যাকে ভালোবাসবেন তাকে জানিয়ে দিতে হবে :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, এক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিল। এ সময় অন্য এক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। লোকটি বলল, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি অবশ্যই এ ব্যক্তিকে ভালবাসি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَعْلَمْتَهُ. ‘তুমি কি তাকে তোমার ভালবাসার কথা জানিয়েছ’? সে বললো, না। তিনি বললেন, أَعْلِمْهُ. ‘তুমি তাকে জানিয়ে দাও’। বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে ঐ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, إِنِّى أُحِبُّكَ فِى اللهِ. أَحَبَّكَ الَّذِى أَحْبَبْتَنِى لَهُ. ‘আমি আপনাকে আল্লাহ্র জন্য ভালবাসি। জওয়াবে লোকটি বলল, যাঁর উদ্দেশ্যে আপনি আমাকে ভালবাসেন তিনিও আপনাকেও ভালবাসুন’। আবূদাঊদ হা/৫১২৫; হাসান ছহীহ।
অন্যত্র তিনি বলেন, আমি ছাহাবীদেরকে একটি বিষয়ে এতবেশী আনন্দিত দেখলাম যে, অন্য কোন বিষয়ে এমন আনন্দিত হ’তে দেখিনি। আর তা হ’ল, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তার সৎকাজের জন্য ভালবাসে, কিন্তু সে তার মত সৎকাজ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ. ‘প্রত্যেকে যাকে ভালবাসে, সে তার সাথী হবে’। (আবূদাঊদ হা/৫১২৭, হাসান ছহীহ।
অন্য বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ. ‘প্রত্যেক মানুষ তার সাথী হবে, সে যাকে ভালবাসে’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫০০৮।)
সুসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু নয়, বিপদে বন্ধুর যথার্থ পরিচয়। শুধু বন্ধুত্বই নয়, আপনার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীও এই কথার আওতায় এসে যায়। সাবধান! হে বন্ধুগণ, যারা মানুষকে দুনিয়ার স্বার্থে একে অপরকে ভালবাস। কারণ এই ভালবাসা ক্ষণস্থায়ী। বরং আল্লাহর উদ্দেশ্যে, দ্বীনের স্বার্থে ভালবাসাই হলো প্রকৃত ভালবাসা। এটাও মনে রাখা জরুরী, শুধু ধন-সম্পদ দানের নামও ছাদাক্বাহ নয়। বরং মানুষের সাথে ভালভাবে কথা বলা ও ব্যবহার করাও ছাদাক্বাহ।
বন্ধুত্ব করুন তার সাথে যে জান্নাতের পথ দেখায় । আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ’’তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না, বরং আল্লাহই যাকে চান সৎপথে পরিচালিত করেন, সৎপথপ্রাপ্তদের তিনি ভাল করেই জানেন’’ (আল-ক্বাছাছ ৫৬)।
ভালবাসার মানদণ্ড :
কাউকে ভালবাসতে হলে সেই ভালবাসার মানদণ্ড থাকতে হবে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক। কাউকে ভালবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালবাসা রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ ‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষ রূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়’ (বাক্বারাহ: ২/১৬৫)। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছ:) বলেছেন, ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا ، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ ‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।’ (বুখারী, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়, হা /১৬, ২১ ও ৬৯৪১) । কোন ব্যক্তির সাথে শত্রুতা রাখার মানদন্ড হলো একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে অথবা শত্রুতা রাখতে হবে। এটাই শ্রেষ্ঠতম কর্মপন্থা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেছেন, إِنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِى اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِى اللَّهِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা পোষন করা।’ (আহমদ, মিশকাত হা/৫০২১) ।
আর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলত হ’ল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেছেন, إِنَ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِى ظِلِّى يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّى ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০০৬)।