(১) কল্যাণ চিরদিন কল্যাণ বয়ে আনে। কখনও অকল্যাণ নেই। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য ভয় করি এ ব্যাপারে যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার কল্যাণের (মঙ্গলের) দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন। এতে তিনি প্রথমে একটির কথা বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা করেন। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ’ইয়া রাসূলাল্লাহ! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে? ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন, আমরা বললাম, তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। সমস্ত লোকও এমনভাবে নীরবতা অবলম্বন করল, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখের ঘাম মুছে বললেন, ” أَيْنَ السَّائِلُ آنِفًا أَوَخَيْرٌ هُوَ ـ ثَلاَثًا ـ إِنَّ الْخَيْرَ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِالْخَيْرِ، وَإِنَّهُ كُلُّ مَا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ مَا يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ كُلَّمَا أَكَلَتْ، حَتَّى إِذَا امْتَلأَتْ خَاصِرَتَاهَا اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ، فَثَلَطَتْ وَبَالَتْ ثُمَّ رَتَعَتْ، وَإِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، وَنِعْمَ صَاحِبُ الْمُسْلِمِ لِمَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ، فَجَعَلَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ، وَمَنْ لَمْ يَأْخُذْهُ بِحَقِّهِ فَهْوَ كَالآكِلِ الَّذِي لاَ يَشْبَعُ، وَيَكُونُ عَلَيْهِ شَهِيدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ”. এখনকার সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তাঁকে কল্যাণকর? তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই বয়ে আনে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বসন্তকালীন উদ্ভিদ (পশুকে) ধ্বংস অথবা ধ্বংসোন্মুখ করে ফেলে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এই পরিমাণ খায় জাতে তাঁর ক্ষুধা মিটে, তারপর রোদ পোহায় এবং মলমুত্র ত্যাগ করে, এরপর আবার ঘাস খায়। নিশ্চয়ই এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়ত তা উপার্জন করেছে এবং আল্লাহর পথে, ইয়াতিম ও মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। আর যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে অর্জন করে তাঁর দৃষ্টান্ত এমন ভক্ষণকারীর ন্যায় যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের দিন তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’ (বুখারী হা/২৮৪২)।
(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের জন্য। একজনের জন্য পুরস্কার; একজনের জন্য আবরণ এবং একজনের জন্য (পাপের) বোঝা। আর যার জন্য পুরস্কার, সে হল, ঐ ব্যাক্তি যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্য) ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়, আর ঘোড়াটি সে চারণভূমি বা বাগানে ঘাস খায়, তবে এর জন্য তাঁর নেকী রয়েছে। আর ঘোড়াটি যদি রশি ছিঁড়ে এক বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপ সমূহের বিনিময়ে তাঁর জন্য নেকী রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তাঁর মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছা করেনি, তবে এর ফলেও তাঁর জন্য নেকী রয়েছে। আর যে ব্যাক্তি অহংকার, লোকিকতা প্রদর্শন এবং মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা (পাপের) বোঝা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থবোধক এই একটি আয়াত ছাড়া। (আল্লাহর বাণীঃ) কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে। (৯৯ঃ ৭-৮) (বুখারী হা/২৮৬০)।
(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি একটি মাঠে অবস্থান করছিল। এমন সময় সে মেঘের মধ্যে একটি শব্দ শুনতে পেল : ‘অমুকের বাগানে পানি দাও’। অতঃপর মেঘমালা সেই দিকে সরে গেল এবং এক প্রস্তরময় স্থানে বৃষ্টি বর্ষণ করল। তখন দেখা গেল, সেখানকার নালাগুলির মধ্যে একটি নালা সমস্ত পানি নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল। তখন সে ব্যক্তি পানির দিকে এগিয়ে গেল এবং দেখল যে, এক ব্যক্তি তার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচযন্ত্র দ্বারা পানি সেচ দিচ্ছে। তখন সে তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? ব্যক্তিটি জবাবে বলল, আমার নাম অমুক- যে নাম সে মেঘের মধ্যে শুনেছিল। তখন লোকটি বলল : হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞেস করলে? সে বলল : এই পানি যেই মেঘের তার মধ্যে আমি একটি শব্দ শুনেছি যে, তোমার নাম করে বলা হয়েছে, অমুকের বাগানে পানি দাও! (হে আল্লাহর বান্দা, বল) তুমি তা দ্বারা কি কি কাজ কর? সে উত্তরে বলল, যখন তুমি এ কথা বললে তখন শুনো, এই বৃষ্টির পানিতে যা উৎপাদন হয়, তার প্রতি আমি দৃষ্টিপাত করি এবং তা ভাগ করি। এক ভাগ দান করি, একভাগ আমি ও আমার পরিবার খাই এবং অপর ভাগ জমিতে লাগাই (মুসলিম হা/২৯৮৪, মিশকাত হা/১৮৭৭ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘দানের প্রশংসা ও কৃপণতার নিন্দা’ অনুচ্ছেদ) ।