ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর রা.-এর শাসনামলে বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল ‘আছ রা.-এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম মিসর বিজিত হয়। মিসরে তখন প্রবল খরা। নীলনদ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।
তখন সেনাপতি আমরের নিকট সেখানকার অধিবাসীরা অভিযোগ তুলল, হে আমীর! নীলনদ তো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম পালন ছাড়া প্রবাহিত হয় না। তিনি বললেন, সেটা কি? তারা বলল, এ মাসের ১৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা কোন এক সুন্দরী যুবতীকে নির্বাচন করব। তারপর তার পিতা- মাতাকে রাযী করিয়ে তাকে সুন্দরতম অলংকারাদি ও উত্তম পোশাক পরিধান করানোর পর নীলনদে নিক্ষেপ করব।
আমর ইবনুল আছ রা. তাদেরকে বললেন, ইসলামে এ কাজের অনুমোদন নেই। কেননা ইসলাম প্রাচীন সব জাহেলি রীতি-নীতিকে ধ্বংস করে দেয়। তারপর তারা পর পর তিন মাস পানির অপেক্ষায় কাটিয়ে দিল। কিন্তু নীলনদের পানিতে হ্রাস-বৃদ্ধি কিছুই পরিলক্ষিত হল না। তারপর সেখানকার অধিবাসীরা দেশত্যাগের কথা চিন্তা করতে লাগল। এ দুর্যোগময় অবস্থা দৃষ্টে সেনাপতি আমর ইবনুল আছ রা. খলিফা ওমর (রা.)-এর নিকটে পত্র প্রেরণ করলেন। উত্তরে ওমর রা. লিখলেন, হে আমর! তুমি যা করেছ ঠিকই করেছ। আমি এ পত্রের মাঝে একটি পৃষ্ঠা প্রেরণ করলাম, যা তুমি নীলনদে নিক্ষেপ করবে।’ ওমরের পত্র যখন আমরের নিকটে পৌছাল, তখন তিনি পত্রটি খুলে তাতে এ বাক্যগুলি লিখিত দেখলেন, ‘আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন ওমর এর পক্ষ থেকে মিসরের নীলনদের প্রতি। যদি তুমি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয়ে থাক, তবে প্রবাহিত হয়ো না। আর যদি একক সত্তা, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তবে আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন’। তারপর আমর রা. পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করলেন। পরদিন শনিবার সকালে মিসরবাসি দেখল, আল্লাহ তা‘আলা এক রাত্রে নীলনদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন।
তারপর থেকে আজও পর্যন্ত নীলনদ প্রবাহিতই রয়েছে। কখনো শুষ্ক হয়নি। বন্ধুগণ! এতে বুঝা গেল চাওয়ার মালিক আল্লাহ; দেবার মালিকও আল্লাহ। আমাদের ঈমানকে সেভাবেই গঠন করি। (আল-বিদায়াহ ৭/১০০; তারীখু দিমাশক ৪৪/৩৩৭; তাবাকাতুশ শাফিয়া আল-কুবরা ২/৩২৬)