (Dopaminergic System) কেন্দ্রিক। আর এই ড্রাগগুলোর কার্যকারিতার ফলে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। ফলে শরীরে উচ্চমাত্রার শক্তি সঞ্চিত ও  আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টি হয় যা ক্রমেই আসক্তিতে পরিণত হয়। একাধিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ডোপামিন আনন্দের আবহ তৈরি করে প্রত্যক্ষ আনন্দ দানে ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে, চরম আনন্দ লাভের মুহূর্তে, কিংবা আনন্দ লাভের পরে, ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। এই নিঃসরণের সময়, ডোপামিন শারীরিক ক্রিয়ার সাথে মস্তিষ্কের নতুন সংযোগগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী (Strengthen) ও দৃঢ় (Reinforce) করে এবং ব্যক্তিকে আবার ঐ আনন্দ লাভের জন্য একই কাজ করতে উৎসাহ যোগাতে থাকে। অনুরূপভাবে অশ্লীলতা ও পর্নোগ্রাফীর সাথে এর সম্পর্কটা হ’ল পর্দায় যখন অশ্লীল যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখে তখন যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়, যা ডোপামিনারজিক সিস্টেম
(Dopaminergic
System
)
কে সক্রিয় করে তোলে। যার  ফলে পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিপটে না-গিয়ে
ডোপামিনের দৃঢ়করণ (Reinforcement) প্রক্রিয়ার কারণে স্থায়ী স্মৃতিপটে প্রবেশ করে। এখানে দৃশ্যগুলো দর্শকের মনে রিপ্লেই মোডে (Replay
mode
) স্থায়ীত্ব লাভ করে।
অশ্লীল পর্নোগ্রাফী হলো অলীক কল্পনা  (Fantasy)। প্রতিটি নতুন নতুন দৃশ্যে পর্দা থেকে অবাস্তব কল্পনার পাশাপাশি এক ধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ (Electromagnetic wave) বিচ্ছুরিত হয়, যা মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। ফলে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। মস্তিষ্কে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহ খুবই যৌগিক ও সরল। ফলে অশ্লীলতায় আসক্তির জন্ম হয় এবং ভয়াবহ রূপ ধারন করে। যার ফলে পুরুষ/স্ত্রী তার স্বামী/স্ত্রী’র সাথে ঐসব দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন করতে চায় যার অনিবার্য পরিণাম হতাশা। অবাস্তব কল্পনা নির্ভর প্রত্যাশার কারণে বাস্তবে যখন হতাশার সৃষ্টি হবে, মস্তিষ্ক তখন ডোপামিনের নিঃসরণ শুধু বন্ধই করবে না; বাস্তবিক অর্থে, এই নিঃসরণ স্তর তখন সর্বনিম্ন স্তরেরও নীচে নেমে গিয়ে বিষন্নতার স্তরে গিয়ে পৌঁছবে। ফলে দাম্পত্য জীবনে হতাশা, অতৃপ্তি এবং অশান্তির জন্ম হবে।
এই সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মস্তিষ্ক একটি সামগ্রিক সত্ত্বার মতো কাজ করে; এর কার্যকারিতার পরিধি হলো সর্বব্যাপী। ফলে মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবর্তন হলে অন্যান্য অংশও প্রভাবিত হয়। অশ্লীল দৃশ্য দেখার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থেই পুরো মস্তিষ্কের সকল স্নায়ুবিক সংযোগগুলোর পুনর্বিন্যাস ঘটে। ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ এবং তাদের কর্মদক্ষতার উপর প্রভাব পড়ে। স্নায়ুবিজ্ঞান অশ্লীলপর্নোগ্রাফীতে আসক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বেশ পীড়াদায়ক চিত্র উঠে এসেছে।  স্নায়ুবিজ্ঞানের মতে, অশ্লীল পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত ব্যক্তিদের মেধাশক্তি কমে যায়, স্মরণ শক্তি লোপ পায়, ভালো মন্দ যাচাই বাছাই ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়, কুরুচিপূর্ণ ইসলাম ও সমাজ বিরোধী কর্মে লিপ্ত হয় ইত্যাদি।
অথচ ১৯৯৯ সালে নিউরো সায়েন্টিষ্টের অবাক করা তথ্য আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশে বহুল গবেষনা করে তিনি বলেন, “প্রত্যেকের মস্তিষ্কের সামনের একটি ছোট অংশ রয়েছে যা সৃষ্টিকর্তাকে (আল্লাহ) নিয়ে চিন্তা করার সময় সচল (Active) হয়, অন্য সময় তা নিষ্ক্রিয় (Inactive) থাকে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top