দ্বীন বুঝে, দ্বীন প্রচার করুন, সমালোচনা নয়, পর্যালোচনা করতে শিখুন।
আজ যারা ডাঃ জাকির নায়েক-্এর বিরোধিতা করছে তারা আসলে কি চায় (?) আমার প্রশ্ন হলো- ডাঃ জাকির নায়েক কি খেলা হালাল করতে সেখানে গিয়েছেন? না-কি তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর মত দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে গেছেন?
এর জবাব হলো- ডাঃ জাকির নায়েক আমাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী মানুষ। তিনি যে দুবাই গিয়েছেন এর স্বপক্ষে দলিল রয়েছে।
আমাদের কাজই হচ্ছে ইসলাম প্রচার করা, বরং সমালোচনা করা উচিৎ নয়। মানুষের সামনে আল্লাহর দ্বীনকে তুলে ধরা একজন মুমিন ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রকৃত দাঈ ইলাল্লাহ-এর চিন্তা ভাবনা এমনই হওয়া উচিত বলে মনে করি।
রসূল (ﷺ) মক্কাতে নবুওয়াতের প্রথম তিন বছর গোপনে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। চতুর্থ বছর প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর থেকে দশ বছর পর্যন্ত মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করেছেন। প্রতি বছর হজ্জের মৌসুমে হাজীদের তাঁবুতে গমণ করতেন। এমনি উকায, মাজিন্নাহ এবং যুল মাজাযের বাজারে ও বিভিন্ন মেলার মৌসুমেও লোকদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন এবং তাঁকে হেফাজত করার আবেদন করতেন। যাতে তিনি আল্লাহর পয়গাম নির্ভিগ্নে পৌঁছাতে পারেন। এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। কিন্তু তিনি কোন সাহায্যকারী ও সাড়াদানকারী পেলেন না। পরিশেষে তিনি প্রত্যেক কবীলার (গোত্রের) কাছে এবং তাদের বাসস্থানে যেতে লাগলেন। তিনি বলতেন- হে লোক সকল! তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বল। তাহলেই তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে তোমরা আরবদের শাসক হতে পারবে। অনারবরা তোমাদের বশ্যতা স্বীকার করবে। আর মৃত্যুর পর তোমরা জান্নাতে রাজকীয় জীবন যাপন করতে পারবে। আবু লাহাব তাঁর পিছনে পিছনে চলত এবং লোকদেরকে বলতঃ তোমরা এর অনুসরণ করোনা। সে বেদ্বীন ও মিথ্যুক। ফলে লোকেরা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কথা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করত এবং তাঁকে কষ্ট দিত। লোকেরা বলতঃ তোমার গোত্রের লোকেরাই তোমার সম্পর্কে অধিক অবগত। তারা তো তোমার অনুসরণ করেনি। তারপরও তিনি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতেন এবং বলতেন- হে আল্লাহ্! তুমি চাইলে এরূপ হতনা।
হজ্জের মৌসুমে আবু লাহাব রাসূল (ছাঃ)-এর পিছে লেগে থাকত। যেখানেই রাসূল (ছাঃ) দাওয়াত দিতেন, সেখানেই সে তাঁকে গালি দিয়ে লোকদেরকে ভাগিয়ে দিত এবং বলত, إِنَّهُ صَابِئِىْ كَذّابٌ فَلاَ تُصَدِّقُوْهُ ‘এ লোকটি বিধর্মী মিথ্যাবাদী তোমরা এর কথা বিশ্বাস করো না’। [আহমাদ হা/১৬০৬৬, ১৬০৬৯, সনদ হাসান; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৯, সনদ ছহীহ।]
এমনকি ‘যুল মাজায’ নামক বাজারে যখন তিনি লোকদের বলছিলেন, তোমরা বল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাহ’লে সফলকাম হবে’, তখন পিছন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে সে পাথর ছুঁড়ে মারে। তাতে রাসূলের পায়ের গোঁড়ালী পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে যায়। [ছহীহ ইবনু হিববান, হাকেম ২/৬১১; দারাকুৎনী হা/২৯৫৭, সনদ হাসান; তফসীরে কুরতুবী।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবীসহ বাতনে নাখলা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওকায বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। আরবরা আমাদের যুগের প্রদর্শনীর মত বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ বিশেষ দিনে মেলার আয়োজন করত। এসব মেলায় বহুলোক উপস্থিত থাকত, দোকান খোলা হত এবং সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হত। ওকায নামক স্থানে প্রতি বছর এমনি ধরনের এক মেলা বসত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্ভবতঃ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সেখানে গমন করছিলেন। নাখলা নামক স্থানে তিনি যখন ফজরের সালাতে কুরআন পাঠ করছিলেন, তখন জিনদের অনুসন্ধানী দলটি সেখানে দিয়ে পৌঁছল। তারা কুরআন পাঠ শুনে বলতে লাগল, এই সে নতুন ঘটনা, যার কারণে আমাদেরকে আকাশের সংবাদ সংগ্রহে নিবৃত্ত করা হয়েছে। [বুখারী: ৭৭৩, মুসলিম: ৪৪৯, তিরমিযী: ৩৩২৩, নাসায়ী: আল কুবরা ১১৬৪]
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, উকায, মাজিন্নাহ ও যুল-মাজায নামক স্থানগুলিতে (ইসলাম আসার পূর্বে) জাহেলী যুগের বাজার ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরাম হজ্জের মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্যমূলক কাজ-কর্মকে পাপ মনে করলেন। তার জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হল, যার অর্থ, “(হজ্জের সময়) তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ কামনায় (ব্যবসা-বাণিজ্যে) কোন দোষ নেই।” (সূরা বাকারাহ ১৯৮ আয়াত, বুখারী)[1][1] সহীহুল বুখারী ১৭৭০, ২০৫০, ৪৫১৯, আবূ দাউদ ১৭৩৪)
অনেকের জ্ঞান আছে, কিন্তু হুঁশ নেই। এদের অসতর্কতার জন্যই পরিবারে, সমাজে, সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ও ক্ষতি হয়।