বনী ইসরাঈল চিরদিন লানত পাওয়ার হক্বদার। মুসলিম ঈমানে বলিয়ান হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেই ভীতু জাতি তলপিতলপা ফেলে পালিয়ে যাবে। নাফি’ ইবনু ’উতবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা ’আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ অভিযান চালাবে এবং আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তাতে বিজয়ী করবেন। অতঃপর পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাতেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে জয়যুক্ত করবেন। তারপর রূমকদের (রোমানদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, এটাতেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে জয়যুক্ত করবেন। অবশেষে তোমরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তাতেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন। (মুসলিম হা/২৯০০), মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৪১, ছহীহুল জামি’ হা/২৯৬৯)
এখানে সাহাবীগণকে সম্বোধন করা হলেও এর দ্বারা সমগ্র জাতি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের বিজয় দান করবেন এবং মুসলিম মিল্লাতের সাহায্যার্থে বণী ইসরাঈলদের ওপর আল্লাহর পক্ষ হতে ধ্বংস পতিত হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তাবুকের যুদ্ধের সময় আমি নবী (সা.) -এর খিদমতে আসলাম। এ সময় তিনি (সা.) একটি চামড়ার তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শনকে তুমি গণনা করে রাখ।
مَوْتِي ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ مُوتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ الْمَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا ثُمَّ فِتْنَةٌ لَا يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الْأَصْفَرِ فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا .
১. আমার মৃত্যু।
২. অতঃপর বায়তুল মাক্বদিস বিজয়।
৩. ব্যাপক মহামারি যা তোমাদেরকে বকরির মড়কের মতো আক্রমণ করবে।
৪. ৫. ধনসম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, কোন ব্যক্তিকে একশত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) প্রদান করলেও সে (নগণ্য মনে করে) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে।
৬. অতঃপর রূমকদের (রোমানদের) সাথে তোমাদের একটি সন্ধিচুক্তি হবে, পরে তারা উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করে তোমাদের বিরুদ্ধে আশিটি পতাকার নীচে অবস্থান নিয়ে বারো হাজার করে সৈন্য থাকবে। (বুখারী হা/৩১৭৬, ছহীহুল জামি’ হা/১০৪৫, মিশকাত হা/ ৫৪২০)
অচিরেই তোমরা রূমকদের (রোমানদের) সাথে সন্ধি চুক্তি করবে, অতঃপর তোমরা এবং তারা মিলিত হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে, তাদেরকে তোমরা সাহায্যও করবে। অতঃপর তোমরা এক ভূখণ্ডে অবতরণ করবে। অতঃপর কুশধারী একজন লোক ক্রুশ উত্তোলন করে বলবে, ক্রুশের বিজয় হয়েছে (খ্রিষ্টানদের বিজয় হয়েছে)। অতঃপর একজন মুসলিম তার প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যাবে তখন রূমকরা (খ্রিষ্টানরা) বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং মালহামার যুদ্ধের জন্য একত্রিত হতে থাকবে।
ইবনু মাজাহর অপর বর্ণনায় মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, আল-মালহামা আল-কুবরা বা মালহামার বড় যুদ্ধ, কুসতুনিয়ার বিজয় এবং দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ সাত মাসের মাঝেই সংঘটিত হবে। তবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, মালহামার যুদ্ধ ও মদীনাহ বিজয়ের মাঝের ব্যবধান থাকবে মাত্র ৬ বছর এবং সপ্তম বছরেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪১৭ পৃ.)
আল-মালহামা আল-কুবরার পরিচয় ও এর তাৎপর্য :
আল-মালহামা আল-কুবরার আক্ষরিক অর্থ বড় রকমের যুদ্ধ। এ হলো ব্যাপক নৃশংসতা ও হত্যার ভয়াবহ একটা যুদ্ধকে বোঝায়, এই ধরনের যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মতো একই ধরনের যুদ্ধ হয়ে থাকে। শব্দটির বহুবচন রূপে মালহিম শব্দটি এপোক্যাল্যাপটিক বা যুদ্ধ এবং যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত বর্ণনার একটি পৃথক ধারা বোঝাতে ব্যবহার হতো।
যুদ্ধের সময়কাল :
আল-মালহামা আল-কুবরা ( الملحمة الكبرى) অনুসারে শেষ সময়ে সংঘটিত হবে এমন একটি ভয়ানক বিশাল যুদ্ধ। মালহামা আল-কুবরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম যুদ্ধ বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। এটি সাধারণত খ্রীষ্টীয় আর্মাগেডনের যুদ্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুদ্ধটি দাজ্জালের আগমনের কিছুকাল আগে ঘটবে।
মালহামা আল-কুবরা বিভিন্ন বিবরণ সহ একাধিক হাদীসের রেওয়াতে মুহাম্মদ (সাঃ) বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে প্রাপ্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলির প্রাথমিক আখ্যান কাঠামোটি নিম্নরূপ। মুসলিম এবং রোমান খৃষ্টানরা এক পক্ষ হয়ে একটি সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার পরে বিজয়ী হলে এই মহান যুদ্ধ ঘটবে বলে জানা যায়। তাদের বিজয়ের পর নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হবে যেখানে একজন খৃষ্টান দাবি করে যে ক্রুশ তাদের বিজয় এনে দিয়েছে, একজন মুসলিমের প্রতিক্রিয়ায় দাবি করে যে আল্লাহ তাদের বিজয় এনেছিলেন এবং ক্রুশটি ধ্বংস করতে এগিয়ে যাবে, যা খৃষ্টানদের পক্ষ থেকে আরও প্রতিশোধের দিকে পরিচালিত করবে। কিছু হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, মালহামা আল-কুবরা, একটি ভয়ানক স্কেলের যুদ্ধে শেষ হবে, যে তাদের পার্শ্ব পাখি অতিক্রম চেষ্টা করলে, “এটি তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যাবে। প্রকাশ থাকে, আমার ব্যক্তিগত মতামত, এযুদ্ধে বিমানকে পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং এসব যুদ্ধ বিমানকে লেজার অস্ত্র দিয়ে টুকর টুকর করা হবে।
ঐতিহ্যবাহী বিবরণে আরো রয়েছে যে, এই যুদ্ধের তাৎক্ষণিক পরিপ্রেক্ষিতে কনস্টান্টিনোপল মুসলমানদের দ্বারা জয় করা হবে। এরপর এন্টিক্রাইষ্ট আগমন করবে, যাকে আরবি ভাষায় দাজ্জাল বলা হয়। এরপর ঈসা (আঃ)-এর আগমন হবে। সে দাজ্জালকে হত্যা করবে। ঐতিহাসিক বিবরণে বলা আছে, শূকর মেরে ফেলা হবে, জিজিয়া কর বিলুপ্ত করবে এবং ক্রুশ ধ্বংস করা হবে। তিনি মুহাম্মাদ (সা.)-এর ধর্ম অনুসরণ করবেন এবং ইমাম মাহদীর পিছনে সালাত পরবেন।
মালহামা আল-কুবরা আখ্যান ভাগের কিছু জায়গা উল্লেখযোগ্য। সিরিয়ার দাবিক উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে একটা, যেখানে অনেক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে এই যুদ্ধ বা মালহামা অনুষ্ঠিত হবে। আলেকজান্দ্রিয়া মিশর, দামেষ্ক, জেরুজালেমও ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখযোগ্য স্থান।
সমসাময়িক বিশ্লেষণ :
কিছু সমসাময়িক তাফসীরকারক মালহামা আল-কুবরাকে পারমাণবিক যুদ্ধের সাথে সম্পর্ক্তিত করেছে। কিছু সমসাময়িক মুসলিম মুফাসির বলে যে, ভবিষ্যদ্বাণীতে বিভিন্নভাবে রোমানরা উপসাগরীয় জোট, বা রুশদের সাথে সম্পর্কিত, কারণ রাশিয়া সর্বাধিক জনবহুল অর্থোডক্স খ্রিস্টান দেশ এবং নিজেদেরকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী এবং প্রকৃত ইউরোপীয় হিসাবে বিবেচনা করে। অন্যান্য সমসাময়িক ব্যাখ্যায় দাবি করা হয়েছে যে রোমানরা উসমানীয় রোমের উত্তরাধিকারী। তাছাড়া ফ্রান্সের অর্থোডক্স খ্রিস্টানও এদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।