(১) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হি.) একদিন বাগদাদের বাজারে এলেন। অতঃপর এক বোঝা কাঠ খরিদ করে কাঁধে নিয়ে চলতে শুরু করলেন। অতঃপর যখন লোকেরা তাকে চিনে ফেলল, তখন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে, দোকানদাররা দোকান ছেড়ে, পথিকরা পথ চলা বন্ধ করে তাঁর কাছে ছুটে এলো ও সালাম দিয়ে বলতে লাগল, আমরা আপনার বোঝা বহন করব। তখন তাঁর হাত কেঁপে উঠল, চেহারা লাল হয়ে গেল, দু’চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অতঃপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, আমরা মিসকীন। যদি আল্লাহ আমাদের পাপ ঢেকে না দেন, আমরা অবশ্যই সেদিন লাঞ্ছিত হব’ (পৃ. ২১-২২)।
(2) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কিভাবে সকাল করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, এমন অবস্থায় যে, আমি ফিৎনাকে ভালবাসি ও হক্ব-কে অপসন্দ করি। বলা হ’ল, সেটা কেমন? তিনি বললেন, আমি আমার সন্তানকে ভালবাসি ও মৃত্যুকে অপসন্দ করি’। [1]
(3) ক্বায়েস বিন আবু হাযেম (মৃ. ৯৩ হি.) বনু উমাইয়াদের একজন খলীফার দরবারে গেলে তিনি বলেন, হে আবু হাযেম! আমাদের কি হ’ল যে আমরা মৃত্যুকে অপসন্দ করছি? জওয়াবে তিনি বলেন, এটা এজন্য যে, আপনারা আপনাদের আখেরাতকে নষ্ট করেছেন ও দুনিয়াকে আবাদ করেছেন। সেকারণ আপনারা আবাদী স্থান থেকে অনাবাদী স্থানে যেতে চান না’।[2]
(4) হাসান বাছরী (২১-১১০ হি.) বলেন, হে আদম সন্তান! মুমিন ব্যক্তি সর্বদা ভীত অবস্থায় সকাল করে, যদিও সে সৎকর্মশীল হয়।
কেননা সে সর্বদা দু’টি ভয়ের মধ্যে থাকে। (ক) বিগত পাপ সমূহের ব্যাপারে। সে জানেনা আল্লাহ সেগুলির বিষয়ে কি করবেন। (খ) মৃত্যুর ভয়, যা এখনো সামনে আছে। সে জানেনা আল্লাহ তাকে তখন কোন পরীক্ষায় ফেলবেন। অতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে, যে এগুলি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে ও জ্ঞান হাছিল করে। দূরদর্শিতা লাভ করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত রাখে’।[3] তিনি বলতেন, দুনিয়া তিনদিনের জন্য। গতকাল, যে তার আমল নিয়ে চলে গেছে। আগামীকাল, সেটা তুমি নাও পেতে পার। আজকের দিন, এটি তোমার জন্য। অতএব তুমি এর মধ্যে আমল কর’ (পৃ. ৩৩)।[4]
জনৈক ব্যক্তি তাকে কুশল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির অবস্থা কেমন থাকবে, যে সকাল-সন্ধ্যা মৃত্যুর প্রতীক্ষা করে? সে জানেনা আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করবেন’ (উক্তি ৪৯)।[5] তিনি যখন কোন জানাযা পড়াতেন, তখন কবরের মধ্যে উঁকি মেরে জোরে জোরে বলতেন, কত বড়ই না উপদেশদাতা সে। যদি জীবিত অন্তরগুলি তার অনুগামী হ’ত! (পৃ. ৫১-৫২)।[6]
তাঁকে একদিন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেন, তুমি আমাকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? আচ্ছা ঐ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যারা একটি নৌকায় চড়ে সাগরে গেছে। অতঃপর মাঝ দরিয়ায় গিয়ে তাদের নৌকা ভেঙ্গে গেছে। তখন তারা যে যা পেয়েছে কাঠের টুকরা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। লোকটি বলল, সেটা তো বড় ভয়ংকর অবস্থা। হাসান বাছরী বললেন, আমার অবস্থা তার চাইতে কঠিন’ (উক্তি ১৭, পৃ. ২০)।[7] এতবড় একজন বিখ্যাত তাবেঈ, আবেদ, যাহেদ, দুনিয়াত্যাগী ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয়, তাহ’লে আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ ভেবে দেখা কর্তব্য।
(৫) মুহাম্মাদ বিন ওয়াসে‘ বাছারী (মৃ. ১২৩ হি.)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল কিভাবে আপনি সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যে ব্যক্তি প্রতিদিন পরকালের পথ পাড়ি দিচ্ছে? (উক্তি ২০)।[8]
(৬) ছাহাবী আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, তিনজন লোককে দেখলে আমার হাসি পায়। (ক) দুনিয়ার আকাংখী। অথচ মৃত্যু তাকে খুঁজছে (খ) উদাসীন ব্যক্তি। অথচ আল্লাহ তার থেকে উদাসীন নন (গ) গাল ভরে হাস্যকারী ব্যক্তি। অথচ সে জানেনা আল্লাহ তার উপর খুশী না নাখোশ’ (পৃ. ২২)।[9]
(৭) আসওয়াদ বিন সালেম (মৃ. ২১৪হি.)-কে বলা হ’ল আপনি আজ কিভাবে সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, মন্দভাবে। কেননা আজ একজন বিদ‘আতীর প্রতি আমার দৃষ্টি পড়েছে’ (উক্তি ২২, পৃ. ২৩)।
(৮) বিখ্যাত তাবেঈ ও কূফার বিচারপতি ক্বাযী শুরাইহ-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল আপনি আজ কিভাবে সকাল করলেন। তিনি বললেন, এমন অবস্থায় যে, অর্ধেক মানুষ আমার উপর ভীষণ ক্রুদ্ধ’(أَصْبَحْتُ وَنِصْفُ النَّاسِ عَلَىَّ غِضَابٌ) (উক্তি ২৩, পৃ. ২৩-২৪)।[10]
অথচ কূফার খ্যাতনামা ক্বাযী শুরাইহ ছিলেন ন্যায়বিচারক হিসাবে অদ্বিতীয়। যামিন হওয়ার পর আসামী পালালে যামিনদার নিজের ছেলেকে তিনি জেলে পাঠান ও তার জন্য নিজে জেলখানায় খাবার নিয়ে যান। ক্ষুধার্ত ও রাগান্বিত হ’লে তিনি এজলাস থেকে উঠে যেতেন। একবার একজনকে চাবুক মারলে পরে ভুল বুঝতে পেরে তিনি নিজের পিঠ পেতে দিয়ে তার কাছ থেকে ক্বিছাছ নিয়ে নেন’ (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৬/১৩১-১৪৪)। সৈয়ূতী বর্ণনা করেন, ক্বাযী শুরাইহ বিন হারিছ বিন ক্বায়েস আল-কিন্দী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনি। তিনি হযরত ওমর, ওছমান, আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ) সহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ-এর যুগ (৭৬-৯৬ হি.) পর্যন্ত একটানা ৬০ বছর বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১২০ বছর বেঁচেছিলেন। মৃত্যুর একবছর পূর্বে দায়িত্ব হ’তে অব্যাহতি নেন। তাঁর মৃত্যুর সন বিষয়ে ৭৮ হি., ৮০, ৮২, ৮৭, ৯৩, ৯৬, ৯৭ ও ৯৯ বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে (সৈয়ূতী, ত্বাবাক্বাতুল হুফ্ফায (কায়রো ১৩৯২/১৯৭৩) ক্রমিক সংখ্যা ৪২, পৃঃ ২০)।
(৯) ফুযায়েল বিন মাসঊদ (মৃ. ১৮৭ হি.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জওয়াবে তিনি বললেন, যদি তুমি আমার দুনিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর, তবে আমি বলব যে, দুনিয়া আমাদেরকে যেখানে খুশী নিয়ে চলেছে। আর যদি আখেরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাক, তাহ’লে ঐ ব্যক্তির অবস্থা কি জানবে যার পাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ও নেক আমল কম হয়েছে। যার বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ তার পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চিত হয়নি। মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি নেয়নি, তার জন্য বিনত হয়নি, তার জন্য পা বাড়ায়নি, তার জন্য আমলকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেনি। অথচ দুনিয়ার জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে’? (উক্তি ২৯, পৃ. ২৭)।[11]
(১০) আবু সুলায়মান দারানী (মৃ. ২১৫ হি.) স্বীয় উস্তায উম্মে হারূণকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি কেমন থাকবে যার রূহ অন্যের হাতে’? (উক্তি ৪৫, পৃ. ৩৭)।[12] তিনি আরেকবার তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মৃত্যুকে ভালবাসেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তির অবাধ্যতা করলে, তার সাক্ষাৎ পসন্দ করি না। তাহ’লে আমি কিভাবে আল্লাহর সাক্ষাৎ পসন্দ করব, অথচ আমি তার অবাধ্যতা করছি?[13]
(১১) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হ’ল আপনি কিভাবে সকাল করলেন? তিনি বললেন, সকালে আমি আমার রবের দেওয়া রূযী খাই। আর আমি তার শত্রু ইবলীসের আনুগত্য করি’ (উক্তি ৫৭, পৃ. ৪২)।[14]
(১২) আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর ভয়ে এক ফোঁটা অশ্রুপাত আমার নিকট এক হাযার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ছাদাক্বা করার চাইতে অধিক প্রিয়’ (পৃ. ২৮)।[15]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল তারাই, যারা আল্লাহকে নির্জনে-নিরালায় স্মরণ করে। অতঃপর তাদের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়’।[16]
(১৩) রবী‘ বিন খায়ছাম (মৃ. ৬৫ হি.) বাড়ীতে কবর খুঁড়ে রাখেন। যেখানে তিনি দিনে একাধিকবার ঘুমাতেন। যাতে সর্বদা মৃত্যুর কথা মনে পড়ে’।[17] তিনি বলতেন, لَوْ فَارَقَ ذِكْرُ الْمَوْتِ قَلْبِي سَاعَةً فَسَدَ عَلِيَّ ‘যদি আমার অন্তর এক মুহূর্ত মৃত্যুর স্মরণ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহ’লে তা আমাকে বিনষ্ট করে দেয়’।[18]
(১৪) মুত্বার্রিফ বিন আব্দুল্লাহ (মৃ. ৯৫ হি.) বলেন, মৃত্যু সচ্ছল ব্যক্তির সুখ-সম্ভারকে কালিমালিপ্ত করে দেয়। অতএব তুমি এমন সুখের সন্ধান কর, যেখানে কোন মৃত্যু নেই’।[19]
(১৫) ইব্রাহীম তায়মী (মৃ. ১২০ হি.) বলেন, দু’টি বস্ত্ত আমার দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্ট করেছে। মৃত্যুর স্মরণ ও আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয়’।[20]
(১৬) কা‘ব বলতেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে উপলব্ধি করে, দুনিয়ার বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা সমূহ তার নিকট হীন বস্ত্ত হয়ে যায়’।[21]
(১৭) ওমর বিন আব্দুল আযীয জনৈক আলেমকে বলেন, আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আপনিই প্রথম খলীফা নন, যিনি মৃত্যুবরণ করবেন। খলীফা বললেন, আরও উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আদম পর্যন্ত আপনার বাপ-দাদাদের এমন কেউ ছিলেন না যিনি মৃত্যুবরণ করেননি। এবার আপনার পালা। একথা শুনে খলীফা কেঁদে ফেলেন’। তিনি প্রতি রাতে আলেম-ওলামাদের নিয়ে বৈঠক করতেন। যেখানে মৃত্যু, ক্বিয়ামত ও আখেরাত নিয়ে আলোচনা হ’ত। তখন তারা এমনভাবে ক্রন্দন করতেন, যেন তাদের সামনেই জানাযা উপস্থিত হয়েছে’।[22]
(১৮) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি তার এক বন্ধুর নিকটে লেখেন, হে বন্ধু! ইহকালে মৃত্যুকে ভয় কর, পরকালে যাওয়ার আগে। যেখানে তুমি মৃত্যু কামনা করবে, অথচ মৃত্যু হবে না’।[23]
(১9) মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমিন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর এক দারসের বৈঠকে জনৈক ব্যক্তি শায়েখ উপস্থিত ছিলেন। ঐ লোকটি দারসের প্রতি অমনযোগী ছিলেন। শায়েক বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং জানতে চান তিনি এখানে কেন এসেছেন? জবাবে লোকটি বলেন, আমি একটি হাদীস জানি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আল্লাহর যিকরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তাঁরা কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখেন, তখন তাঁরা একে অপরকে বলেন, আসো! তোমাদের কাম্য বস্তু এখানেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অতঃপর ফেরেশতারা তাদেরকে নিজ নিজ ডানা দ্বারা দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত ঘিরে নেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যদিও তিনি তাদের অবস্থা অধিক অবগত।
আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন, আমার বান্দারা কি বলছে? ফেরেশতাগণ বললেন, তারা আপনার পবিত্রতা, বড়ত্ব, প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা করছে। তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেশতাগণ বললেন, আপনার কসম, তারা কখনো আপনাকে দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত তবে কেমন হতো? তখন ফেরেশতাগণ বললেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরো বেশী আপনার ইবাদত করত এবং বেশী বেশী আপনার মর্যাদা ও পবিত্রতা ঘোষণা করত।
আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তারা কি চায়? ফেরেশতাগণ বললেন, তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়? তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতাগণ বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার কসম, তারা কখনো জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাতকে দেখত তবে কেমন হ’ত? ফেরেশতাগণ উত্তর দেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তবে প্রচন্ড লোভ করত, এটা পাওয়ার অধিক আগ্রহে বেশী বেশী প্রার্থনা করত।
এবার আল্লাহ বলেন, তারা কোন জিনিস হ’তে আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ উত্তর দেন, জাহান্নাম হ’তে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতাগণ জওয়াবে বললেন, হে আমাদের রব! আপনার কসম, তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হত, যদি তারা উহা দেখত? ফেরেশতাগণ বললেন, যদি তারা উহা দেখত তাহ’লে উহা হ’তে পলায়ন করত এবং বেশী বেশী ভয় পেত। তখন আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,‘এমন সময় ফেরেশতাগণের একজন বলে উঠেন, অমুক ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে শুধু তার নিজের কাজে এখানে এসেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা এমন একদল লোক যাদের কেউই হতভাগ্য নয়’।[24]
একথা শুনে শায়েখ কেঁদে ফেলে বলেন, আপনাকে আমি কি শেখাব, আজ আপনিই আমাকে শেখালেন।
প্রকৃত জ্ঞানী মানুষ যা দেখে ও শুনে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং হেদায়েতের ওপর অবিচল রাখুন, আমীন।
—————————
[1]. আয়মান আশ-শা‘বান, কায়ফা আছবাহতা (রিয়ায : মাকতাবা কাওছার ১৪৩৫/২০১৪), উক্তি সংখ্যা ৯, ১২ পৃ.। বইটিতে মোট ৮১টি উক্তি ও অন্যান্য উপদেশ রয়েছে।
[2]. ইবনু ‘আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ২২/৩০।
[3]. ইবনুল জাওযী, আদাবুল হাসান বাছরী, ১২৩ পৃ.।
[4]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আয-যুহদ, ১৯৭ পৃ.।
[5]. ইবনু হিববান, রওযাতুল উকালা, ৩২ পৃ.।
[6]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, ১৪৫ পৃ.।
[7]. আবুবকর আল-মারূযী, আখবারুশ শুয়ূখ ওয়া আখলাক্বিহিম ১৮৩ পৃ.।
[8]. ইবনু ‘আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৫৬/১৬৯।
[9]. ইবনুল মুবারক, আয-যুহুদ (বৈরূত) ৮৪ পৃ.।
[10]. আল-খাত্ত্বাবী, গারীবুল হাদীছ ১/৫০৩।
[11]. আবু নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/৮৫-৮৬।
[12]. ইবনু ‘আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৭০/২৬৬।
[13]. আবু হামেদ আল-গাযালী, এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯।
[14]. ঐ, ৩/১৬৮।
[15]. বায়হাক্বী শো‘আবুল ঈমান হা/৮৪২।
[16]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১।
[17]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯।
[18]. আবু নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১১৬।
[19]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯।
[20]. ঐ, ৭/১৩৮।
[21]. ঐ, ৭/১৩৮।
[22]. ঐ, ৭/১৩৯।
[23]. ঐ, ৭/১৩৮।
[24]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২২৬৭।