শয়তান মানুষের ভিতরে-বাইরে, দিবা-নিশি সর্বাবস্থায় পথভ্রষ্ট করার জন্য যথাযথ কুমন্ত্রণা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করে। আদম (আঃ)-কে সিজদা না করায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবলীসের প্রতি ছিল চরম অভিশাপ। যার ফলশ্রুতিতে ইবলীস বা শয়তানের মানব জাতির সাথে চির শত্রুতা। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; বরং সর্বদা তার বিরোধিতা করতে বলেছেন। কারণ শয়তানই মানুষের চির দুশমন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاء لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলে নিয়েছিল যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। সে ও তার দল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)।
যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে সে শয়তানেরই সহচর হয়ে যাবে এবং সে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم مُّهْتَدُوْنَ، حَتَّى إِذَا جَاءنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ- ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত নিকৃষ্ট সঙ্গী সে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৮)। অন্যত্র বলেন, ‘শয়তান তাদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদেরকে আল্লাহ্র যিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। এরাই শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্থ’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)।
সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় :
প্রত্যেক মানব সন্তান দ্বীনের ফেৎরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। আর তাই সন্তান ভূমিষ্ঠের সময় শয়তান মানব সন্তানকে আঘাত করে যেন সে ইসলামী ফিতরাতের উপর না থাকে তাই শয়তান তা বিনষ্ট করে দিতে ব্যস্ত হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, ‘জন্মের সময় শিশু এজন্য চিৎকার করে কারণ শয়তান তাকে খোঁচা মারে। (মুসলিম হা/২৩৬৭, মিশকাত হা/৭০)
এই জন্য সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরে সন্তানের কানে আযান শুনাতে হয়। ইমাম তিরমিযী বলেন, নবজাতকের কানে আযান শুনানোর উপরে আমল জারি আছে (والعمل عليه )। (তিরমিযী হা/১৫৬৯; আলবানী, তিরমিযী হা/১২২৪; ‘কুরবানী’ ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ নং ১৫)
হাফিয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) শিশুর কানে আযানের তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেন, ‘দুনিয়াতে আগমনের সাথে সাথে তার কানে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র বড়ত্বের ও শ্রেষ্ঠত্বের বাণী শুনানো হয়। যেমন দুনিয়া থেকে বিদায়কালে তাকে তাওহীদের কালিমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’র তালক্বীন করানো হয়। আযান বাচ্চার মনে দূরবর্তী ও স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে এবং শয়তানকে বিতাড়িত করে’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মওলূদ পৃঃ ২৫-২৬)
কেননা রাসূল (ছা.) বলেন, ‘যখন আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু নিঃসরণ করতে করতে পিছু হটে যায়। (বুখারী হা/ ৩২৮৫, মিশকাত হা/৬৫৫)
আল্লামা মুল্লা ‘আলী আলক্বারী এ হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, গাধার বোঝা বেশী ভার হওয়ার কারণে বোঝা বহনের সময় যেমন তার মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হয় তেমনি আযানের শব্দ শায়ত্বনের জন্য সহ্য শক্তির চাইতে ভার হওয়ার কারণে তার বায়ু নির্গত হয়। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, শায়ত্বন ইচ্ছাকৃতভাবেই এ সময় বায়ু ছাড়ে যাতে এ বায়ুর আওয়াজের কারণে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে।
স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের সময় :
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে এমন আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকা। কেননা এতে ব্যভিচার সংঘটিত হওয়া ও বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবলীস শয়তান সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনাহ্ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছো। বর্ণনাকারী আ’মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, ’’অতঃপর ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে’’। (মুসলিম হা/২৮১৩, মিশকাত হা/৭১)
ব্যাখ্যা: (فَيُدْنِيهِ مِنْهُ وَيَقُولُ نِعْمَ أَنْتَ) শয়তান তাকে নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে, তুমি খুব ভালো। অর্থাৎ- শয়তান তার কৃতকার্যে সন্তুষ্ট হয়ে তার প্রশংসা করে এবং স্বীয় ইচ্ছা পূরণ করার কারণে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।
فَيَلْتَزِمُهٗ অর্থাৎ- শয়তান তার সাথে কুলাকুলি করে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার কারণে যা তার নিকট অধিক পছন্দনীয় কাজ- তাকে আপন করে নেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে পারিবারিক বন্ধন বিলুপ্ত হবে। একসময় উভয়ে অনৈতিক সম্পর্কেও জড়িত হতে পারে এবং এর দ্বারা সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। শয়তান এটাই চায়।
নারী ঘর থেকে বের হলে :
নারীরা ঘরের সৌন্দর্য্য ঘরে অস্থান তাদের জন্য পরোকালিন কল্যাণ নিহিত। অপ্রয়োজনে বাহির হলে শয়তান তার দিকে তাকায় এবং সঙ্গী হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, المرأة عورة فإذا خرجت استشرفها الشيطان وأقرب ما تكون من ربها إذا هي في قعر بيتها ’’নারী হ’ল উলঙ্গ। যখন সে ঘরের বাহির হয়, তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি দেয় এবং তার চলার সঙ্গী হয়। আর সে ঘরে থাকাকালে প্রভু (আল্লাহ) তার সবচেয়ে কাছে অবস্থান করে’’ (ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৫৫৯৯)। সুতরাং নারীরা ঘরে অবস্থান করো এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকো।
কুরআন তেলাওয়াতের সময় ও সালাতের ভেতরে :
ওছমান বিন আবূল ‘আছ (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! শয়তান আমাকে ছালাতের ভিতরে ও তিলাওয়াতের সময় কুমন্ত্রণা দেয়। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খিনযিব’ বলা হয়। যখন (ছালাতের মধ্যে) শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করবে, তখন বলবে আ‘ঊযুবিল্লা-হ এবং বাম দিকে তিনবার থুক ফেলবে’। তিনি (ওছমান) বলেন, এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন’। (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ. ‘যখন তুমি কুরআন পাঠ আরম্ভ করবে, বিতাড়িত শয়তান হ’তে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে’ (নাহল ১৬/৯৮)। অন্যত্র বলেন, ‘যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহ’লে সাথে সাথে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী’ (আ‘রাফ ৭/২০০)।
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার উপায় :
أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ.
উচ্চারণ : আ‘ঊযুবল্লিা-হিস্ সামীয়লি ‘আলীম, মনিাশ শাইত্বা-নরি রাজীম, মনি হাম্যহিী, ওয়া নাফ্খহিী, ওয়া নাফ্সহিী।
র্অথ : র্সবজ্ঞ ও র্সবশ্রোতা আল্লাহ্র নকিট শয়তানরে ফুঁক, যাদু ও কুমন্ত্রণা থকেে আশ্রয় র্প্রাথনা করছি। আবূদাঊদ, তরিমযিী, নাসাঈ, মশিকাত হা/১২১৭।
নাফখ হ’ল দম্ভ, নাফস হ’ল যাদু ও হাময হ’ল কুমন্ত্রণা। র্অথটি গ্রহণ করা হয়ছেে : ছহীহ আল-কালমিুত্ তাইয়বি, পৃষ্ঠা-৪৩।
উক্ত হাদীছে نَفْخُهُ বা ‘শয়তানরে ফুঁক’-এর র্অথ সর্ম্পকে রাবী ‘আমর বনি র্মুরা বলনে, সটো হ’ল الْكِبْرُ র্অথাৎ ‘অহংকার’। ছহীহ ইবনু হবিবান হা/১৭৭৭; আলবানী, সনদ ছহীহ লগিাইরহিী।
তাছাড়া সালাতের মধ্যে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ালে শয়তানের কলিজাতে আঘাত লাগে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَهِيَ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ. ‘তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শয়তানের বিরুদ্ধে লোহা অপেক্ষা কঠিন’। (বুখারী হা/১২০২; মিশকাত হা/৯১৭) আঙ্গুলের ইশারাটা শয়তানের নিকট তরবারি ও তীরের আঘাতের চেয়েও কঠিন, কেননা এখানে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে সালাত আদায়কারী ব্যক্তিকে শয়তান শির্ক ও কুফরে লিপ্ত করবে, সে আকাঙ্ক্ষাক্ষে ধূলিসাৎ করে।
শয়তানের হাত থেকে বাঁচার যিকির সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، ‘যে লোক একশ’বার এ দো‘আটি পড়বে, (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতা বান)। তাহ’লে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব হবে। তার জন্য ১০০টি ছওয়াব লিখা হবে একশটি গুনাহ মাফ করা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হ’তে নিরাপদ থাকবে’।(বুখারী হা/৩২৯৩)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি দু’টি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই দু’টি অভ্যাস আয়ত্ত করাও সহজ, কিন্তু এ দু’টি আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হ’ল- (১) يُسَبِّحُ اللَّهَ فِى دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ عَشْرًا وَيُكَبِّرُ عَشْرًا وَيَحْمَدُهُ عَشْرًا. فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعْقِدُهَا بِيَدِهِ، فَذَلِكَ خَمْسُونَ وَمِائَةٌ بِاللِّسَانِ وَأَلْفٌ وَخَمْسُمِائَةٍ فِى الْمِيزَانِ. (২) وَإِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ سَبَّحَ وَحَمِدَ وَكَبَّرَ مِائَةً فَتِلْكَ مِائَةٌ بِاللِّسَانِ وَأَلْفٌ فِى الْمِيزَانِ. فَأَيُّكُمْ يَعْمَلُ فِى الْيَوْمِ أَلْفَيْنِ وَخَمْسَمِائَةِ سَيِّئَةٍ. এক. প্রত্যেক ছালাতের পর ১০ বার ‘সুবহানাল্লা-হ’, ১০ বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ ও ১০ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। আর যবানে এর সংখ্যা ১৫০ বার, কিন্তু মীযানে তা ১৫০০ বারের সমান। দুই. অতঃপর রাতে যখন ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লা-হ’, ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ এবং ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’, বলবে। তা যবানে এর সংখ্যা ১০০ বার, কিন্তু মীযানে তা ১০০০ বারের সমান। বস্তুত তোমাদের এমন কে আছে যে প্রত্যহ ২৫০০ গুনাহ করবে’? ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! অভ্যাস দু’টো সহজ হওয়া সত্ত্বেও আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন শয়তান তার কাছে এসে বলে- অমুক অমুক বিষয় স্মরণ করো, এমনকি তখন সে ছালাতের কথা ভুলে যায়। আবার যখন সে বিছানায় ঘুমাতে যায়, তখন শয়তান এসে তাকে এমনভাবে ভুলিয়ে দেয় যে, অবশেষে সে ঘুমিয়ে পড়ে’ (ইবনু মাজাহ হা/৯২৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫০২; আবূদাউদ হা/৫০৬৫; তিরমিযী হা/৩৪১০; মিশকাত হা/২৩০৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/৬০৬, ১৫৯৪)।
আল্লাহ আমাদের শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাযত করুন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।