জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কাউকে দেয়া হয়নি।
১. আমাকে এক মাসের দূরত্বের মধ্যে রু’ব (ভীতি) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে।
২. আমার জন্য মাটিকে মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ বানানো হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের কোন লোক যেখানেই সালাতের সময় হয়ে যাবে, সে যেন সেখানেই সালাত আদায় করে নেয়।
৩. আমার জন্য গনীমাতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে, যা ইতোপূর্বে কারো জন্য বৈধ ছিল না।
৪. আমাকে শাফাআতের অধিকার দেয়া হয়েছে।
৫. প্রত্যেক নবী প্রেরিত হয়েছেন কেবলমাত্র আপন আপন গোত্রের জন্য, কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানবজাতির জন্য।
(বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪৭)
অত্র হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে যা অন্যান্য নবীদের দেয়া হয়নি।
প্রথম বৈশিষ্ট্য: শত্রুর মনে ভীতি। এক মাসের রাস্তার দূরত্ব পর্যন্ত এই ভীতির প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ শত্রু অনেক দূরে থাকতেই রাসূল (ছা.) এর নাম শুনলে তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: শারহুস্ সুন্নাহয় বলেন, আহলে কিতাবদেরকে তাদের গীর্জা ও মঠ তথা “ইবাদাতশালা ছাড়া উপাসনা অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের জন্য ‘ইবাদাতশালা ছাড়া উপাসনা আদায় বৈধ নয়। কিন্তু এই উম্মতের ওপর সহজ করার জন্য আল্লাহ তা’আলা যে কোন স্থানে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন। কেবল অপবিত্র জায়গা, কবর ও বাথরুম ব্যতীত। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের আরেকটি অংশ হলো, মাটিকে পবিত্রতার মাধ্যম বানানো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য তায়াম্মুম করে পবিত্র হওয়ার সুযোগ দান। কারো কারো মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পবিত্র মাটিকে তাদের জন্য সালাতের স্থান বানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ যে কোন পবিত্র ভূমিতে তারা সালাত আদায় করতে পারে।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: গনীমাতের সম্পদ বৈধ হওয়া, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ অন্যান্য নবী বা উম্মতের জন্য বৈধ ছিল না।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: রাসূল (ছা.) -কে সুপারিশের অনুমতি দেয়া, এটা বিশেষ সুপারিশ। কিয়ামত দিবসে হাশরের ময়দানের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিচার কার্য শুরু করার বিশেষ সুপারিশটি কেবল রাসূল (ছা.) করবেন। অন্য কেউ এই সুপারিশ করার সাহস করবে না।
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য: প্রত্যেক নবী নির্ধারিত জাতি বা বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য পাঠানো হয়েছে। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (ছা.) -কে পুরো পৃথিবীর জন্য এবং সকল জাতির জন্য পাঠানো হয়েছে।
অন্যত্র এসেছে. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) ও বলেছেন, আমাকে ছয়টি বিষয়ে অন্যান্য নবীদের ওপরে সম্মান দেয়া হয়েছে।
১. আমি জাওয়ামিউল কালিম প্রাপ্ত হয়েছি (অর্থাৎ আমাকে অল্প কথায় ব্যাপক অর্থ ব্যক্ত করার দক্ষতা দেয়া হয়েছে)
২. রু’ব (ভীতি) দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
৩. আমার জন্য গনীমাতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে।
৪. সমগ্র জমিন আমার জন্য মাসজিদ ও পবিত্রতার উপাদান করা হয়েছে।
৫. গোটা বিশ্বের সৃষ্টিজীবের জন্য আমাকে (নবী রূপে) প্রেরণ করা হয়েছে এবং
৬. নবী আগমনের সিলসিলা আমার মাধ্যমেই শেষ করা হয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪৮)
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। আর আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে ছয়টি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হলো। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বরাতে মিরক্বাতে লিখেন, এই মতভেদ সাংঘর্ষিকমূলক মতভেদ নয় বরং এটা সময়ের মতভেদ। পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হাদীস পূর্বের এবং ছয়ের হাদীস পরের। প্রথমে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, তখন রাসূল (সা.) পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের খবর দিয়েছেন। পরবর্তীতে আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেয়া হলে রাসূল (সা.) ছয়টির সংবাদ দেন। খুলাসাহ্ গ্রন্থকার বলেন, পাঁচ এবং ছয়ের বর্ণনা স্থানের উপযুক্ততা হিসেবে হতে পারে। তাই পূর্বের হাদীস এবং পরের হাদীস মিলে সাতটি বৈশিষ্ট্য হয়।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, আমি বলি, পূর্বের হাদীস এবং পরের হাদীস মিলে সাতটির বেশি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।
(أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ) “আমাকে দেয়া হয়েছে সারগর্ভ কথা” জাওয়ামিউল কালিম বা সারগর্ভ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কম শব্দে বেশি অর্থ প্রকাশ করে এমন কথা বলার যোগ্যতা। শারহুস্ সুন্নাহয় লিখেন, সারগর্ভ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে অল্প শব্দের মধ্যে অনেক অর্থের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)