(লেখক : ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব)…..
৯. ব্যাপক ভিত্তিক গবেষণা :
তাখরীজের ক্ষেত্রে আলবানীর অনন্য কৃতিত্ব হ’ল বিপুল পরিমাণ হাদীছের উপর বিস্তারিত তথ্যভিত্তিক গবেষণা। যুগে যুগে যেসব মুহাদ্দিছ ইলমুত তাখরীজের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিসরে অবদান রেখেছেন, তাদের অধিকাংশই সংক্ষিপ্তভাবে তা সম্পন্ন করেছেন। স্বল্প কয়েকজন মুহাদ্দিছ যেমন পূর্ববর্তীদের মধ্যে হাফেয জামালুদ্দীন মিযযী, ইমাম যায়লাঈ, হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী এবং পরবর্তীদের মধ্যে আহমাদ শাকির, শু‘আইব আরনাঊত্ব প্রমুখ বিদ্বানগণ হাদীছের মূল উৎস সমূহ এবং শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতসহ বিস্তারিত তাখরীজ সম্পন্ন করেছেন।
আলবানী ব্যাপকতর হাদীছ গবেষণায় কতটা অগ্রগামী ছিলেন একটি তুলনামূলক উদাহরণের মাধ্যমে তা অনুধাবন করা সম্ভব হবে। যেমন- ছাফওয়ান ইবনু ‘আসসাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفْرًا أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ ‘রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, সফরে থাকা অবস্থায় ফরয গোসল ব্যতীত যেন তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত চামড়ার মোযা না খুলি। এই নির্দেশ ছিল পেশাব-পায়খানা ও নিদ্রার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য’। হাদীছটির উপর যায়লাঈ ও আলবানী উভয়ে বিস্তারিত তাখরীজ পেশ করেছেন।
উক্ত হাদীছের তাখরীজে ইমাম যায়লাঈ (মৃ. ৭৬২ হি.) স্বীয় নাছবুর রায়াহ-তে বলেন, হাদীছটি তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ-এ عاصم ابن أبي النجود عن زر بن حبيش عن صفوان সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর তিনি তিরমিযীতে একই রাবী থেকে ভিন্ন তুরুকে আরো দু’টি সূত্র উল্লেখ করেছেন। যেখানে তিরমিযী হাদীছটিকে حديث حسن صحيح বলেছেন।
অতঃপর তিনি হাদীছটি কোন কোন গ্রন্থে কয়টি সূত্রে সংকলিত হয়েছে তা রাবীর নাম ও অধ্যায়-অনুচ্ছেদের নামসহ সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। তার হিসাবে হাদীছটি ইবনু মাজাহ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু খুযায়মা এবং ইবনু হিববান-এ সংকলিত হয়েছে এবং সকল সূত্রই عاصم ابن أبي النجود عن زر بن حبيش عن صفوان-এর সূত্রের সাথে মিলিত হয়েছে।
তারপর যায়লাঈ বলেন, শায়খ তাক্বীউদ্দীন বলেছেন, বর্ণিত আছে যে, ‘আছেম থেকে হাদীছটি ৩০ জনের বেশী ইমাম বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি ‘আছেম থেকেই প্রসিদ্ধ। কিন্তু ত্বাবারাণী হাদীছটিعبد الكريم ابن أبي المخارق، عن حبيب بن أبي ثابت، عن زر সূত্রে ‘আছেম বর্ণিত হাদীছটির একটি মুতাবা‘আত এনেছেন। তবে তার মতে عبد الكريم ابن أبي المخارق যঈফ রাবী। অতঃপর যায়লাঈ রাবী ‘আছেম-এর ব্যাপারে রিজালবিদদের কিছু মন্তব্য তুলে ধরেছেন।[1] তবে তিনি নিজ থেকে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করেননি।
অন্যদিকে উক্ত হাদীছটির তাখরীজে আলবানী স্বীয় ‘ইরওয়াউল গালীল’-এ বলেন, হাদীছটি হাসান। যেমনটি মানারুস সাবীলের লেখকও বলেছেন। হাদীছটি বহু সূত্রে عاصم بن أبي النجود، عن زر بن حبيش থেকে মুসনাদে আহমাদ (৪/২৩৯-২৪০), নাসাঈ (১/৩২), তিরমিযী (১/১৫৯, ১৬০), ইবনু মাজাহ (১৭৬), মুসনাদুশ শাফেঈ (১/৩৩), দারাকুৎনী (৭২), ত্বাহাবী (১/৪৯), ত্বাবারাণী ছাগীর (৫০ পৃ.), বায়হাক্বী (১/১১৪, ১১৮, ২৭৬, ২৮২, ২৮৯ পৃ.)-তে বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান ছহীহ। ইমাম বুখারী বলেন, এ বিষয়ে এটিই সর্বোত্তম রেওয়ায়াত।
আলবানী বলেন, আমার বক্তব্য হ’ল, হাদীছটি ইবনু খুযায়মা ও ইবনু হিববানও স্ব স্ব ছহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যেমনটি নাছবুর রায়াহ (১৮২-৮৩)-তে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটি আমার নিকটে হাসান। কেননা বর্ণনাকারী ‘আছেম-এর হিফযগত দুর্বলতা থাকলেও তার বর্ণিত হাদীছ হাসান স্তরের নীচে নামানো যাবে না। এছাড়া ত্বাবারাণীতে (পৃ. ৩৯) طلحة ابن مصرف থেকে এর একটি মুতাবা‘আত এসেছে, যিনি ছিক্বাহ। তবে তার থেকে বর্ণনাকারী أبا جناب الكلبي মুদাল্লিস রাবী। সনদে তিনি ‘আন‘আনা করেছেন। একইভাবে ত্বাবারাণীতে حبيب بن أبي ثابت থেকে আরেকটি মুতাবা‘আত এসেছে। যেমনটি যায়লাঈ বলেছেন। কিন্তু তার থেকে বর্ণনাকারী عبد الكريم ابن أبي المخارق যঈফ রাবী।
অন্যদিকে মিনহাল ইবনু ‘আমর زر بن جحش الأسدي عن عبد الله بن مسعود থেকে উক্ত বর্ণনার ভিন্ন একটি বর্ণনা এনেছেন। যেখানে ইবনু মাস‘ঊদ বলেন, كنت جالساً عند النبي صلى الله عليه وسلم فجاء رجل من مراد يقال له صفوان بن عسال فقال: يا رسول الله إني أسافر بين مكة والمدينة فأفتني عن المسح على الخفين। এই বর্ণনায় إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ অংশটুকু আসেনি।
আলবানী বলেন, উক্ত বর্ণনাটি মুসনাদে ইবনে মাস‘ঊদে এসেছে। তবে তা শায। মিনহাল পর্যন্ত এই সূত্রটিতে صَعْقُ بْنُ حَزَنٍ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি সত্যবাদী, কিন্তু ভুল করেন। যেমনটি ইবনু হাজার বলেছেন।
হাদীছটির আরেকটি সূত্র রয়েছে, যেটি أبي روق عطية بن الحارث قال: ثنا أبو الغريف عبد الله بن خليفة، عن صفوان بن عسال থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই বর্ণনায়ও إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ অংশটুকু আসেনি। হাদীছটি আহমাদ, ত্বাহাবী, বায়হাক্বী যঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন। أبو الغريف عبد الله بن خليفة -এর ব্যাপারে আবু হাতেম বলেন, তিনি প্রসিদ্ধ নন। অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন। কেননা তিনি আছবাগ ইবনু নাবাতাহ-এর সাথীদের শায়খ। যেমনটি জারহ গ্রন্থে (২/২/৩১৩) বর্ণিত হয়েছে। আর আছবাগ তার নিকটে ‘লাইয়েনুল হাদীছ’।
সবশেষে তিনি একটি সতর্কতা পেশ করেন এ মর্মে যে, ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ হাদীছটির মধ্যেকার نوم (ঘুম) শব্দটি মুদরাজ সাব্যস্ত করেছেন। অথচ এ দাবী পরিত্যাজ্য। বরং উক্ত অংশটুকু সবার নিকট থেকে প্রমাণিত। এ ভুলের ব্যাপারে ইবনু তায়মিয়াহর পূর্বে কেউ বলেছেন বলে তিনি জানেন না। আর এই অতিরিক্ত অংশটুকু প্রমাণ করে যে, ঘুম পেশাব-পায়খানার মতই ওযূ ভঙ্গকারী।[2]
উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হাফেয যায়লাঈ মোট ৫টি গ্রন্থ থেকে উক্ত হাদীছটির বিভিন্ন সূত্রসমূহ রাবীর নাম ও অনুচ্ছেদসহ উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে ত্বাবারাণী বর্ণিত এর একটি মুতাবা‘আত এবং হাদীছটির ব্যাপারে তিরমিযীর মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। অতঃপর রাবী ‘আছেমের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মতামত তুলে ধরেছেন। কিন্তু নিজে উক্ত রাবী বা মূল হাদীছের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তবে আলোচনায় বুঝা যায় যে, তার নিকটে আছেমের দুবর্লতা সামান্য। সেকারণে তিনি উক্ত হাদীছের ব্যাপারে তিরমিযীর সিদ্ধান্ত তথা হাদীছটি ‘হাসান’ হওয়ার ব্যাপারে একমত।
অন্যদিকে আলবানী সর্বপ্রথম হাদীছটির উপর ‘হাসান’ হুকুম পেশ করেছেন। অতঃপর উক্ত হাদীছটির সংকলক হিসাবে মোট ১১টি হাদীছ গ্রন্থের নাম পৃষ্ঠাসহ উল্লেখ করেছেন। অতঃপর রেওয়ায়াতটির ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও তিরমিযীর মতামত এবং মূল বর্ণনাকারী ‘আছেমের ব্যাপারে তার নিজের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেছেন। তারপর হাদীছটির মোট ৫টি মুতাবা‘আত ও শাওয়াহেদ এনে সেগুলোর সমালোচনার নানা দিক পেশ করেছেন। সবশেষে তিনি হাদীছটির মধ্যে ইদরাজের অভিযোগকারীর জবাব দিয়েছেন।
উক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, উক্ত হাদীছটির ক্ষেত্রে আলবানী অনেক বিস্তারিত ও সূক্ষ্ম তাখরীজ পেশ করেছেন। তবে আলবানীর জন্য তা সম্ভব হয়েছে যুগের পরিক্রমায় হাদীছ গ্রন্থসমূহ সহজলভ্য হওয়া, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত বহু হাদীছ গ্রন্থের উপর তাঁর দখল থাকা ও সেগুলোর উপর দীর্ঘ গবেষণার কারণে।
১০. রাবীর সমালোচনায় ইমামদের মতবিরোধ নিরসনে গবেষণাপূর্ণ সমাধান পেশ :
যে সব রাবীর ব্যাপারে রিজালবিদগণ মতভেদ করেছেন, সেক্ষেত্রে আলবানী সূক্ষ্ম আলোচনার মাধ্যমে দলীল-প্রমাণের আলোকে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন-عتبة بن أبي حكيم الهمداني -এর ব্যাপারে আলবানী বলেন, ইমাম দারাকুৎনী তার ব্যাপারে বলেছেন, ليس بالقوي (তিনি শক্তিশালী নন)। আমার বক্তব্য হ’ল, বরং তার ব্যাপারে ইমামগণ মতভেদ করেছেন। কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন, কেউ দুর্বল বলেছেন। সেকারণে ইমাম যাহাবী তাকে متوسط الحديث বলেছেন। এছাড়া ইবনু হাজারের বক্তব্যে বুঝা যায় যে, তার নিকটে তিনি যঈফ রাবী। যেমন স্বীয় তাক্বরীবে তিনি বলেন, صدوق يخطئ كثيرا ‘তিনি সত্যবাদী, তবে প্রচুর ভুল করেন’।
ইমাম নববী ও যায়লাঈ উভয়ে তার হাদীছকে শক্তিশালী বলেছেন। প্রথমজন স্বীয় ‘আল-মাজমূ‘ গ্রন্থে বলেছেন, হাদীছটির সনদ ছহীহ। তবে এর বর্ণনাসূত্রে উৎবা ইবনু আবী হাকীম রয়েছেন। বিদ্বানগণ তার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। অধিকাংশ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যারা তাকে দুর্বল বলেছেন, তারা তার দুর্বলতার কোন কারণ উল্লেখ করেননি। আর হাদীছশাস্ত্রের নীতিমালা মোতাবেক সমালোচনা ব্যাখ্যা সম্বলিত (মুফাসসার) না হ’লে গ্রহণযোগ্য হয় না। অতএব উক্ত (রাবীর বর্ণিত) রেওয়ায়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়।
অতঃপর আলবানী বলেন, দুই দিক থেকে উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
(ক) নববীর বক্তব্য- জুমহূর তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যা থেকে বুঝা যায় যে, অল্প সংখ্যক বিদ্বান তাকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। অথচ বিষয়টি এরূপ নয়। আমি অনুসন্ধান করে তাকে যঈফ সাব্যস্তকারীর সংখ্যা ৮ জন পেয়েছি। তারা হ’লেন, (১) আহমাদ ইবনু হাম্বল তাকে সামান্য দুর্বল বলতেন (يوهنه قليلا)। (২) ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন একস্থানে বলেন, তিনি দুর্বল রাবী (ضعيف الحديث)। অন্যত্র বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, ‘উৎবা’ মুনকিরুল হাদীছ (منكر الحديث)। (৩) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আওফ আত-তাঈ বলেন, তিনি দুর্বল (ضعيف)। (৪) জাওযাজানী বলেন, হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় নয় (غير محمود في الحديث)। (৫) নাসাঈ তাকে দুর্বল (ضعيف) বলেছেন। কিন্তু অন্যত্র তাকে শক্তিশালী নয় (ليس بالقوي) বলেছেন। (৬) ইবনু হিববান বলেন, তার থেকে বাক্বিয়াহ ইবনুল ওয়ালীদ সূত্রে বর্ণিত হাদীছ ব্যতীত অন্য হাদীছ ই‘তিবারের ক্ষেত্রে পেশ করা হয় (অর্থাৎ শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য)। (৭) দারাকুৎনী বলেন, শক্তিশালী নয় (ليس بالقوي)। (৮) বায়হাক্বী বলেন, শক্তিশালী নয় (غير قوي)।
অতঃপর তাকে নির্ভরযোগ্য বলে সাব্যস্তকারীর সংখ্যা অনুসন্ধান করে ৮ জনকে পেয়েছি। যথা : (১) মারওয়ান ইবনু মুহাম্মাদ আত-তাতারী তাকে ‘ছিক্বাহ’ সাব্যস্ত করেছেন। (২) ইবনু মা‘ঈন তাকে ‘ছিক্বাহ’ সাব্যস্ত করেছেন। (৩) আবু আর-রাযী বলেন, তিনি ছালিহ (صالح)। (৪) দুহাইম বলেন, আমি তাকে মুস্তাক্বীমুল হাদীছ (مستقيم الحديث) হিসাবেই জানি। (৫) আবু যুর‘আ আদ-দিমাশক্বী তাকে স্বীয় ‘ছিক্বাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (৬) ইবনু ‘আদী বলেন, আশা করি তার মধ্যে কোন দোষ নেই (أرجو لا بأس به)। (৭) ত্বাবারাণী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত (من ثقات المسلمين)। (৮) ইবনু হিববান স্বীয় ‘ছিক্বাত’ গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ করেছেন।
আলবানী বলেন, উৎবাকে ছিক্বাহ বা দুর্বল সাব্যস্তকারীদের মধ্যে অনুসন্ধান করে এই কয়েকজন মুহাদ্দিছকেই আমি পেয়েছি। যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, উৎবাকে ছিক্বাহ সাব্যস্তকারীর সংখ্যা তাকে দুর্বল সাব্যস্তকারীদের সমান। অতএব এটা বলা স্পষ্টতই ভুল হবে যে, জুমহূর মুহাদ্দিছ তাকে ছিক্বাহ সাব্যস্ত করেছেন। বরং ‘জুমহূর তাকে যঈফ বলেছেন’ বললে সেটাই শুদ্ধতার নিকটবর্তী হবে। সেটা কিভাবে তা নিম্নে বর্ণিত হ’ল-
আমরা ইবনু মা‘ঈন ও ইবনু হিববানের নাম ছিক্বাহ সাব্যস্তকারী, যঈফ সাব্যস্তকারী উভয় সারণীতেই পেয়েছি। এটা রাবীর সমালোচকদের ইজতিহাদী মতপার্থক্য মাত্র। অর্থাৎ কাউকে ছিক্বাহ সাব্যস্ত করার পর যখন তার নিকটে উক্ত রাবীর ব্যাপারে এমন কোন দোষ প্রকাশ পায়, যা তুলে ধরা আবশ্যক, তখন তিনি তা পেশ করেন। এরূপ অবস্থা প্রত্যেক বিজ্ঞ সমালোচক ও উপদেশদাতাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে ইমামের কোন বক্তব্যটি অগ্রগণ্য হবে? বিশ্বস্ততা না দুর্বলতা সাব্যস্তকারী বক্তব্য?
নিঃসন্দেহে দ্বিতীয়টি। কেননা (তাকে ছিক্বাহ সাব্যস্ত করার পর) তার নিকটে উক্ত রাবীর সমালোচনার যোগ্য কিছু প্রকাশ না পেলে, তিনি কখনোই তার সমালোচনা করবেন না। আর উক্ত রাবীর ক্ষেত্রে তিনি ব্যাখ্যাসম্বলিত সমালোচনা (جرح مفسر) করেছেন। অতএব তা তাওছীক-এর উপর অগ্রগণ্য হবে এবং উক্ত তাওছীক তার মারজূহ ও অগ্রহণযোগ্য মত হিসাবে গণ্য হবে। তাই প্রথম সারণী থেকে ছিক্বাহ সাব্যস্তকারী হিসাবে ইবনু মা‘ঈন ও ইবনু হিববানের নাম বাদ দিতে হবে। তাহ’লে তাদের সংখ্যা আট থেকে ছয়-এ নেমে আসবে।
অতঃপর যদি আমরা প্রথম সারণীর দিকে আরেকবার দৃষ্টিপাত করি, তবে সেখানে আমরা আবূ হাতেম আর-রাযীকে পাব। যিনি তাকে صالح বলেছেন। মুহাদ্দিছগণের পরিভাষায় যদিও এটি ছিক্বাহ সাব্যস্তকারী শব্দ, তবুও আবু হাতেমের নিজস্ব পরিভাষা অনুযায়ী তা নয়। যেমন তার পুত্র ইবনু আবী হাতেম স্বীয় الجرح والتعديل গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন : আমি জারহ ওয়াত তা‘দীল গ্রন্থে বিভিন্ন মর্তবার শব্দ পেয়েছি। যদি কারো ব্যাপারে তিনি ثقة বা متقن বা ثبت বলেন, তাহ’লে তার হাদীছ দলীল হিসাবে গৃহীত হবে। …আর شيخ বলা হলে তিনি তৃতীয় মর্তবার হিসাবে গণ্য হবেন। …যদি বলা হয় صالح الحديث বা لين الحديث , তবে তার হাদীছ লেখা যাবে। তবে সেটি ই‘তিবার তথা শাওয়াহেদ বা মুতাবা‘আতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে।
আবূ হাতেমের উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, তার ‘ছালিহুল হাদীছ’ বলা অন্যদের ‘লাইয়িনুল হাদীছ’ বলার ন্যায়। কেবল ই‘তিবার ও শাওয়াহেদের ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য হবে। অর্থাৎ তা সরাসরি দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব ‘ছালিহ’ সাব্যস্তকরণ আবূ হাতেমের নিকটে জারহ বোধক শব্দ, তা‘দীল বোধক নয়। …এক্ষণে তার নাম ছিক্বাহ সাব্যস্তকারী সারণী থেকে দুর্বল সাব্যস্তকারী সারণীতে স্থানান্তরিত হ’ল। ফলে ছিক্বাহ সাব্যস্তকারীর সংখ্যা পাঁচ এবং দুর্বল সাব্যস্তকারীর সংখ্যা নয় হ’ল। এর সাথে যদি আমরা বায়হাক্বীর বক্তব্য ‘সে শক্তিশালী নয়’ যুক্ত করি, তবে তার সংখ্যা হবে দশ।
অতঃপর ইবনু ‘আদীর ভাষ্য, ‘আশা করি তার মধ্যে কোন দোষ নেই’ স্পষ্ট ছিক্বাহ সাব্যস্তকারী মন্তব্য নয়। যদি তা গ্রহণও করা হয়, তবে তা তা‘দীলের সর্বনিম্ন বা জারহ-এর সর্বোচ্চ মর্তবা। এটা لا أعلم به بأس -এর মত একটি জারহ। যেমনটি তাদরীবুর রাবীতে এসেছে।
অতঃপর আলবানী বলেন, উক্ত আলোচনার স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, জুমহূর বিদ্বানগণ উৎবা ইবনু আবী হাকীমকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। আর তাদের দুর্বলতার বিষয়টি ব্যাখ্যাসহ স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।[3]
উক্ত রাবীর উপর আলবানীর গবেষণাপূর্ণ আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, তিনি নির্দিষ্টভাবে কারো মতামতকে অগ্রাধিকার না দিয়ে জারহ ও তা‘দীলের সার্বজনীন নীতিমালার আলোকে সাধ্যমত গবেষণা করেছেন এবং ইমামগণের মতামতসমূহের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে দলীল-প্রমাণের আলোকে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রয়াস পেয়েছেন।
১১. মতনগত ত্রুটির প্রতি গভীর দৃষ্টি :
শায়খ আলবানী মুহাদ্দিছদের মানহাজের অনুসরণে সনদগত সমালোচনাকে সর্বদা অগ্রগণ্য করেছেন। তবে এর পাশাপাশি মতনের দুর্বলতার প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছেন এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে তার বিশুদ্ধতা নিরূপণের প্রয়াস পেয়েছেন। এক্ষেত্রেও তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ড. শামসুদ্দীন ই’বা বলেন, كانت عناية الشيح الألباني بنقد متون الأحاديث وإعماله لتلك القواعد والمقاييس أثر واضح في بعث هذا العلم مرة ثانية، وبناء علي ذلك يمكن أن يعد رائدهم وعمدتهم في هذا المجال في العصر الحديث- ‘হাদীছের মতন সমালোচনার ক্ষেত্রে শায়খ আলবানীর প্রচেষ্টা এবং সুনির্দিষ্ট নীতি ও মানদন্ড অনুযায়ী তাঁর কর্মতৎপরতা দ্বিতীয়বারের মত ইলমের উক্ত ময়দানে জাগরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট প্রভাব রেখেছে। যার ভিত্তিতে আধুনিক যুগে তাকে উক্ত বিষয়ের অগ্রদূত ও স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা যায়’।[4]
যেমন এমন কিছু বর্ণনা এসেছে, যেগুলি সনদগত দিক থেকে দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে সেটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বাস্তবতার সম্পূর্ণরূপে বিপরীত। যেমন আবূ উমামা (রা.) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, وكل بالشمس تسعة أملاك يرمونها بالثلج كل يوم، لولا ذلك ما أتت على شيء إلا أحرقته ‘সূর্যের জন্য ৯ জন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে, যারা প্রতিদিন তার উপর বরফ ছুঁড়ে দেয়। যদি তারা এরূপ না করত, তবে সূর্যের সামনে যা আসত, তাই সে পুড়িয়ে দিত’।
আলবানী হাদীছটি মাওযূ‘ বা জাল হওয়ার ব্যাপারে সার্বিক আলোচনা পেশ করার পর মন্তব্য করেন যে, ‘সনদগত দুর্বলতার সাথে সাথে হাদীছের বক্তব্যটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্যেরও বিরোধী। কেননা পৃথিবীতে যা কিছু আছে সূর্যের তাপে তা না পোড়ার কারণ হ’ল পৃথিবী থেকে সূর্যের দীর্ঘ দূরত্ব। যা প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কি.মি.।[5]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মুহাদ্দিছগণের অনুসরণে আলবানীর কেবল সনদগত সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হননি। বরং মতনের প্রতি গভীর দৃষ্টি রেখেছেন।
১২. বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ থেকে দলীল গ্রহণ :
আলবানী (রহঃ) বিশেষত হাদীছ গ্রন্থসমূহের উপর প্রভূত দখল রাখতেন। দামেশকের মাকতাবা যাহেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মাকতাবাসমূহে দীর্ঘদিন নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার ফলে তিনি বিপুল জ্ঞানভান্ডার পর্যবেক্ষণের সুযোগ লাভ করেন। কেবল মাকাতাবা যাহেরিয়াতে সংরক্ষিত হাদীছগ্রন্থসমূহ গবেষণা করে উৎসগ্রন্থ ও একই হাদীছের বিভিন্ন তুরুক সহ চল্লিশ হাযার হাদীছের একটি সূচী তৈরী করেন।[6] সেকারণে স্বীয় তাখরীজে তিনি বিপুল পরিমাণ গ্রন্থরাজি থেকে তথ্য সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষত সিলসিলা ছহীহাহ ও যঈফাহ গ্রন্থে তিনি প্রকাশিত-অপ্রকাশিত অধিকাংশ হাদীছগ্রন্থ থেকে দলীল পেশ করেছেন। উৎসগ্রন্থ হিসাবে সেখানে তিনি এমন শতাধিক পান্ডুলিপির নাম উল্লেখ করেছেন, যার কোনটি অদ্যবধি প্রকাশিত হয়নি। বরং কোন লাইব্রেরীতে পান্ডুলিপি আকারে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া মুছত্বলাহুল হাদীছ, তাফসীর, তাখরীজ, ফিক্বহ, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ক নানা গ্রন্থাবলী থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন। নিম্নে উদাহরণ হিসাবে সিলসিলা যঈফাহ থেকে একটি তাখরীজ পেশ করা হ’ল :
যেমন من كنوز البر كةمان المصائب والأمراض والصدقة ‘সৎকর্মের ভান্ডারের মধ্যে একটি হ’ল বিপদাপদ, রোগ-ব্যাধি ও ছাদাকা গোপন রাখা’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি সম্পর্কে তিনি বলেন, হাদীছটি যঈফ। আবুবকর আর-রুইয়ানী স্বীয় ‘মুসনাদ’ (১/২৫০) গ্রন্থে, ইবনু আদী (২/১৫১), আবু নু‘আইম (৮/১৯৭) এবং কুযাঈ (২/২১) زافر بن سليمان عن عبد العزيز بن أبي رواد عن نافع عن ابن عمر থেকে মারফূ‘ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর হাদীছটির দুর্বলতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সংক্ষিপ্ত তাখরীজে তিনি ইবনু আবী হাতেম-এর العلل (২/৩৩২), জালালুদ্দীন সুয়ূত্বীর اللآلئ المصنوعة في الأحاديث الموضوعة (২/৩৯৬), আবু যাকারিয়া আল-বুখারীর الفوائد, আবুল হোসাইন আল-বূশানজীর المنظوم (৪/২), আবু আলী আল-হারাবীর الفوائد (৭/১), আবু নু‘আইম ইসফাহানীর الأربعون على مذهب المتحققين من الصوفي এবং খত্বীব বাগদাদীর تاريخ بغدادসহ মোট ১০টি গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি পেশ করেছেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে আলবানী বলেন, ইবনু ‘আদী বলেছেন, আব্দুল্লাহ বিন আব্দিল আযীয বিন আবী রাওয়াদ তার পিতা (আব্দুল আযীয) থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কেউ তার মুতাবা‘আত করেনি। তবে আবু নু‘আইম স্বীয় الأربعون على مذهب المتحققين من الصوفي গ্রন্থে আব্দুল আযীয থেকে মানছূর ইবনু আবী মাযাহিম সূত্রে হাদীছটি সংকলন করেছেন।
আলবানী বলেন, মানছূর ছিক্বাহ এবং ইমাম মুসলিমের রাবী। কিন্তু আমার মনে হয় উক্ত সনদটি ছহীহ নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, الأربعون গ্রন্থটি এখন পর্যবেক্ষণ করার উপায় নেই। কেননা গ্রন্থটি মাকতাবা যাহেরিয়ায় সংরক্ষিত একটি পান্ডুলিপি (অর্থাৎ এখনও প্রকাশ পায়নি)। উপরন্তু বর্তমানে চলমান আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের কারণে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তা মাকতাবার বাইরে একটি লোহার সিন্দুকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
অতঃপর সিলসিলা যঈফার পরবর্তী সংস্করণে তিনি বলেন, ‘অতঃপর পান্ডুলিপিগুলো মাকতাবায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি তা পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম সেখানে হাদীছটি عيسى بن حامد الرخجي حدثنا الحسن بن حمزة: حدثنا منصور بن أبي مزاحم به সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। রাজেহী ছিক্বাহ রাবী। খত্বীব বাগদাদী তার জীবনী পেশ করেছেন। কিন্তু হাসান ইবনু হামযার পরিচয় আমি কোথাও খুঁজে পাইনি। অতএব এটা স্পষ্ট যে সে-ই এই সনদের ত্রুটি। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।[7]
উক্ত উদাহরণে বিরল গ্রন্থসমূহের উপর আলবানীর গভীর মণীষার কিছু নযীর পাওয়া যায়। সমসাময়িক মুহাদ্দিছগণও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যেমন সঊদী আরবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুল মুহসিন ‘আববাদ বলেন, ‘বর্তমান যুগে হাদীছের সাথে সুগভীর সম্পর্ক এবং সুবিস্তৃত জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর সমতুল্য আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই’।[8]
মরক্কোর বিশিষ্ট হানাফী মুহাদ্দিছ আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছিদ্দীক আল-গুমারী (১৯১০-১৯৯৩ খ্রি.) আলবানীর প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বইও রচনা করেছেন। তবে তাঁর ব্যাপারে তিনি বলেন, নাছিরুদ্দীন আলবানী ইলমে হাদীছের ময়দানে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে মাকতাবা যাহেরিয়ায় সংরক্ষিত হাদীছের অতি মূল্যবান পান্ডুলিপিসমূহ তাকে সহযোগিতা করেছে। ..তবে তিনি ইবনু তায়মিয়াহর অনুসারী ও দৃঢ়চেতা ওয়াহহাবী। তিনি যদি গোঁড়া ও মন্দ মাযহাবের অনুসারী না হ’তেন, তাহ’লে হাদীছের জ্ঞানে অদ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হ’তেন।[9]
১৩. নতুন রচনা রীতি উদ্ভাবন :
প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থসমূহ তাখরীজের ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি তা ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমভাগে তিনি আমলযোগ্য হাদীছ তথা ছহীহ ও হাসান হাদীছ সমূহ একত্রিত করেছেন। আর অপরভাগে একত্রিত করেছেন যঈফ ও মাওযূ‘ হাদীছসমূহ। অর্থাৎ যা আমলযোগ্য নয়। এরূপ পৃথকীকরণের পিছনে তাঁর মৌলিক লক্ষ্য ছিল মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেণীর মানুষ খুব সহজেই যেন ছহীহ সুন্নাহর নাগাল পায়, তা আয়ত্ব করতে সক্ষম হয় এবং তদনুযায়ী আমল করার সুযোগ লাভ করে। সাধারণ মানুষকে হাদীছ গ্রন্থ অধ্যয়নের ক্ষেত্রে যেন কোনটি গ্রহণীয় কোনটি বর্জনীয় তা নিয়ে চিন্তান্বিত হ’তে না হয়।
যেসব গ্রন্থের ক্ষেত্রে তিনি উক্ত নীতি অবলম্বন করেছেন সেগুলো হল, (১) সুনান আবূদাঊদ (২) সুনান তিরমিযী (৩) সুনান নাসাঈ (৪) সুনান ইবনু মাজাহ (৫) আল-জামে‘উছ ছাগীর (৬) আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (৭) আল-আদাবুল মুফরাদ।
ইতিপূর্বে কোন বিদ্বান উক্ত গ্রন্থসমূহ এভাবে ভাগ করার প্রয়াস পাননি। তাই এই অভিনব কাজের জন্য তিনি বহু মানুষের সমালোচনার শিকার হন। এমনকি সমসাময়িক অনেক মুহাদ্দিছ বিদ্বানও তাঁর এই পৃথকীকরণের সমালোচনা করেন।[10] কিন্তু সবকিছুর পরেও তিনি স্বীয় মতে দৃঢ় থাকেন এবং এ মর্মে কৈফিয়ত পেশ করেন বলেন যে, ‘আমার লক্ষ্য হ’ল মুসলিম উম্মাহর হাতে ছহীহ সুন্নাহকে পৌঁছে দেওয়া। তাই এরূপ পৃথকীকরণ আমার উদ্দেশ্যের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল’।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর পূর্বে আমি যখন ছহীহ ও যঈফ আবূদাঊদ এবং এরূপ অন্যান্য কাজগুলো করতে শুরু করি, তখন কিছু সম্মানিত ব্যক্তি এরূপ পৃথকীকরণের ব্যাপারে একমত ছিলেন না। বরং তারা বললেন যে, কিতাবকে ছহীহ ও যঈফ হিসাবে পৃথকীকরণ ব্যতীত মৌলিক অবস্থায় রেখে হাদীছের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণে মনোযোগ দেওয়া উত্তম হবে। নিঃসন্দেহে এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এখানে সংকলকের মূল সংকলনটির সংরক্ষণ এবং যঈফ থেকে ছহীহ সমূহের পৃথকীকরণ উভয়টিই একত্রিত থাকছে। কিন্তু উপরোক্ত পৃথকীকরণের যে উপকার, তাও অস্বীকার করা যায় না। বরং এটা সাধারণ ও বিশেষ সকল শ্রেণীর মুসলমানের জন্য অধিক উপকারী। কেননা স্বাভাবিকভাবে সর্বজনবিদিত যে, উপরোক্ত পৃথকীকৃত হাদীছসমূহ (ছহীহ ও যঈফ) একই কিতাবের মধ্যে সংকলিত হ’লে সব ধরণের মানুষের পক্ষে তা মুখস্ত করা বা আয়ত্ত করা স্বভাবগতভাবেই অসম্ভব। বরং অধিকাংশের জন্যই তা দুঃসাধ্য। তবে (তা সম্ভব হবে) যদি ছহীহগুলো একটি কিতাবে এবং যঈফগুলো আরেকটি কিতাবে সংকলিত হয়। এটা একটি পরীক্ষিত বিষয়। কেউ এর বিরোধিতা করবে না। সর্বোপরি বিষয়টি ঐরূপ যেমনটি আল্লাহ বলেন, وَلِكُلٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا فَاسْتَبِقُواْ الْخَيْرَاتِ ‘আর প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পৃথক ক্বিবলা, যেদিকে তারা উপাসনাকালে মুখ করে থাকে। কাজেই দ্রুত সৎকর্ম সমূহের দিকে এগিয়ে যাও’।[11] অতএব আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানাই তিনি যেন আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন’।[12]
একই লক্ষ্যে তিনি কেবলমাত্র ছহীহ হাদীছের সংকলন হিসাবে ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ’ এবং যঈফ ও জাল হাদীছের সংকলন হিসাবে ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ’ রচনা করেন। উভয় গ্রন্থে তিনি প্রসিদ্ধ ৬টি গ্রন্থের বাইরের হাদীছসমূহ সবিস্তারে বিশ্লেষণ করে হুকুম মোতাবেক পৃথক করার প্রয়াস পেয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, চতুর্থ শতাব্দী হিজরীতে ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিমের অনুসরণে একদল মুহাদ্দিছ কেবল ছহীহ হাদীছগুলো একত্রিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। যেমন : মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব ইবনু খুযায়মা আন-নাইসাপূরী (৩১১হি.)[13], আবু আলী সা‘ঈদ ইবনু ওছমান ইবনুস সাকান (৩৫৩হি.)[14], আবু হাতেম ইবনু হিববান আল-বুস্তী (৩৫৪হি.)[15] প্রমুখ। নিঃসন্দেহে এই সংকলনগুলি বিশুদ্ধতায় ‘ছহীহাইন’-এর স্তরের নয়। বিশেষত ইবনু খুযায়মা ও ইবনু হিববান ছহীহ এবং হাসান হাদীছের মধ্যে কোন পার্থক্য করতেন না। এমনকি হাদীছ ছহীহ হওয়ার জন্য ‘ইল্লত বা গোপন ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়াকেও শর্ত মনে করতেন না।[16] ফলে এ সকল গ্রন্থে ছহীহ হাদীছের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যঈফ এবং মাওযূ‘ হাদীছও রয়ে গেছে।
এছাড়া পরবর্তীতে অল্প কিছু বিদ্বান এরূপ ছহীহ হাদীছের সংকলন রচনার প্রয়াস পেলেও তা গ্রহণযোগ্যতার স্তরে উপনীত হয়নি। অন্যদিকে শায়খ আলবানীর সিলসিলা ছহীহাহ যে মানহাজে রচিত হয়েছে, বিশুদ্ধতা নিরূপণের সার্বিক শর্তাবলী তার মধ্যে যেভাবে প্রতিপালিত হয়েছে এবং বিশুদ্ধতার মানদন্ড হিসাবে সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকটে যেভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে, তাতে ছহীহাইনের পর গ্রন্থটিকে ছহীহ হাদীছ সংকলনের একটি স্বার্থক প্রয়াস বলা হ’লে মোটেও অত্যুক্তি হবে না।
এছাড়া ছহীহুল বুখারী সংক্ষিপ্তকরণে তিনি যে مختصر صحيح البخاري সংকলন করেন, সেটিও প্রভূত ফায়েদাপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। সংক্ষিপ্ত অথচ ওলামায়ে কেরাম ও তালিবুল ইলমদের জন্য দারুণ উপকারী এরূপ বৈশিষ্ট্যে ছহীহ বুখারী সংক্ষেপনের কাজ ইতিপূর্বে কেউ করেননি।[17]
১৪. হুকুম সাব্যস্তের কারণসমূহ সহজ, বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন :
আলবানীর তাখরীজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হ’ল, কোন হাদীছের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি দলীল-প্রমাণসমূহ সহজ, বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করেছেন। হাদীছ ভেদে শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতসমূহের সনদ ও উদ্ধৃত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। কোন গ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে উদ্ধৃতি পেশ করলে তা কোন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রয়েছে তা উল্লেখ করেছেন। ইমামগণের মতামতসমূহ তুলে ধরেছেন। রাবীদের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকলে নিরপেক্ষভাবে তা উল্লেখ করেছেন। সনদে বা মতনে গোপন দোষ-ত্রুটি থাকলে তা নিয়ে বিস্তরভাবে আলোচনা করেছেন। সর্বোপরি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুস্পষ্ট একটি আলোচনা তুলে ধরার পর তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। ফলে গবেষকগণ তাঁর সিদ্ধান্তের পিছনের গৃহীত দলীল সমূহ ও তার উৎসস্থল সম্পর্কে সহজেই বুঝতে সক্ষম হন। কোন ক্ষেত্রে বিদ্বানদের মতভেদ থাকলে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। সাথে সাথে তাঁর গবেষণায় বিশেষ কোন ভুল-ত্রুটি বা ঘাটতি থাকলে পরবর্তী গবেষকদের তা চিহ্নিত করতেও বেগ পেতে হয় না।
১৫. অকপটে সাহসী সিদ্ধান্ত প্রদান :
তাখরীজের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আলবানী সিদ্ধান্ত প্রদানে কোন দ্বিধা করেননি। হুকুম নির্ধারণে কোন সংশয় বা মতদ্বৈততার আশ্রয় নেননি। বরং সাধ্যমত গবেষণা করে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে সিদ্ধান্ত প্রদানে অগ্রসর হয়েছেন। ফলে অধিকাংশ তাখরীজে তিনি আলোচনার সার-নির্যাস হিসাবে প্রথমে হাদীছের হুকুম উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছেন।
‘কুরআন ব্যতীত অন্য কোন কিতাব নিরঙ্কুশভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়’-এই চিন্তাধারার আলোকে তিনি ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের কিছু হাদীছের ব্যাপারে গবেষণা করে বিস্তারিত সমালোচনা পেশ করতেও যেমন পিছপা হননি,[18] তেমনি উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের বেশ কিছু হাদীছের ব্যাপারে অন্যান্য বিদ্বানদের সমালোচনার নিরপেক্ষ জবাবও তিনি দৃঢ়তার সাথে পেশ করেছেন। এমনকি ছহীহ মুসলিমের একাধিক হাদীছের ব্যাপারে ইমাম বুখারী, আলী ইবনুল মাদীনী, আবূদাঊদ, ইবনু মা‘ঈন, ইবনু খুযায়মা, বায়হাক্বী প্রমুখ বিদ্বানের সমালোচনার জবাবে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করে সেগুলো ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন।[19]
একইভাবে স্বীয় তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে তিনি ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহ.)-এর সিদ্ধান্তের উপর অধিক নির্ভর করলেও তাঁর অনেক সিদ্ধান্তের সমালোচনা বা বিপরীত সিদ্ধান্ত পেশ করতে তিনি দ্বিধা করেননি। বরং তাঁর নিকটে যতটুকু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তা স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন।[20]
নিজের কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভুল বুঝতে পারলে বা অন্য কেউ ধরিয়ে দিলে তা থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রে তিনি নিন্দুকের নিন্দাবাদের কোন পরওয়া করেননি। বরং ভুল ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তির প্রতি শুকরিয়া ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। যেমন একটি হাদীছের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইমাম বায়হাক্বীর বক্তব্য অনুযায়ী ইবনু কুতায়বা হাদীছটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন মনে করে কিছুকাল আমি তা যঈফ বলে ধারণা করতাম। অতঃপর আমি মুসনাদে আবী ইয়া‘লা এবং আখবারে ইস্ফাহান গ্রন্থদ্বয়ে উল্লেখিত সনদ তদন্ত করে নিশ্চিত হ’লাম যে, এর সনদ ‘শক্তিশালী’। ইবনু কুতায়বা কর্তৃক একক সনদে বর্ণিত বলে ধারণা করা সঠিক নয়। সেকারণে ইলমী আমানত আদায় ও দায়মুক্তির লক্ষ্যে আমি হাদীছটি সিলসিলা ছহীহায় সংকলন করলাম। যদিও এটা অজ্ঞ ও বিদ্বেষপরায়ণদের অন্যায় আক্রমণ, কুৎসা ও কটাক্ষের পথ খুলে দেবে। তবে যেহেতু আমি দ্বীনের আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি, তাই এসব সমালোচনার আমি কোনই পরওয়া করি না। বরং আমি আল্লাহর নিকট নেকীর আশা করি মাত্র।[21]
কখনো কখনো কোন বিদ্বানের ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হ’লে তাও তিনি পূর্ণ আস্থার সাথে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। ফলে সমালোচনার ক্ষেত্রে কখনো কখনো অধিক কঠোরতাও প্রকাশ পেয়েছে।[22]
১৬. অধিকাংশ হাদীছের হুকুম নির্ণয় :
তাখরীজুল হাদীছের সর্বোচ্চ স্তর হ’ল হুকুম প্রদান করা। ইলমে হাদীছের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় গভীর জ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাবলীর উপর দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ব্যতীত হুকুম সাব্যস্তকরণ অবধি অগ্রসর হওয়া সহজ নয়। আর উক্ত দু’টি বিষয়ে অগ্রগামিতার কারণে আলবানী (রহঃ) তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিতভাবে যত হাদীছের তাখরীজ করেছেন, প্রায় সবক্ষেত্রেই হাদীছটির স্তর ও হুকুম নির্ণয় করেছেন।
তাঁর মতে, মুছত্বলাহুল হাদীছের মূল উদ্দেশ্যই হ’ল হাদীছের বিশুদ্ধতা ও দুর্বলতা নির্ণয় করা।[23] সেকারণে মূলতঃ দু’টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তিনি তাখরীজের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়েছেন- (১) মূল উৎস থেকে হাদীছ গ্রহণ করে যেসব হাদীছ গ্রন্থে তা সংকলিত হয়েছে তার প্রতি সম্পৃক্ত করা। (২) হাদীছ যাচাই-বাছাই করে তার মর্তবা তথা ছহীহ, হাসান, যঈফ, মাওযূ‘ ইত্যাদি নির্ধারণ করা। সেকারণ উক্ত দু’টি উদ্দেশ্য পূরণ না করে যেসব লেখক হাদীছ উল্লেখ করার পর তার বিশুদ্ধতা বা দুর্বলতার হুকুম ব্যতীতই হাদীছটি তাখরীজ করেন, তাদের কার্যক্রমকে তিনি কুরআনের ভাষায় لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ অর্থাৎ (এরূপ তাখরীজ) তাদের পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও মিটাবে না’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।[24]
আলবানী তাঁর সকল গ্রন্থে প্রথমে হুকুম পেশ করার পর বিস্তারিত তাখরীজের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। তবে কিছু হাদীছের সনদের ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত হ’তে পারেননি। সেক্ষেত্রে তিনি ইলমী আমানত রক্ষার্থে পূর্ববর্তী ইমামগণের তাখরীজ নকল করেছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন।[25]
(ক্রমশঃ)
[1]. নাছবুর রায়াহ লি আহাদীছিল হিদায়াহ, ১/১৮১।
[2]. ইরওয়াউল গালীল, ১/১৪০-১৪১।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ, ৩/১১০-১১৩।
[4]. ড. শামসুদ্দীন ই’বা, মানহাজুশ শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আল-আলবানী ফী রাদ্দিল হাদীছ ‘ইনদা মুখালাফাতিহী লিল উছূলিশ শার‘ঈয়াহ (মালয়েশিয়া : মাজাল্লা ‘ইলমিইয়াহ মুহাক্কামাহ, ৪র্থ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, জুন ২০১৪ খ্রি.), পৃ. ২২৪।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ, ১/৪৬২, হা/২৯৩।
[6]. আলবানী, ফিহরিসু মাখতূতাতিদ দারিল কুতুবিয যাহিরিইয়াহ, পৃ. ১২।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ, ২/১৩৫, হা/৬৯৩।
[8]. আব্দুল মুহসিন আল-‘আববাদ, কুতুবু ও রাসাইলু ‘আব্দিল মুহসিন ইবনি হামদ আল-‘আববাদ (রিয়াদ : দারুত তাওহীদ লিন নাশর, ১ম প্রকাশ, ১৪২৮ হি.), পৃ. ৩০৪।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ, ৪/৬, ভূমিকা দ্র.।
[10]. আব্দুল আউয়াল ইবনু হাম্মাদ আল-আনছারী, আল-মাজমূ‘ ফী তারজামাতিল আল্লামা আল-মুহাদ্দিছ আশ-শায়খ হাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-আনছারী, (মদীনা, ১ম প্রকাশ, ২০০২ খ্রি.), ২/৬২৪; উম্মু সালামা আস-সালাফিইয়াহ, রিহলাতুল আখীরাহ লি ইমামিল জাযীরাহ (ছান‘আ, ইয়ামন : দারুল আছার, ১ম প্রকাশ, ২০০৩ খ্রি.), পৃ. ১৮১-১৮২।
[11]. সূরা বাক্বারাহ, আয়াত নং ১৪৮।
[12]. আলবানী, যঈফুল আদাবিল মুফরাদ (সঊদী আরব : মাকতাবাতুদ দালীল, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৯৮ খ্রি.), ভূমিকা, পৃ. ৬।
[13]. তাঁর সংকলিত ‘ছহীহ ইবনু খুযায়মা’য় ৩০২৯টি হাদীছ রয়েছে। তবে এই গ্রন্থের বৃহত্তর অংশের পান্ডুলিপি হারিয়ে গেছে। মুছত্বফা আল-আ‘যমী (২০১৭খ্রি.)-এর সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়েছে। দ্র. ছহীহ ইবনু খুযায়মা (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ, ২০০৩খ্রি.)। এতে বেশ কিছু যঈফ হাদীছ রয়েছে। মুছত্বফা আল-আ‘যমী এর প্রায় ৩ শতাধিক হাদীছ যঈফ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং ২টি হাদীছকে জাল বলেছেন।
[14]. তাঁর সংকলিত ‘ছহীহ ইবনুস সাকান’ গ্রন্থটি অপ্রকাশিত রয়েছে এবং এর পান্ডুলিপি কোথায় রয়েছে তা অজ্ঞাত। দ্র. ড. ফুয়াদ সেযগীন, তারীখুত তুরাছিল ‘আরাবী, (রিয়াদ : জামি‘আতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ আল-ইসলামিয়াহ, ১৯৯১খ্রি.), ১/৩৭৮।
[15]. নাছিরুদ্দীন আলবানী এবং শু‘আইব আরনাঊত্বের সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে মোট ৭৪৯১টি হাদীছ রয়েছে এবং নাছিরুদ্দীন আলবানীর হিসাবে প্রায় ৩৪৫টি যঈফ এবং ৩টি মাওযূ‘ বা জাল হাদীছ রয়েছে (নাছিরুদ্দীন আলবানী, য‘ঈফু মাওয়ারিদিয যামআন (রিয়াদ : দারুছ ছুমাই‘ঈ, ২০০২খ্রি.)। বিন্যাস পদ্ধতির জটিলতার কারণে ৮ম শতকের মুহাদ্দিছ আল-আমীর ‘আলাউদ্দীন আলী ইবনু বালবান (৭৩৯হি.) এটি নতুনভাবে বিন্যস্ত করেন এবং এটিই বর্তমানে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এছাড়া আবূ বকর আল-হায়ছামী (৮০৭হি.) এই গ্রন্থ থেকে ছহীহুল বুখারী এবং ছহীহ মুসলিমের হাদীছসমূহ পৃথক করে موارد الظمآن إلي زوائد ابن حبان শিরোনামে একটি সংকলন প্রস্ত্তত করেন। এতে ২৬৪৭টি হাদীছ রয়েছে। বেশ কয়েকজন মুহাক্কিকের সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়েছে।
[16]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আন-নুকাত ‘আলা কিতাবি ইবনিছ ছালাহ, ১/৬৩।
[17]. আলবানী, মুখতাছার ছহীহুল ইমাম বুখারী, ১/১০-১৬।
[18]. শারহুল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়াহ, পৃ. ২২-২৩, টীকা দ্রষ্টব্য।
[19]. সিলসিলা ছহীহাহ, ৪/৪৪৯-৫০, হা/১৮৩৩, ইরওয়াউল গালীল, ২/৩৮-৩৯, ১২০-১২২, হা/৩৩২, ৩৯৪।
[20]. ইরওয়াউল গালীল, ২/৯৮; আত-তাওয়াসসুল, পৃ. ৯৫।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ, ১/২৭২, হা/১৪২, ৩/৪৭৯।
[22]. সিলসিলা ছহীহাহ, ২/১৯০, হা/৬২১।
[23]. সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ, ৬/৪০৯।
[24]. গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজি আহাদীছিল হালালি ওয়াল হারাম, পৃ. ৪।
[25]. ইরওয়াউল গালীল, ১/১০।