আল্লাহ যে গুণাবলীগুলো বান্দার মধ্যে দেখলে খুশি হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল দয়া, ক্ষমা, ধৈর্য্য ও সত্যবাদিতা। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لا يَرْحَمُ النَّاسَ. ‘যে লোক মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়ালু হোন না’। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯৪৭। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিনের বিপদ সমূহের একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন’ (বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০; মিশকাত হা/৪৯৫৮)।
অন্যের কষ্ট দূর করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার কষ্ট দূর করে দেন। বিশিষ্ট তাবেঈ বিদ্বান আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১৮১ হি.]-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল যে, গত ৭ বছর যাবৎ আমার হাঁটুতে একটি ফোঁড়া উঠে খুব কষ্ট দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অনেক ডাক্তারের নিকটে বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। কিন্তু কোন উপকার পাইনি। এখন আমি কি করতে পারি? আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বললেন, তুমি অমুক স্থানে একটা কূপ খনন কর। পানির জন্য সেখানকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আশা করি ফোঁড়াটির মূল অংশ বের হয়ে যাবে এবং রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। অতঃপর লোকটি তাই করল এবং আল্লাহর রহমতে সে আরোগ্য লাভ করল’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৫/৬৯; ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা: ৭/৩৮৩)।
ইবনুল মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্যের পক্ষে শরীয়তের দলিল রয়েছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ ‘ছাদাক্বার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮ সনদ হাসান)।
আল্লাহর দয়া থেকে কেহ নিরাশ হবেন না ৯৯ ভাগ তাঁর নিকটে রয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘মহামহিম আল্লাহ দয়াকে শত ভাগে বিভক্ত করেছেন। তিনি (এর) নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন এবং মাত্র এক ভাগ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। এই এক ভাগের কারণে সৃষ্টিকুলের একে অপরের প্রতি দয়াপরবশ হয়, এমনকি ঘোড়া তার পায়ের খুর এই আশংকায় তার শাবকের উপর থেকে তুলে নেয় যাতে সে ব্যথা না পায়’ (বুখারী হা/৬০০০)।
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান উত্তর গুণ ও দয়া দেখানোর উত্তম মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا مَنْ فِى الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ- ‘দয়াশীলদের উপরে দয়াময় আল্লাহ দয়া করে থাকেন। তোমরা যমীনবাসীদের উপরে দয়া কর, আসমানবাসী (আল্লাহ) তোমাদের উপরে দয়া করবেন’।[তিরমিযী হা/১৯২৪; আবুদাঊদ হা/৪৯৪১; মিশকাত হা/৪৯৬৯।] অপর হাদীছে এসেছে, لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ ‘যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না, তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয় না।[বুখারী হা/৭৩৭৬; মুসলিম হা/২৩১৯; মিশকাত হা/৪৯৪৭।]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-
‘আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিনের বিপদ সমূহের একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন’।[বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০; মিশকাত হা/৪৯৫৮।]
আল্লাহ বলেন,أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ، يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ، أَوْ مِسْكِينًا ذَا مَتْرَبَةٍ- ‘অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা ইয়াতীম নিকটাত্মীয়কে। অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে’ (বালাদ ৯০/১৪-১৬)।
অন্যত্র তিনি বলেন,وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِيْنًا وَيَتِيْمًا وَأَسِيْرًا ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা আল্লাহর প্রতি ভালবাসার টানে খাদ্য দান করে অভাবী, ইয়াতীম ও কয়েদীদেরকে’ (দাহর ৭৬/৮)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ : تُطْعِمُ الطَّعَامَ، ‘একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামে কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ইসলামে সবচেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার খাওয়ানো’।[বুখারী হা/১২; মুসলিম হা/৩৯; মিশকাত হা/৪৬২৯।]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শনের তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।
All reactions:
1Lilbar Al-Barady