(‘ফযীলতপূর্ণ দো‘আ ও যিকির’ বই থেকে নেয়া)
১. ওযূ শেষে পঠিতব্য বিশেষ দো‘আ ও ফযীলত :
سُبْحَانَكَ أللهمّ وَبِحَمْدِكَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَّآ إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ.
উচ্চারণ : ‘সুবাহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র এবং তোমার প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করে তোমার দিকে ফিরে যাচ্ছি’(ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৫)।
ফযীলত : আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওযূ শেষে এই দো‘আটি পাঠ করে, سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أنت، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ، অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র এবং তোমার প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করে তোমার দিকে ফিরে যাচ্ছি’। দো‘আটি একটি বিশেষ মোহর দ্বারা মোহরাঙ্কিত করা হয়। অতঃপর সেটা আরশের নিচে রাখা হয়, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেই মোহর খোলা হয় না (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৭৩০; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৫)।
অন্যত্র দো‘আটির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, সেই দো‘আটি তার জন্য একটি কাগজে লেখা হয় এবং তাতে সীল মেরে দেওয়া হয়, যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত খোলা হয় না (ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৫)। বিশেষ করে এই দো‘আটি ‘মজলিসের কাফ্ফারা’ রূপে পরিচিত, যা কোন বৈঠকের শেষে পাঠ করলে উক্ত বৈঠকের মাঝে কৃত ভুলগুলোর ক্বাফ্ফারা হয়ে যায় (আবূদাঊদ হা/৪৮৫৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫১৭)।
২. আযানের পরে পঠিতব্য বিশেষ দো‘আ ও ফযীলত :
أَشْهَدُ أَنْ لَّآ إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا، وَّبِمُحَمَّدٍ رَّسُوْلًا، وَّبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا.
উচ্চারণ : ‘আশ্হাদু আল্ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। রাযীতু বিল্লা-হি রাব্বাওঁ, ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসূলাওঁ, ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহ্কে রব হিসাবে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মেনে সন্তুষ্ট হ’লাম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬১)।
ফযীলত : (১) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لِكُلِّ نَبِىٍّ دَعْوَةٌ قَدْ دَعَا بِهَا فِى أُمَّتِهِ وَخَبَأْتُ دَعْوَتِى شَفَاعَةً لأُمَّتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘প্রত্যেক নবীকে গ্রহণীয় একটি বিশেষ দো‘আর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সকল নবী তাঁদের উম্মাতের কল্যাণের জন্য দো‘আ করেছেন। তবে আমি ক্বিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফা‘আতের জন্য দো‘আ গোপনে রেখে দিয়েছি (মুসলিম হা/২০১)।
(২) সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا. غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ. ‘যে ব্যাক্তি মু‘আয্যিনের আযান শুনে বলে ‘আশ্হাদু আল্ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। রাযীতু বিল্লা-হি রাব্বাওঁ, ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসূলাওঁ, ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা’। আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন’ (মুসলিম হা/৩৮৬; মিশকাত হা/৬৬১; আবূদাঊদ হা/৫২৫; তিরমিযী হা/২১০)।
উল্লেখ্য, এই দো‘আটি পাঠের মাধ্যমে ঈমান নবায়ন করা হয় এবং কবরের জওয়াব রপ্ত করা হয়। আমরা জেনে বুঝে অজান্তে আমাদের ঈমান নষ্ট করে চলেছি প্রতিনিয়ত। সুতরাং আমরা এই দো‘আটি আমল করে ছালাতের পূর্বে আমাদের ঈমানকে নতুন করে প্রতিস্থাপন করে নিতে পারি।
৩. আল্লাহর প্রিয় চারটি বাক্য, দিনের সেরা শ্রেষ্ঠ্য আমল :
তাছাড়া বয়ষ্ক, অক্ষম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এই আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ ِللهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার (১০০ বার)।
অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র, আল্লাহ্র জন্য প্রশংসা, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ও আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হ/৮৫৮; ইবনু মাযাহ, মিশকাত হা/২৫৯১)।
ফযীলত : (১) উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকটে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাই আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমি বসে বসে সম্পাদন করতে পারি’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ পাঠ করো, তাহ’লে ইসমাঈলের বংশধর থেকে ১০০ জন গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ নেকী লাভ করতে পারবে। আর ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পাঠ করো, তাহ’লে তোমার জন্য সেই পরিমাণ নেকী লেখা হবে, যেন তুমি জিন বাঁধা ও লাগাম পরিহিত ১০০টি ঘোড়ায় চড়ে আল্লাহ্র পথে লড়াই করছ। আবার ১০০ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ পাঠ করবে, তাহ’লে তোমার জন্য কবূলযোগ্য ১০০টি পশু কুরবানীর নেকী লেখা হবে। আর ১০০ বার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করো, তাহ’লে আকাশ ও যমীনের মধ্যবর্তী জায়গা নেকী দ্বারা পূর্ণ হয়ে যাবে। সেই দিন কারু আমল তোমার মত হবে না। তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে তোমার মত এরূপ আমল করেছে’ (আহমাদ হা/২৬৯৫৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩১৬; সনদ হাসান)।
(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বাক্য থেকে চারটি বাক্য চয়ন করেছেন। ‘সুবহা-নাল্লা-হ’, আলহামদুলিল্লা-হ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ ও ‘আল্লা-হু আকবার’। যে ব্যক্তি ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলবে তার জন্য ২০টি নেকী লেখা হবে এবং ২০টি গুনাহ মোচন করা হবে। যে ব্যক্তি ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবে, তার জন্য অনুরূপ। যে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে, তার জন্যও অনুরূপ ফযীলত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সাথে অন্তর থেকে ‘আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আলামীন’ বলবে, তার জন্য ৩০টি নেকী লেখা হবে অথবা ৩০টি পাপ মোচন করা হবে’ (আহমাদ হা/ ৮০১২; হাকিম হা/১৮৬৬; ছহীহুল জামি‘ হা/ ১৭১৮)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি একটি বৃক্ষ রোপণ করছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা! তুমি কী রোপণ করছ?’ উত্তরে আমি বললাম, আমার জন্য একটি বৃক্ষ রোপণ করছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম বৃক্ষ রোপণের কথা বলব না?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল! তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তাহ’লে তুমি বলো ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু আল্লা-হু আকবার’। يُغْرَسْ لَكَ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ شَجَرَةٌ فِى الْجَنَّةِ. তবে প্রত্যেক বার পাঠের বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে বৃক্ষ রোপণ করা হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৭; হাকিম হা/১৮৮৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫৪৯; সনদ ছহীহ)।
৪. মাগরিব ও ফজরের ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আ যা বিতাড়িত শয়তান হতে রক্ষা কবয :
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ.
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, বিইয়াদিহিল খায়রু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ : ‘নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক ও শরীকবিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশীল’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৯৭৫)।
ফযীলত : আব্দুর রহমান ইবনু গানাম (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ছালাতের পর ১০ বার বলবে, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, বিইয়াদিহিল খায়রু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। এমন ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক শব্দের পরিবর্তে ১০টি নেকী লেখা হবে, তার ১০টি গুনাহ মুছে দেয়া হবে, তার ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়াও এ দো‘আটি তার জন্য প্রত্যেক মন্দ কাজ এবং বিতাড়িত শয়তান হ’তেও রক্ষাকবয হবে। এর বদৌলতে কোন গুনাহ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (অর্থাৎ শিরক ব্যতীত) কোন কিছুই তাকে ধ্বংস করতে পারবে না। ঐ ব্যক্তি হবে সমস্ত মানুষ অপেক্ষা উত্তম আমলকারী। তবে যে এর চেয়ে উত্তম কথা বলবে সে অবশ্যই এর চেয়েও উত্তম হবে’(আহমাদ হা/১৮০১৯; মিশকাত হা/৯৭৫; মুছনাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৫৩৬৭)।
এই দোআর সাথে বাদ ফজর ও বাদ মাগরীব ছালাতের পরে সূরা ফালাক্ব, নাস, ও ইখলাছ তিন তিনবার পাঠ করে সারা শরীর মুছে দিতে হবে।
৫. তাহাজ্জুদ ছালাত কবূলের দো‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، وَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ.
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ‘লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ। ওয়া রাব্বিগ ফিরলী।
অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই জন্য প্রশংসা, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহ্র সাহায্য ব্যতীত আমার কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো’ (বুখারী, মিশকাত হা/১২১৩)।
ফযীলত : ওবাদা বিন ছামিত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে জেগে বলে, এই দো‘আটি পাঠ করে এবং কোন প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা‘আলা তার সে প্রার্থনা কবূল করেন। অতঃপর সে যদি ওযূ করে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তার সে ছালাত কবূল করেন’ (বুখারী হা/১১৫৪; মিশকাত হা/১২১৩; ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৫৯৬)।
৬. ইহতিসাব পর্যালোচনা করা এবং অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে ক্ষমা করা :
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মসজিদে নব্বীতে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন, ‘তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী মানুষ আগমন করবে’। অতঃপর একজন ছাহাবী আগমন ঘটল। তাঁর দাঁড়ি থেকে ওযূর পানির ফোটা ঝরে পড়ছিল। তিনি বাম হাতে জুতা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন। দ্বিতীয় দিনেও রাসূল (ছাঃ) অনুরূপ কথা বললেন এবং প্রথম দিনের মতই সেই ছাহাবী আগমন করলেন। তৃতীয় দিনেও যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই একই কথা আবারও বললেন এবং যথারীতি সেই ছাহাবী পূর্বের অবস্থায় আগমন করলেন। রাসূল (ছাঃ) যখন আলোচনা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন তখন আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) সেই ছাহাবীকে অনুসরণ করে তাকে বললেন, আমি আমার পিতার সাথে ঝগড়া করে শপথ করেছি, তিনদিন পর্যন্ত তার ঘরে যাব না। এই তিনদিন আমাকে যদি আপনার ঘরে থাকার সুযোগ করে দিতেন, তবে আমি সেখানে অবস্থান করতাম। সেই ছাহাবী বললেন, আপনি থাকতে পারেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) বলতেন, তিনি তার সাথে তিন রাত অতিবাহিত করলেন। তিনি তাঁকে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করতে দেখলেন না। অতঃপর তিনি যখন রাতে ঘুমাতেন, বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন তখনও আল্লাহ্র যিকির করতেন। আর তার মুখ থেকে ভালো কথা ব্যতীত কোনো মন্দ কথা শুনিনি। যখন তিনদিন অতিবাহিত হয়ে গেল এবং তার আমলগুলো সাধারণ মুমিনের আমলের মতই মনে করতে লাগলাম। তাই আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহ্র বান্দা! আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আপনার সম্পর্কে তিন দিন একই কথা বলতে শুনেছি যে, ‘এখনই তোমাদের নিকট একজন জান্নাতী মানুষ আগমন করবে’। উক্ত তিন দিনই আপনি আগমন করেছেন। সুতরাং আমি ইচ্ছা করেছিলাম আপনি কী আমল করেন তা দেখতে আপনার নিকট থাকব। যাতে আমিও তা করতে পারি। আপনাকে তো বেশি আমল করতে দেখিনি। তাহ’লে কোন গুণ আপনাকে এই মহান মর্যাদায় উপনীত করেছে, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন?
সেই ছাহাবী বললেন, তুমি যা দেখেছ ঐ অতটুকুই। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) বলেন, যখন আমি ফিরে আসছিলাম তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। তারপর বললেন, ‘আমার আমল বলতে ঐ অতটুকুই, যা তুমি দেখেছ। তবে আমি আমার অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহ তা‘আলা কাউকে কোনো নি‘আমত দান করলে সেজন্য তার প্রতি হিংসা রাখি না’। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) বলেন, এ গুণই আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। যা আমরা করতে পারি না। অন্য বর্ণনা মতে, সেই আগন্তুক ছাহাবীর নাম সা‘দ ইবনে ‘আবি ওয়াক্কাছ (রাঃ) (আহমাদ হা/১২৭২০; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২০৫৫৯। ইরাক্বী, হায়ছামী ও শু‘আইব আরনাঊত বলেন, এর সনদ ছহীহ’; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩০৪৮)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে জেনে বুঝে উপরোক্ত আমল করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।