নারীর ফেৎনা মানুষকে বিবেকশূন্য, হিতাহিত জ্ঞান শূন্য, জ্ঞানীকে মূর্খ করে, জ্ঞানীর প্রজ্ঞা কেড়ে নেয়। বনী ইসরাঈলদের আমলে নারীর ফেৎনার সূচনা হয় এবং এই নারীর ফেৎনার কারণে তাদের মধ্যে মহামারী ব্যাপকভাবে দেখা দেয়।
বনী ইসরাঈলদের আমলে এক নারী জনৈক আলেমকে ডেকে যেনায় লিপ্ত হতে বলেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজী হোন নাই। তখন নারীটি ছলনা করে ভয় দেখিয়ে বলে, তুমি মদ পান করো অথবা ঐ শিশুটিকে হত্যা করো অথবা আমার সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হও। আলেম মদ পানে রাজি হলো এবং পান করার সাথে সাথে মতিভ্রম হয়ে শিশুটিকে হত্য করল এবং নারীটির মনবাসনা পূরণ করল। (এটা বনী ইসরাঈলদের কাহিনী)।
পৃথিবীতে নারী, সন্তান, স্বর্ণ-রৌপ্য, ধন-সম্পদ মানুষের জন্য ফেৎনা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্ত্তপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ -তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল’ (আলে-ইমরান ৩/১৪)
নারীদেরকে দুনিয়ার মোহ ভালোবাসার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এদের ছলনা অত্যন্ত মারাত্মক। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ من النِّسَاء আমার (মৃত্যুর) পরে আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফিৎনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি’’ (মিশকাত হা/৩০৮৫)। নারীদের সবকিছুতে অনিষ্টতা আছে, বিশেষ করে তাদের হার না মানা স্বভাবে আরো বেশী অনিষ্টতা রয়েছে। সেই সাথে তাদের জ্ঞানের কমতি ও দীনের কমতিও রয়েছে। জ্ঞানের কমতি হলো, পুরুষকে তার মোহে অন্ধ করা। আর দীনের কমতি হলো, দীনের কর্মের বিষয়ে উদাসীন থাকা এবং দুনিয়া অনুসন্ধানের ফলে পরকালীন ধংস ডেকে আনা। আর এটাই বড় ফাসাদ বা বিপর্যয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৯৬; শারহে মুসলিম ১৭/১৮ খন্ড, হাঃ ২৭৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইমাম তবারানী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ উমামাহ হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ’’শীঘ্রই এমন ফিতনাহ্ আপতিত হবে যে, সকালে মানুষ মু’মিন থাকবে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে জ্ঞানের মাধ্যমে পরিত্রাণ দিবেন সে ব্যতীত’’। (শারহু ইবনে মাজাহ ২/১৩০৫)
ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি নারী ছলনা :
শয়তানের যেমন কৌশল, চক্রান্ত ও ছলনা আছে, পুরুষের ব্যাপারে নারীরও বিভিন্ন কৌশল, চক্রান্ত ও ছলনা আছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে উভয়ের চক্রান্তের কথা আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিতাড়িত শয়তানের চক্রান্ত ও কৌশল দুর্বল। পক্ষান্তরে নারীর কৌশল ও ছলনা আমাদের জন্য ভীষণ পীড়াদায়ক। নারী জাতির ছলনা খুবই মারাত্মক। একে বোঝা এবং এর জাল ছিন্ন করা সহজ নয়। কেননা, তারা বাহ্যতঃ কোমল, নাজুক ও অবলা হয়ে থাকে। যারা তাদেরকে দেখে, তারা তাদের কথায় দ্রুত বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলে। কিন্তু বুদ্ধি ও আল্লাহভীতির অভাববশতঃ তা অধিকাংশ সময় ছলনা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَمَّا رَاٰ قَمِیۡصَهٗ قُدَّ مِنۡ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنۡ كَیۡدِكُنَّ ؕ اِنَّ كَیۡدَكُنَّ عَظِیۡمٌ ‘স্বামী যখন ইউসুফের জামাটি পেছন হতে ছেঁড়া দেখতে পেল, তখন সে বলল, ‘এ সব হল তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের কূট কৌশল বড়ই কঠিন (ইউসুফ ১২/২৮)।
আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, নারীদের ষড়যন্ত্র শয়তানের ষড়যন্ত্রের চেয়েও মারাত্মক। কারণ, নারীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র তো ভীষণ।” পক্ষান্তরে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল” [আন-নিসা : ৭৬] [আদওয়াউল বায়ান] তবে এখানে সব নারী বোঝানো হয়নি, বরং ঐসব নারী সম্পর্কেই বলা হয়েছে, যারা এ ধরণের ছল-চাতুরীতে লিপ্ত থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রাজা বলল, ‘তোমরা তাকে (ইউসুফকে) আমার কাছে নিয়ে এসো।’ দূত যখন তার কাছে আসলো তখন ইউসুফ বলল, ‘তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, সেই মহিলাদের ব্যাপারটি কী যারা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল? আমার প্রতিপালক অবশ্যই তাদের কৌশল সম্পর্কে অবগত(ইউসুফ ১২/৩০)।’
আল্লাহ তা’আলা নবীগণকে যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, তা অন্যের পক্ষে অনুধাবন করাও সম্ভব নয়। ইউসুফ আলাইহিস সালাম দূতকে উত্তর দিলেন, তুমি বাদশাহর কাছে ফিরে গিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস কর যে, আপনার মতে ঐ মহিলাদের ব্যাপারটি কিরূপ, যারা হাত কেটে ফেলেছিল? বাদশাহ এ ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করেন কি না এবং আমাকে দোষী মনে করেন কি না? এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম এখানে হস্তকৰ্তনকারিণী মহিলাদের কথা উল্লেখ করেছেন, আযীয-পত্নীর নাম উল্লেখ করেননি; অথচ সে-ই ছিল ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বলাবাহুল্য, এতে ঐ নিমকের কদর করা হয়েছে, যা ইউসুফ আলাইহিস সালাম আযীযের গৃহে লালিত-পালিত হয়ে খেয়েছিলেন। [কুরতুবী]
উল্লেখ্য যে, ইউসুফ (আঃ) দোষী ছিলেন না তবুও তিনি দোষী হয়েছেন তৎকালিন মিশরবাসীদের সামনে। আর এর ফলে তিনি জেলেও গেছেন। বর্তমানে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিনা অপরাধে দোষী হয়ে নানা প্রকারের তহমতের শিকার এবং সাজাও ভোহ করে থাকেন। তাই যা রটে তা কিছু না কিছু বটে এসব কথা বলা ও শুনা থেকে দূরে থাকুন।
বনী ইসরাঈলদের নারীর ফেৎনা :
দুষ্টু নারীই হল দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় ফিৎনা। নারীদের থেকে বেঁচে থাক, কারণ তোমরা তাদের কারণে শারীআতের নিষিদ্ধ কর্মগুলোতে পতিত হতে পার এবং তাদের কারণে দুনিয়ার ফিতনায় পতিত হয়ে যাবে। কারণ দুনিয়ার প্রথম ফিতনাহ্ তাদের কারণেই হয়েছে।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া হলো চিত্তাকর্ষক সবুজের সমারোহ। আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমরা কিরূপে আ’মাল কর। সুতরাং (দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে) আল্লাহর ভয় কর এবং নারীদের ব্যাপারে সাবধান থাক। কেননা, বনী ইসরাঈলদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারীদের মধ্যেই ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল। (মুসলিম হা/২৭৪২, তিরমিযী হা/২১৯১, ইবনু মাজাহ হা/৪০০০, মিশকাত হা/৩০৮৬)
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তোমরা তাদের (নারীদের) দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে বেঁচে থাক এবং তাদের কথা গ্রহণ থেকে বেঁচে থাক। কারণ তাদের জ্ঞান কম এবং তাদের অধিকাংশ কথায় কোনো কল্যাণ নেই। (শারহে মুসলিম ১৫/১৬ খন্ড, হাঃ ২৭৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
শিক্ষা :
- হাদীসে সর্বদা তাকওয়া অবলম্বনের ব্যাপারে এবং দুনিয়ার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্যের মধ্যে ব্যস্ত না হতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
- নারী জাতির ফিতনা যেমন, তাদের দিকে তাকানো, পর নারী-পুরুষের একত্রে মেলামেশা অথবা এরূপ অন্যান্য ফিতনা থেকে সাবধান করা হয়েছে।
- দুনিয়াতে নারী জাতির ফিতনা হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ফিতনা।
- পূর্ববর্তী উম্মতের দ্বারা ওয়াজ ও নসীহাহ গ্রহণ করা। সুতরাং যে ফিতনা বনী ইসরাঈলদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, সে ফিতনা অন্যদের মধ্যেও সংঘটিত হতে পারে।
স্বামীর জন্যে নারীর ফিতনা যেমন:
স্বামীকে তার সাধ্যের বাইরে ভরণপোষণে বাধ্য করা। ফলে তাকে দ্বীনের কাজকর্ম পালন করা থেকে বিরত রাখে এবং তাকে দুনিয়ার সাধনা হাসিলে ব্যস্ত রাখে। আর পরনারীর ফিতনা বলতে সে পুরুষদের প্রলোভনে ফেলে এবং তাকে সত্য থেকে তাদেরকে বিচ্যুতিতে প্রলুব্ধ করে, যদি নারীরা ঘরের বাইরে যায় এবং পুরুষদের সাথে মিশে, বিশেষ করে যখন তারা খোলামেলা পোষাকে নিজেকে সুশোভিত করে বাহিরে যায়। এগুলো কখনো কখনো যিনায় পতিত করে। সুতরাং মুমিনদের উচিত আল্লাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা এবং নারীর ফিতনা থেকে নাজাত পেতে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়া।
নারীর ফেৎনা বৃদ্ধির কারণ :
১. ফিতনা বা সম্মোহন : কারণ, নারী যখন তার চেহারা খুলে ফেলবে, তখন তার কারণে পুরুষগণ ফিতনার শিকার হবে, বিশেষ করে যদি সে যুবতী বা রূপসী হয় অথবা সে যদি এমন কিছু করে, যা তার চেহারাকে সুন্দর ও লাবণ্যময়ী এবং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান করে তুলে। আর এটা অনিষ্টতা, খারাপ পরিবেশ ও ফাসাদ সৃষ্টি অন্যতম বড় একটি কারণ।
২. নারীর লজ্জাহীনতা : নারী অবলা লাজুক প্রকৃতির। কিন্তু তাদের যখন লজ্জা-শরমের অবসান ঘটে তখন তারা ঈমানের এবং তার স্বভাব-প্রকৃতির শুধুমাত্র দাবিদার। কারণ, নারী হলো লজ্জা-শরমের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত পেশ করার জায়গা। যেমন বলা হয়: ‘আমি অন্তঃপুরে অবস্থানরত কুমারী থেকে লজ্জা অনুভব করি।’ আর নারীর লজ্জা চলে যাওয়া মানে তার ঈমানের ব্যাপারে ঘাটতি হওয়া এবং এমন স্বভাব-প্রকৃতির গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়া, যে স্বভাব-প্রকৃতির ওপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩. নারীর সাথে পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক : নারীর সাথে পুরুষদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং তাদের কর্তৃক তার পিছনে লাগা। বিশেষ করে সে যখন সুন্দরী হয় এবং তার পক্ষ থেকে যখন তোষামোদ, হাসাহাসি ও রসিকতা জাতীয় আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমনটি সাধারণত অধিকাংশ বেপর্দা নারীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, আর বলা হয়ে থাকে, প্রথমে দেখা, তারপর সালাম বিনিময়, তারপর কথা, তারপর প্রতিশ্রুতি, তারপর একান্ত সাক্ষাৎ। আর শয়তান তো আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় চলমান। সুতরাং অনেক কথা, হাসি ও আনন্দ আছে, যা নারীর সাথে পুরুষের মনের সম্পর্ক এবং পুরুষের সাথে নারীর মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে আবশ্যক করে তুলে, অতঃপর এর ফলে এমন খারাপী ও নষ্টামীর সূচনা হয়, যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর থেকে নিরাপত্তা চাই।
৪. পুরুষদের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা: কারণ, চেহারা খুলে রাখা এবং বেপর্দা অবস্থায় চলাফেরা করার ব্যাপারে নারী যখন নিজেকে পুরুষদের সমান মনে করে, তখন সে পুরুষদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও ঘষাঘষি করা থেকে লজ্জা ও অপমান বোধ করে না, আর এর মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা ও প্রচুর পরিমাণে পাপের ব্যাপার রয়েছে।
বালআম বাঊরার ঘটনা :
ফিলিস্তীন দখলকারী জাববারীন’ তথা আমালেক্বা সম্প্রদায়ের শক্তিশালী নেতারা মূসা (আঃ) প্রেরিত ১২ জন প্রতিনিধিকে ফেরৎ পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনি। কারণ তারা মূসা (আঃ)-এর মু‘জেযার কারণে ফেরাঊনের সসৈন্যে সাগরডুবির খবর আগেই জেনেছিল। অতএব মূসা (আঃ)-এর বায়তুল মুক্বাদ্দাস অভিযান বন্ধ করার জন্য তারা বাঁকা পথ তালাশ করল। তারা অত্যন্ত গোপনে বনু ইস্রাঈলের ঐ সময়কার একজন নামকরা সাধক ও দরবেশ আলেম বাল‘আম ইবনে বা‘ঊরার (بلعم بن باعوراء) কাছে বহু মূল্যবান উপঢৌকনাদিসহ লোক পাঠাল। বাল‘আম তার স্ত্রীর অনুরোধে তা গ্রহণ করল। অতঃপর তার নিকটে আসল কথা পাড়া হ’ল যে, কিভাবে আমরা মূসার অভিযান ঠেকাতে পারি। আপনি পথ বাৎলে দিলে আমরা আরও মহামূল্যবান উপঢৌকনাদি আপনাকে প্রদান করব। বাল‘আম উঁচুদরের আলেম ছিল। যে সম্পর্কে তার নাম না নিয়েই আল্লাহ বলেন, وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ- (الأعراف)- আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন সেই লোকটির অবস্থা, যাকে আমরা আমাদের নিদর্শন সমূহ দান করেছিলাম। অথচ সে তা পরিত্যাগ করে বেরিয়ে গেল। আর তার পিছনে লাগল শয়তান। ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল’ (আ‘রাফ ৭/১৭৫)।
কথিত আছে যে, বাল‘আম ‘ইসমে আযম’ জানত। সে যা দো‘আ করত, তা সাথে সাথে কবুল হয়ে যেত। আমালেক্বাদের অনুরোধ ও পীড়াপীড়িতে সে অবশেষে মূসার বিরুদ্ধে দো‘আ করল। কিন্তু তার জিহবা দিয়ে উল্টা দো‘আ বের হ’তে লাগল যা আমালেক্বাদের বিরুদ্ধে যেতে লাগল। তখন সে দো‘আ বন্ধ করল। কিন্তু অন্য এক পৈশাচিক রাস্তা সে তাদের বাৎলে দিল। সে বলল, বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে দিতে পারলে আল্লাহ তাদের উপরে নারায হবেন এবং তাতে মূসার অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে’। আমালেক্বারা তার পরামর্শ গ্রহণ করল এবং তাদের সুন্দরী মেয়েদেরকে বনু ইস্রাঈলের নেতাদের সেবাদাসী হিসাবে অতি গোপনে পাঠিয়ে দিল। বড় একজন নেতা এফাঁদে পা দিল। আস্তে আস্তে তা অন্যদের মধ্যেও সংক্রমিত হ’ল। ফলে আল্লাহর গযব নেমে এল। বনু ইস্রাঈলীদের মধ্যে প্লেগ মহামারী দেখা দিল। কথিত আছে যে, একদিনেই সত্তর হাযার লোক মারা গেল। এ ঘটনায় বাকী সবাই তওবা করল এবং প্রথম পথভ্রষ্ট নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে রাস্তার উপরে ঝুলিয়ে রাখা হ’ল। অতঃপর আল্লাহর গযব উঠে গেল। এগুলি ইস্রাঈলী বর্ণনা।=(কুরতুবী ও ইবনু কাছীর উভয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন উক্ত আয়াতের শানে নুযূল হিসাবে। আয়াতের মর্মে বুঝা যায় যে, ঘটনার কিছু সারবত্তা রয়েছে। যদিও সত্য বা মিথ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। (উক্ত ঘটনা ইবনে কাসীর 8-11 খণ্ড, 447-456 পৃষ্ঠাতে বিশদভাবে রয়েছে)
ফেৎনার দরজা উন্মূক্ত হয়ে গেছে :
বর্তমানে বিভিন্ন রকমের ফেৎনা চারিপাশ থেকে চেপে ধরেছে। আর উমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকে দ্বীন ইসলামের মধ্যে এ ফেৎনা শুরু হয়েছে। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, একদা আমরা উমর (রাঃ) এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফিতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ? হুযাইফা (রাঃ) বললেন, যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনই আমি মনে রেখেছি। উমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী স্মরণ রাখার ব্যপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয় -সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়।
উমর (রাঃ) বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারন নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিতনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে? হুযাইফা (রাঃ) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না।
হুযায়ফা (রাঃ) এর ছাত্র শাকীক (রহঃ) বললেন], আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, উমর (রাঃ)-কি সে দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? হুযাইফা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা আমি তার কাছে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করেছি, যা মোটেও ভুল নয়। (দারজাটি কী) এ বিষয়ে হুযাইফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (রহঃ)-কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর (রাঃ) নিজেই। (বুখারী হা/৫২৫)
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মানুষের হৃদয়ে চাটাইয়ের পাতা (বা ছিলকার) মত একটির পর একটি করে ক্রমান্বয়ে ফিতনা প্রাদুর্ভূত হবে। সুতরাং যে হৃদয়ে সে ফিতনা সঞ্চারিত হবে সে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে এবং যে হৃদয় তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করবে সে হৃদয়ে একটি সাদা দাগ অঙ্কিত হবে। পরিশেষে (সকল মানুষের) হৃদয়গুলি দুই শ্রেণীর হৃদয়ে পরিণত হবে। প্রথম শ্রেণীর হৃদয় হবে মসৃণ পাথরের ন্যায় সাদা; এমন হৃদয় আকাশ-পৃথিবী অবশিষ্ট থাকা অবধি-কাল পর্যন্ত কোন ফিতনা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর হৃদয় হবে উবুড় করা কলসীর মত ছাই রঙের; এমন হৃদয় তার সঞ্চারিত ধারণা ছাড়া কোন ভালোকে ভালো বলে জানবে না এবং মন্দকে মন্দ মনে করবে না (তার প্রতিবাদও করবে না)।(মুসলিম হা/১৪৪; মিশকাত হা/৫৩৮০)।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিয়ামাতের পূর্বে এর আলামাতসমূহ পরপর ধারাবাহিকভাবে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ পাবে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেমনভাবে মাদুরের পাতাগুলো সুন্দরভাবে পরস্পর সাজিয়ে বসানো হয়। তেমনিভাবেই মানুষের হৃদয়ে কিয়ামতপূর্ব ফিতনাগুলো উদয় হবে এবং এসবের দ্বারা তারা প্রভাবিত হবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন : কিয়ামতের পূর্বে ফিতনার আবির্ভাবের কারণে মানুষ দুই দলে বিভক্ত হবে। একদল হবে সাদা মনের, আরেক দল হবে কালো মনের অধিকারী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ভালো ’আমলের দিকে দ্রুত অগবর্তী হও ঘুটঘুটে তিমির রাত্রির অংশ সদৃশ ফিতনার পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন কোন লোক ভোরে উঠবে ঈমানদার হয়ে আর সন্ধ্যা করবে কুফরী অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে মু’মিন অবস্থায় আর প্রভাতে উঠবে কাফির হয়ে। সে ইহকালীন সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দীন ও ঈমানকে বিক্রয় করে দেবে। (মুসলিম হা/১৮৬, তিরমিযী হা/২১৯৫, সহীহুল জামি‘ হা/২৮১৪, মিশকাত হা/৫৩৮৩)
ফিতনার ব্যাপকতা প্রকাশের পূর্বে সৎ কাজের প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফিতনাহ্ বলতে মুসলিমদের মাঝে দ্বীন ও দুনিয়াবী বিষয়কে কেন্দ্র করে হত্যা, লুটতরাজ সংঘর্ষ ও পারস্পরিক মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌছবে। এতে সাধারণ মুসলিমগণ সঠিকভাবে নিরাপদে ‘ইবাদত-বন্দেগী পালন করতে সক্ষম হবে না। ফিতনার ভয়াবহতা এতটাই ব্যাপক হবে যে, একদিনের মাঝেই মানুষ সকাল-সন্ধ্যায় ঈমানহারা হয়ে যাবে। সেই সময়ের ফিতনাকে আঁধার রাতের সাথে তুলনা করে এর রহস্যময় অস্পষ্টতাকে বুঝানো হয়েছে। এর কারণ উদঘাটন ও পরিত্রাণের উপায় বের করাও কঠিন হয়ে যাবে।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, শেষ যামানার ফিতনাগুলো হবে কঠিন, বিভৎস, জটিল ও অস্পষ্ট। অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ মানুষের কথা, কাজ ও অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। যেমন অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, আমানতের খিয়ানত করা, সৎ-অসৎ কাজ, সুন্নাত-বিদ্আত এবং ঈমান ও কুফর। অতএব, এসব ফিতনাহ্ হতে দূরে অবস্থান করা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংশ্রব বর্জন করাই সর্বোত্তম। এসব ফিতনাহ্ হতে দূরে থাকার জন্য নবী (সা.) কিছু পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন। তন্মধ্যে প্রধান হলো, ধারালো অস্ত্র ভোঁতা করে দেয়া। এসব ফিতনায় কেউ যদি কোনভাবে আক্রান্ত হয়, তবে সেক্ষেত্রে আদম (আঃ)-এর পুত্রদ্বয়ের মাঝে শ্রেষ্ঠ হাবিলের ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণেই “ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদনে প্রতিযোগিতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইমাম তবারানী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ উমামাহ হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, শীঘ্রই এমন ফিতনাহ্ আপতিত হবে যে, সকালে মানুষ মু’মিন থাকবে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে জ্ঞানের মাধ্যমে পরিত্রাণ দিবেন সে ব্যতীত। (শারহু ইবনে মাজাহ ২/১৩০৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ তোমাদের মধ্যে এমন একটি যুগ আসবে, যখন পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তির মত প্রার্থণা করা ছাড়া কেহ ফেৎনা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না’ (মুস্তাদারক হাকেম হা/৮৩০৮, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৭১৪৫)
দুনিয়ার যাবতীয় ফেৎনা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী :
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। তিনি বললেন, ” لَيْسَ ذَاكَ وَلَكِنَّ الاِسْتِحْيَاءَ مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ وَمَا وَعَى وَتَحْفَظَ الْبَطْنَ وَمَا حَوَى وَتَتَذَكَّرَ الْمَوْتَ وَالْبِلَى وَمَنْ أَرَادَ الآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدِ اسْتَحْيَا مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ ” ‘তা নয়, বরং আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষণ করবে এবং পেট ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাযাত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী চাকচিক্যতা পরিহার করে। যে লোক এইসকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করে। (আহমাদ হা/৩৬৭১, তিরমিযী হা/২৪৫৮)
আপন মাথাকে হিফাযাত করে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন কর্মে ব্যবহার হতে তথা তিনি ব্যতীত অন্য কারও উদ্দেশে সিজদা না করে এবং লোক দেখানোর উদ্দেশে সালাত আদায় না করে আর মাথাকে আল্লাহ ছাড়া কারও জন্য বিনয়ী না করে আর মাথাকে আল্লাহর বান্দার জন্য অহংকার উদ্দেশে না উঠায়। আর মাথা তার যাকে সংরক্ষণ করছে তথা যে সমস্তকে মাথা একত্রিত করেছে যেমন জিহবা চক্ষু কান এগুলোকে সংরক্ষণ করেছে যা হালাল না তা হতে। আপন পেটকে হারাম ভক্ষণ হতে রক্ষা করেছে এবং পেটের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্ত্তকেও যেমন লজ্জাস্থান দু’পা, দু’হাত এবং হৃদয় আর এদের সংরক্ষণ বা হিফাযাতের বিষয় হল এগুলোকে গুনাহের কাজে ব্যবহার করবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করবে। ত্বীবী বলেন, তোমরা যা মনে করছ তা প্রকৃত লজ্জা নয় আল্লাহর হতে বরং প্রকৃত লজ্জা হল যে নিজেকে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা হিফাযাত করা।
নারী শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও এবং অনেকে নারীকে সামান্য জ্ঞান করলেও আসলে মনের দিক দিয়ে নারী বিশাল। পৃথিবীতে নারীর মন সুবিস্তৃত মেঘমালা এবং ক্ষিপ্রপামী বাতাসের গতিবেগ হয়তো নির্ণয় করা সহজ; কিন্তু নারীর মনের গতিবেগ নির্ণয় করা মোটেই সহজ নয়। তা মাপা বা অনুমান করা আদৌ আসান নয়। আর এ জন্যই অনেকে সরল মনে নারীর ছলনার গরল পান করে ধোকা খায়।
অতএব বন্ধুগণ! এমন নারীর ছলনা থেকে বাঁচার জন্য, এমন নারীর ফিতনা থেকে দূরে থাকার জন্য তুমি হযরত ইউসুফ নবী (আঃ) এর মত দোআ কর,
رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ ۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ الْجَاهِلِينَ
অর্থাৎ, হে পরোয়ারদেগার! ওরা আমাকে যে বিষয়ের দিকে আহ্বান করছে, তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। তুমি যদি আমাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা না কর, তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফ ৩৩)।
মানুষের মন হল ফাকা ময়দানে পড়ে থাকা এক টুকরা হাল্কা পালকের মত। বাতাসের সামান্য দোলায় সে মন দুলতে থাকে, হিলতে থাকে, ছুটতে থাকে। মন হল পরিবর্তনশীল। সে মন থাকে আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝে। তিনি মানুষের মন ঘুরিয়ে ও ফিরিয়ে থাকেন। অতএব এ বলেও দোআ করো তার কাছে,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
অর্থাৎ, হে মনের গতি পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ।
ফেৎনার যুগে জড়সড় হয়ে দ্বীনের খুঁটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকা ওয়াজিব। যদিও তুমি একা হও, তবুও…..। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল প্রকার ফেৎনা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।