হারাম অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়নি কা‘বা ঘর

জাহেলী যুগেও হারাম অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়নি কা‘বা বা আল্লাহর ঘর। কা‘বাগৃহ পুনঃর্নির্মাণের উদ্দেশ্যে কুরায়েশ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসে স্থির করেন যে, এর নির্মাণ কাজে কারু কোনরূপ হারাম মাল ব্যয় করা হবে না। তারা বলেন, হে কুরায়েশগণ! তোমরা এর নির্মাণ কাজে তোমাদের পবিত্র উপার্জন থেকে ব্যয় কর। এর মধ্যে ব্যভিচারের অর্থ, সূদের অর্থ, কারু প্রতি যুলুমের অর্থ মিশ্রিত করোনা’ (ইবনু হিশাম ১/১৯৪)।

হারাম অর্থ দিয়ে দুনিয়ার সমস্ত কিছু ক্রয় করা সম্ভব, কিন্তু জান্নাত নয়। মসজিদ জান্নাতের অংশ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পঙ্গপালের ঢিবির ন্যায় বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ইবনু হিববান হা/১৬১৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৭১)।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ‘যে ব্যক্তি পাখির ডিম দেওয়ার বাসার ন্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’ (আহমাদ হা/২১৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৭২)।

সুতরাং যে ব্যক্তি ছওয়াবের আশায় একটি ছোট মসজিদও নির্মাণ করবে, এমনকি নির্মাণকাজে স্বল্প অর্থ বা ক্ষুদ্র শ্রম দিয়েও সহযোগিতা করবে, সেও উক্ত মর্যাদা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৩৭)।

আমাদের প্রত্যেকেও উচিৎ হালাল অর্থ ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহকে করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ মুছে দেব’ (মায়েদা ৫/১২)। অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দেবেন, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ (কারো কাজের) অতি মর্যাদাদানকারী, সহনশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)।

দান ছাদাক্বাহ হালাল বৈ হারাম আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ جَمَعَ مَالًا حَرَامًا ثُمَّ تَصَدَّقَ بِهِ لَمْ يَكُنْ لَهُ فِيهِ أَجْرٌ، وَكَانَ إِصْرُهُ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করল এবং তা দ্বারা ছাদাক্বাহ করল। তার জন্য কোন নেকী নেই। বরং এর গোনাহ তার উপরেই বর্তাবে’ (ছহীহ ইবনে হিববান হা/৩৩৫৬, ছহীহুত তারগীব হা/৮৮০)। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বইবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)।

হালাল টাকায় গড়ব মসজিদ
হে দাতা দ্রুত কর দান,
হারামকে না বলিব
মন্দ পথে না চলিব
যতদিন আছে দেহে প্রাণ।

কা‘বার আকৃতি :

কুরায়েশ নির্মিত চতুষ্কোণ বিশিষ্ট কা‘বা (যার রূপ বর্তমানে রয়েছে), তার দেওয়ালের  উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়াল দশ দশ মিটার এবং পূর্ব ও পশ্চিম দেওয়াল বারো বারো মিটার করে প্রশস্ত। ৬টি খাম্বার উপরে নির্মিত ছাদ। মাত্বাফ থেকে দেড় মিটার উচ্চতায় দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ‘রুকনে ইয়ামানী’ অবস্থিত। দরজার নীচের চৌকাঠ ২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত (আর[1]রাহীক্বুল মাকতুম পৃঃ ৬২)।

অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর ইচ্ছা ছিল, হাত্বীমকে অন্তর্ভুক্ত করে মূল ভিতের উপর কা‘বাগৃহ নির্মাণ করা, যা মাটি সমান হবে। যার পূর্ব দরজা দিয়ে মুছল্লী প্রবেশ করবে ও ছালাত শেষে পশ্চিম দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু কুরায়েশরা তা না করে অনেক উঁচুতে দরজা নির্মাণ করে। যাতে তাদের ইচ্ছার বাইরে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে’।

 খালা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এ হাদীছ শোনার পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) স্বীয় খেলাফতকালে (৬৪-৭৩ হিঃ) ৬৪ হিজরী সনে কা‘বাগৃহ ভেঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর ইচ্ছানুযায়ী তা পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু ৭৩ হিজরী সনে তিনি যুদ্ধে নিহত হ’লে উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশে গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তা পুনরায় ভেঙ্গে আগের মত হাত্বীমকে বাইরে রেখে নির্মাণ করেন। যা আজও রয়েছে।  পরবর্তীতে আব্বাসীয় খলীফা মাহদী ও হারূণ এটি পুনর্নির্মাণ করে রাসূল (ছাঃ)-এর ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.) তাদের বলেন, ‘আপনারা কা‘বাগৃহকে রাজা-বাদশাহদের খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করবেন না’। ফলে কা‘বাগৃহ ঐ অবস্থায় রয়ে যায়। ইবরাহীমী ভিতে আজও ফিরে আসেনি।

অতএব, দান-ছাদাক্বাহ হালাল উপার্জন থেকে দান করুন। অন্যথায় সব বৃথা হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top