মানুষের মধ্যে পরিবর্তন, কিয়ামতের লক্ষণ

মিশকাত হা/৫৩৬০- ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মানুষ উটের মতো, যাদের একশ’টির মধ্যে সওয়ারীর উপযোগী একটিও পাওয়া কঠিন হয়।  বুখারী ৬৪৯৮, মুসলিম ২৩২-(২৫৪৭), মুসনাদে আহমাদ ৬০৩০,

ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا النَّاسُ كَالْإِبِلِ الْمِائَةِ) মানুষের বিভিন্ন অবস্থা ও গুণাবলির দৃষ্টিকোণ থেকে একশত উটের সাথে তুলনা দেয়া যায়। উক্ত একশত উটের মধ্যে খুব কম এমন উট পাওয়া যাবে যারা শক্তিশালী, জোয়ান এবং আরোহণের উপযোগী। ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যে খুব কম লোকই পাওয়া যায় যারা বন্ধু হওয়ার উপযোগী ও ভালোবাসা রাখার উপযুক্ত। যারা তাদের বন্ধুকে সহযোগিতা করবে এবং তার জন্য কোমলতা প্রদর্শন করবে।
ইবনু বাত্তল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে উদ্ধৃত মানুষ বলতে ঐ সমস্ত লোকেদের বুঝানো হয়েছে যারা উত্তম যুগ তথা সাহাবা, তাবিঈন ও তাবি’ তাবিঈনদের যুগের পরবর্তীতে আসবে। যেহেতু তাদের মধ্যে আমানাতদার কেউ থাকবে না। (ফাতহুল বারী ১১/৬৪৯৮, মিরকাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৩৯৯০)

মিশকাত হা/৫৩৬১- আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাস এক এক বিঘত ও এক এক হাত পরিমাণে অনুসরণ করে চলবে- এমনকি তারা যদি দব্বের গর্তেও ঢুকে থাকে তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনুসরণ করবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তারা কি ইয়াহূদ ও খ্রিষ্টানরা! তিনি বললেন, তবে আর কারা? (বুখারী ৩৪৫৬, মুসলিম ২৬৬৯)।

ব্যাখ্যা : (تَتَّبِعُنَّ سُننَ مَنْ قبلكُمْ) তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অনুসরণ করবে। এখানে পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি বলতে ঐ সমস্ত লোকেদের মনোপ্রবৃত্তি ও বিদ্আত উদ্দেশ্য যা তারা তাদের নবীদের পরে নিজের পক্ষ থেকে আবিষ্কার করেছিল এবং দীনের মধ্যে পরিবর্তন এনেছিল ও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বিকৃতি সাধন করেছিল যা ছিল বানী ইসরাঈলের স্বভাব।

(بْرًا بشبرٍ وذراعاً بذراعٍ) এক বিঘত এবং এক হাত এক হাত অর্থাৎ তারা যেমন করবে তোমরাও ঠিক তেমনি করবে।

(حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ) এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে। এখানে গুইসাপের গর্তের সাথে তুলনা দেয়ার কারণ হলো, এই প্রকার গর্ত খুব সংকীর্ণ ও খারাপ ধরনের। তা সত্ত্বেও যদি তারা সেখানে প্রবেশ করে তাহলে তোমরাও তা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রবেশ করবে, তাদের অনুকরণের স্বার্থে। রসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে তারা কি ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়?

(قَالَ: «فَمَنْ») তিনি উত্তরে বললেন, যদি তাদেরকে উদ্দেশ্য না করি তাহলে আর কারা হবে? তোমরা আর কাদের অনুসরণ করবে? (ফাতহুল বারী ৬/৩৪৫৬, শারহুন নাবাবী ১৬/২৬৬৯, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/৫৩৬২- মিরদাস আল আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ভালো ও সৎ লোকেরা (পর্যায়ক্রমে) একের পর এক চলে যাবে। অতঃপর অবশিষ্টরা যব অথবা খেজুরের নিকৃষ্ট চিটার মতো থেকে যাবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি কোন গুরুত্ব দিবেন না। (বুখারী ৬৪৩৪, সহীহুল জামি ৮০৭৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২৯৯৩)

ব্যাখ্যা: (يَذْهَبُ الصَّالِحُونَ الْأَوَّلُ) নেককার বান্দারা একের পর এক মৃত্যুবরণ করবে।
(حُفَالَةٌ) নিকৃষ্ট বা নিম্নমানের লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে।
(لَا يُبَالِيهِمُ اللَّهُ بالةً) আল্লাহ তা’আলা তাদের কোন পরোয়াই করবেন না। তাদের মর্যাদাকে বাড়িয়েও দিবেন না এবং তাদের ‘আমলকে ওজনও করবেন না। (ফাতহুল বারী ১১/৬৪৩৪, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৩-[৪] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন আমার উম্মত গর্বের সাথে চলতে লাগবে এবং রাজা-বাদশাহদের সন্তানরা তথা পারস্য ও রূমের রাজ কুমাররা এদের খিদমতে রত থাকবে, তখন আল্লাহ তা’আলা উম্মতের খারাপ লোকেদেরকে ভালো লোকদের ওপর শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেবেন।  তিরমিযী ২২৬১, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৫৭, সহীহুল জামি ৮০১।

ব্যাখ্যা: (إِذَا مَشَتْ أُمَّتِي الْمُطَيْطَاء) যখন আমার উম্মাত অহমিকা বেশে দু’হাত দুলিয়ে চলবে।
(وَخَدَمَتْهُمْ أَبْنَاءُ الْمُلُوكِ أَبْنَاءُ فَارِسَ وَالرُّومِ) এবং রোম ও পারস্যের সন্তানরা তাদের খাদেম হবে এবং তাদের আনুগত্য করবে।
(سَلَّطَ اللَّهُ شِرَارَهَا عَلَى خِيَارِهَا) তখন আল্লাহ তা’আলা উত্তমের ওপর নিকৃষ্টদের ক্ষমতা দান করবেন।
মিরকাত ভাষ্যকার বলেন, এ হাদীসটি নবী (সা.) -এর নুবুওয়্যাতের প্রমাণ বহনকারী। কেননা তিনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এমন সংবাদ দিয়েছেন যা পরবর্তীতে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। কেননা যখন তারা রোম ও পারস্য দখল করল তখন তারা তাদের ধন-সম্পদ হস্তগত করল এবং তাদের সন্তানদেরকে বন্দী করল, যার ফলশ্রুতিতে তারা ক্ষমতা কেড়ে নিল এবং উসমান (রাঃ)-কে হত্যা করল, অতঃপর বানী উমাইয়্যাগণ বানী হাশিম-এর সাথে যা করার তাই করল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২২৬১, মিরকাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৫- উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যতক্ষণ দুনিয়ার ব্যাপারে অধমের সন্তান সৌভাগ্যের অধিকারী বলে গণ্য না হবে ততক্ষণ কিয়ামত সংঘটিত হবে না। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী’র “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্”)

ব্যাখ্যা : (حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ) যতক্ষণ না তাদের মধ্যে অধিক সম্পদের মালিক, আরামদায়ক জীবনযাপনের অধিকারী এবং উচ্চ ক্ষমতা ও ক্ষমতা প্রয়োগকারী ব্যক্তি দুনিয়ার মালিক হবে।
(لُكَعُ بْنُ لُكَعَ) নিকৃষ্টের পুত্র নিকৃষ্ট। অথবা এমন ব্যক্তি যার বংশ জানা যাবে না এবং চরিত্রের প্রশংসা করা হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬২২০৯, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৬- মুহাম্মাদ ইবনু কা’ব আল কুরাযী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে সে ব্যক্তিই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যিনি ’আলী (রাঃ) হতে শ্রবণ করেছেন, তিনি বলেছেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় মুস্’আব ইবনু উমায়র (রাঃ) এমন অবস্থায় সেখানে এসে উপস্থিত হলেন যে, তাঁর চাদরে চামড়ার তালি লাগানো ছিল। তাঁকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) কেঁদে দিলেন। (অতীতে) তিনি কতই না সুখ-সাচ্ছন্দে ছিলেন, অথচ আজ তার এ অবস্থা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐ সময় তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন তোমরা সকালে এক জোড়া পরিধান এবং বিকালে আরেক জোড়া পরিধান করে বের হবে। আর তোমাদের সম্মুখে রাখা হবে (পৃথক পৃথক প্রকারের) খানার পেয়ালা এবং তা তুলে নিয়ে রাখা হবে সে স্থলে আরেক পেয়ালা। আর তোমরা ঘরকে এমনভাবে পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত করবে, যেভাবে আচ্ছাদিত করা হয় কা’বা ঘরকে। তখন সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সেদিন আমরা আজকের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় থাকব। কেননা তখন আমাদের খাওয়া-পরার দুশ্চিন্তা থাকবে না। ফলশ্রুতিতে আমরা অধিক সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য অবসর ও সুযোগ পাব। নবী (সা.) বললেন, তোমাদের এ আন্দাজ সঠিক নয়, বরং তোমরা সেদিন অপেক্ষা এখনকার সময়ই ভালো আছ। (তিরমিযী) তিরমিযী ২৪৭৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৩৮৪ হাসান হাদীছ।

ব্যাখ্যা : (مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ) মুস’আব ইবনু উমায়র (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশের। তিনি প্রথমে যারা আবিসিনিয়ার হিজরত করেছিলেন তাদের সাথে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। অতঃপর মক্কায় ফিরে এসে তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ ছেড়ে মদীনায় রসূল (সা.)-এর নিকট হিজরত করেন। অতঃপর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জাহিলী যুগে তিনি অত্যন্ত আরামপ্রদ জীবনযাপন করতেন এবং সৌখিন পোশাক পরিধান করতেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর দুনিয়াবিমুখ ছিলেন এবং অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন।

(مَا عَلَيْهِ إِلَّا بُرْدَةٌ) তিনি চামড়ার তালিযুক্ত একটি পোশাক পরিহিত ছিলেন। নবী (সা.) তার বর্তমান অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন। কেননা তিনি অতি কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। অথচ তিনি তার সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
(كَيْفَ بِكُمْ إِذَا غَدَا أَحَدُكُمْ..) তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন তোমাদের ধন-সম্পদ বেড়ে যাবে। ফলে তোমাদের প্রত্যেকে সকালে একধরনের পোশাক পরবে আবার বিকালে অন্য পোশাক পরবে। সৌখিন জীবনযাপন করবে আর তার সামনে পেয়ালা ভর্তি এক ধরনের খাবার রাখা হবে এবং সেটা উঠানোর সাথে সাথে আবার আরেক ধরনের খাবার ভর্তি পেয়ালা রাখা হবে। যা মূলত সৌখিন জীবনযাপনকারীরা করে থাকে। আর তোমাদের গৃহকে পর্দা দ্বারা সুসজ্জিত করবে যেমন কা’বাহ্ ঘরকে সাজানো হয়।
(فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مِنَّا الْيَوْمَ) তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা তখন বর্তমানের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করব। ইবাদতের জন্য মুক্ত থাকতে পারব। আর আমাদের খাদেমরা জীবিকা উপার্জনের কাজ করবে।
(قَالَ: «لَا أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ مِنْكُمْ يَوْمَئِذٍ») নবী (সা.) বললেন, না, তোমরা সেদিনের চেয়ে এখনই ভালো আছ। কেননা ধনী ব্যক্তির চেয়ে সামান্য জীবিকার দরিদ্ররাই উত্তম। যেহেতু ধনীরা দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে, ‘ইবাদতের জন্য অবসর সময় পায় না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৪৭৬, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৭-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মানুষের ওপর এমন এক সময় আসবে, তখন তাদের মধ্যে দীন-শারী’আতের উপর দৃঢ়ভাবে ধৈর্যধারণকারীর অবস্থা হবে হাতের মুষ্টিতে অগ্নিশিখা ধারণকারীর মতো। তিরমিযী ২২৬০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯৫৭, সহীহুল জামি’ ৬৬৭৬,

ব্যাখ্যা: (يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ الصَّابِرُ فِيهِمْ) মানুষের কাছে এমন এক সময় আসবে, যে সময়ে দুনিয়া পরিত্যাগ করে দীনের কার্যকলাপকে হিফাযত করা ঐ রকম কঠিন কাজ হবে, যে রকম জ্বলন্ত আগুনের টুকরাকে হাতের তালুতে ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জ্বলন্ত আগুনের কয়লাকে যেমনভাবে হাত পুড়ে যাওয়ার ভয়ে ধরে রাখা সম্ভব নয়, ঠিক তদ্রুপ দীনদার ব্যক্তি সে সময় দীনের উপর অটল থাকতে পারবে না। সে সময় পাপীদের দৌরাত্ম, পাপের ছড়াছড়ি হবে ঈমানের দুর্বলতার কারণে।
মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা ব্যতীত যেমনি আগুনের কয়লা হাতে ধারণ করা কঠিন ঠিক তদ্রুপ ঐ সময়ে অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় না দিলে ঈমানের জ্যোতিকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২২৬০, মিরকাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৮-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমাদের শাসক হবে তোমাদের ভালো লোকেরা, তোমাদের বিত্তবান ব্যক্তিরা হবে দানশীল এবং তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদিত হবে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন জমিনের পেট অপেক্ষা তার পিঠ হবে তোমাদের জন্য শ্রেয়। পক্ষান্তরে যখন তোমাদের খারাপ লোকেরা হবে তোমাদের শাসক, বিত্তবান লোকেরা হবে কৃপণ এবং তোমাদের কাজকর্ম অর্পণ করা হবে নারীদের ওপর তখন জমিনের পিঠ অপেক্ষা তার পেট হবে তোমাদের জন্য শ্রেয়। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব] তিরমিযী ২২৬৬, 

ব্যাখ্যা: (إِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ) যখন তোমাদের শাসকগণ পরহেজগার হবে।
(وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ) এবং তোমাদের ধনবান ব্যক্তিরা দানশীল হবে।
(وَأُمُورُكُمْ شُورَى بَيْنِكُمْ) এবং তোমাদের সকল কর্মকাণ্ড পরস্পরের পরামর্শের মাধ্যমে হবে। যেমনটি আল্লাহ বলেন, (وَ اَمۡرُهُمۡ شُوۡرٰی بَیۡنَهُمۡ) আর তাদের কার্যাবলী তাদের মধ্যে পরস্পরের পরামর্শের ভিত্তিতে হবে। (সূরাহ আশ শূরা ৪২ : ৩৮)।
(فَظَهْرُ الْأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا) তখন পৃথিবীর উপরিভাগ তোমাদের জন্য নিম্নভাগের চেয়ে উত্তম হবে। তথা মৃত্যুর চেয়ে তোমাদের বেঁচে থাকা উত্তম হবে।
(وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ) আর যদি তোমাদের কর্মকাণ্ড তাদের মতামতের উপর নির্ভর করে। যেহেতু তারা হাদীসের ভাষায় বুদ্ধি ও দীনদারীতে পুরুষের তুলনায় কম। তাছাড়া নারীরা সংসারের আধিপত্ত বিস্তার করবে, স্বামী তার কথা মত চলবে, সংসারের খরচ যোগাতে সেও স্বামীকে সহযোগীতা করবে এবং কাধে কাধ মিলিয়ে সমাজের পুরুষের সাথে কর্ম করবে।

অন্য অর্থে যে সমস্ত পুরুষ মর্যাদা ও সম্পদের মোহে পড়ে নারীদের মতো অবস্থা হবে, দীনের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ হবে এবং সম্পদের অপব্যবহারের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞ হবে। আর তাদের হাতে ক্ষমতা চলে আসবে তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই ভালো। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬/২২৬৬, মিরকাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৬৯-[১০] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের বিরুদ্ধে (ইসলামবিদ্বেষী) অন্যান্য সম্প্রদায় একে অন্যকে আহ্বান করবে, যেরূপ খাবার পাত্রের প্রতি ভক্ষণকারী অন্যান্যদেরকে ডেকে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, এটা শুনে সাহাবীদের কেউ বললেন, তা কি এজন্য হবে যে, আমরা সেই সময় সংখ্যায় অল্প হব? তিনি (সা.) বললেন, বরং তখন তোমরা সংখ্যায় অনেক বেশি হবে, কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের হৃদয়ে ’ওয়াহন’ সৃষ্টি করে দেবেন। তখন কোন একজন প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ’ওয়াহন কি? তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়ার ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা (বাঁচার লোভ)। আবূ দাউদ ৪২৯৭, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৫৮, সহীহুল জামি’ ৮১৮৩।

ব্যাখ্যা : (يُوشِكُ الْأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ) অচিরেই কাফির ও বাতিল সম্প্রদায় তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমাদের শক্তিকে খর্ব করে তোমাদের অধিনস্থ ঘরবাড়ি ও সম্পদ দখল করার জন্য তোমাদের বিরুদ্ধে একে অপরকে আহ্বান করবে।
(كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا) যেমনিভাবে খাদ্য গ্রহণকারী ব্যক্তিরা একে অপরকে খাদ্যের প্লেটে ডাকে। অর্থাৎ যেমনিভাবে খাদ্যগ্রহণকারী তার প্লেট থেকে বিনা কষ্টে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে, ঠিক তেমনিভাবে তারা তোমাদের অধিনস্থ ধন-সম্পদ বিনা বাধায় গ্রহণ করবে।
(وَلَكِن غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ) বরং তোমরা বন্যার পানিতে ভেসে আসা আবর্জনার মতো অনেক থাকবে, কিন্তু তোমাদের কোন শক্তি ও সাহস থাকবে না। তাই তোমাদেরকে বন্যার আবর্জনা ও খড়কুটার সাথে তুলনা দেয়া হয়েছে। (‘আওনুল মা’বুদ ৭/৪২৯০, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মিশকাত হা/ ৫৩৭০ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে সম্প্রদায়ের মধ্যে খিয়ানত বা আত্মসাতের রোগ ঢুকে, আল্লাহ তা’আলা তাদের অন্তরে শত্রুর ভয় ঢেলে দেন। যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যিনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে তাদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যে সম্প্রদায় মাপে-ওযনে কম দেয়, তাদের রিযিক উঠিয়ে নেয়া হয়। যে সম্প্রদায় বিচারে ন্যায়নীতি রক্ষা করে না, তাদের মাঝে খুনাখুনি ব্যাপক হয়। আর যে সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাদের ওপর শত্রুকে চেপে দেয়া হয়। মালিক ১৬৭০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১০৬-১০৭

ব্যাখ্যা : (وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ) আর যখন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে যিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে তখন তাদের মধ্যে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে যাবে। তথা তারা বিভিন্ন রোগ, মহামারিতে মারা যাবে অথবা অন্তর মরে যাবে অথবা ‘আলিম সম্প্রদায়ের মৃত্যু হবে।
(وَلَا نَقَصَ قَوْمُ الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ) এবং যখন কোন সম্প্রদায় মাপে, ওযনে বা সংখ্যায় ধোঁকাবাজি করবে বা প্রতারণা করবে, তখন তাদের হালালভাবে উপার্জিত সম্পদের বরকত নষ্ট হয়ে যাবে।
(وَلَا حَكَمَ قَوْمٌ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الدَّمُ) আর যখন কোন সম্প্রদায় অন্যায়ভাবে বা অজ্ঞতাবশত ফায়সালা করবে, তখন তাদের মধ্যে রক্তপাত বা হত্যা বৃদ্ধি পাবে।
(وَلَا خَتَرَ قَوْمٌ بالعهد إِلا سُلِّطَ عَلَيْهِم عدوهم) আর যখন কোন সম্প্রদায় প্রাধান্য বিস্তারের আশায় ওয়াদা ভঙ্গ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর শত্রুদেরকে ক্ষমতা প্রদান করবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top