দুনিয়াতে উপকারকারীর প্রতি সদা কৃতজ্ঞতাবোধ রাখা উচিৎ। উসমান (রাঃ)-এর মত উপকারী ব্যক্তির অবশেষে যে পরিণতি হয়েছিল তা ইসলামের ইতিহাসকে কলংকিত করে। এ কৃতঘ্ন জাতির তবুও শিক্ষা গ্রহণ করেনি সেদিন। তাই সেদিন তিনি জনতার সামনে আফসোস করে কিছু স্মৃতিচারণ করেন সবার সামনে। যাতে করে জাতি অনুধাবন করে যে উসমান (রাঃ)-কে ছিলেন? সেই স্মৃতিচারণ গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
আবু সালামা বিন আবদুর রহমান বলেন, উসমান (রাঃ) যখন অবরুদ্ধ, তখন প্রাসাদ থেকে নিচের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করি, হেরার দিনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কে ছিল, যখন পাহাড় কেঁপে উঠলো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পা দিয়ে লাথি মারলেন, তারপর বললেন, থামো হেরা, তোমার ওপরে একজন নবী, একজন সিদ্দিক ও একজন শহীদ ছাড়া আর কেউ নেই। তখন আমি তার সাথেই ছিলাম। উসমানের এ কথায় অনেকেই কসম খেয়ে সমর্থন জানালো।
উসমান (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, বাইয়াতুর রিদওয়ানের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কে ছিল? যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মক্কার মুশরিকদের নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, এটা আমার হাত, আর এটা উসমানের হাত। এভাবে আমার জন্য বাইয়াত নিলেন। এ কথার পক্ষেও সমবেত লোকদের অনেকে সায় দিল। উসমান (রাঃ) বললেন, সেই সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কে ছিল যখন তিনি বললেন, এই বাড়িটি কিনে দিয়ে কে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করিয়ে দেবে? এর বিনিময়ে সে জান্নাতে একটা বাড়ি পাবে। তখন আমি নিজের টাকা দিয়ে বাড়িটি কিনে দিলাম এবং তা দ্বারা মসজিদের সম্প্রসারণ করলাম। অনেকেই তার এ কথার পক্ষে সাক্ষ্য দিল।
উসমান (রাঃ) পুনরায় বললেন, মুসিবতের বাহিনীর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কে ছিল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজকে কে এমন দান করবে, যা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে গেছে? আমি তৎক্ষণাত অর্ধেক বাহিনীকে নিজের টাকায় যাবতীয় প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করলাম। আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি সেই জলাশয়টির কাছে কে ছিল, যার পানি পথিকের নিকট বিক্রি করা হতো? আমি নিজের টাকা দিয়ে সেটি কিনে দিয়েছি। এভাবে মুসাফিরের জন্য সেই জলাশয়কে অবাধ করে দিয়েছি। (যার ফলে এখন সে জলাশয় থেকে বিনা মূল্যে পানি পাওয়া যায়) এ সময়ও বহু লোক তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিল’ (মুসনাদে আহমাদ হা/৪২০)।
অপর হাদীসে এসেছে, আবু উমামা বিন সাহল (রাঃ) বলেন, উসমান যখন তাঁর বাড়িতে অবরুদ্ধ, তখন আমরা তাঁর সাথে ছিলাম। অতঃপর তিনি এমন একটা কক্ষে প্রবেশ করলেন, যেখানে তিনি প্রবেশ করলে তাঁর আওয়ায প্রাসাদের ওপর অবস্থানকারীরা শুনতে পেত। তিনি সেখানে প্রবেশ করে আবার আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন। তিনি বললেন, অবরোধকারীরা আমাকে হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। আমরা বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনার পক্ষে আল্লাহই ওদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (অর্থাৎ প্রতিহত করবেন।) উসমান (রাঃ) বললেন, আমাকে কোন অপরাধে তারা হত্যা করবে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তিনটি কারণের যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ মুসলিম হওয়ার পর কাফির হওয়া, বিয়ে করার পর ব্যভিচার করা এবং কাউকে হত্যা করা। আল্লাহর কসম, আল্লাহ যেদিন আমাকে হিদায়াত করেছেন, তারপর থেকে আমি কখনো পছন্দ করিনি যে, আমার এই দীনের পরিবর্তে অন্য কোন দীন আমার হোক। জাহিলিয়াতে বা ইসলামে কখনো আমি ব্যভিচার করিনি, আর কাউকে আমি হত্যাও করিনি। তাহলে তারা কী কারণে আমাকে হত্যা করবে? (মুসনাদে আহমাদ হা/৪৩৭)।
মানুষ দিনে দিনে অপর মানুষের প্রতি উৃপকার করতে অনিহা প্রকাশ করছেন কারণ মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ জীব। এদের অধিকাংশ ব্যক্তি সদা উপকারকারীর ক্ষতি করার প্রতি সচেষ্ট হয়, যা সমীচীন নহে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّهٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ ‘নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ’ (আদিয়াত ১০০/৬)।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং উপকারকারীর প্রতি সদা কৃতজ্ঞ রাখুন, আমীন।