আমাদের গোত্র সাদৃশ্য হলে ভালো ব্যক্তি, আর সাদৃশ্য না হলেই সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। এহেন হীন মনোভাব প্রদর্শনকারী ব্যক্তিরা ইহুদীদের সাদৃশ্য স্বরূপ অপবাদ ও কুৎসারটনাকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। আনাস (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সা’দৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল।
এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে। তারপর ইয়াহুদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনুু্ সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, ’’সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল’’ (বুখারী হা/৩৩২৯)।
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (বিধান) তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)।
আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম’ (আহমাদ হা/১৭২০৯; তিরমিযী হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪)।
অন্যত্র, রাসূল (ছা:) বলেন, যে ব্যক্তি যে জাতির (কওম) সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের দলভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়; বঙ্গানুবাদ হা/৪১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)।
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে কীভাবে কল্যাণ দান করবেন তা তিনিই একমাত্র অবগত। আমাদের কাছে যা অকল্যাণ ও ঘৃণিত তা হয়তবা সংশোধনের নিমিত্তে তা অতিব কল্যাণও হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে…. এ থেকে পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধান করা উচিৎ। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।