যিকিরের মজলিশ নিয়ে আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে গর্ববোধ করেন। আল্লাহ্কে স্মরণ করা হয় যে মজলিসে তা জান্নাতের সাথে তুলনা করে রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ فَارْتَعُوا ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগানে পৌঁছবে তখন উহার ফল খাবে। ছাহাবীগণ বলেন, জান্নাতের বাগান কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সেটা হ’ল- حِلَقُ الذِّكْرِ ‘যিকিরের মজলিস’ (তিরমিযী হা/৩৫১০; মিশকাত হা/২২৭১)। (حِلَقُ الذِّكْرِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘ইলম অন্বেষণের স্থান যেখানে বসে বসে মানুষ দীনী ‘ইলম শিক্ষা করতে পারে। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, ‘দুনিয়া পুরোটাই অন্ধকার; শুধু জ্ঞানীদের মাজলিস ব্যতীত’ (জামিয়ু বায়ানিল ইলমি ও ফাদলিহী, পৃঃ ২৬৪)।
যিকিরকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং কেহ হতভাগ্য থাকে না, যার সাক্ষী ফেরেশতাগণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আল্লাহর যিকরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তাঁরা কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখেন, তখন তাঁরা একে অপরকে বলেন, আসো! তোমাদের কাম্য বস্তু এখানেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অতঃপর ফেরেশতারা তাদেরকে নিজ নিজ ডানা দ্বারা দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত ঘিরে নেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যদিও তিনি তাদের অবস্থা অধিক অবগত।
আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন, আমার বান্দারা কি বলছে? ফেরেশতাগণ বললেন, তারা আপনার পবিত্রতা, বড়ত্ব, প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা করছে। তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেশতাগণ বললেন, আপনার কসম, তারা কখনো আপনাকে দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত তবে কেমন হ’ত? তখন ফেরেশতাগণ বললেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরো বেশী আপনার ইবাদত করত এবং বেশী বেশী আপনার মর্যাদা ও পবিত্রতা ঘোষণা করত।
আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তারা কি চায়? ফেরেশতাগণ বললেন, তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়? তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতাগণ বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার কসম, তারা কখনো জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাতকে দেখত তবে কেমন হ’ত? ফেরেশতাগণ উত্তর দেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তবে প্রচন্ড লোভ করত, এটা পাওয়ার অধিক আগ্রহে বেশী বেশী প্রার্থনা করত।
এবার আল্লাহ বলেন, তারা কোন জিনিস হ’তে আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ উত্তর দেন, জাহান্নাম হ’তে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতাগণ জওয়াবে বললেন, হে আমাদের রব! আপনার কসম, তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হত, যদি তারা উহা দেখত? ফেরেশতাগণ বললেন, যদি তারা উহা দেখত তাহ’লে উহা হ’তে পলায়ন করত এবং বেশী বেশী ভয় পেত। তখন আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এমন সময় ফেরেশতাগণের একজন বলে উঠেন, অমুক ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে শুধু তার নিজের কাজে এখানে এসেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা এমন একদল লোক যাদের কেউই হতভাগ্য নয়’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২২৬৭)।
—- (ফযীলতপূর্ণ দো‘আ ও যিকির’ বই থেকে নেয়া)……