’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা কবূল করেন। [ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৩, সহীহ আল জামি‘ হা/১৯০৩, মিশকাত হা/২৩৪৩]
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ) কারী বলেন, বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাদীসাংশে তাওবাহ্ কবূলের ব্যাপারটি মুত্বলাক বা সাধারণভাবে, আর কতিপয় হানাফী একে কাফিরের সাথে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।
আমাদের শায়খ বলেন, বাহ্যিকদৃষ্টিতে প্রথমটি নির্ভরযোগ্য। (مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তার আত্মা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছবে, অতঃপর তা ঐ বস্ত্তর স্থানে পরিণত না হবে যার কারণে রুগী গড়গড় বা প্রতিধ্বনি করে থাকে। غر غرة বলা হয় পানীয় বস্ত্তকে মুখের মাঝে রাখা এবং কণ্ঠনালীর গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো এবং কণ্ঠনালীর ভিতরে না যাওয়া এবং ঐ বস্ত্ত যার কারণে প্রতিধ্বনি কারী প্রতিধ্বনি করে থাকে তাকে ‘আরবদের ভাষায় লাদূদ, লা‘ঊক এবং সা‘ঊত্ব বলা হয়। উদ্দেশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরকালের অবস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ না করবে।
‘আল্লামা কারী বলেন, অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হবে। কেননা মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়ার পর ব্যক্তির তাওবাহকে তাওবাহ্ গণ্য করা হবে না।
এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, ‘‘আর যারা পাপ কর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে আমি এখন তাওবা করব তাদের কোন তাওবাহ্ নেই এবং কাফির অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের কোন তাওবাহ্ নেই।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৮)
তুরবিশতী বলেন, (مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) এর অর্থ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে মৃত্যু আগমন না করবে। কেননা ব্যক্তির কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন সে প্রতিধ্বনি করে থাকে। অতঃপর যখন সে মৃত্যু, জীবন অবসান সম্পর্কে জানতে পারে, সুনিশ্চিত হতে পারে তখন তার তাওবাহ্ গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন, যদিও আমরা মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন অসম্ভব সম্পর্কে নিশ্চিত এবং তার তাওবাহ্ কবূলের বিষয়টি অস্বীকার করি রহমাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং ব্যক্তি ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তথাপিও আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আশা করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না তবে শির্ক ছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। বুঝা গেল, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার সময় তাওবাহ্ উপকারে আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে কেবল ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে, অতঃপর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৌশলী। আর ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না যারা মন্দকর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে যে, আমি এখন তাওবাহ্ করব।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭-১৮)
জমহূর মুফাসসিরীনদের নিকটে অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ বলতে, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার পূর্বে তাওবাহ্ করা, অর্থাৎ- মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করা। ‘ইকরিমাহ্ বলেন, মরণের পূর্বে। যাহহাক বলেন, মালাকুল মাওতকে স্বচক্ষে দেখার পূর্বে। এ হল অনতিবিলম্বে তাওবাহকারীর অবস্থা। পক্ষান্তরে মৃত্যু সংঘটিত হওয়াকালে যে ব্যক্তি বলবে, আমি এখন তাওবাহ্ করব তার তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না। কেননা ওটা আবশ্যকীয় তাওবাহ্ স্বেচ্ছাধীন না। কেননা সেই তাওবাহ্ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পর, কিয়ামতের দিন এবং আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখার পর তাওবাহ্ করার মতো। একমতে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ করার অর্থ হল, গুনাহের উপর স্থির না হয়ে গুনাহের পরপরই তাওবাহ্ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্তই কবুল করে থাকেন, যতক্ষণ না মৃত্যুর উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়। [তিরমিযী হা/৩৫৩৭]
মৃত্যুকালীন উর্ধ্বশ্বাস বলতে সে সময়কে বুঝানো হয়েছে, যখন জান কবজ করার সময় ফিরিশতা সামনে এসে উপস্থিত হন। তখন কর্মজগত পৃথিবীর জীবন সমাপ্ত হয়ে আখেরাতের হুকুম-আহকাম আরম্ভ হয়ে যায়। কাজেই সে সময়কার কোন আমল গ্রহণযোগ্য নয়। এমন সময়ে যে লোক ঈমান গ্রহণ করে, তাকেও মুমিন বলা যাবে না এবং কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, ফিরআউনের এ ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমগ্র বিশ্ব মুসলিমের নির্দেশেও এটাই সুস্পষ্ট। আল্লাহ বলেন,
وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُهٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَكَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম আর ফির‘আওন ও তার সৈন্য সামন্ত ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘন ক’রে তাদের পেছনে ছুটল, অতঃপর যখন সে ডুবতে শুরু করল তখন সে বলল, ‘আমি ঈমান আনছি যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই যাঁর প্রতি বানী ইসরাঈল ঈমান এনেছে, আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ [ইউনুস ১০/৯০]
কোন একজন সালেহ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়- ما علامة قبول التوبة؟ “তওবা কবুলের আলামত কি?” জবাবে বলেন, ” أن يفتح عليك بابًا من الطاعة لم يكن لك قبل ذلك. “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তোমার জন্য সৎ আমলের এমন দরজা খুলে দেয় যা আগে তোমার কখনো নসীব হয়নি।” [তাশনীফ আল মাসামিঈ,যারকাশী ৪/৩৫৯]
গুণাহ হলে তা গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ সাথে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এতে কল্যাণ রয়েছে । আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ أَذْنَبَ فِى الدُّنْيَا ذَنْباً فَعُوقِبَ بِهِ فَاللَّهُ أَعْدَلُ مِنْ أَنْ يُثَنِّىَ عُقُوبَتَهُ عَلَى عَبْدِهِ وَمَنْ أَذْنَبَ ذَنْباً فِى الدُّنْيَا فَسَتَرَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَفَا عَنْهُ فَاللَّهُ أَكْرَمُ مِنْ أَنْ يَعُودَ فِى شَىْءٍ قَدْ عَفَا عَنْهُ ». ’’যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন গুনাহর কাজ করে ও তার শাস্তি ভোগ করে, আল্লাহ এত ন্যায়বিচারক যে, সেই বান্দাকে পুনরায় আর শাস্তি দেবেন না।
আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন গুনাহর কাজ করেছে এবং আল্লাহ তা লুকিয়ে রেখেছেন ও ক্ষমা করেছেন, আল্লাহ এত মহানুভব যে, তার যে গুনাহ ইতিপূর্বে মাফ করেছেন তার জন্য তাকে পুনরায় পাকড়াও করবেন না’’ (মুসনাদে আহমাদ হা/৭৭৫ ও ১৩৬৫; সনদ হাসান)।
তাওবা করার শর্ত ও দো‘আ :
প্রথম শর্ত – তাওবা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য হতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত – কৃত অপরাধের জন্য অপরাধী মনে করা এবং লজ্জিত হওয়া।
তৃতীয় শর্ত – তৎক্ষণাৎ গুনাহ বর্জন এবং পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
তাওবার দোআ :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ.
উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি’(৩ বার)।
অর্থ : ‘আমি আল্লাহ্র নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।
ফযীলত : (১) আগার আল মুযানী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى رَبِّكُمْ فَإِنِّى أَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ. ‘হে মানুষ! আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমিও দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; আহমাদ হা/১৭৮৮০)।
(২) বিলাল ইবনে ইয়াসার ইবনে যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়িদ বলেছেন, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন। ‘যে ব্যক্তি বলে أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ،। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়’ (তিরমিযী হা/৩৫৭৭; আবূদাঊদ হা/১৫১৭; মিশকাত হা/২৩৫৩; ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬২২)।
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ. ‘রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবাহ কবূল করেন’ (তিরমিযী হা/৩৫৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৩; মিশকাত হা/২৩৪৩; হাসান হাদীছ)।
(৪) রাসূল (ছাঃ) বলেন, طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِى صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا. ‘যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ ও আনন্দ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮১৮; নাসাঈ, মিশকাত হা/২৩৫৬)।
মূমুর্ষু অবস্থায় তালক্বীন পাঠ তওবার কারণ হয় :
তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করে দাও যারা মুমূর্ষুবস্থায় রয়েছে তাদেরকে মৃত্যু নাম রাখা হয় কেননা মৃত্যু তাদের সামনে উপস্থিত। আর তালকীন হলঃ মৃত শয্যায় শায়িত বক্তির সামনে তাকে স্মরণ করে দেয়া لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ এবং তার নিকট উচ্চারণ করা যাতে সে শুনে এবং অনুধাবন করতে পারে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ فَإِنَّهُ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلِمَتِهِ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ عِنْدَ الْمَوْتِ دَخَلَ الْجَنَّةَ يَوْمًا مِنَ الدَّهْرِ وَإِنْ أَصَابَهُ قَبْلَ ذَلِكَ مَا أَصَابَهُ. ‘তোমরা মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ তালক্বীন দাও। কেননা যে ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ শেষ বাক্য হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৬; তিরমিযী হা/৯৭৬; ইবনে হিব্বান হা/৩০০৪)।
নাববী (রহি.) বলেন, তালকীনের বিষয়টি নুদব তথা ভাল এরই উপর ‘উলামারা ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর অধিকবার মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন করাকে তারা অপছন্দ করেছেন যাতে মৃত ব্যক্তির কঠিন অবস্থার কারণে বিষয়টি ঘৃণা করতে পারে আর এমন কিছু বলতে পারে যা শোভনীয় নয়।
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ কারও মতে কালিমা দ্বারা কালিমায়ে শাহাদাত। তবে জমহূররা শুধুমাত্র لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ এর উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। আবার কেউ محمد رسول الله বৃদ্ধি করেছেন তার সাথে। কেননা তাওহীদ স্মরণ করা উদ্দেশ্য আর যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি কাফির হয় তাহলে তাকে কালিমায়ে শাহাদাত তালকীন দিতে হবে, কেননা তা ছাড়া সে মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
জান্নাতের চাবি হ’ল ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যার শেষ কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’(আবুদাঊদ হা/৩১১৬; মিশকাত হা/১৬২১)
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করবে খাস করে শাস্তির পূর্বে অথবা তাকে তার পাপনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে তার পরে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তবে প্রথমটিই বেশি প্রাধান্য অন্য মু’মিনের সাথে পার্থক্য সৃষ্টির জন্য যাদের শেষ বাক্য এই কালিমা ছিল না ।
ইবনে রাসলান বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের বিষয়টি যদি সে পাপী হয় এবং তাওবাকারী না হয় তাহলে প্রথমবারেই (জান্নাতে প্রবেশ) আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তির পরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। দ্বিতীয়তঃ সম্ভাবনা রয়েছে তার শেষ বাক্য কালিমার জন্য সম্মান স্বরূপ তাকে ক্ষমা করে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যা অন্য মু’মিন ব্যক্তির ক্ষেত্রে শেষ বাক্য কালিমা পড়ার তাওফীক হয়নি। আমি ভাষ্যকার এর নিকট দ্বিতীয় মতটিই গ্রহণযোগ্য।
ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ (রহঃ)-কে বলা হ’ল, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে প্রত্যেক চাবিরই দাঁত থাকে। যদি তুমি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও, তবে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবেনা’ (কালেমার দাঁত হ’ল নেক আমল)।৯ অন্যত্র এসেছে, জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (مخَلِصًا) دَخَلَ الْجَنَّةَ. ‘যে ব্যক্তি ইখলাছের সাথে বলবে,‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।১০
ব্যাখ্যা: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ জান্নাতের চাবী’’ তবে কেউ যেন এ ধোঁকায় পতিত না হয় যে, শুধুমাত্র এ কালিমাহ্ পাঠ করলেই তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে। আর কোন ‘আমল ছাড়াই প্রথম শ্রেণীর জান্নাতীদের সাথে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রত্যেক চাবীরই দাঁত থাকে যা দ্বারা দরজা খোলা যায়? অতএব তুমি যদি এমন চাবী নিয়ে আসতে পারো যাতে দাঁত আছে তাহলেই দরজা খুলবে। আর দাঁত দ্বারা উদ্দেশ্য এমন সৎ ‘আমল যার সাথে কোন অসৎ ‘আমল মিশ্রিত থাকবে না। এ হাদীসে সৎ ‘আমলকে চাবীর দাঁতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর যদি দন্তহীন চাবী নিয়ে আসো তাহলে তোমার জন্য দরজা খোলা হবে না। ফলে তুমি প্রথম শ্রেণীর লোকেদের সাথে জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। আর এটা অধিকাংশের বেলায় প্রযোজ্য। আর সঠিক কথা হলো কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে জড়িত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এটাই সালাফী আলেমদের অভিমত।
পরিশেষে, মূমুর্ষু ব্যক্তির প্রাণ ওষ্ঠাগত বা মালাকুল মউতকে দেখার পূর্বে তাওবা করত কাফের ব্যক্তি তালক্বীন ও শাহাদাত পাঠের মাধ্যমে স্বাক্ষ্য দিলে সে জান্নাতে যাবে। তবে মুসলিম ব্যক্তির জন্য মূমুর্ষু অবস্থায় তালক্বীন ওয়াজিব। কেননা এই তালক্বীন নাজাত বা শাফায়াতের উছীলা হয়ে যাবে। এছাড়া সর্বসম্মতভাবে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, ফেরাউন মালাকুল মউতকে দেখার পরে সাক্ষ্য দেয় শুধু আল্লাহর। সুতরাং তার তাওবা কবূল হয় নাই। এর সমর্থনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে কেবল ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবা গ্রহণ করা হবে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে, অতঃপর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৌশলী। আর ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না যারা মন্দকর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে যে, আমি এখন তাওবাহ্ করব।’’ (আন্ নিসা ৪ : ১৭-১৮)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকল মুমিন মুসলমানদের তাওবা কবুল করুন এবং জান্নাত নছীব করুন, আমীন।