মৃত্যু নিশ্চিত হবে। আর বান্দা যদি দু’টি শর্ত পূরণ করে তবেই জান্নাত অবধারিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘’প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদেরকে অবশ্যই আমি জান্নাতে কক্ষ বানিয়ে দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। কতইনা উত্তম আমলকারীদের প্রতিদান!’’ (আনকাবূত ২৯/৫৭-৫৮)
বালা মুছীবত জীবনে আছে বলেই মানুষ সঠিক উপলব্ধি করতে শেখে। কিংবা মানুষ পথ ভুলে গেলে আল্লাহ তা‘আলা সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য বালা মুছীবত বান্দার ওপর দিয়ে থাকেন। বিপদ আপদে ছবুর করা ও দৃঢ় থাকা অতিব উত্তম। কেননা আল্লাহ বান্দার কল্যাণের জন্যই বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি বালা-মুছীবত দ্বারা পরীক্ষা করেন’ [ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩৪; মিশকাত, হা/১৫৩৬]।
বিপদগ্রস্থ হলে মৃত্যু কামনা করা উচিৎ নয়। কেননা বান্দা আল্লাহর নিকটে ভালো বা মন্দ হতে পারে। বান্দা ভালো হলে আরো ভাল আমল করতে পারবে এবং মন্দ হলে তাওবাহ করার সুয়োগ পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ فَإِنْ كَانِ مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزِيْدَ فيْ حَسَنَاتِهِ وَإِنْ كَانَ مُسِيْئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَّسْتَعْتِبَ ‘(মুছীবতে পতিত হওয়ার কারণে) তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ যদি সে নেককার হয় তবে হয়তো সে আরো বেশী নেক আমল করবে। আর যদি খারাপ প্রকৃতির হয় তবে হয়তো সে তওবাহ করার সুযোগ পাবে’ [ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৩; নাসাঈ, হা/১৮১৮; দারেমী, হা/২৭৫৮]।
নিরূপায় হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করতে পারবেন কীভাবে তা আমার প্রিয় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিখিয়ে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلِ اَللّٰهُمَّ أَحْيِنِىْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِىْ وَتَوَفَّنِىْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِىْ ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হবে এবং আমাকে মৃত্যু দান করুন যখন মৃত্যুই আমার জন্য উত্তম হবে’ [ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৮০; তিরমিযী, হা/৯৭১; নাসাঈ, হা/১৮২০]।
ছবুরের সাথে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করুন ! দুনিয়াতে নয়, আখিরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من يُرِدِ الله به خيرا يُصِبْ مِنه». “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।” (বুখারী হা/৫৬৪৫, মিশকাত হা/১৫৩৬)।
ব্যাখ্যা : যখন আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাদের জান, মাল ও সন্তান বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন, যাতে তা তাদের গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হয়। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে উত্তম।
দুনিয়াতে উত্তম: কারণ, তাতে দো‘আ, মুনাজাত, কান্নাকাটি ও অক্ষমতা প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া হয়। আর আখিরাতে উত্তম: কারণ, গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫]
কিন্তু এ ব্যাপক (মুতলাক) হাদীসটি অন্যান্য হাদীস দ্বারা সংকুচিত (মুকাইয়াদ)। যে হাদীস প্রমাণ করে যে, এ হাদীসের উদ্দেশ্য হচ্ছে: যার প্রতি আল্লাহ কল্যাণের ইচ্ছা করেন সে ধৈর্য ধারণ করে এবং সাওয়াবের আশা করে, আল্লাহ তাকে মুসীবত দেন যাতে তিনি তার পরীক্ষা নেন। আর যদি সে ধৈর্য ধারণ না করে, তাহলে অনেক সময় মানুষের ওপর অনেক বিপদ আসে; কিন্তু তাতে তার জন্য কোনো কল্যাণ থাকে না, আল্লাহও তার জন্য কল্যাণের ইচ্ছা করেন নি। যেমন, কাফিররা অনেক মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তারপরও তারা কুফুরী থেকে ফিরে না, এমনকি তারা কাফির অবস্থায় মারা যায়। নিঃসন্দেহে তাদের প্রতি আল্লাহ কল্যাণের ইচ্ছা করেন নি। (কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য হলো, যার প্রতি আল্লাহ কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে মুসীবতে ফেলেন, তারপর সে এ সব মুসীবতের ওপর সবর করে। আর তা অবশ্যই তার জন্য কল্যাণকর হয়।)
কিন্তু এমন একটি সময় আমার উপর আসবে যখন দুনিয়াতে ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অতিব কঠিন হয়ে দাড়াবে। তখন মানুষ মরে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করবে। আবদুল্লাহ ইবনু ওমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান ইবনু সালিহ ও মুহাম্মদ ইবনু ইয়াযীদ রিফাঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, দুনিয়া শেষ হবে না যতক্ষন না এক ব্যক্তি কবরের পার্শ্ব দিযে যাত্রাকালে উহার উপর গড়াগড়ি দিয়ে বলবে, বাহ! এই কবরবাসীর স্থানে যদি আমি হতাম। তার নিকট দীন থাকবে না; থাকবে কেবল বালা মুসীবত। (মুসলিম হা/৭০৩৮।; অধ্যায়ঃ ৫৪; ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী)