দ্বীন ও দুনিয়া পৃথক বস্তু

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

  
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ
قَالَ قَدِمَ نَبِىُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْنَةَ وَهُمْ
يَأْبُرُوْنَ النَّخْلَ يَقُوْلُوْنَ يُلَقِّحُونَ النَّخْلَ فَقَالَ : مَا
تَصْنَعُوْنَ. قَالُوْا كُنَّا نَصْنَعُهُ قَالَ : لَعَلَّكُمْ لَوْ لَمْ تَفْعَلُوْا
كَانَ خَيْرًا. فَتَرَكُوْهُ فَنَفَضَتْ أَوْ فَنَقَصَتْ- قَالَ : فَذَكَرُوْا
ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ : إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ
دِيْنِكُمْ فَخُذُوْا بِهِ وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ رَأْىٍ فَإِنَّمَا
أَنَا بَشَرٌ. قَالَ عِكْرِمَةُ أَوْ نَحْوَ هَذَا. قَالَ الْمَعْقِرِىُّ
فَنَفَضَتْ. وَلَمْ يَشُكَّ.- رواه مسلم
অনুবাদ : হযরত রাফে
বিন খাদীজ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)
যখন মদীনায় হিজরত করে আসেন
, তখন সেখানকার লোকেরা নর খেজুর গাছের রেণু
নিয়ে মাদী খেজুর গাছের রেণু লাগাত
তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এরূপ
কর কেন
? তারা
বলল
, আমরা
বরাবর এ কাজ করে থাকি
তিনি বললেন, তোমরা এরূপ
না করলেই সম্ভবতঃ ভাল হ
তখন
তারা এটা করা ছেড়ে দিল
  তাতে ফলন কম হ। (রাবী বলেন) অতঃপর তারা বিষয়টি
রাসূলের নিকটে উত্থাপন করল
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ বৈ কিছু নইঅতএব
আমি যখন তোমাদের দ্বীন বিষয়ে কোন নির্দেশ দেই
, তখন তোমরা তা গ্রহণ করোআর
যখন আমার নিজের রায় অনুযায়ী কোন নির্দেশ দেই
, তখন আমি একজন মানুষ বৈ কিছু নই[1]
হাদীছের
ব্যাখ্যা :
(لَعَلَّكُمْ لَوْ لَمْ تَفْعَلُوْا كَانَ خَيْرًا) যদি তোমরা এটা না করতে তাহলেই সম্ভবতঃ ভাল হছহীহ
মুসলিমে ত্বালহা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে
ما أظن يعنى ذلك
شيئا
 আমি ধারণা করি না যে এর দ্বারা কিছু হতে পারেএটি
বৈষয়িক অভিজ্ঞতার বিষয়
নবীর জন্য এটা জানা আবশ্যক নয়বর্ণনা
দৃষ্টে স্পষ্ট বুঝা যায় যে
, এটি তাঁর ধারণা ভিত্তিক বক্তব্য ছিল, অহি-ভিত্তিক
নয়
যেমন কৃষকদের বক্তব্যের জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ إِذَا
أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ دِيْنِكُمْ فَخُذُوْا بِهِ وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ
بِشَىْءٍ مِنْ رَأْىٍ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ.
আমি মানুষ বৈ কিছু নইঅতএব
যখন আমি তোমাদেরকে দ্বীন বিষয়ে কোন নির্দেশ দেই
, তখন তোমরা তা গ্রহণ করআর
যখন আমার নিজের রায় অনুযায়ী কোন নির্দেশ দেই
, তখন আমি একজন মানুষ বৈ কিছু নই

উপরোক্ত
বক্তব্যে কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠেছে
যেমন- (১) বিভিন্ন বস্ত্তর
সৃষ্টি ও প্রজনন পদ্ধতিতে আল্লাহ বিভিন্ন পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন
যেমন
পুং খেজুর গাছের রেণু স্ত্রী খেজুর গাছের রেণুর সাথে মিশালে খেজুর উৎপন্ন হয়
বিভিন্ন
কীট-পতঙ্গ এবং বায়ু এইসব রেণু বা কেশর একটা হ
তে
অন্যটাতে বহন করে নিয়ে যায় ও তার ফলে খেজুরের ফুল জন্মলাভ করে
, যা থেকে পরে
খেজুর হয়
উদ্ভিদের বংশ বিস্তার দুপ্রকারের হয়, যৌন ও অ-যৌনপূর্বোক্ত
নিয়মটি হ
ল যৌনআরেকটি
ল অযৌনযেমন
এক গাছের ছাল আরেক গাছে লাগিয়ে কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে
তাছাড়া
পাতা ফেলে রাখলেও সেখান থেকে গাছ হয়
যেমন পাথরকুচি ইত্যাদিকিছু
হয় শিকড় থেকে
যেমন কচু গাছকিছু
হয় ডাল থেকে
যেমন পুইশাক, গাদা ফুল ইত্যাদিআজকাল
নার্সারিতে কলমের সাহায্যে একটি আম গাছে বা কুল গাছে বিভিন্ন জাতের আম বা কুল গাছ
লাগানো হচ্ছে
এতদ্ব্যতীত আরও নিত্য নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত
হচ্ছে
যদি আল্লাহ পাক গাছের বীজ, ডাল ও ছাল-পাতার
মধ্যে প্রজনন ও উৎপাদনের ক্ষমতা না দিতেন
, তাহলে
সেখান থেকে নতুন ও পৃথক গাছের বিস্তার লাভ সম্ভব হ

না
সেকারণ আল্লাহ হলেন مُسَبِّبُ
الأَسْبَابِ
 বা কারণসমূহের সৃষ্টিকারীতাঁর
সৃষ্ট কারণসমূহ এবং সৃষ্টি কৌশল অবগত হওয়ার জন্য এবং তা থেকে উপকার লাভের জন্য
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন
বিজ্ঞানের
এই বিশেষ শাখাকে বলে
জীব বিজ্ঞানযে বিষয়ে অধিক জ্ঞান হাছিলের
মাধ্যমে বান্দা আল্লাহকে চিনতে পারে এবং আল্লাহর প্রতি অধিক আনুগত্যশীল ও কৃতজ্ঞ হ
তে পারে
(২) উদ্ভিদের
প্রাণ আছে
কেননা প্রাণ না থাকলে প্রজনন বা উৎপাদন
ক্ষমতা থাকার প্রশ্নই ওঠে না
যেমন মরা বীজে চারা গজায় না বা
মরা গাছে কলম লাগালে কলম হয় না
খ্রীষ্টিয় অষ্টাদশ শতকে
বাঙ্গালী বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খৃঃ) উদ্ভিদের প্রাণ আছে একথা প্রথম
আবিষ্কার করেন বলে বলা হ
লেও
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ একথা দেড় হাযার বছর পূর্বেই আমাদের বলে দিয়েছে
যেমন
আল্লাহ পাক বলেন
,
إِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ
وَالنَّوَى يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ
الْحَيِّ ذَلِكُمُ اللهُ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ বীজ ও অাঁটি থেকে অংকুর
উদ্গমকারী
তিনি জীবিতকে বের করেন মৃত থেকে এবং মৃতকে
বের করেন জীবিত থেকে
তিনিই আল্লাহঅতঃপর
তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ
(আনআম ৬/৯৫)অর্থাৎ
এগুলি আপনা আপনি হয়নি
এসবের সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহনাস্তিকেরা এখানে গিয়েই
বিভ্রান্ত হয়েছে
কখনো বলছে, Ruled by eternal laws of iron শাশ্বত লৌহ বিধানের মাধ্যমে এগুলি পরিচালিত
হচ্ছে
কখনো বলছে, All are created by nature সবকিছুই প্রকৃতির সৃষ্টিএইসব অতি বিজ্ঞানীদের
উদ্দেশ্যেই আল্লাহ পাক ধমক দিয়ে বলেছেন
فَأَنىَّ
تُؤْفَكُوْنَ
 তোমরা কোথায়
বিভ্রান্ত হচ্ছ
? গাছের কেবল
জীবন আছে বলা হয়নি বরং তাদের যে অনুভূতি আছে এবং তারা যে সর্বদা আল্লাহর গুণগান
করে সেকথাও বলা হয়েছে
যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ
السَّبْعُ وَالأَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ وَإِن مِّنْ شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ
بِحَمْدَهِ وَلَـكِنْ لاَّ تَفْقَهُوْنَ تَسْبِيْحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ
حَلِيمًا غَفُورًا
সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু
আছে সবাই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে
বস্ত্ততঃ এমন কিছুই নেই, যা তাঁর
মহিমা বর্ণনা করে না
কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ পাঠ
অনুধাবন করতে পার না
নিশ্চয়ই
তিনি সহনশীল ও দয়াবান
 (ইসরা
১৭/৪৪)
এর দ্বারা বুঝা যায় যে, স্বেচ্ছাগত
তাসবীহ কেবল জিন ও ইনসানের মধ্যে সীমাবদ্ধ
কিন্তু
স্বাভাবিক তাসবীহ সকল সৃষ্টিজগতের মধ্যে পরিব্যপ্ত
এমনকি
যে নাস্তিক ব্যক্তি দিনরাত
আল্লাহ
নেই
বলে বড় বড় থিওরী আওড়ায়, তার
অজান্তেই তার টবের ফুলগাছগুলি এবং তার দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর
তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁরই হুকুমের আনুগত্য করে
নাস্তিকের
অতি সাধের যৌবন চুপে চুপে বিদায় নেয়
এক সময় তার ঝলমলে চোখ-কান ও
ঝকঝকে দাঁতগুলো জবাব দিয়ে দেয়
হঠাৎ কোন একদিন তার দেহপিঞ্জর
ছেড়ে তার রূহটা বেরিয়ে চলে যায় স্বীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হুকুমে

সময় হয়ত তার গুরু স্ট্যালিনের মত শেষ মুহূর্তে সে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে
‘Oh my God’! কিন্তু  তাতে কোন
কাজ হবে না
যেমন হয়নি ডুবে মরার সময় ফেরাঊনের ঈমান
ঘোষণায়
 (ইউনুস
১০/৯২
; সাজদাহ
৩১/৩০)
নাস্তিকের লাশ পড়ে থাকে বিছানায় পোকার খোরাক
হয়ে
ঐ বেঈমানের ভাগ্যে দুনিয়া থেকে বিদায়কালে
মানুষের একটি দো
আও জোটে নাশৃগাল-কুকুরের
মত ওর লাশটাকে মাটিতে পুঁতে রাখা হয় বিনা জানাযায় অথবা আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করে
দেওয়া হয়
আর পরকালে তো ওর জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী  জাহান্নাম
(৩) দ্বীন ও দুনিয়া পৃথক বস্ত্তযেমন
মাথা ও হাত-পা পৃথক বস্ত্ত
প্রত্যেককে স্ব স্ব স্থানে
রেখেই কাজ নিতে হবে
একত্রে গুলিয়ে ফেললে সবই বেকার
হবে
অত্র হাদীছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের
পক্ষে কোন দলীল নেইযেখানে বৈষয়িক জীবনে দ্বীনের
প্রবেশাধিকার নেই
 
বলে ধারণা করা হয়বিভিন্ন মানব রচিত ধর্মের
ক্ষেত্রে এ ধারণা করা সঠিক হ
তে
পারে
কিন্তু আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ইলাহী দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে এ
ধারণা অজ্ঞতাপ্রসূত
কেননা ইসলাম হল পরিপূর্ণ জীবন বিধানমানব
জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে এখানে স্পষ্ট ও স্থায়ী দিক নির্দেশনাসমূহ মওজুদ
রয়েছে
মানব জীবন মৌলিকভাবে দুভাগে বিভক্ত : ইবাদত ও মুআমালাত অর্থাৎ ধর্মীয় এবং বৈষয়িকইবাদত
তথা ধর্মীয় দিকের ছোট-বড় বিষয় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ কর্তৃক নির্দেশিত
সেখানে
নিজস্ব রায়-এর প্রবেশাধিকার নেই
যেমন ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ
ইত্যাদির নিয়ম বিধান
পক্ষান্তরে মুআমালাত তথা বৈষয়িক দিকের কেবল মৌলিক
হিদায়াতগুলি কুরআন ও সুন্নাহ কর্তৃক নির্দেশিত
সেখানে
বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি বিষয়ে মানুষের নিজস্ব রায় ও জ্ঞান-গবেষণার প্রবেশাধিকার
রয়েছে
, যতক্ষণ
না তা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর মূলনীতি লংঘন করে
যেমন
রাজনীতির ক্ষেত্রে মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে
আল্লাহ
সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক
 (বাক্বারাহ  ২/১৬৫)ফলে
জনগণের সর্বসম্মত কিংবা অধিকাংশের রায় আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করতে পারবে না

বিষয়ে হুঁশিয়ার করে মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন
,
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ
فِيْ الأَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ إِنْ يَتَّبِعُوْنَ إِلاَّ
الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُوْنَ-
যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহলে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে
ফেলবে
তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো
সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথা বলে থাকে
 (আনআম ৬/১১৬)বিচার
ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে
,
وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ
قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى
কোনরূপ দলীয় বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে অন্যায়
বিচারে প্ররোচিত না করে
তোমরা
ন্যায়বিচার কর
, যা
তাক্বওয়ার (সর্বাধিক নিকটবর্তী)
 (মায়েদাহ ৫/৮)অর্থনীতির
ক্ষেত্রে বলা হয়েছে
,
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ
عَلَى بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَى
مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ أَفَبِنِعْمَةِ اللهِ يَجْحَدُونَ
আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ভোগের অধিকার তোমাদের
সবার জন্য সমান
 (নাহল
১৬/৭১)
সম্পদ
যেন কেবল তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়
 (হাশর
৫৯/৭)
তোমরা
কারু সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কর না
 (বাক্বারাহ
২/১৮৮
; নিসা
৪/২৯)
আল্লাহ
তোমাদের জন্য সূদ হারাম করেছেন
 (বাক্বারাহ
২/২৭৫)
, জুয়া-লটারী
হারাম
 (মায়েদাহ
৫/৯০)
ঘুষ হারাম[2] মওজুদদারী-মুনাফাখোরী
হারাম
[3] এভাবে
পুঁজিবাদের সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চূড়ান্ত মূলনীতি আকারে বলা হয়েছে
لاَ تَظْلِمُوْنَ وَلاَ تُظْلَمُوْنَ তোমরা
অত্যাচার কর না এবং অত্যাচারিত হয়ো না
 (বাক্বারাহ
২/৭৯)
এতদ্ব্যতীত মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও
আন্তর্জাতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে যরূরী হেদায়াতসমূহ ইসলামী শরী
আতে মওজূদ রয়েছে
তাই ইসলামের
দৃষ্টিতে মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ থাকলেও সেসবই মূলতঃ একই সূত্রে গাঁথা
সবই
ইসলামের দেওয়া অভ্রান্ত হেদায়াতের অধীনে পরিচালিত হবে
যেভাবে
হাত-পা পরস্পরে পৃথক অঙ্গ হ
লেও
তা মস্তিষ্কের ইঙ্গিত মতে একই দেহের অঙ্গ হিসাবে কাজ করে থাকে
অতএব
দ্বীন ও দুনিয়াকে একত্রে গুলিয়ে ফেলাই ভুল
যেমন কিছু
কিছু চরমপন্থী চিন্তাধারার লোক মনে করে থাকেন
অমনিভাবে
দু
টিকে সম্পূর্ণ পৃথক ভাবাও ভুলযেমন
ধর্মনিরপেক্ষ লোকেরা মনে করে থাকেন
বরং দুনিয়াকে দ্বীনের আলোকে
আলোকিত করাই হ
ল মুমিনের
দায়িত্ব ও কর্তব্য
দুনিয়াকে দ্বীন বানানো নয়যেমন
লোহাকে পুড়িয়ে আগুনের মত করা যায়
কিন্তু আগুনে পরিণত করা যায় নাঅতএব
দুনিয়াকে দ্বীন বানানোর চেষ্টা করাটাই চরমপন্থী চিন্তাধারা
এই
চিন্তার অনুসারী প্রাথমিক যুগের মুসলমানেরাই ইতিহাসে
খারেজী নামে পরিচিত
হয়েছে
যাদের দৃষ্টিতে হযরত আলী (রাঃ)-এর মত মহান
ব্যক্তিও
কাফের
ছিলেন (নাঊযুবিল্লাহ)দলীয় অস্তিত্ব হিসাবে না থাকলেও
ঐরূপ চিন্তাধারার লোক সকল যুগে কিছু কিছু সর্বদা পাওয়া যায়
দ্বীনের
ব্যাপারে যাদের বাড়াবাড়ি ক্ষমার অযোগ্য
এর বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
আরেকটি চরমপন্থী মতবাদযারা ধর্মীয় জীবনে বিভিন্ন
ইবাদত পালনে রাযী
কিন্তু বৈষয়িক জীবনে আল্লাহর
বিধান মানতে রাযী নয়
ফলে তারা ধর্মীয় জীবনে আল্লাহর
আনুগত্য করে
কিন্তু বৈষয়িক জীবনে নফসরূপী শয়তানের আনুগত্য
করে
আল্লাহ বলেনأَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ
عَلَيْهِ وَكِيلاً
 তুমি কি
দেখেছ ঐ ব্যক্তিকে
, যে
তার প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করেছে
? তুমি কি তার ব্যাপারে যিম্মাদার হবে(ফুরক্বান
২৫/৪৩)
তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের মনগড়া
আইন রচনা করে ও সেভাবে জীবন পরিচালনা করে
ফলে নিজেরা
জাহান্নামী হয় ও অন্যকে জাহান্নামী করে
(৪) আল্লাহর
রাসূল আমাদেরই মত মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন
তিনি নূরের
তৈরী ফেরেশতা ছিলেন না
মাটির মানুষের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য
ও গুণাবলী তাঁর মধ্যে ছিল
অতিভক্ত কিছু লোক তাঁকে নূর নবী বলতে বড়ই
উৎসাহ দেখিয়ে থাকেন
এটা কুরআনী আয়াতের স্পষ্ট লংঘন (কাহফ
১৮/১১০)
মূলতঃ এই অতিভক্তির আড়ালে তারা নিজেদের
পাপগুলিকে ঢাকতে চায় মানবীয় দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে
অথচ
এতে আখেরাতে তাদের কোন লাভ হবে না
(৫) শারঈ
বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর অহী ব্যতীত কোন কথা বলতেন না
যেমন
মহান আল্লাহ বলেন
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى- إِنْ هُوَ إِلاَّ
وَحْيٌ يُوْحَى
 তিনি নিজ
ইচ্ছামত কোন কথা বলেন না
সেটা আর কিছুই নয় অহী ব্যতীত, যা তার
নিকটে প্রত্যাদেশ করা হয়
 (নাজম
৫৩/৩-৪)
পক্ষান্তরে দুনিয়াবী ব্যাপারে তিনি নিজের রায়
মোতাবেক কথা বলতেন
যেখানে ভুল-শুদ্ধ দুটিরই অবকাশ থাকতএসব
বিষয়ে মহান আল্লাহর হুকুম হ
 وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ তুমি
প্রয়োজনীয় বিষয়ে লোকদের সঙ্গে পরামর্শ কর
 (আলে
ইমরান ৩/১৫৯)
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সেটা সব
সময় করতেন
বদর-ওহোদ-খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধকালে এবং
অন্যান্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তিনি সর্বদা ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করে
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন
এ বিষয়ে আবুবকর ও ওমর (রাঃ) সর্বাগ্রগণ্য
ছিলেন
আলোচ্য
হাদীছে মদীনাবাসীর খেজুর গাছে তা
বীর
করার বিষয়ে নির্দেশ ছিল না
যেটা তিনি তাঁর বক্তব্যে
পরিষ্কার করে দিয়েছেন
অতএব এতে নবুঅতের গায়ে কালিমা
লেপন করার সুযোগ নেই
হাদীছটি
বিস্তারিতভাবে এসেছে ছহীহ মুসলিমে ত্বালহা (রাঃ)-এর বর্ণনায়
যেখানে
বলা হয়েছে
,
إِنْ كَانَ يَنْفَعُهُمْ
ذَلِكَ فَلْيَصْنَعُوْهُ فَإِنِّىْ إِنَّمَا ظَنَنْتُ ظَنًّا فَلاَ
تُؤَاخِذُوْنِىْ بِالظَّنِّ وَلَكِنْ إِذَا حَدَّثْتُكُمْ عَنِ اللهِ شَيْئًا
فَخُذُوْا بِهِ
যদি এতে তাদের উপকার হয়, তবে তারা
করুক
কেননা আমি ধারণার মাধ্যমে বলেছিলামতোমরা
আমার ধারণাগুলিকে গ্রহণ করো না
কিন্তু যখন আমি তোমাদেরকে
আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু বলব
, তখন সেটা তোমরা গ্রহণ কর[4]ত্বালহা (রাঃ) থেকে মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায়
এসেছে
 الظَّنُّ يُخْطِئُ وَيُصِيْبُ ধারণা
ভুলও হ
তে পারে, সঠিকও হতে পারে[5] আয়েশা ও
আনাস (রাঃ) হ
তে ছহীহ
মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে
أَنْتُمْ
أَعْلَمُ بِأَمْرِ دُنْيَاكُمْ
 তোমরা
তোমাদের দুনিয়াবী ব্যাপারসমূহে (আমার চেয়ে) অধিক অবগত
[6] অতএব
দুনিয়াবী জীবনোপকরণ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ধারণা সাধারণ মানুষের ধারণার ন্যায়
সম্ভবতঃ
একারণেই দেখা যায় যে
,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যূন ২৩টি বিষয়ে ওমর (রাঃ)-এর রায়কে নিজের রায়ের উপরে
অগ্রাধিকার দিয়েছেন
কেননা নবী-রাসূলগণের আগমনের
প্রধান উদ্দেশ্য হ
ল মানুষকে
আখেরাতে মুক্তির পথ বাৎলে দেওয়া
শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সে
বিষয়েই জগদ্বাসীকে পথপ্রদর্শন করে গেছেন এবং এপথেই তাঁর যাবতীয় প্রচেষ্টা নিয়োজিত
করেছিলেন
দুনিয়াবী জীবনের লাভ-ক্ষতি তাঁর উদ্দেশ্য ছিল
না
আল্লাহ আমাদেরকে আখেরাতে মুক্তি দান করুন- আমীন!
উপসংহার :
দ্বীন ও দুনিয়া পৃথক বস্ত্তকিন্তু দুটিই আল্লাহর দেখানো পথে
পরিচালিত হবে
পার্থক্য এই
যে
,
দ্বীনী বিষয়গুলির মূল ও খুটিনাটি সবই তাওক্বীফী বা
অপরিবর্তনীয়
পক্ষান্তরে
দুনিয়াবী বিষয়গুলি আল্লাহ প্রদত্ত মূলনীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে
যা হালাল ও হারামের স্পষ্ট
সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
বান্দা উক্ত সীমারেখার মধ্যে থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেযেমন আলোচ্য হাদীছে খেজুর
গাছের রেণু মিশানোর বিষয়টি অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত
এটি হারাম তখনই হ, যদি ধারণা করা হত যে, রেণুই খেজুরের ফলনদাতাকেননা ফলন হওয়া না হওয়া আল্লাহর হাতেঅনুরূপভাবে খেজুর গাছ না
হয়ে যদি ওটা তামাক গাছ বা গাঁজার গাছ হ
, তাহলে সেটাও হারাম হকেননা তা নেশাকর বৃক্ষব্যাপক অর্থে ইবাদত ও মুআমালাত সবই
দ্বীন-এর অন্তর্ভুক্ত
আর আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন হল ইসলামযার দ্বারা মুমিনের সার্বিক
জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়



[1]মুসলিম হা/২৩৬২, ইবনু মাজাহ
হা/২৪৭০
; মিশকাত
হা/১৪৭
[2]আবুদাঊদ হা/৩৫৮০; মিশকাত হা/৩৭৫৩
[3]মুসলিম হা/১৬০৫
[4]মুসলিম হা/২৩৬১
[5]আহমাদ হা/১৩৯৯, ইবনু মাজাহ
হা/১৪৭০
[6]মুসলিম হা/২৩৬৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top