শিরক হ’ল সবচেয়ে জঘন্যতম পাপ। এটা কবীরা গুণাহ যা তাওবাহ ব্যতীত ক্ষমা হয় না। শিরকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা ভিষণ রাগান্বিত হোন। শিরক সবচেয়ে বড় পাপ হওয়ার মূল কারণ হল এটা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তার প্রতি প্রভাব ফেলে। যা মহান আল্লাহ বরদাশত করতে পারেন না। এই পৃথিবীতে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত যে এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী ও রাসূল এসেছেন, তাঁদের মৌলিক প্রধান কাজ ছিল শিরক উৎখাত করতঃ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। তাঁরা প্রত্যেকেই আজীবন সর্বশক্তি প্রয়োগ করে শিরকের মূল শিকড় উপড়ে ফেলার অবিরাম সংগ্রাম করে গেছেন। সাথে সাথে সমাজের সর্বস্তরে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁদের তিরোধানের পর এ দায়িত্ব হক্বপন্থী আলেমদের উপর অর্পণ করে গেছেন। বড় পরিতাপের বিষয়, আজ সমাজের সর্বস্তরে শিরকের জয়জয়কর চলছে। শিরক যেন একটি মামুলী ব্যাপার। মানুষ একে হালকা জ্ঞান করছে। ফলে অহরহ তারা অগণিত শিরক করলেও তাদের মাঝে অনুশোচনার কোন লক্ষণ নেই।
শিরকের পরিচয় :
আরবী ‘শিরক’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে ও ছহীহ হাদীছে ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল- অংশীদার বা শরীক হওয়া। আর কুরআন ও হাদীছে শিরক শব্দটি দ্বারা আল্লাহর রুবূবিয়াত, উলূহিয়াত ও আসাম ওয়াছ ছিফাতের মধ্যে কাউকে অংশীদার বানানোকে বুঝানো হয়েছে।
শিরকের পারিভাষিক সংজ্ঞায় ডঃ ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ বলেন, আল্লাহর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য তথা তাঁর জাত, গুণ ও প্রভুত্বে সমকক্ষ স্থাপন করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ইবাদত ও আনুগত্যের উপযুক্ত মনে করাই শিরক। ডঃ ছালেহ বিন ফাওযান বলেন, আল্লাহর উলূহিয়াত ও রুবূবিয়াতের ক্ষেত্রে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা। আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলে, শিরক হল আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ গ্রহণ করা এবং আল্লাহর মত তাকে ভালবাসা।
‘কিতাবুত তাওহীদ’ প্রণেতার মতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করা, ইবাদতের মাধ্যম সাব্যস্ত করা কিংবা ইবাদতে অংশী স্থাপন করাকে শিরক বলে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিরকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করা, অথচ তিনি (আল্লাহ) তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (বুখারী, হা/৪২০৭)। মোট কথা শিরক হল প্রতিপালন, আইন, বিধান ও ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা।
আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা যে কোন বিচারে সবচেয়ে বড় হারাম ও মহাপাপ। আবু বাকরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে- قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ (ثلاثا). قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ . قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না (তিনবার)’? ছাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা …’।[বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।]
শিরক ব্যতীত প্রত্যেক পাপের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা প্রাপ্তির একটি সম্ভাবনা আছে। তওবাই উহার একমাত্র প্রতিকার। আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে কৃত শিরককে ক্ষমা করবেন না। তাছাড়া যত গুনাহ আছে তা তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’ (নিসা ৪৮)।
এমন বড় শিরক রয়েছে যা দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরূপ শিরককারী ব্যক্তি যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। দুঃখজনক হ’লেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশেই আজ শিরকের প্রাদুর্ভাব ছিড়িয়ে পড়ছে।
শিরকের প্রকারভেদ :
শিরক তিন প্রকার। যথা (১) আশ-শিরক ফির রুবূয়িইয়াহ : আর তা হচ্ছে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা, অন্য কাউকে অংশীদার বানানো। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, গায়েব বা অদৃশ্যের খবর একমাত্র তিনিই রাখেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও গায়েবের খবর জানতেন না (আ‘রাফ ১৮৮)।
(২) আশ-শিরক ফিল উলূহিইয়াহ : ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করার নাম আশ-শিরক ফিল উলূহিয়াহ বা ইবাদতে শিরক। ইবাদত হতে হবে সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক কর না’ (নিসা ৩৬)। ইবদাতে শিরক দু’প্রকার (ক) বড় শিরক : আর তা হল ইবাদতের প্রকারগুলোর কোন একটি প্রকার আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা। যেমন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দো‘আ করা, সিজদা করা, মানত করা, মৃত ব্যক্তি, জিন কিংবা শয়তানের প্ররোচণাকে ভয় করা। আর বড় শিরক কয়েক ভাগে সম্পাদিত হতে পারে। (১) দাওয়াত বা আহবানে শিরক। বিপদ-আপদে আল্লাহকে ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা এ ধরনের শিরক (আনকাবূত ৬৫)। (২) আনুগত্যে শিরক। আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কারো জন্য আনুগত্য প্রকাশ করা (তাওবা ৩১)। (৩) ভালবাসায় শিরক। মুমিনদের ভালবাসা হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসা শিরক। আর ভালবাসার নিদর্শন হল আদেশ-নিষেধকে বাস্তবায়ন করা (বাক্বারাহ ১৬৫)।
(খ) ছোট শিরক : যেসব কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষ শিরকের দিকে ধাবিত হয় সেসব কথা ও কাজকে ছোট শিরক বলা হয়। যেমন সৃষ্টির ব্যাপারে এমনভাবে সীমালংঘন করা, যা ইবাদতের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ছোট শিরক মানুষকে মুসলিম মিল্লাহ থেকে বের করে না। কিন্তু তাওহীদের ঘাটতি করে। আর উহা বড় শিরকের একটি মাধ্যম। ছোট শিরক আবার দু’প্রকার (১) প্রকাশ্য শিরক : উহা কথা ও কাজের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কথার শিরক হল আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা (তিরমিযী হা/১৫৩৫)। কাজের মাধ্যমে শিরক হল বিপদ দূর করার জন্য সুতা ও কড়া ব্যবহার করা, বদ নযর থেকে বাঁচার জন্য তাবীয-কবজ ঝুলানো। (২) গুপ্ত শিরক : গুপ্ত শিরকের উদাহরণ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এ উম্মতের শিরক রাতের আঁধারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়া পদাচারণার চেয়েও গুপ্ত বা সূক্ষ্ম’ (ছহীহুল জামে, হা/২৩৩)। আর এ ধরনের শিরক হল ইচ্ছা ও নিয়তের দ্বারা। যেমন লোকদেখানো ও সুখ্যাতি বা সুনামের জন্য কোন কাজ করা।
(৩) আশ-শিরক ফিল আসমা ওয়াছ-ছিফাত :
এই শিরক হল আল্লাহর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের সাথে সৃষ্টির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা। যেমন এ ধরনের কথা বলা যে, আল্লাহর পা আমাদের পায়ের মত, আল্লাহর চেহারা অমুকের চেহারার মত ইত্যাদি। আমরা আল্লাহকে একমাত্র গাওছ বা ত্রাণকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করি। তাই আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে গাওছ বলা এ জাতীয় শিরক। এ সকল প্রকার শিরক থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
শিরকের সূচনা :
আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যকার ব্যবধান প্রায় সহস্রাব্দ ছিল। এ সময় মানুষ তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। সে সময় কোন শিরক পৃথিবীতে ছিল না। দুনিয়াতে প্রথম শিরক সংঘটিত হয়েছিল নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযর্গ লোকদের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা বলল তোমরা তোমাদের উপাস্যদের ত্যাগ কর না, আর তোমরা ওয়াদ, ইয়াগূছ, ইয়াউক এবং নাসরকেও ত্যাগ কর না’ (নূহ ২৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, এ আয়াতে যে ক’টি নাম এসেছে এগুলো নূহ (আঃ) এর কওমের বুযর্গ লোকদের নাম। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের প্ররোচিত করল, তারা যেন ঐসব বুযর্গগণ যেসব আসরে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমা বানিয়ে রাখে এবং তাদে নামে এগুলোর নামকরণ করে। তারা তাই করল। তবে এগুলোর উপাসনা হত না। এসব লোক মৃত্যুবরণ করার পর ক্রমান্বয়ে তাওহীদের জ্ঞান বিস্মৃত হল, তখন এগুলোর উপাসনা ও পূজা হতে লাগল (বুখারী, হা/৪৯২০)।
গোপন শিরক থেকে বেঁচে থাকুন :
গোপন শিরক হ’ল যা বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়ার বিচরণের চেয়েও গোপন’ (ইবনু কাছীর)। উক্ত শিরক সাধারণতঃ নিয়ত বা সংকল্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর তা হ’ল, রিয়া বা লোক দেখানো আমল করা। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে আমাদের নিকটে আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয়ংকর কিছুর সংবাদ দিব? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হ’ল, الشِّرْكُ الْخَفِىُّ ‘গোপন শিরক’। কোন ব্যক্তি ছালাতে দাঁড়ালে যখন অন্য ব্যক্তি তার ছালাতের দিকে লক্ষ্য করে, তখন সে আরও সুন্দরভাবে ছালাত আদায় করে’ (মুসনাদে আহমাদ হা/১১২৭০; ইবনু মাজাহ হা/৪২০৪; মিশকাত হা/৫৩৩৩)। অতএব লোক দেখানো প্রত্যেকটি আমলই গোপন শিরক, যা থেকে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
এছাড়া কথার মাধ্যমে উক্ত শিরক হয়ে থাকে। যা ব্যক্তির অগোচরে তার নিয়তের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) উদাহ্রণ দিয়ে বলেন, যেমন কেউ বলল, আল্লাহ্র কসম এবং হে অমুক! তোমার ও আমার জীবনের কসম। অথবা বলল, যদি এই কুকুরটা না থাক, তাহ’লে আমাদের কাছে চোর আসত। অথবা কেউ কাউকে বলল, যা আল্লাহ চান ও আপনি চান। অথবা যদি আল্লাহ না থাকতেন ও অমুক না থাকত। তিনি বলেন, তুমি তোমার কথায় ‘অমুক’-কে যোগ করো না। কেননা এগুলি সবই শিরক। হাদীছে এসেছে, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, যদি আল্লাহ চান ও আপনি চান। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহ্র সাথে শরীক করছ? (আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ হা/৭৮৩; ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ২২)। উছায়মীন বলেন, ব্যক্তির বিশ্বাস অনুযায়ী এগুলি বড় অথবা ছোট শিরকে পরিণত হয় (আল-ক্বাওলুল মুফীদ ২/৩২৩)। অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
শিরকের ফলাফল ও পরিণতি :
আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে অগণিত শিরক করা হয়ে যাচ্ছে। অথচ একবার ভেবেও দেখিনি যে, শিরককারীর শেষ পরিণতি বা ফলাফল কী। পাপ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে শিরক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করল সে গুরুতর পাপে পাপী হল’ (নিসা ৪৮)। লোকমান হাকীম তার সন্তানকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নিশ্চয়ই শিরক বড় ধরনের যুলুম’ (লোকমান ১৩)।
শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। বান্দার যত গুনাহ রয়েছে তিনি চাইলে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু শিরকের গুনাহ তিনি ক্ষমা করবেন না (নিসা ৪৮, ১১৬)। শিরক এমনই এক অপরাধ যে, শিরক করলে পূর্বের সকল আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, যদি আপনি আল্লাহর শরীক স্থাপন করেন, তাহলে আপনার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন’ (যুমার ৬৫)। আরো বলেন, ‘যদি তারা শিরক করত তবে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যেত’ (আন‘আম ৮৮)। শিরক এমন এক গুরুতর অপরাধ যে, তা শিরককারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেয় এবং জাহান্নাম অপরিহার্য করে দেয়। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)। একই মর্মে হাদীছে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে (মুসলিম হা/২৬৬৩)।
শিরক ধ্বংস ও বিপর্যয়ের কারণ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসূল মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত’ (তওবা ৩)। শিরক এমন এক জঘন্য অপরাধ যে অপরাধের কারণে উক্ত অপরাধীর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘নবী ও মুমিনদের জন্য উচিৎ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তারা আত্মীয়ই হোক না কেন। বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী’ (তওবা ১১৩)।
শিরক থেকে বেঁচে থাকার দো‘আ :
নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করলে ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক থেকে বাঁচা যায়।-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ (‘হে আল্লাহ! জেনেশুনে তোমার সাথে শিরক করা থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং অজ্ঞতাবশে শিরক করা থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩১,)।