অধিকাংশ মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, وَالْعَصْرِ. إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ. ‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে’ (আছর ১০৩/১-২)। আল্লাহ তা‘আলা কালের শপথ এই জন্য বলেছেন যে, মানুষের কৃতকর্মের সময়কাল অতীব স্বল্প পরিসরে। আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত যতটুকু সময় ঠিক ততটুকু সময় মানুষের জীবনে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকাল সম্পর্কিত যা বান্দার ভাল-মন্দ সকল কর্মই শামিল হবে।
তাছাড়া আছরের ওয়াক্ত হ’তে কুরায়েশ নেতারা ‘দারুন নাদওয়াতে’ পরামর্শসভায় বসত এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে ভাল-মন্দ সিদ্ধান্ত নিত। মন্দ সিদ্ধান্তের কারণে লোকেরা এই সময়টাকে ‘মন্দ সময়’ (زمان سوء) বলত’ (ক্বাসেমী)। এখানে আছর-এর শপথ করে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন যে, কালের কোন দোষ নেই। দোষী হ’ল মানুষ।[২] আবার পৃথিবীর সকল মানুষ কৃতকর্মের পরিণতি ক্ষতির মধ্যে নিপতিত রয়েছে। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَذَاقَتْ وَبَالَ أَمْرِهَا وَكَانَ عَاقِبَةُ أَمْرِهَا خُسْرًا ‘অতঃপর তারা তাদের কৃতকর্মের আযাব আস্বাদন করল। বস্ত্ততঃ ক্ষতিই ছিল তাদের কর্মের পরিণতি’ (তালাক ৬৫/৯)। প্রত্যেক মানুষ অবশ্যই ক্ষতিতে রয়েছে। যেমন, শিরক, রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে উপেক্ষা, ফেরেশতাদের অস্তিত্ব অবিশ্বাস, পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থসমূহ ও নবী-রাসূলদের অবজ্ঞা, দুনিয়ার কর্মফল দিবস আখিরাত ও তাক্বদীরের ভাল-মন্দ অবিশ্বাস ইত্যদির দরুণ। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ-শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) বলেন, ‘যদি মানুষ এই সূরাটি গবেষণা করত, তাহ’লে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হ’ত’ (ইবনু কাছীর)।
এই সূরার আলোকে সকলকে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়ে দিন। মূল শিক্ষা হ’ল- তবে প্রথমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে’। কিন্তু এর পরেই চারটি শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ‘তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/৩)। শর্ত চারটি হ’ল- ঈমান, আমল, দাওয়াত ও ছবর। এই চারটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে সে ক্ষতি থেকে নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।
(এক) ঈমান এনেছে :
প্রথম গুণ তুলে ধরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا ‘তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে’ (আছর ১০৩/৩)। বান্দা মুমিন হওয়ার চূড়ান্ত শর্ত হ’ল ঈমান আনয়ন করা। ‘ঈমান’ অর্থ নিশ্চিন্ত বিশ্বাস, নিরাপত্তা দেওয়া, যা ভীতির বিপরীত।[৩] রাগেব আল-ইছফাহানী (রহঃ) বলেন, ঈমানের মূল অর্থ হচ্ছে আত্মার প্রশান্তি এবং ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাওয়া’।[৪] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ঈমানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে স্বীকারোক্তি এবং আত্মার প্রশান্তি। আর সেটা অর্জিত হবে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ ও আমলের মাধ্যমে’।[৫] মুমিনের বিশ্বাসের ভিত্তি ছয়টি। যথা- أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. ‘আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম (১) আল্লাহর উপরে (২) তাঁর ফেরেশতাগণের উপরে (৩) তাঁর প্রেরিত কিতাব সমূহের উপরে (৪) তাঁর রাসূলগণের উপরে (৫) ক্বিয়ামত দিবসের উপরে এবং (৬) আল্লাহর পক্ষ হ’তে নির্ধারিত তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে’।[৬]
মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ.
‘রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল’(বাক্বারাহ ২/২৮৫)। পরিশেষে ঈমান আনতে হবে এবং এর ওপর দৃঢ়ভাবে অবস্থান করতে হবে। আর সকল বিশ্বাসের সাথে সঠিক আক্বীদা পরিশুদ্ধ রাখতে হবে।
(দুই) সৎ আমল করে :
ঈমানের চূড়ান্ত শর্ত মেনে নেয়া পরেই মুমিনের গুণাবলী অর্জনের জন্য যে শর্ত পালনীয় সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ‘আর সৎকর্ম সম্পাদন করেছে’ (আছর ১০৩/৩)। ঈমান আনয়নের পরেই বান্দার নাজাতের দ্বিতীয় শর্ত হ’ল আমলে ছালেহ সম্পাদন করা। ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা, এ দু’টি না থাকলে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়’ (ফাতাহ ৪৮/৪)। তিনি আরো বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيْرُ ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমান। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’ (বুরূজ ৮৫/১১)। অন্যত্র বলেন, وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيْمٌ- ‘যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের প্রতি আল্লাহর ওয়াদা এই যে, আল্লাহ তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন এবং তাদের বড় প্রতিফল দিবেন’ (মায়েদাহ ৫/৯)। ঈমানের দ্বীপ্ততা বৃদ্ধির জন্য সর্বদা খালিছ অন্তরে বেশী বেশী আমলে ছালেহ পালন করতে হবে। যাতে করে দো‘আ, যিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে ঈমানের শানিত ধার আরো উজ্জ্বল হয়।
(তিন) হক্বের উপদেশ দেয় :
ঈমান আনয়ন ও আমলে ছালেহ প্রতিপালনের মাধ্যমে দ্বীন প্রচার ও প্রসারে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। অর্থাৎ হক্বের উপদেশ দেয়া। আর এটা হ’ল নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির তৃতীয় গুণাবলী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ ‘আর পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/৩)।
মানুষ বিবেকবান জীব হলেও প্রাথমিকভাবে অবুঝ প্রাণী। যখনি তার বুদ্ধিমতার বহিঃপ্রকাশের সাথে সঠিক বুঝ হবে, তখনি সে হয় দ্বীনের অথবা শয়তানের পথে হাটতে শুরু করবে। যে ব্যক্তি দ্বীনের সঠিক পথে চলবে তাকে সাধুবাদ। কিন্তু যে ব্যক্তি তাগুদের পথে চলবে তাকে দ্বীনের দাঈ ব্যক্তিরা সর্বদা দ্বীনের নছীহত করবে। আর উপদেশ দানকারীদের মধ্যে সেই উত্তম যে অন্যের নিকট থেকে দুঃখ-কষ্ট পেয়েও দ্বীনের দাওয়াত প্রদানে ছবর করে এবং অনঢ় থাকে। কখনও কোন অবস্থাতে অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে না, হেয় প্রতিপন্ন করে না, বৈষ্যয়িক বিষয়ে বাড়াবাড়ী করে না, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ইত্যাদি গুণ বিদ্যমান কেবল তারাই সফলকাম।
মানুষকে প্রজ্ঞা ও হিকমাতের সাথে সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ.
‘তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয়ই একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’(নাহল ১৬/১২৫)। একজন ব্যক্তিকে হেদায়াতের পথে আনতে পারলে আপনি সমপরিমাণ নেকীর ভাগ পাবেন। ইবনে মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ‘কোন ব্যক্তি যদি ভালো কাজের পথ দেখায়, সে ঐ পরিমাণ নেকী পাবে, যতটুক নেকী পাবে ঐ কাজ সম্পাদনকারী নিজে’।[৭]
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের সেনাপতি আলী বিন আবু তালিব (রাঃ)-কে নছীহতের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمُرِ النَّعَمِ ‘আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন লোককেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটা তোমার জন্য লাল উটের (কুরবানীর) চেয়েও উত্তম হবে’।[৮]
অবশেষে আপনি সফল না হলে বিদায় হজ্জের ভাষণের এই অংশটি মনে করে সান্ত্বনা গ্রহণ করবেন যে, আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ প্রদান করে বলেন, أَلَا لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‘উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়’।[৯]
নিজেকে পরিশুদ্ধ করে পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে হক্বের উপদেশ দিতে হবে। উপদেশ প্রদানের সময় তাদের নিকট থেকে বাঁধা ও বিপত্তি আসতে পারে। আর সে সময় নিজেকে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনাদর্শের মানদন্ডে ওযন করে অতীব সূক্ষ্মভাবে ধৈর্য্যধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং দাওয়াতের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।
(চার) ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেয় :
দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতি থেকে নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চতুর্থ শর্ত হ’ল ধৈর্য্যধারণ করা। আর তা নিজে অবলম্বন করবে এবং অপরকে ছবর করতে উৎসাহিত করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ‘আর পরস্পরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/৩)। ‘ছবর’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিজেকে বাঁধা দেয়া ও অনুবর্তী করা। যেমন- এক. যাবতীয় গুণাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা। দুই. সৎকাজ করা এবং এর ওপর অবিচল থাকা। তিন. বিপদাপদে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।[১০] দুনিয়াতে যে যতবেশী ধৈর্য্যশীল, আখেরাতে সে ততবেশী কল্যাণকামী। আবূ মালেক আল-হারেস ইবনু আসেম আল-আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ، وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا ‘ছালাত হ’ল নূর, ছাদকা হ’ল প্রমাণ, ছবর উজ্জ্বল আলো, আর কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আত্মার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সকাল শুরু করে। আর তা হয় তাকে আযাদ করে দেয় অথবা তাকে ধ্বংস করে দেয়’।[১১] দুনিয়ার বুকে মানুষ যত কম লোভ-লালসা করবে, ততবেশী ধৈর্য্যশীল হিসাবে গড়ে উঠবে।
ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন, ‘কম লোভ-লালসা, সত্যবাদীতা ও পরহেযগারিতার জন্ম দেয় এবং অধিক লোভ-লালসা, দুঃখ-কষ্ট ও অধৈর্যশীল সৃষ্টি করে’।[১২]
হক্বের দাওয়াত বা উপদেশ প্রদানের সময় যে বাঁধা-বিপত্তি আসবে, সেখানে ছবরের সাথে অবিচল থাকতে হবে। এটা মহৎ গুণ। সবায় এ গুণ অর্জন করতে সক্ষম নয়। তবে প্রত্যেক মুমিনের এই গুণ অবশ্যই অর্জন করতে হবে, নতুবা সে পরাজিত হবে। সফলতা তারাই অর্জন করেছে যারা ছবর করেছেন। এটা ঈমানের পরীক্ষাও হ’তে পারে এবং সেখানে সর্বদা ধর্য্যধারণ করতে হবে। তাই তো বাঁধা না থাকলে দ্বীনের দাঈ অনুভব করতে পারবে না যে, তার দাওয়াত কতটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে। প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনে এমনটি ঘটেছে। বর্তমানে এটা স্বাভাবিক। আর এর ফলাফল হবে অতীব সুস্বাদু। শুধু মাত্র ধৈর্য্যধারণ করতে হবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা বৈ কিছুই নয়।
——–
[২] .প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন (৩০তম পারা), পৃষ্ঠা-৪৫৮।
[৩]. জাওহারী, আছ-ছিহাহ ৫/২০৭১; ফিরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত, পৃঃ ১১৭৬।
[৪]. আল-মুফরাদাত, পৃঃ ৩৫।
[৫]. আছ-ছারিম আল-মাসলূল, পৃঃ ৫১৯।
[৬]. হাদীছে জিব্রীল, মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[৭]. মুসলিম হা/১৬৭৭; আবূদাঊদ হা/৫১২৯; তিরমিযী হা/২৬৭১; ছহীহ হাদীছ; মিশকাত হা/২০৯।
[৮]. বুখারী হা/৩০০৯; মুসলিম হা/২৪০৬; মিশকাত হা/৬০৮০।
[৯]. বুখারী হা/৪৪০৬, ৫৫৫০; মুসলিম হা/১৬৭৯; ইবনু মাজাহ হা/২৩৪; ছহীহ হাদীছ।
[১০].মাদারেজুস সালেকীন, ২/১৫৬
[১১]. আহমাদ হা/২২৯৫৯; মুসলিম হা/২২৩; তিরমিযী হা/৩৫১৭; ছহীহ হাদীছ; মিশকাত হা/২৮১।
[১২]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১০/২৪১ পৃঃ।