বন্ধুত্ব

লিলবর আল-বারাদী
একটি ভালো বন্ধু, জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ। সৎ বন্ধু গ্রহণ ও অসৎ বন্ধু ত্যাগ করতে হবে। কোন ব্যক্তিকে জানতে ও বুঝতে চাইলে তার বন্ধুমহল কেমন তা দেখতে হবে। সৎ বন্ধু দ্বারা সামান্যতম হলেও ভালো কিছু আসা করা যায়। এমনকি যদি তার অজান্তে কোন ক্ষতি হয়, তবে সে বন্ধু ব্যথিত হয়ে তার সমাধান করার চেষ্টা করে, শান্তনা দেয়। তাই সৎ বন্ধুদের আর সত্যবাদী সাথীদের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُواْ مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯) আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মšদ থেকে বিরত রাখে। ছালাত প্রতিন্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ্ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী (তাওবাহ-৭১)।

অসৎ বন্ধু ত্যাগ করা :

অসৎ, চারিত্রহীন, বিধর্মীদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এমনকি যারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু তাদেরকেউ নয়। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না (মুমতাহিনা-১)। আর তারা  কেবল তাদেরই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে এবং ঈমানদার মুসলমানকে বিতাড়িত করে ও তাদের সাথে যুদ্ধ করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ্ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম (মুমতাহিনা-৯)। মোদ্দা কথা মহান আল্লাহ যাদের প্রতি রুষ্ট তাদেরকে বন্ধু বানানো অনুচিৎ। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, মুমিনগণ, আল্লাহ্ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল স¤পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে (মুমতাহিনা-১৩)।

যখন কোন ব্যক্তির সাথী অসৎ হয় তখন তাকেও অসৎ পথে চলার পথ দেখায়। যে কোন ব্যক্তি বন্ধু নির্বাচন করার পূর্বে অবশ্যই যেন সে লক্ষ্য করে তার দ্বীনের প্রতি, আমানতের প্রতি, আক্বীদার প্রতি। যদি দেখতে পায় যে, তার দ্বীন-ধর্ম, আমানতদারী, সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী হয় তাহ’লে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), তাঁর ছাহাবীগণের এবং সালাফে ছালেহীনের প্রতি লক্ষ্য করি। আর তাঁদের আদর্শে জীবন গড়ি। পক্ষান্তরে ফেরাঊন, নমরূদ, হামানের মত যারা তাদের থেকে সাবধান হই। অতএব যে সৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তার ফল পাবে। আর যে অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে সেদিকেই যাবে যেদিকে তার বন্ধু যাবে। কিন্তু অসৎ বন্ধুর নিকট থেকে সামান্যতম হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভালো বন্ধু ও অসৎ বন্ধু সঙ্গ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপারে ফুঁকদানকারীর মত। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়ত তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দিবে, অথবা ক্রয় করবে, অথবা সুঘ্রাণ গ্রহণ করবে। আর কামারের হাপারে ফঁকদানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিবে নতুবা তার দুর্গন্ধ ও ছায় তো তুমি অর্জন করবেই। ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৩৪; (কিতাবুয যাবায়িহ ওয়াছ ছায়দ, বাবুল শিসক)।
যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে স¤মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় স¤মান শুধুমাত্র আল্লাহ্রই জন্য।(নিসা-১৩৯)
আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহ্র গযবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও দলভূক্ত নয়। তারা জেনেশুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে। (মুজাদাল-১৪)
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুতঁ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (মায়েদা-৫১)
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে। (আনআম-১২১)

চরিত্রবান সৎ বন্ধু গ্রহণ করা :

হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহ্র প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? (নিসা-১৪৪) হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।(ফুরকান-২৮) বন্ধু বন্ধুর খবর নিবে না। (মাআুরজ-১০)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী সাথীই হলো ভালো বন্ধু। তাদের কাছে একে অপরের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। তারা একে অপরের নিকট বিশ্বস্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সর্বাধিক ভারী হবে তার উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন অশ্লীলভাষী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির প্রতি’। আবু দাঊদ হা/৫০৯৫; মিশকাত হা/২৪৪৩। তিনি আরো বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় এবং সর্বাপেক্ষা নিকটতর আসনের অধিকারী হবে ঐ সব লোক, যাদের চরিত্র সুন্দর’। বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭৪ (‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘নম্রতা’ লজ্জা ও উত্তম চরিত্র’ অনুচ্ছেদ)।
নিজেকে চরিত্রবান, ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হতে হবে এবং ভালো, উত্তম ও চরিত্রবান বন্ধু গ্রহণ করতে হবে। পরস্পরকে সালাম করবে, হাসিমুখে কথা বলবে, ওয়াদা ও চুক্তি রক্ষা করবে। পারস্পরিক লেনদেনে বিশ্বস্ত থাকবে। ঝগড়ার বিষয়ে আপোষকামী থাকবে। হক্কুল্লাহ আদায়ের ব্যাপারে সদা যতœশীল থাকবে। ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, ছাদাক্বাহ ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করবে। তার প্রতি সর্বদা ভরসাকারী থাকবে এবং যে কাজ করলে তিনি খুশী হন, সর্বদা সে কাজে অগ্রণী থাকবে। আর সৎ ব্যক্তি সাথী হ’লে তাকেও ভাল পথে চলার জন্য বলে থাকে। সুতরাং সৎ নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করা এবং ভাল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য। শিক্ষার বিষয়বস্তু যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সন্তানের বন্ধু কারা, সেদিকেও দৃষ্টি রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষ তার বন্ধুকে অনুসরণ অনুকরণ করে। الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ   ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে’ আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/৫০১৯ الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيمٌ   ‘মুমিন ব্যক্তি হয় সরল ও ভদ্র। পক্ষান্তরে পাপী ব্যক্তি হয় ধূর্ত ও চরিত্রহীন’ আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০৮৫ অতএব তোমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’। তিরমিযী হা/২৩৭৮; আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩; মিশকাত হা/৫০১৯। তিনি বলেন, لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ ‘ঈমানদার ব্যতীত কাউকে সাথী বানিয়ো না। আর আল্লাহভীরু ব্যতীত কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়’। তিরমিযী হা/২৩৯৫; আবুদাঊদ হা/৪৮৩২; মিশকাত হা/৫০১৮।
মু‘আল্লাক্বা খ্যাত কবি ত্বরাফাহ আল-বিকরী বলেন, عَنِ الْمَرْءِ لاَ تَسْأَلْ وَسَلْ عَنْ قَرِيْنِهِ + فَكُلُّ قَرِيْنٍ بِالْمُقَارِنِ يَقْتَدِيْ  ‘ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং তার বন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। কেননা প্রত্যেক বন্ধু তার বন্ধুর অনুসরণ করে থাকে’। দীওয়ানে ত্বরাফাহ পৃঃ ২০। দরসে হাদীছ : ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মাসিক আত-তাহরীক, ১৭ তম বর্ষ, ১০ সংখ্যা, জুলাই ২০১৪।

দায়িত্ববান বন্ধু হওয়া: 

ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য হ’ল তারা একে অপরের প্রতি দায়িত্ববান। সকলে সকলের প্রতি দায়িত্ববান ভালো আচরণ করবে। তারা কেউ কাউকে অসম্মান করবে না, যুলুম করবে না, লজ্জিত করবে না, অযথা রেগে যাবে না। বন্ধুদের কেউ অসুস্থ হ’লে অন্যের দায়িত্ব পড়ে যায় তাকে সুস্থ করার ও চিকিৎসা করার, কষ্ট পেলে শান্তনা দেয়া, বিপদে সাহায্য করা। একজন বন্ধু কোন বিপদে পড়লে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা। যদি তার পরিবার বিপদে পড়ে তবে সামাজিকভাবে সাহায্য করা। এমনকি একটা পশু বিপদে পড়লেও এ সমাজের মানুষের কর্তব্য হ’ল তাকে উদ্ধার করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বিগত যুগে একজন বেশ্যা মহিলা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় একটা পিপাসিত কুকুরকে দেখতে পায়। তখন সে গভীর কূয়ায় নেমে নিজ চামড়ার মোযায় পানি ভরে এনে তাকে খাওয়ায়। তাতে প্রচন্ড দাবদাহে প্রায় মৃত কুকুরটি বেঁচে যায়। এতে খুশী হয়ে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন ও সে জান্নাতবাসী হয়’। হাকেম ৩/২৬২, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫৬। এর বিপরীতে আরেকজন মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে না খেতে দিয়ে কষ্ট দিলে সে মারা যায়। এর ফলে ঐ মহিলা জাহান্নামী হয়। হাকেম ৩/২৬২, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫৬।
সেই উত্তম বন্ধু যে বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে। আর যে তা না করে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়। এমর্মে রাসুলুল্লাহ (ছা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বড়দের মর্যাদা বুঝে না ও ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করে না, সে মুসলমানের দলভুক্ত নয়’। তিরমিযী হা/২৮১৯; মিশকাত হা/৪৩৫০। বলা হয়েছে, ‘তোমরা যমীনবাসীর উপর রহম কর, আসমানবাসী আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করবেন’। মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮০৬; ‘জিহাদ’ অধ্যায়। বলা হয়েছে, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। মুসলিম হা/২০১৮।
এভাবে উত্তম সমাজে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্বশীল হবে এবং একে অপরের জান-মাল ও ইয্যত রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। এর বিনিময় সে আল্লাহর কাছে কামনা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা কিছু সৎকর্ম অগ্রিম প্রেরণ করবে, তা তোমরা আল্লাহর নিকট পেয়ে যাবে। আর সেটাই হ’ল উত্তম ও মহান পুরস্কার’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২১)।

সৎ বন্ধু আখেরাতে সুপারিশকারী : 

ভালো বন্ধুর একে অপরে কিয়ামতের মাঠে সুপারিশকারী হবেন। বন্ধুকে জান্নাতে দেখতে না পেয়ে আল্লাহর কাছে জানতে চাইবেন আমার বন্ধু কোথায় এবং এ বিষয়ে আল্লাহর সাথে তর্কে লিপ্ত হবেন। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন,  …………  মুমিনগণের কেউ এ পথ পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ অশ্বগতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ অক্ষত অবস্থায় নাজাত পাবে আর কেউ হবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নাজাতপ্রাপ্ত। আর কতককে কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না।

তারা বলবে, হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত, হাজ্জ (হজ্জ) করত। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ যাও তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।) মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ অগ্নি ভস্ম করে দিয়েছে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই।

আল্লাহ বলবেন, পূনরায় যাও, যার অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরও একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে রব! অনুমতি প্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অণূ পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন, তাদের কাউকেই রেখে আসিনি।

সাহাবী আবূ সাঈদ আল খূদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটিও তিলাওয়াত করতে পারঃ (অর্থৎ আল্লাহ অণূ পরিমাণও জুলুম করেন না এবং অণূ পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুন করে করে দেন এবং তাঁর কাছ থেকে মহা-পুরস্কার প্রদান করেন।” (৪ঃ ৪০) এরপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেনঃ “‏ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ شَفَعَتِ الْمَلاَئِكَةُ وَشَفَعَ النَّبِيُّونَ وَشَفَعَ الْمُؤْمِنُونَ وَلَمْ يَبْقَ إِلاَّ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَطُّ قَدْ عَادُوا حُمَمًا فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهْرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল আরহামূর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি (আল্লাহ) জাহান্নাম থেকে একু মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে, যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি, এবং আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ মুখের ’নাহরুল হায়াতে’ ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে।…………… (বুখারী হা/৮০৬, মুসলিম হা/২৯৯, আবূদাউদ হা/৭৭০৩, মিশকাত হা/৫৫৭৯)

বন্ধুদের প্রতি করণীয় :

ক. বন্ধুদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা :

একজন মুসলমান হিসেবে অপর দ্বীনী মুসলিম ভাই বা বন্ধুর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা উচিৎ। এই সৌজন্য যোগাযোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন একেঅপরের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে, তেমনি মহান আল্লাহও খুশি হয়। যার প্রতিফল হিসেবে উভয়েরই জন্য জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়ে যায়। এমর্মে রাসূলুল্রাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক ব্যক্তি অন্য এক গ্রামে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হ’ল। মহান আল্লাহ তার যাবার পথে একজন ফেরেশতা বসিয়ে রাখলেন। লোকটি যখন সেখানে পৌঁছল, তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ঐ গ্রামে একজন ভাই আছে, তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে তোমার কোন অনুগ্রহ আছে কি, যার বিনিময় লাভের জন্য তুমি যাচ্ছ? সে বলল, না, আমি তাকে একমাত্র আল্লাহর রাজি খুশির উদ্দেশ্যে ভালবাসি। তখন ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে এই সংবাদ দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি যে, আল্লাহ তোমাকে অনুরূপ ভালবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহকে রাজি খুশি করার উদ্দেশ্যে তাকে ভালবাস’। মুসলিম হা/২৫৬৭; মিশকাত, হা/৫০০৭।

খ. রুগ্ন বন্ধুকে দেখতে যাওয়া :

মানব জীবনে বিপদ-আপদের যতগুলো ক্ষেত্র আছে, তার মধ্যে অসুস্থতা অন্যতম। দুনিয়াবী জীবনে মানুষ যে কত বড় অসহায়, তার বাস্তব উপলব্ধি ঘটে অসুস্থ অবস্থায়। এমত পরিস্থিতিতে কোন শত্রুও যদি দেখা করতে আসে বা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে, তবে সে তাকে আর শত্রু মনে করে না। সে তখন তার নিকটে পরম বন্ধুতে পরিণত হয় এবং তার অন্তরে ঐ শত্রুর জন্য আলাদা একটা স্থানও তৈরী হয়ে যায়। তাই রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বা সাধ্যমত তার দেখ-ভাল করা ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির একটা বড় উপায়। রুগ্ন ব্যক্তির দেখা-শোনার বিষয়টি ইসলামী শরী‘আত ও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عُوْدُو الْمَرِيْضَ، وَاتَّبِعُوا الْجَنَائِزَ، تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ ‘রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাবে এবং জানাযার অনুসরণ করবে (কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করবে) তাহ’লে তা তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮১, হাদীছ ছহীহ। একজন মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের হক্ব বা কর্তব্য সম্পর্কে যে কয়েকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে عِيَادَةُ الْمَرِيْضِ তথা ‘রোগীর পরিচর্যা’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়াও ক্বিয়ামতের ময়দানে রুগ্ন ব্যক্তির পক্ষে মহান আল্লাহ নিজেই ফরিয়াদী হয়ে আদম সন্তানকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি পরিচর্যা করনি’।  মুসলিম হা/২৫৬৯; মিশকাত হা/১৫২৮।  রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সহজ উপায়। যতক্ষণ পর্যন্ত রুগীর পরিচর্যা করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি রহমতের মাঝে অবস্থান করে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيْضًا خَاضَ فِى الرَّحْمَةِ، حَتَّى إِذَا قَعَدَ اسْتَقَرَّ فِيْهَا. ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন রুগীর পরিচর্যা করে, সে রহমতের মধ্যে ডুব দেয়, এমনকি সে যখন সেখানে বসে পড়ে, তখন তো রীতিমতো রহমতের মধ্যেই অবস্থান করে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২২, হাদীছ ছহীহ। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে জান্নাতের ফলমূলের বাগানে অবস্থান করে। مَنْ عَادَ أَخَاهُ এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كَانَ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ.  ‘যে ব্যক্তি তার কোন রুগ্ন ভাইকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলের মধ্যে অবস্থান করবে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২১, হাদীছ ছহীহ । অনুরূপ  إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا عَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ لَمْ يَزَلْ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ، قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا خُرْفَةُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ جَنَاهَا. ‘মুসলমান যখন তার রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ‘খুরফার’ মধ্যে অবস্থান করতে থাকে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জান্নাতের খুরফা কি? উত্তর দিলেন, তাঁর ফলমূল’। মুসলিম হা/২৫৬৮, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৮৯৯। রুগ্নকে পরিচর্যাকারী ব্যক্তির একজন আহবানকারী ডেকে বলে তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيْضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِى اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً. ‘কোন ব্যক্তি কোন রুগ্ন ব্যক্তির পরিচর্যা করলে অথবা আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে, একজন আহবানকারী (অন্য বর্ণনায় রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা) তাকে ডেকে ডেকে বলে, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পদচারণা উত্তম হয়েছে এবং জান্নাতে তুমি একটি ঘর তৈরি করে নিয়েছ’। তিরমিযী হা/২০০৮, হাদীছ হাসান; মিশকাত হা/৫০১৫।

শুধু বন্ধু নয় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য অসুস্থ হলে তাদের দেখতে যেতে হবে এবং তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দোআ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسلِمٍ يَعُوْدُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِىَ وَإِنْ عَادَه عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَه خَرِيْفٌ فِىْ الْجَنَّةِ. আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘এমন কোন মুসলমান নেই যে সকাল বেলা কোন মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর সন্ধ্যা বেলা কোন রোগী দেখতে যায় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান সুনির্ধারিত করে দেয়া হয়’।১১. তিরমিযী হা/৯৬৯, হাদীছ ছহীহ, আবূদাউদ, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৯০০। রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ করতেন- أَذْهِبِ الْبَأسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لاَشِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا. ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর, রোগ-মুক্তি দান কর। তুমিই রোগ-মুক্তি দানকারী। তোমার রোগ-মুক্তি ছাড়া কোন রোগ-মুক্তি নেই। এমন রোগ-মুক্তি কোন রোগ বাকী রাখে না’।১২. বুখারী হা/৫৬৭৫, ৫৭৫০; মিশকাত হা/১৫৩০।

গ. দুঃস্থ ও বিপদগ্রস্থদের সাহায্য করা :

ইসলামী শরী‘আতে মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক হ’ল একটি দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ যেকোন ধরনের বিপদে পড়ার সাথে সাথে অন্য অঙ্গ তাকে সাহায্যের জন্য তৈরী হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান ভাই যখন কোন প্রকার বিপদে পড়ে, তখন অপর মুসলমান ভাইয়ের কর্তব্য তাকে সাহায্য করা। কেননা যে মানুষকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৬।
অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,  প্রত্যেক মুসলমানের উপর ছাদাক্বা করা ওয়াজিব। একজন প্রশ্ন করলেন, যদি কারো সে সামর্থ্য না থাকে, তবে কি হবে? … ছাহাবাদের পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যায় তিনি বলেন, فَيُعِيْنُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ ‘তাহ’লে কোন দুঃখে বা বিপদে পতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে’। মুত্তাফাক্ব আলাইহ; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/২২৫; মিশকাত হা/১৮৯৫।
কোন মানুষের কঠিন বিপদের মুহূর্তে যখন কেউ তাকে সাহায্য করে, তখন তার সে সাহায্যের কথা সে কখনো ভোলে না। যারা বিপদগ্রস্থ মানুষের সাহায্যকারী হয়, তারাই প্রকৃত বন্ধু। এজন্য ইংরেজীতে প্রবাদ আছে,  ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু’। তাই বন্ধুত্ব বৃদ্ধিতে এটি একটা বড় উপাদান। বন্ধু বন্ধুর প্রতি কতখানি কৃতজ্ঞ সেই বিষয়ে একটি গল্প: নদীর তীরের একটি গাছের উঁচু ডালে একটি ঘুঘু বসে নদীর পানির দিকে চেয়ে আছে। সে দেখতে পেল, একটি পিঁপড়া নদীর  ভেসে যাচ্ছে। পিঁপড়ার প্রতি তার দয়া হ’ল। তাই সে গাছ  থেকে একটি পাতা ছিঁড়ে পিঁপড়ার সামনে ফেলে দিল। পিঁপড়াটি পাতায় চড়ে প্রাণে বেঁচে গেল।
পিঁপড়াটির বাসা ঐ গাছের কাছেই। একদিন সেই গাছে ঘুঘুটি বসে রয়েছে। এক শিকারী ঘুঘুকে লক্ষ্য করে তার ধনুকে তীর সংযোগ করল। সে তীর ছুঁড়তে যাচ্ছে, এমন সময় ঐ পিঁপড়াটি এসে তার পায়ে শক্ত কামড় বসিয়ে দিল। কামড়ের চোটে সে জোরে ‘উহ’ করে উঠল। পাখিটি শিকারী শব্দ শুনে উড়ে গেল। তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হ’ল। বন্ধু বেঁচে গেল।

ঘ. সৎ বন্ধু নাজাতের অসীলা :

দুনিয়াতে আমরা নিজেদের দাবি নিয়ে যে পরিমাণ ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হই, আখেরাতে মুমিনগণ আল্লাহর সাথে তার চেয়ে অধিক ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হবে তাদের ভাইদের মুক্ত করানোর জন্য, যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে। আবূ সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া হয়, তা মুমিনগণ কর্তৃক তাদের ভাইদের সম্পর্কে যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাদের রবের সাথে ঝগড়ার চেয়ে অধিক কঠিন নয়।
তিনি বলেন: তারা বলবে: হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত ও আমাদের সাথে হজ করত, কিন্তু আপনি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেন: আল্লাহ বলবেন: যাও তাদের থেকে যাকে তোমরা চিনো তাকে বের কর। তিনি বলেন: তাদের নিকট তারা আসবে, তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে তারা চিনবে, তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কাউকে পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে, তাদেরকে তারা বের করবে অতঃপর বলবে: হে আমাদের রব, যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা বের করেছি। তিনি বলেন: আল্লাহ বলবেন: বের কর যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অতঃপর বলবেন: যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। এক সময় বলবেন: যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে”। [নাসাঈ হা/৫০১০; হাদীসের মান : সহিহ]

পরিশেষে,  প্রকৃত বন্ধু তার সাথীদেরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করে। কখনো তাদের ক্ষতি করার মনোভাব পোষণ করে না। বরং সর্বদা তাদের ভালো করে ও পরামর্শ দেয়। ভালো বন্ধু হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যেমন জটিল তেমনি ভালো বন্ধু পাওয়াও অনেক কঠিন। ভালো বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতের কৃপায়। তাই আসুন আমরা ভালো বন্ধু হই এবং ভালো বন্ধু গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক্ব দান করুন আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top