হাদীছের প্রতি আনুগত্য, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আনুগত্যের শামীল

মুমিন সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আনুগত্য রাখে। রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করলে সে ব্যক্তি আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আনুগত্য করবে না, তাকে পিটিয়ে দ্বীনে ভেড়ানো হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’  (নিসা ৪/৮০)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর  আনুগত্য  কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের আর সাবধান হও। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্ট প্রচার’ (মায়েদা ৫/৯২)।

যারা কুরআন মানবেন হাদীছ মানবেন না তাদের প্রতি আল্লাহর আদেশ, যেন রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করি এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ’ (আনফাল ৮/২০)।

বর্তমানে রাসূল (ছাঃ) জীবিত নেই। কিন্তু তাঁর অসংখ্য হাদীছ/ সুন্নাহ জীবিত রয়েছে। আয়াতের আলোকে এটাই অনুধাবন হয় যে, তাঁর সুন্নাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে। অতএব হাদীছ অস্বীকারকারীরা সাবধান!

আল্লাহর প্রতি ইখলাছ ও রাসূলের প্রতি  আনুগত্যের ব্যাপারে মানুষের অবস্থান চারটি পর্যায়ভুক্ত। যথা-

(১) কারো কারো ইখলাছ নেই, রাসূলের আনুগত্যও নেই, সে ব্যক্তি মুশরিক, কাফের।

(২) কারো কারো ইখলাছ আছে, কিন্তু রাসূলের আনুগত্য নেই, সে ব্যক্তি বিদ’আতকারী।

(৩) কারো কারো ইখলাছ নেই, কিন্তু রাসূলের আনুগত্য আছে (প্রকাশ্যে), সে ব্যক্তি আক্বীদাগত মুনাফেক্ব

(৪) কারো কারো ইখলাছও আছে এবং  রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণও আছে, সে ব্যক্তি হ’ল প্রকৃত মুমিন’ (তাজরীদুত তাওহীদিল মুফীদ)।

মুনাফেক্বী দু’প্রকারঃ

১। বিশ্বাসগত বা আক্বীদাগত মুনাফেকী

২৷ আমলগত বা কর্মগত মুনাফেক্বী।

তন্মধ্যে বিশ্বাসগত মোনাফেকী ছয় প্রকার, এর যে কোন একটা কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে নিক্ষিপ্ত হবে।

১. রাসূল (ছাঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
২. রাসূল (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩. রাসূল (ছাঃ)-কে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৪. রাসূল (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৫. রাসূল (ছাঃ)-এর দ্বীনের অবনতিতে খুশী হওয়া।
৬. রাসূল (ছাঃ)-এর দ্বীনের জয়ে অসন্তুষ্ট হওয়া। আর কার্যগত মুনাফেকীঃ এ ধরণের মুনাফেকী পাঁচ ভাবে হয়ে থাকেঃ এর প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীঃ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুনাফিকের নিদর্শন হলো তিনটিঃ কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে খিয়ানত করে’। (বুখারী হা/৩৩; মুসলিম হা/৫৯)।

যে সকল ব্যক্তি শুধু কুরআনকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছকে উপেক্ষা করবে, তারাও মূর্খ ও পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আবু রাফে‘ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِى مَا وَجَدْنَا فِى كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ، رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاؤُدَ وَالتِّرْمِذِىُّ.

‘আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে, আমি এসব কিছু জানিনা। যা আল্লাহ্র কিতাবে পাব, তারই আমরা অনুসরণ করব’। (আহমাদ হা/ ২৩৯১২; আবুদাঊদ হা/৪৬০৫; তিরমিযী হা/ ২৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১৩; বায়হাক্বী দালায়েল হা/২৯৩৪; সনদ ছহীহ)।

বছরার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবেঈ বিদ্বান আইয়ূব সাখতিয়ানী (৬৮- ১৩১ হিঃ) নিজ শহরের লোকদের চূড়ান্তভাবে বলে দেন যে, إِذَا حَدَّثْتَ الرَّجُلَ بِالسُّنَّةِ فَقَالَ: دَعْنَا مِنْ هَذَا وَحَدِّثْنَا مِنَ الْقُرْآنِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ ضَآلٌّ وَمُضِلٌّ- ‘যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে হাদীছ শুনাবে, তখন সে যদি বলে যে, ছাড় এসব, আমাদেরকে কুরআন শুনাও, তখন তুমি জেনো যে, ঐ লোকটি নিজে পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্টকারী’। (ছালাহুদ্দীন মকবূল আহমাদ, যাওয়াবে’ ফী ওয়াজহিস সুন্নাহ (রিয়াদ : দার আলমিল কুতুব) তাবি, পৃ: ৪৬।)

এ উম্মাহর সকল ব্যক্তিই আল্লাহর রহমতে ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুপারিশে জান্নাতে যাবে। তারা ব্যতীত, যারা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে অস্বীকার করার মাধ্যমে পরিত্যাগ করে। আবার কারো স্বকপোল কল্পিত রায়-কিয়াসের অনুসরণ করে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্য উম্মাত ও আল্লাহ  অকৃতজ্ঞ বান্দা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى ‘আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে তারা ব্যতীত। সাহাবাগণ বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেন,  مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى. ‘যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে’ (বুখারী হা/৭২৮০)।

হাদীছ অস্বীকারকারী স্পষ্ট কাফের, কেননা তা রাসূল (ছাঃ)-এর রিসালাতকেই অস্বীকার করার শামিল। কেননা ‘হাদীছ’ সরাসরি আল্লাহর ‘অহি’, কুরআন ও হাদীছ একই নবীর মাধ্যমে এসেছে। আল্লাহ বলেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى ، إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُوحَى ‘রাসূল তাঁর ইচ্ছামত কিছু বলেন না। কেবলমাত্র অতটুকু বলেন, যতটুকু তাঁর নিকটে ‘অহি’ করা হয়’ (নাজম ৫৩/৩-৪)।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং এর উপর অবিচল রাখুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top