ছালাতে ক্ষমা চাওয়ার স্থান

যার আমল নামায় সবচেয়ে বেশী ইস্তেগফার যোগ হবে, কেবল সেই ব্যক্তিই দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দিনে রাতে ৭০ বার, অন্যত্র বলেন, ১০০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَاللهِ إِنِّيْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سبعيْنَ مرَّةً. ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)। অন্যত্র এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ- ‘তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)।

উক্ত বর্ণনা অনুসারে যে সমস্ত ব্যক্তি ফরয ছালাতের প্রতি রাকা‘আতে ১০ বার, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তে ফরয ছালাতে মোট ১৭ রাকা‘আতে ১৭০ বার নিম্নের দো‘আগুলি পাঠ করে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থণা করে থাকে। এছাড়াও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে পঠিতব্য এমন অনেক দোআ আছে, যা পাঠ করে নিজেকে পাপমুক্ত করার জন্য তাওবাহ করা যায়।

রুকু ও সিজদার দো‘আ (তিনবার) :

(متفق عليه) سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ

(সুবহ-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহাম্দিকা, আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী)

অর্থ:‘হে আল্লাহ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন!’(বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭১)।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ (একবার) :

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ-

(আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওর্য়াঝুক্বনী)। অর্থ:‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৯০০)।

ব্যাখ্যা: (كَانَ النَّبِيُّ ﷺ كَانَ يَقُوْلُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মাঝখানে বলতেন। ফরয ও নফল উভয় সালাতে (اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ) আমার পাপ ক্ষমা করো অথবা আনুগত্যের স্বল্পতা, ত্রুটি।

(وَارْحَمْنِيْ) আমার প্রতি রহম করো তোমার পক্ষ হতে আমার ‘আমলের প্রতিদানে না অথবা আমার ‘ইবাদাত গ্রহণ করার মাধ্যমে আমার প্রতি রহম কর। (وَارْحَمْنِيْ) আমাকে সৎ পথ দেখাও সৎ ‘আমলের মাধ্যমে অথবা সত্যের উপর অটুট রাখো।

(وَعَافِنِيْ) আমাকে স্বস্তিতে রাখো দুনিয়া ও আখিরাতের সকল মুসীবাত হতে অথবা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল প্রকার রোগ থেকে। (وَارْزُقْنِيْ) আমাকে উত্তম বিষয়ক দান কর অথবা তোমার আনুগত্যে তাওফীক্ব দান কর আমাকে অথবা আখিরাতে আমাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন কর।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তাওবাকারী ও ( দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারহা ২/২২২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ- ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা অপরাধ করে থাক রাতে-দিনে। আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬)।

তিনি আরো বলেন,فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ- ‘যখন বান্দা গোনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إنَّ الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا- ‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে স্বীয় হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের গোনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহগার ব্যক্তিরা তওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৯)।

এবার বলুন! আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা না করে থাকতে পারেন, তিনি তো সর্বোত্তম ক্ষমাকারী ও দয়ালু। ক্ষমা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। যারা বেশী বেশী ক্ষমা করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা আল্লাহ নিকট উত্তম ব্যক্তি। আমরা জেনে বুঝে, প্রকাশে অপ্রকাশ্যে নানা প্রকার গুণাহ করে চলেছি। তাই প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রত্যাশায় ইস্তেগফার পাঠ করা প্রয়োজন। আল্লাহর নিকটে ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলেই আপনি দুনিয়া ত্যাগে পরোকালিন জীবনে সফল। আর কোন ভাবেই নিরাশ হবেন না, একশত রহমতের মধ্যে একটি রহমত দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এখনও তাঁর নিকটে নিরানব্বইটি রহমত রেখে দিয়েছেন। সেই রহমতের প্রত্যাশায় দিনে একশত বার অথবা কমপক্ষে সত্তর বার ইস্তেগফার পাঠ করুন।

তাই আসুন! আমরা ফরয ছালাতের প্রতি যত্নশীল। মহার আল্লাহ আমাদের কবুল করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top