তর্ক- বিতর্ক

মানুষ তর্ক প্রিয় জীব। এরা বিতর্ক বুঝে না। কেননা, তর্কবাগীশ মূর্খতার বশ্যতা স্বীকার করে, কিন্তু বিতর্ক মানুষকে জ্ঞানী করে। আর তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চললে তার জন্য জান্নাত রয়েছে। এটা রাসূল (ছাঃ), সালাফীদের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ، ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা’(মুসলিম হা/১৫৯৯; তিরমিযী হা/২৩১৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬।)।

যারা তর্ক-বিতর্কে সব সময় জড়িয়ে পড়ে তাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা হিশাম হাসান (রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন তারা উভয়ে বলতেন,لاَ تُجَالِسُوا أَصْحَابَ الأَهْوَاءِ وَلاَ تُجَادِلُوهُمْ وَلاَ تَسْمَعُوا مِنْهُمْ، ‘তোমরা প্রবৃত্তির অনুসারীদের নিকটে বসবে না এবং তাদের সাথে ঝগড়া-বিতর্কে লিপ্ত হবে না। এমনকি তাদের নিকট থেকে কিছু শুনবে না’(সুনান আদ-দারেমী হা/৪০১, সনদ ছহীহ)।

তর্ক শব্দের অর্থ :

Dispute :  বিতর্ক, কচাল, প্রতিরোধ করা, দ্বন্দ্ব, বাদানুবাদ, ঝগড়া, তর্কাতর্কি, কলহ, বিসংবাদ, প্রবল তর্ক, বচসা করা, যুক্তি করা, তর্ক করা, ঝগড়া করা, কলহ করা।

Argue : বিবেচনা করা, বিচার করা, প্রমাণ করা, প্রতিপন্ন করা, বিতর্ক করা, তর্কবিতর্ক করা, বাদানুবাদ করা, যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করা, প্রমাণ দেওয়া, তর্ক করা, যুক্তি দ্বারা আলোচনা করা, যুক্তি দ্বারা তর্ক করা, যুক্তি দ্বারা বিবেচনা করা, আলোচনা লড়া, কোনো কিছুর পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দেখানো, ঝগড়া।

আরবীতে جِدَال (জিদাল) অর্থ হ’ল ঝগড়া, বিবাদ, তর্ক-বিতর্ক, কলহ ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করে নিজের কথা সত্য প্রমাণ করা। আবু ইয়ালা বলেন, বিতর্ক হ’ল পক্ষ-বিপক্ষ উভয়ের মাঝে কথার বিনিময় হওয়া এবং এর দ্বারা একে অপরের উপর বিজয়ী হওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা’(কাযী আবু ইয়া‘লা, আল-ইদ্দাহ ফী উছূলিল ফিক্বহ ১/১৮৪ পৃ.)।

আর প্রয়োজনে শারঈ বিষয়ে দলীলের ভিত্তিতে শালীনতা বজায় রেখে তর্ক-বিতর্ক করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।  যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তর্ক-বিতর্ক থেকে দূরে থাকার আহ্বান :

সালাফীগণ তর্ক-বিতর্ক থেকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান করতেন। কেননা এটা জ্হানের স্বল্পতার পরিচায়ক। আব্দুছ ছামাদ বিন মা‘ক্বিল (রহঃ) বলেন, আমি ওয়াহাব বিন মুনাবিবহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,دَعِ الْمِرَاءَ وَالْجِدَالَ عَنْ أَمْرِكَ، فَإِنَّكَ لَا تُعْجِزُ أَحَدَ رَجُلَيْنِ: رَجُلٍ هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ، فَكَيْفَ تُمَارِي وَتُجَادِلُ مَنْ هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ؟ وَرَجُلٍ أَنْتَ أَعْلَمُ مِنْهُ، فَكَيْفَ تُمَارِي وَتُجَادِلُ مَنْ أَنْتَ أَعْلَمُ مِنْهُ، وَلاَ يُطِيعُكَ، فَاقْطَعْ ذَلِكَ عَلَيْكَ ‘তুমি তোমার বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হ’তে দূরে থাক। কারণ তুমি দু’জনের মধ্যে কাউকে হারাতে পারবে না। প্রথম হল সেই ব্যক্তি, যে তোমার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আর তোমার চাইতে জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে তুমি কিভাবে তর্ক-বিতর্ক করবে? অপর ব্যক্তি হ’ল, যার চেয়ে তুমি অধিক জ্ঞানী। আর যে তোমার চেয়ে অল্প জ্ঞানী, তার সাথে তুমি কিভাবে তর্ক-বিতর্ক করবে? সে তোমার কথা কখনোই মেনে নিবে না। অতএব তর্ক বর্জনের ওপর অবিচল থাক’ (আবুবকর আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ ১/৪৫০)।

বিতর্ক মানুষকে রষানলে ফেলে। একে অন্যের প্রতি ক্ষোভ জন্ম নেয়। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَمَنْ خَاصَمَ فِى بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ لَمْ يَزَلْ فِى سَخَطِ اللهِ حَتّٰـى يَنْزِعَ عَنْهُ ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোন বাতিল (অন্যায়) বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রোষাণলে থাকে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে’।(আবূদাউদ হা/৩৫৯৭; ছহীহাহ হা/৪৩৭; ছহীহুল জামে’ হা/৬১৯৬)

কোন জাতি সঠিক পথপ্রাপ্তির পর সাধারণত গোমরাহ হয় না, মাত্র একটি কারণ ছাড়া, তা হলো বাতিল বা নাহক কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া। কারণ তারা বিবদমান বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে সোপর্দ না করে একে অপরকে কষ্ট দেয়া এবং পরাস্ত করার জন্যই উঠে পড়ে লাগে এবং তখনই সুপথ হারিয়ে ফেলে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিতর্ক বা ঝগড়াকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের বিভ্রান্ত হওয়ার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلاَّ أُوتُوا الْجَدَلَ، ‘কোন সম্প্রদায়ের সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার পরে বিভ্রান্ত হওয়ার একটিই কারণ যে, তারা ঝগড়া বা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে’। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এই আয়াত পাঠ করলেন, مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ،  ‘তারা কেবল তোমার সাথে ঝগড়ার জন্যই একথা বলে। বরং তারা হ’ল ঝগড়াকারী সম্প্রদায়’ (যুখরুফ ৪৩/৫৮)। (তিরমিযী হা/৩২৫৩; ইবনু মাজাহ হা/৪৮; মিশকাত হা/১৮০)

তর্ক-বিতর্ক দ্বীন ধ্বংস করে :

হাদীসে কিতাব শব্দ দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য। হাদীসে কুরআনকে খাসভাবে বর্ণনা করার কারণ- যেহেতু কুরআন নিয়ে বাদানুবাদ করা সর্বাধিক মন্দকাজ যা মানুষকে কুফরীর দিকে ঠেলে দেয়। হাদীস থেকে বুঝা যায়, পথভ্রষ্ট ইমামদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী দেয়া হুকুম, সে প্রবৃত্তির ব্যাপারে মানুষকে জোর জবরদস্তি করা, অতঃপর সত্য-বিচ্যুত ‘আলিম সম্প্রদায়, বিদ্‘আতপন্থী ঝগড়াটে মুনাফিক্ব এবং যালিম নেতারা ইসলামের রুকনসমূহকে দুর্বল করে দিবে এবং তাদের ‘আমলের মাধ্যমে সেগুলোর মর্মার্থকে নষ্ট করবে।

যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ওমর (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলতে পার, ইসলাম ধ্বংস করবে কোন জিনিস? আমি বললাম, না, তখন তিনি বললেন, يَهْدِمُه زَلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ، ‘(১) আলেমদের পদস্খলন, (২) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) নিয়ে মুনাফিকদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং (৩) পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসন’।(মিশকাত হা/২৬৯; সুনানুদ দারিমী হা/২১৪, হাদীছ ছহীহ)।

তর্ক-বিতর্ক জাহান্নামে যাবার কারণ :

তর্ক-বিতর্কের ন্যায় গর্হিত কাজ যে ব্যক্তির কাছে প্রিয় হয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ সম্পর্কে একটি হাদীছে এসেছে, عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ وَلاَ لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ وَلاَ تَخَيَّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ- ‘জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা আলেমদের মাঝে গর্ব করা, অজ্ঞদের সাথে বিতর্ক করা এবং (প্রসিদ্ধ) মজলিস লাভ করার উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করো না। যে ব্যক্তি তা করে (তার জন্য) জাহান্নাম, জাহান্নাম’(ইবনু মাজাহ হা/২৫৪; হাকেম হা/২৯০; বায়হাক্বী হা/১৭৭১; দারেমী হা/৫৫; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৭৭)

দাওয়াতের খাতিরে তর্ক-বিতর্ক করা :

তর্ক-বিতর্ক প্রয়োজনে উত্তম পন্থায় করা উচিৎ। এটা ইখতেলাফি বিষয় নিয়ে মুমিনের সাথে মুমিনের দলিল ভিত্তিক বিতর্ক হবে, কিন্তু তর্ক নয়। আর প্রয়োজনে শারঈ বিষয়ে দলীলের ভিত্তিতে শালীনতা বজায় রেখে তর্ক-বিতর্ক করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।  যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] 

 সুতরাং তর্ক-বিতর্ক বাদ দিয়ে ইসলাহ ও দাওয়াতী পদ্ধতিতে ইসলামের প্রচার করা উচিৎ। আল্লাহ যখন মূসা (আঃ) এবং তাঁর ভাই হারূন (আঃ)-কে ফের‘আউনের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, তখন তিনি তাঁদেরকে বলে দিয়েছিলেন, فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى، ‘অতঃপর তার সাথে নরমভাবে কথা বল। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বো-হা ২০/৪৪)।

কথা বলা বা বিতর্ক হ’তে হবে উত্তম পন্থায়। যেন এতে কারও ক্ষতি না হয়। মানসিকভাবে কেউ যেন আঘাত না পায়। কাউকে খাটো করা না হয় বা তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ প্রকাশ না পায়। মহান আল্লাহ বলেন,ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ، ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল ১৬/১২৫)।

তর্ক-বিতর্ক রাসূল (ছাঃ)-এর অপছন্দনীয় :

রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেও ছাহাবীগণ কোন কোন সময় বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হ’তেন। যেমন একটি হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন,

إنَّ نَفَراً كَانُوا جُلُوساً بِبَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلِ اللهُ كَذَا وَكَذَا. وَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلِ اللهُ كَذَا وَكَذَا فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَأَنَّمَا فُقِئَ فِى وَجْهِهِ حَبُّ الرُّمَّانِ فَقَالَ بِهَذَا أُمِرْتُمْ أَوْ بِهَذَا بُعِثْتُمْ أَنْ تَضْرِبُوا كِتَابَ اللهِ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ إِنَّمَا ضَلَّتِ الأُمَمُ قَبْلَكُمْ فِى مِثْلِ هَذَا إِنَّكُمْ لَسْتُمْ مِمَّا هَاهُنَا فِى شَىْءٍ انْظُرُوا الَّذِى أُمِرْتُمْ بِهِ فَاعْمَلُوا بِهِ وَالَّذِى نُهِيتُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا،

‘কিছু মানুষ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরজায় বসেছিল। তাদের কেউ বলে, আল্লাহ কি একথা বলেননি? আবার কেউ বলে, আল্লাহ কি একথা বলেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একথা শুনতে পান। তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল ক্রোধে লাল হয়ে যায়, যেন তাঁর মুখমন্ডলে বেদানার রস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এরূপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের বিপরীতে দাঁড় করাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগুলি এরূপ করার কারণেই বিভ্রান্ত হয়েছে। তোমাদের কাজ এটি নয়। তোমাদেরকে কি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দেখ এবং তা পালন কর। আর যা তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে তা বর্জন কর’ (আহমদ হা/৬৮৪৫, শুআইব আরনাউত হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন)

তর্ক-বিতর্ক পরিত্যাগকারীর পুরস্কার জান্নাত :

তর্ক-বিতর্ক উভয়পক্ষই নিজের জ্ঞানকে চূড়ান্ত বলে মনে করেন এবং যে কোনভাবে নিজের মতের যথার্থতা ও অন্য মতের ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞানের ভুল স্বীকার করাকে ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করেন। এ কারণে ইসলামে ঝগড়া-তর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَرَكَ المِراءَ وَهُوَ مُبْطِلٌ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ تَرَكَهُ وَهُوَ مُحِقٌّ، بُنِيَ لَهُ فِيْ وَسَطَهِا، وَمَنْ حَسُنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِيْ أَعْلاَهَا، ‘নিজের মত বাতিল হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের মত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যার চরিত্র সুন্দর তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে’ (মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৭৭পৃ.; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৮)।

আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে বিতর্ক করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এটা অনাকাংখিত অনিষ্টের কারণ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মন্দ বিতর্ক থেকে বেঁচে থাকার এবং দ্বীনের সঠিক বুঝদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top