একজন মুমিন সারা বছর চাতকের মত রামাযানের প্রতীক্ষায় থাকে। অন্যদিকে রামাযান মাসের শেষ দশকে আগমনে ‘লায়লাতুল ক্বদর’ তথা ক্বদরের রাত্রী তালাশে ব্যাকুল হয়ে থাকে। ক্বদরের রাত একটি মহিমান্বিত ও বরকতময় রজনী। মহান আল্লাহ তা‘আলার কৃপায় এ রাতে সাধ্যমত ইবাদত করা এবং পাপ মোচন করিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ রাত শেষে দশকের বিজোড় রাত্রীতে তালাশ করতে হয়।
১. লায়লাতুল ক্বদরের নামকরণ :
‘ক্বদর’ (اَلْقَدْرُ) অর্থ সম্মান, মর্যাদা। আর لَيْلَةُ الْقَدْرِ অর্থ মর্যাদার রাত্রি, বা মহিমান্বিত রজনী। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ- فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ- أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ. ‘আমরা একে নাযিল করেছি বরকতময় রাত্রিতে। আর আমরা তো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। আমাদের আদেশক্রমে। আর আমরাই তো প্রেরণকারী’ (দুখান ৪৪/৩-৫)।
২. লায়লাতুল ক্বদরের তারিখ :
লায়লাতুল ক্বদর কোন রাতকে বলা হয়, তা নিয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও হাদীছে তার সঠিক সমাধান রয়েছে। তবে এ রাত নির্দিষ্ট কোন তারিখ সম্বলিত নয়। রাত সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
ক. শেষ দশকে : রামাযানের শেষ দশকের কোন একদিনে ক্বদরের রাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى تَاسِعَةٍ تَبْقَى ، فِى سَابِعَةٍ تَبْقَى ، فِى خَامِسَةٍ تَبْقَى. ‘তোমরা তা লাইলাতুল ক্বদর রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো। লাইলাতুল ক্বদর গণনায় নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে’।১ অন্যত্র, আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিক্বাফ করতেন এবং বলতেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ. ‘তোমরা রামাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো’।২
খ. বিজোড় রাত্রী : শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিকে লাইলাতুল ক্বদর বলা হয়। আয়িশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ. ‘তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান করো’।৩
গ. শেষ সাত রাত : ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, (ছাঃ)-এর কতিপয় ছাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রামাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। তা জেনে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ. ‘আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরের সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে’। ৪ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, هِىَ فِى الْعَشْرِ، هِىَ فِى تِسْعٍ يَمْضِينَ أَوْ فِى سَبْعٍ يَبْقَيْنَ. ‘শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে লাইলাতুল ক্বদর। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, الْتَمِسُوا فِى أَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ. ‘তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ করো’।৫
ঘ. রামাযানের শেষ রাতে : মু‘আবিয়া বিন আবূ সুফিয়ান বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الْتَمِسُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ ‘তোমরা শেষ রাতে লায়লাতুল ক্বদরকে তালাশ করো’।৬ এ প্রসঙ্গে আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, ‘উবাই ইবনু কাব (রাঃ) শপথ করে বলতেন, তা হ’ল সাতাশ তারিখের রাত্রি। তিনি আরো বলনে, এর আলামত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তা আমরা হিসাব করে রেখেছি এবং স্মরণ রেখেছি’। এছাড়াও আবূ ক্বিলাবাহ (রহঃ) বলেন,لَيْلَةُ القَدْرِ تَنْتَقِلُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِر ‘লায়লাতুল ক্বদর রামাযানের শেষ দশকে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে’।৭ অর্থাৎ কোন বছরে ২১ তারিখে, কোন বছরে ২৩ তারিখে, কোন বছরে ২৫ তারিখে বা ২৭ তারিখে অথবা ২৯ তারিখে হয়ে থাকে। অথবা একই বছরে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন তারিখে ক্বদর এসে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত রয়েছেন।
৩. ক্বদরের রাতের বিশেষ আলামত : লায়লাতুল ক্বদর সম্পর্কে হাদীছে একাধিক রাতের উল্লেখ রয়েছে। যাতে বোঝা যায় যে, সঠিক তারিখ রাসূল (ছাঃ)-কে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই ভুলে যাওয়ার পেছনে প্রভুতঃ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنِّيْ أُرِيْتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، ثُمَّ أُنْسِيْتُهَا أَوْ نُسِّيتُهَا ‘আমাকে লায়লাতুল ক্বদর দেখানো হয়েছে। অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে’। ৮ অন্যত্র তিনি বলেন, أُرِيْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أَيْقَظَنِيْ بَعْضُ أَهْلِيْ، فَنُسِّيتُهَا ‘আমাকে লায়লাতুল ক্বদর দেখানো হ’ল। অতঃপর আমার কোন এক স্ত্রী আমাকে জাগালেন। তারপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হ’ল’। ৯
‘উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) বলেন, একদা নবী (ছাঃ) আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বলেন, إِنِّى خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَإِنَّهُ تَلاَحَى فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ فَرُفِعَتْ وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمُ الْتَمِسُوهَا فِى السَّبْعِ وَالتِّسْعِ وَالْخَمْسِ. ‘আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ করো’। ১০
লাইলাতুল ক্বদরের পরিচয় ভুলে গেলেও কিছু আলামত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উম্মতদের অবহিত করেছেন। অন্য রাতের তুলনায় ক্বদরের রাতে মুমিন বান্দার হৃদয়ে ঊদারতা, প্রশান্তি ও স্বস্তিবোধ করে। আর ইবাদতে গভীর তৃপ্তি অনুভব করে। এছাড়াও
এক. ক্বদরের রাতে শান্ত, আলোকজ্জ্বল ও মৃদু বাতাস প্রবাহিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বদরের রাত উজ্জ্বল’। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নাতিশীতোষ্ণ বা না ঠাণ্ডা, না গরম’। ১১
দুই. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রিটি হ’ল প্রশান্ত ও আনন্দময়, না গরম আর না ঠান্ডা এবং وَأَمَارَتُهَا أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فِى صَبِيحَةِ يَوْمِهَا بَيْضَاءَ لاَ شُعَاعَ لَهَا. ‘ভোরের সূর্য ঊদিত হবে কিরণহীন দূর্বল ও নিষ্প্রভ লাল হয়ে’। ১২
তিন. ফজর পর্যন্ত শান্তিময় থাকে ক্বদরের রাত্রী। সেকারণে, لا تضرب بأي نجم فى ليلة القدر ‘ক্বদরের রাতে উল্কা ছুটে না’। ১৩
চার. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ليلة القدر ليلة سمحة طلقة لا حارة و لا باردة تصبح الشمس صبيحتها ضعيفة حمراء. ‘লাইলাতুল ক্বদরের রাতে মনোরম আবহাওয়া এবং প্রশান্তিদায়ক বাতাস প্রবাহিত হওয়া। ১৪
পাঁচ. আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) উপস্থিতিতে লাইলাতুল ক্বদর নিয়ে আলোচনা করছিলাম অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে (ঐ রাত) মনে করতে পার যেদিন ‘চাঁদ অর্ধ থালার মত উঠেছিল’? (মুসলিম)
ছয়. ‘আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে লাইলাতুল-ক্বদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, ‘একখন্ড মেঘ এসে এমন ভাবে বর্ষণ শুরু করল যে, যার ফলে (মসজিদে নববীর) ছাদ দিয়ে পানি পড়া শুরু হল। কেননা, (তখন মসজিদের) ছাদ ছিল খেজুরের ডালের তৈরী। এমন সময় ছালাতের ইকামত দেওয়া হ’ল, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে পানি ও কাদার উপর সিজদা করতে দেখলাম, এমন কি আমি তাঁর কপালেও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম’। ১৫
৪. লায়লাতুল ক্বদরের ফযীলত :
ক্বদরের রাত সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনে একটি সূরা নাযিল করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ . وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ . لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ . تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ. سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ.
‘আমরা একে নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে। তুমি কি জানো ক্বদরের রাত্রি কি? ক্বদরের রাত্রি হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে অবতরণ করে ফেরেশতাগণ এবং রূহ, তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে এ রাতে কেবলই শান্তি বর্ষণ। যা চলতে থাকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’ (ক্বদর ৯৭/১-৫)।
সূরা ক্বদর থেকে যে ফযীলত জানা যায় তা হ’ল- হাযার রাত্রির চাইতেও উত্তম (ক্বদর ৯৭/৩)। জিবরীল (আঃ) এবং ফেরেশতারা নেমে আসেন (ক্বদর ৯৭/৪)। ফজর পর্যন্ত সালাম বা শান্তি বর্ষিত হয় (ক্বদর ৯৭/৫)। এটি একটি বরকতময় রাত (দুখান ৪৪/৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لا يخرج شيطانها حتى يخرج فجرها ‘এ রাতে ফজর পর্যন্ত শয়তান বের হয় না’। ১৬
ছিয়াম পালন করলে মানুষের কৃত গোনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে লাইলাতুল ক্বদরের রাতেও ক্ষমার সৌভাগ্য অর্জন করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রি ইবাদাতে কাটায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’। ১৭ রামযান মাস শুরু হ’লে রসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَلاَ يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلاَّ مَحْرُومٌ. ‘তোমাদের নিকট এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়। ১৮
শুধু লাইলাতুল কদরের রাতে নয়, প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ তা‘আলা নিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং অনেক বান্দাকে ক্ষমা করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ. ‘আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করেন এবং ফজর পর্যন্ত বান্দাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আছ কি কোন আহবানকারী, আমি তার আহবানে সাড়া দেব। আছ কি কেউ সাহায্য প্রার্থনাকারী, আমি তাকে তা দিব। আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব’।১৯
৫. ক্বদরের রাতে পঠিতব্য দো‘আ :
ক্বদরের রাতে যতখুশি দো‘আ ও যিকির করতে পারেন। কিন্তু আল্লাহর কাছে ক্ষমার চেয়ে বড় পাওয়া কিছু হয় না। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানে বিশেষত শেষ দশকে তওবা ও ইস্তিগফারের জন্য নিচের দো‘আটি শিক্ষা দিয়েছেন তা বেশী বেশী পাঠ করব, ইনশাআল্লাহ।
أَللهم إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুব্বুন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা করো’। ২০
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, يَا رَسُولَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو قَالَ تَقُولِينَ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ক্বদরের রাত পেলে কি দো‘আ পাঠ করব? তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি বলবে, اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى. অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা করো’। ক্বদরের রাতে বেশী বেশী ইবাদত এবং দো‘আটি অধিক হারে পাঠসহ কুরআন তিলাওয়াত করতে হয়। ২১
আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে বান্দা নিজের গুণাহ সমূহ ক্ষমা করে নিতে পেরেছে সে ব্যক্তি প্রকৃত সফলকাম হয়েছে। সুতরাং বেশী বেশী তাওবাহ করুন। এছাড়া সালাতুত তাওবাহ আদায়ের মাধ্যমে কাবীরা গুণাহ সমূহ থেকে নিজেকে নাজাত দেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জেনে-বুঝে দ্বীনের আমল করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।
——————–
১. বুখারী হা/২০২১; মিশকাত হা/২০৮৫।
২. বুখারী হা/২০২০; মুসলিম হা/১১৬৯; তিরমিযী হা/৭৯২; আহমাদ হা/২৪৩৩৭; মুয়াত্তা মালেক হা/১১৪১; সনদ ছহীহ ।
৩ . বুখারী হা/২০১৭; মিশকাত হা/২০৮৩; ছহীহুল জামি‘ হা/২৯২২।
৪ . বুখারী হা/২০১৫; মুসলিম হা/১১৬৫; মিশকাত হা/২০৮৪; ছহীহুল জামি‘ হা/৮৬৭।
৫ . বুখারী হা/২০২২; মুসনাদে জামি‘ হা/৬৪৪২।
৬ . ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২১৮৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৭১।
৭ . তিরমিযী হা/৭৯২ (হাদীছের ব্যাখা ও টিকা)।
৮ . বুখারী হা/২০১৬।
৯ . মুসলিম হা/১১৬৬।
১০ . বুখারী হা/২০২৩।
১১ . ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২১৯০, আলবানী শাওয়াহেদের ভিত্তিতে ছহীহ বলেছেন। ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৬৮৮, শু‘আইব আরনাঊত্ব একে ছহীহ বলেছেন।
১২ . মুসলিম হা/৭৬২; আবূদাঊদ হা/১৩৭৮; তিরমিযী হা/৭৯৩।
১৩ . মুসনাদ আহমদ, ত্বাবারানী, ইবনে খুযাইমাহ, সনদ ছহীহ, ২১৯২।
১৪. আবূদাঊদ আত-ত্বায়ালিসী হা/২৮০২; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৭৫।
১৫. বুখারী হা/২০১৬ ও ২০১৮।
১৬. ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৬৮৮; শু‘আইব আরনাঊত্ব (রহঃ) বলেন, ‘ছহীহ হাদীছ’।
১৭ . বুখারী হা/২০১৪; মুসলিম হা/৭৬০; মিশকাত হা/১৯৫৮; আবূদাঊদ হা/১৩৭২; তিরমিযী হা/৬৮৩; নাসাঈ হা/২২০২।
১৮ . ইবনু মাজাহ হা/১৬৪৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৮৯, ৯৯০; হাসান ছহীহ।
১৯. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩।
২০ . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২০৯১।
২১ . ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫০; মিশকাত হা/২০৯১; আহমাদ হা/২৫৫৩৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৩৭।