ইসলামী অভিবাদন হলো اسلام عليكم বলা। বাংলা উচ্চারণ হলো “আসসালামু ‘আলাইকুম”। এর অর্থ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡهَاۤ اَوۡ رُدُّوۡهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ حَسِیۡبًا ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী’ (নিসা ৪/৮৬)। وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ؕ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ‘আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’(ইবরাহীম ১৪/২৩)।
শাব্দিক পর্যালোচনা : ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ, আস-সালামু ʿআলাইকুম। ٱل আল/আস=সুনির্দিষ্ট/টি (পদাশ্রিত নির্দেশক, ইংরেজি the এর সমার্থক), سَّلَامُ সালাম (উ) = শান্তি, (عَلَ(يْ আলা(ই) = উপরে, كُمْ কুম = তোমাদের। ইংরেজীতে বলে, “Peace be upon you.
জবাব/প্রতিক্রিয়া : وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ, ওয়া ʿআলাইকুমু স-সালাম। وَ ওয়া = এবং, عَلَيْكُمُ আলা(ই)কুম = তোমাদের উপর, ٱلسَّلَامُ আল/আস-সালাম = শান্তিটি।
আবারও আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে, স্লামালাইকুম, সালামালাইকুম, আস্লামালাইকুম ,সেলামালাইকুম, আস্লামো আলাই, আসসামালাইকুম স্লামাইকুম স্যার ইত্যাদি। যা খুবই অন্যায় এবং গর্হিত কাজ। কেননা এতে আরবীর সঠিক উচচারণ হয়না এবং তা অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়।
তাছাড়া উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার। যেমন, অলাইকুম সালাম; অলাইকুম আস-সালাম অলাইকুম ইত্যাদি।
সঠিক পদ্ধতি ও ফযীলত :
ইসলামের আবির্ভাবের পর বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) প্রাক ইসলামী যুগে ব্যবহৃত শব্দগুলো পরিহার করে পরস্পরকে اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ (আস-সালা-মু আলাইকুম) বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ দেন (আবুদাঊদ, মিশকাত ৪৪৪৯/২৭)। সুতরাং সালাম পাওয়ার সুপ্ত আকাংখা মনের ভেতরে না রেখে প্রথমে নিজে থেকেই সালাম শুরুর প্রচলন করতে হবে। যাতে করে মহান আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি হ’তে পারি। এসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَ بِالسَّلاَمِ. ‘সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম যে প্রথমে সালাম প্রদান করে’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৬, হাদীছ ছহীহ) বাক্যালাপ শুরুর পূর্বেই সালাম দিতে হবে মর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم السَّلاَمُ قَبْلَ الْكَلاَمِ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ). জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কথা-বার্তার পূর্বেই সালাম দিতে হবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৫৩)। সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ এবং সর্বনিম্ন ‘আসসালামু ‘আলাইকুম’ বলবে। সর্বোচ্চটি বললে ত্রিশ নেকী এবং সর্বনিম্নটি বললে দশ নেকী হবে (আবুদাঊদ হা/৫১৯৫; তিরমিযী হা/২৬৮৯)।
সালামের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اِذَا جَآءَکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِنَا فَقُلۡ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ کَتَبَ رَبُّکُمۡ عَلٰی نَفۡسِهِ الرَّحۡمَۃَ ۙ اَنَّهٗ مَنۡ عَمِلَ مِنۡکُمۡ سُوۡٓءًۢ ابِجَهَالَۃٍ ثُمَّ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ وَ اَصۡلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ‘আর যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, ‘তোমাদের উপর সালাম (শান্তি)’। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর লিখে নিয়েছেন দয়া, নিশ্চয় যে তোমাদের মধ্য থেকে না জেনে খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে এবং শুধরে নেয়, তবে তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আনআম ৬/৫৪)। অন্যত্র বলেন, الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىهُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ طَیِّبِیۡنَ ۙ یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمُ ۙ ادۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তম অবস্থায়, তারা বলে, ‘তোমাদের উপর সালাম। জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে’ (নাহল ১৬/৩২)।
হাদীছের ভাষাতে ‘‘আসসালামু আলাইকুম’’ এবং কুরআনের ভাষাতে ‘‘সালামুন আলাইকুম’’। তবে ইংরেজীতে (Peace be upon you) বাক্য দুটি তেমন কোন পার্থক্য নেই। অর্থগত দিক বিবেচনা করলে একই হবে। তাই এসব নিয়ে বাড়াবাড়ী না করায় উচিৎ। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং ক্ষমা করুন, আমীন।
অগ্রে সালাম প্রদানে কল্যাণ :
সর্বপ্রথম সালাম প্রদানকারী অহংকারমুক্ত। অন্যদিকে যে ব্যক্তি অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি রাগরাগি করে তিন দিনের অধিক মুখ ফিরিয়ে থাকাটা হালাল নয়। আর এদের দু’জনের মধ্যে যে সর্বপ্রথম সালাম বিনিময় করবে সেই উত্তম মর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِىْ أيُّوْبَ الْأَنْصَارِىْ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَيَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يَّهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَلْتَقَيِانِ فَيَعْرِضُ هَذَا وَيَعْرِضُ هَذَا خَيْرُهُمَا الَّذِىْ يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ আবু আইয়ুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে, তিন দিনের অধিক সে অপর কোন মুসলমান ভাইকে ত্যাগ করে। কোথাও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ হ’লে একজন একদিকে আরেকজন অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তাদের দু’জনের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে প্রথমে সালাম দিবে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫০২৭)
তাছাড়া সালাম প্রদান করলে একে অপরের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি হয়। তাই নিজেদের মধ্যে বেশী বেশী সালামের প্রচলন করতে হবে। এর ফলে আমরা পরস্পরকে ভালবাসব এবং মুমিন হিসাবে জান্নাতে যেতে পাবর। এমর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّي تُؤْمِنُوْا وَلاَ تُؤْمِنُوْا حَتَّي تَحَابُّوْا أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلٰى شَيْئٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوْا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ (رَوَاهُ مُسْلِمٌ). আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না মুমিন না হওয়া পর্যন্ত। আর মুমিন হতে পারবে না পরস্পরকে ভালোবাসা না পর্যন্ত। আমি কি এমন একটি বিষয় তোমাদেরকে বলে দিব না? যা করলে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তাহ’ল, তোমরা নিজেদের মাঝে বেশী বেশী সালামের প্রসার ঘটাও’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩১)।
সালাম শেষে সাক্ষাৎকালে মুছাফাহা করে আলাদা হবার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয় মর্মে হাদীছে এসছে, عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, দু’জন মুসলিম একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎকালে মুছাফাহা করলে তারা পৃথক হবার পূর্বেই তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৭৯)।
সালাম প্রদানে কৃপণ, সবচেয়ে বড় কৃপণ :
সালাম প্রদানের ক্ষে যে ব্যক্তি কৃপণতা করে সে বড়ই বখিল মর্মে হাদীছে এসছে, হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, আমার বাগানে অমুক ব্যক্তির একটি খেজুর গাছ আছে। ঐ গাছটি আমাকে কষ্ট দেয়। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই লোকটিকে ডেকে এনে বললেন, তোমার খেজুর গাছটি আমার নিকট বিক্রি কর। সে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যদি তুমি তা বিক্রি না কর তাহ’লে আমাকে দান কর। সে বলল, না। এবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, বেহেশতের একটি খেজুর গাছের বিনিময়ে তা বিক্রি কর। সে বলল, না। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, مَا رَأَيْتُ الَّذِىْ هُوَ أَبْخَلُ مِنْكَ إِلاَّ الَّذِىْ يَبْخَلُ بِالسَّلاَمِ. ‘আমি তোমার চেয়ে অধিক কৃপণ আর কাউকে দেখিনি। তবে হ্যাঁ, তোমার চেয়েও সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, ছহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৭১৬, হাদীছ হাসান)।
গৃহে প্রবেশকালে সালাম :
সালাম দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এজন্য গৃহে প্রবেশকালে প্রবেশকারী সালাম দিবে, যদিও ঐ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ ঘরে বসবাস না করে। মহান আল্লাহ বলেন, فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ- ‘অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন পরস্পরে সালাম করবে। এটি আল্লাহর নিকট হ’তে প্রাপ্ত বরকমণ্ডিত ও পবিত্র অভিবাদন’ (নূর ২৪/৬১)।
অন্যের গৃহে প্রবেশকালেও সালাম দিতে হবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং এর বাসিন্দাদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (নূর ২৪/২৭)।
বাড়ীর লোকদের সালাম দিলে সেই ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,ثَلاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ إِنْ عَاشَ رُزِقَ وَكُفِيَ وَإِنْ مَاتَ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ مَنْ دَخَلَ بَيْتَهُ فَسَلَّمَ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْل الله فَهُوَ ضَامِن على الله. ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহ’লে রিযিকপ্রাপ্ত হয় এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহ’লে জান্নাতে প্রবেশ করে। যে ব্যক্তি বাড়ীতে প্রবেশ করে বাড়ীর লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায়’ [ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৪৯৯; আবু দাউদ হা/২৪৯৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২১, সনদ ছহীহ]
অমুসলিমদের সালামের জবাব :
তবে হ্যাঁ কোন অমুসলিম সালাম দিলে কিভাবে (?) জবাব দিতে হবে তা রাসূল (ছাঃ) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। عَنْ أَنَس قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فَقُوْلُوْا وَعَلَيْكُمْ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ). আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আহলে কিতাব বা অমুসলিমরা যখন তোমাদেরকে সালাম দিবে তখন জবাবে বলবে ‘ওয়া ‘আলাইকুম’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৭)।
সালাম পাওয়ার আকাংখা নয়, বেশী সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে সর্বপ্রথম সালাম করতে হবে। এমনি গৃহে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময় সালাম বিনিময় করতে হবে। এমর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلْتُمْ بَيْتًا فَسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهِ وَإِذَا خَرَجْتُمْ فَأَوْدِعُوْا أَهْلَهُ بِسَلاَمٍ. ক্বাতাদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোন গৃহে প্রবেশ করবে তখন গৃহবাসীকে সালাম দিবে। আর যখন বের হবে তখনো গৃহবাসীকে সালাম করে বিদায় গ্রহণ করবে’(বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৬৫১) কোন নেতার পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে, তাকে সবায় অগ্রে সালাম করবেন, বরং তার মূলনীতি হওয়া চাই অগ্রে সালাম করব। প্রথমে সালাম করলে বেশী সওয়াব অর্জন ও নিজেকে অহংকার মুক্ত করা যায়।
বালকদের প্রতি সালাম :
সালাম ও কুশলাদী বিনিময় করার ক্ষেত্রে ছোট বড় না দেখে অগ্রে সালাম প্রদানে সর্বাত্মক ভুমিকা রাখতে হবে। তাছাড়া ছোটরা বড়দের কাছে শিষ্টাচার শিখবে। রাসূল (ছাঃ) বালকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় প্রথমে সালাম দিতেন এবং মাথায় হাত বুলাতেন মর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسٍ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلٰى غِلْمَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ). আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বালকদের পাশ দিয়ে গমন করেন ও তাদেরকে সালাম দেন (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৪)। অন্যত্র এসেছে, عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَزُوْرُ الْأَنْصَارَ وَيُسَلِّمُ عَلٰى صِبْيَانِهِمْ وَيَمْسَحُ بِرُؤُوْسِهِمْ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (ছাঃ) আনছারদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাদের বালকদেরকে সালাম দিতেন ও তাদের মাথায় হাত বুলাতেন’ (ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৪৫৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১১২)।
মহিলাদের প্রতি সালাম :
ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে যেকোন পুরুষ যেকোন মহিলাকে সালাম দিতে পারে এবং মহিলাগণও অনুরূপ সালাম বিনিময় করতে পারে। আবু হাশেম থেকে বর্ণিত সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) বলেছেন, জুম‘আর দিন আমরা খুশী হ’তাম। (আবু হাশেম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? তিনি বললেন, আমাদের এখানে এক বৃদ্ধা ছিল। সেই বৃদ্ধা এক প্রকার সবজির শিকড় তুলে পাতিলে রাখত এবং যবের কয়েকটি দানা তাতে ঢেলে দিয়ে খাবার তৈরি করত। আমরা জুম‘আর ছালাত শেষ করে ঐ বৃদ্ধার নিকট যেতাম এবং তাকে সালাম করতাম (বুখারী হা/২৩৪৯)।
উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা (রাঃ) তাকে কাপড় দিয়ে পর্দা করছিলেন। অতঃপর আমি তাকে সালাম দিলাম (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৯৭৭)। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদল মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে সালাম করলেন (আবুদাঊদ হা/৫২০; তিরমিযী হা/২৬৯৮, মিশকাত হা/৪০০)। অত্র হাদীছ সমূহ প্রমাণ করে যে, মহিলা ও পুরুষ একে অপরকে সালাম দিতে পারে। তবে ফিৎনার ভয় থাকলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে (ফাৎহুল বারী ১১/৩৪ পৃঃ)।