ওযনে কম নয়, বেশী দেন : ইনসাফ-আদল প্রতিষ্ঠা করুন!

আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা হ’ল মুমিনের জীবনের যত কাজ তা সহজ করে দেয়া। আর শয়তানের কাজ হ’ল মানুষকে উল্টা দিকে প্রবাহিত করা এবং সৎ কাজে মন্দের সংমিশ্রণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ ١ ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكۡتَالُواْ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسۡتَوۡفُونَ ٢ وَإِذَا كَالُوهُمۡ أَو وَّزَنُوهُمۡ يُخۡسِرُونَ “ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়”(মুতাফফিফীন, ১-৩)। অথচ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন তোমরা এমটি করো না। বরং একটু বেশী দাও। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “‏ إِذَا وَزَنْتُمْ فَأَرْجِحُوا ‏”‏ ‏.‏ ‘তোমরা যখন ওযন করে দিবে, তখন একটু বেশীই দিবে’ (ইবনু মাজাহ হা/২২২২; মুসলিম হা/৭১৫)।

হাদীছ থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ:
১। মহান আল্লাহর সাথে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির সুসম্পর্ক স্থাপিত রয়েছে। তাই তার মধ্যে সর্বদা বিরাজ করে ন্যায়বিচার ও সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তবে ন্যায়বিচারের বিষয়টির যোগাযোগ রয়েছে মানসিক অবস্থার সাথে এবং সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার যোগাযোগ রয়েছে সঠিক বুদ্ধির সাথে। তাই প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি কোনো লোকের অধিকার নষ্ট করে না বা কোনো ব্যক্তিকে ওজনে কোনো দিন কিছু কম দেয় না।
আর তাতফীফ বলা হয়: ওজন করার সময় লোকের কাছ থেকে নিজের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নেওয়া এবং অন্য লোকের অধিকার নষ্ট করে তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে না দেওয়া বা তাদেরকে ওজনে কম দেওয়া।

২। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন নিজের অন্তরকে উদারতায় পূর্ণ করে রাখে। আর নিজের ভালো আচরণ ও উদারতার দ্বারা মানুষের উপকার করে। এবং তাদেরকে তাদের অধিকার বা প্রাপ্য সম্পূর্ণরূপে দেওয়ার সাথে সাথে আরো কিছূ অংশ বেশি প্রদান করে।

৩। যে ব্যক্তি ওজনে কম দেয় তার সাথে যারা আদান-প্রদান করে বা দেওয়া-নেওয়া করে তাদেরকে সে তাদের প্রাপ্য সব সময় কম দিয়ে থাকে। এবং সে যখন তাদের কাছ থেকে কিছু ক্রয় করে, তখন সে নিজের প্রাপ্য তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। এবং সে যখন তাদের কাছে কিছু বিক্রয় করে, তখন সে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সব সময় কিছু কম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্য মুসলিম ব্যক্তি ক্রয়বিক্রয় এবং আদান-প্রদান বা দেওয়া-নেওয়ার সময় সততা বজায় রাখে; সুতরাং সে কোনো মানুষকে প্রতারিত করে না বা ধোঁকা দেয় না।

এই জন্যই বলা উচিৎ ‘‘অন্যের অধিকারের প্রতি নিজের অন্তরকে প্রশস্ত করা উচিৎ। যাতে করে ন্যায় ও নিষ্ঠা অন্যের মাঝে নিজের প্রভাব বিস্তার করে এবং সুধারনা পোষণ করে’’। – অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রহমত তাঁর বান্দাদের অন্তরের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দান করে থাকেন। আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাদের প্রতি দয়া করে থাকেন’(বুখারী হা/৫৬৫৫)। সর্বদা আদল ও ইনসাফের ভিত্তিতে মানুষ নয় শুধু, সকল জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা উচিৎ। এতে আল্লাহও আপনার প্রতি দয়াশীল হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top