দরসে হাদীস : মানুষের দৃঢ়তা ও প্রতিজ্ঞা অতিব নড়বড়ে

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, «لَمَّا صَوَّرَ اللَّهُ آدَمَ فِي الْجَنَّةِ تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ»  ‘আল্লাহ তা’আলা যখন জান্নাতে আদম (আঃ)-এর দেহ আকৃতি তৈরি করলেন এবং যতদিন ইচ্ছা তিনি এ অবস্থায় রেখে দিলেন, তখন ইবলীস উক্ত আকৃতির চতুস্পার্শ্বে ঘোরাফেরা করত এবং তার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল তার মধ্যস্থল শূন্য, তখন সে বুঝতে পারল যে, এটা এমন একটি সৃষ্টিজীব যে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না। (মুসলিম হা/২৬১১; ছহীহুল জামি‘ হা/৫২১১, মিশকাত হা/৫৭০২)

ব্যাখ্যা: “যখন আল্লাহ তা’আলা আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করলেন।” তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার কাছে হাদীসটি অত্যন্ত জটিল মনে হয়; কেননা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা’আলা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যখন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন তখন তিনি একজন জীবন্ত মানুষ। কুরআনের স্পষ্ট বাণী এ কথার সমর্থন করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন (وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ) “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো”- (সূরাহ্ আল-বাকারা ২ : ৩৫)। তবে মাটি থেকে সৃষ্টি ও জান্নাতে আকৃতি প্রদানের মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা মাটি থেকে অংশ নেয়া হয়েছে, তারপর তাকে খামীরের মতো করা হয়েছে, তারপর শুকানোর জন্য আরো কিছু দিন রাখা হয়েছে, এভাবে কয়েকটি ধাপ যাওয়ার পর যখন মানবিক রূপ গ্রহণের উপযুক্ত হয়েছে তখন তাকে জান্নাতে নিয়ে আকৃতি দেয়া ও তার মাঝে আত্মা ফুকা হয়েছে। আর উপরোক্ত আয়াত অর্থাৎ “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো।” এখানে এমন কিছু বুঝায় না যে, তার মাঝে আত্মা ফুকার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

(تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ) অর্থাৎ জান্নাতের যে কোন জায়গায় তাকে বিচরণ করতে ছেড়ে দিলেন। তবে নির্দিষ্ট গাছের কাছে যাওয়া নিষেধের ঘটনা আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ। তাই প্রকৃত অর্থ হবে, নিষিদ্ধ সেই গাছ ব্যতীত জান্নাতের যে কোন জায়গায় তার বিচরণের অনুমোদন ছিল।

(فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ) অর্থাৎ ইবলীস প্রথমে আদমকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করল; যাতে তার ষড়যন্ত্র বিফলে না হয়ে যায়।

(فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ) অর্থাৎ যখন দেখলো আদম পেটবিশিষ্ট, তখনই সে বুঝে নিলো তাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তার মাঝে শক্তি ও দৃঢ়তা থাকবে না। বরং প্রতিজ্ঞা নড়বড়ে হবে, অবস্থা পরিবর্তনশীল হবে এবং বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে। কেউ কেউ বলেন, ইবলীস বুঝে নিলো, এই সৃষ্টি প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কারো কারো মতে এর অর্থ: এই সৃষ্টি প্ররোচনা বারণ করতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

অন্তরে শয়তানের প্রভাব বিস্তার করে :

আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ وَإِذا غفَلَ وسوس» . ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবের বা অন্তরের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস্ওয়াসা দিতে থাকে। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ হা/৩৪৭৭৪; মিশকাত হা/২২৮১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি আল্লাহর জিকির করতে কারণ আল্লাহর জিকিরকারীর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রু ধাওয়া করেছে এক পর্যায়ে সে একটি প্রাচীরের নিকট গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, ঠিক এ রকমই বান্দা নিজেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে পারে না তবে কেবলমাত্র আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। ‘আল্লামা ইবনুম কইয়্যিম (রহঃ) আরো বলেন, যদি যিকিরের পরেও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে না পারে তাহলে কমপক্ষে এ জিকির তার জন্য আলো হিসেবে কাজ করবে যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এবং যদি সর্বদা আল্লাহর জিকিরে নিজেকে মশগুল রাখে তাহলে এটা তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে। কারণ শয়তান সর্বদা ওঁৎ পেতে বসে থাকে যখনই বান্দা আল্লাহর জিকির হতে বিমুখ হয় তখন সে বান্দার মনে কুমন্ত্রণা দেয় আর যখন আল্লাহর জিকিরে মশগুল হয় তখন শয়তান ভেগে যায়, কাচুমাচু হয়ে ছোট চড়ুই পাখি অথবা মাছি সদৃশ হয়ে যায়।

অন্তরে শয়তান ও ফেরেশতাদের প্রভাব থাকে। আল্লাহ বলেন, اِنَّمَا یَاۡمُرُکُمۡ بِالسُّوۡٓءِ وَ الۡفَحۡشَآءِ وَ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ‘নিশ্চয়ই সে (শয়তান) তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলতে, যা তোমরা জান না’ (বাক্বারাহ ২/১৬৯)।

এখানে শয়তানের নির্দেশদান অর্থ হচ্ছে মনের মাঝে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহের উদ্ভব করা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের অন্তরে একাধারে শয়তানী প্রভাব এবং ফেরেশতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৩/৫৪৩]

শয়তানী ওয়াসওয়াসার প্রভাবে অসৎ কাজের কল্যাণ এবং উপকারিতাগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং তাতে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পথগুলো উন্মুক্ত হয়। পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের ইলহামের প্রভাবে সৎ ও নেক কাজের জন্য আল্লাহ্ তাআলা যে কল্যাণ ও পুরস্কার দানের ওয়াদা করেছেন, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সত্য ও সঠিক পথে চলতে গিয়ে অন্তরে শান্তি লাভ হয়। [দেখুন, সহীহ ইবন হিব্বান: ৯৯৭]

ওছমান বিন আবূল ‘আছ (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! শয়তান আমাকে ছালাতের ভিতরে ও তিলাওয়াতের সময় কুমন্ত্রণা দেয়। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খিনযিব’ বলা হয়। যখন (ছালাতের মধ্যে) শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করবে, তখন বলবে আ‘ঊযুবিল্লা-হ এবং বাম দিকে তিনবার থুক ফেলবে’। তিনি (ওছমান) বলেন, এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন’ (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)।

শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন- “অবশ্যই আমি জানি যে, শয়তান মুমিনদের মাঝে প্ররোচনা সৃষ্টি করে। আর আমি কখনই মুসলিম ভাইদের মাঝে প্ররোচনা সৃষ্টি করে শয়তানের সাহায্যকারী হব না”। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১/৩২৭)।

শয়তান আল্লাহর স্মরণে বাঁধা দেয় :

শয়তানই মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। মহান আল্লাহ বলেন,اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ ‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)। শয়তানই মানুষকে সরল-সঠিক পথ থেকে বিপথগামী করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ- ‘সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৬-১৭)।

এজন্য মহান আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; বরং সর্বদা তার বিরোধিতা করতে বলেছেন। কারণ শয়তানই মানুষের চির দুশমন। মহান আল্লাহ বলেন,يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاء لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলে নিয়েছিল যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। সে ও তার দল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)।

যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে সে শয়তানেরই সহচর হয়ে যাবে এবং সে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم مُّهْتَدُوْنَ، حَتَّى إِذَا جَاءنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ- ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত নিকৃষ্ট সঙ্গী সে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৮)। অন্যত্র বলেন, ‘শয়তান তাদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদেরকে আল্লাহ্র যিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। এরাই শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্থ’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)।

আল্লাহর স্মরণে থাকলে শয়তান মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার ওপর ইসলামের (নাফ্‌লী) নির্ধারিত বিধি-বিধান অনেক। তাই আমাকে সংক্ষেপে কিছু বলে দিন যা আমি সব সময় করতে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,   لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذكر اللَّهِ তুমি সব সময় তোমার জিহবাকে আল্লাহর জিকিররত রাখবে। (তিরমিযী হা/3375; মিশকাত হা/2279) 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top