ক্ষণস্থায়ী জীবন নয়, চিরস্থায়ী জীবনকে ভালোবাসুন!

দুনিয়ার জীবন হলো ক্ষণস্থায়ী জীবন। কিন্তু পরোকালিন জীবন হলো চিরস্থায়ী জীবন। আর তাই দুনিয়াকে নয়, আখিরাতকে ভালোবাসুন! ছাহারীরা কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতকে দেখতেন তা জেনে নিন-
🌷 হানযালা ইবনু রুবাই আল-উসাইদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
👉 একদিন আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবার অভিমুখে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমার সাথে আবুবকর (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হ’ল।
👉 তিনি বললেন, কি হয়েছে হানযালা?
👉 আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে।
👉 তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্! বল কি হানযালা?
👉 আমি বললাম, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন, তখন যেন সেগুলো আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাই। কিন্তু আমরা যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসি এবং স্ত্রী-সন্তান ও ক্ষেত-খামারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সেসবের অনেক কিছুই ভুলে যাই।
👉 তখন আবুবকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরাও এরূপ অবস্থার সম্মুখীন হই। অতঃপর আমি ও আবুবকর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে গেলাম।
👉 রাসূল (ছাঃ) আমাকে দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে হানযালা!
👉 আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে।
👉 তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ কেমন কথা?
👉 আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যখন আমরা আপনার নিকটে থাকি এবং আপনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, তখন যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাই। কিন্তু যখন আমরা আপনার নিকট থেকে বের হয়ে আসি এবং স্ত্রী-সন্তান ও ক্ষেত-খামারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন সেসবের অনেক কিছুই ভুলে যাই।
👉 রাসূল (ছাঃ) বললেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, যদি তোমরা সর্বদা ঐরূপ থাকতে, যেরূপ আমার নিকট থাক এবং সর্বদা যিকির-আযকারে ডুবে থাকতে, নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানা ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুছাফাহা করতেন। কিন্তু কখনও ঐরূপ, কখনও এরূপ হবেই হে হানযালা! এটা তিনি তিনবার বললেন’। অন্যত্র এসেছে, কিন্তু হে হানযালাহ! এক ঘণ্টা (আল্লাহর যিকরে) আর এক ঘণ্টা (দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করবে) অর্থাৎ আস্তে আস্তে (চেষ্টা কর)। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।  (মুসলিম হা/২৭৫০; তিরমিযী হা/২৫২৪; মিশকাত হা/২২৬৮)।
💐 আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  «مَنْ أَحَبَّ دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى» . ‘যে ব্যক্তি যতটুকু পরিমাণ দুনিয়াকে ভালোবাসে, সে ব্যক্তি ততটুকু পরিমাণ আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যতটুকু পরিমাণ আখিরাতকে ভালোবাসে, সে ব্যক্তি ততটুকু পরিমাণ দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অতএব যা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে, তার উপর তাকে প্রাধান্য দাও যা চিরস্থায়ী থাকবে’ *(মুসনাদে আহমাদ ১৯৭১২, শুআবুল ঈমান ১০৩৩৭, মিশকাত হা/৫১৭৯)*।

💐 আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, «بَادرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتناً كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعرْض من الدُّنْيَا» . ‘তোমরা ভালো ’আমলের দিকে দ্রুত অগবর্তী হও ঘুটঘুটে তিমির রাত্রির অংশ সদৃশ ফিতনার পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন কোন লোক ভোরে উঠবে ঈমানদার হয়ে আর সন্ধ্যা করবে কুফরী অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে মু’মিন অবস্থায় আর প্রভাতে উঠবে কাফির হয়ে। সে ইহকালীন সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দীন ও ঈমানকে বিক্রয় করে দেবে (মুসলিম হা/১৮৬; মিশকাত হা/৫৩৮৩)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top