বদ নজর বলতে সাধারণত হিংসা, ঈর্ষা বা অতিরিক্ত প্রশংসার মাধ্যমে অন্যের প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করাকে বোঝানো হয়, যা ক্ষতিকারক হতে পারে। প্রভাবশালী শক্তি নির্গত হয়, যার উপর ক্ষতি হয়, এবং বদ নজর বাস্তব, যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এবং যদি ভাগ্যের আগে কিছু থাকত, তাহলে বদ নজর তার আগে আসত। এই বিষয়ে মানুষ হয় অতিরিক্ত, অথবা অতিরিক্ত, এবং এই ক্ষেত্রে মধ্যপন্থী খুব কম। আপনি এমন কিছু লোক খুঁজে পাবেন যারা অতিরিক্ত, অর্থাৎ তারা যাদের সাথে দেখা হয় তাদের সবাইকে আল্লাহকে স্মরণ করতে, আল্লাহকে স্মরণ করতে, এই বদ নজরের ভয়ে যা ইচ্ছা তাই বলতে বলে, এবং এই ধরণের লোকদের বদ নজর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সমস্যা হলো, যেখানে প্রতিযোগিতা থাকে, একজন বিজয়ী এবং একজন পরাজিত, তাই এই ধরণের লোকদের বদ নজরের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ব্যক্তি বদ নজরের সামনে দুর্বল। একজন মুসলিমকে তার সকল বিষয়ে মধ্যপন্থী হতে হবে। এটি একটি অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস, যা ইসলামে বাস্তব বলে স্বীকৃত এবং এটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল রয়েছে।
(ক) বদ নজর সম্পর্কে ধারণা :
- কুদৃষ্টি: বদ নজর মানে হলো মন্দ বা কুদৃষ্টি, যা সাধারণত হিংসা থেকে উদ্ভূত হয়।
- ক্ষতিকর প্রভাব: এই ধরনের দৃষ্টির কারণে ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষতি হতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
বদ নজর খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, ‘Very rarely will a house be found without anyone being affected by the evil eye or jealousy.’ Evil eye comes from either a resentful feeling or one of excessive adoration. This is manifested by casting a gaze, stare or look that is envious. An envier causes harm or misfortune to an unsuspecting person through their eyes, without needing their hands or tongue. The intensity of the effect differs according to the weakness of the victim and the power of the envier’s jealousy, hatred, anger, or even love.
অর্থাৎ- ‘খুব কমই এমন ঘর পাওয়া যাবে যেখানে কেউ বদ নজর বা ঈর্ষার দ্বারা আক্রান্ত না হয়।’ বদ নজর আসে বিরক্তি বা অতিরিক্ত ভক্তি থেকে। এটি ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টি, দৃষ্টি বা দৃষ্টি নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। একজন ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি তার চোখ দিয়ে একজন অজ্ঞ ব্যক্তির ক্ষতি বা দুর্ভাগ্য ঘটায়, তার হাত বা জিহ্বার প্রয়োজন ছাড়াই। প্রভাবের তীব্রতা ভুক্তভোগীর দুর্বলতা এবং ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির ঈর্ষা, ঘৃণা, রাগ এমনকি ভালোবাসার শক্তি অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
(খ) বদনজর ও এর কুপ্রভাব :
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُتَفَرِّقَةٍ وَمَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ، وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُمْ مَا كَانَ يُغْنِي عَنْهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থঃ এবং (ইয়াকুব আলাইহিস সালাম) বললেন হে আমার প্রিয় সন্তানগণ! তোমরা সবাই (শহরে) কোন এক প্রবেশ পথে প্রবেশ করো না বরং বিভিন্ন প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করিও । আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কোন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব না। কেননা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী কেবল আল্লাহ। তার উপর আমার আস্থা রয়েছে। ভরসাকারীকে ভরসা করলে তার প্রতিই করতে হবে। আর যখন তারা দিয়েছিলেন অথচ আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত কোন কিছু থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। তবুও ইয়াকুবের (আলাইহিস সালাম) অন্তরে একটি আশা ছিল যে, তিনি তা পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তিনি ইলমে (নবুওয়াতের) বাহক ছিলেন। অথচ অনেক লোক তা জানে না। (সূরা ইউসুফঃ ৬৭-৬৮)
হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) উপরোক্ত দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর ভাই বিনইয়ামিনকে তার অন্য ভাইদের সাথে মিশরে পাঠিয়েছিলেন। আয়াতে ইয়াকুবের (আলাইহিস সালাম) উক্ত নির্দেশনার ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) মুহাম্মাদ বিন
কা’ব, মুজাহিদ, যাহহাক, কাতাদা এবং সুদী (রাঃ) প্রমুখ বলেছেন যে, এমনটি তিনি বদ নজরের ভয়ে বলেছিলেন। কেননা তার সন্তানরা খুবই সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। তাই তাদের উপর লোকদের বদনজরের আশঙ্কা করে উক্ত নির্দেশ দেন । কেননা বদনজরের ক্রিয়া বাস্তব; কিন্তু পরে তিনি এও বলেনঃ তবে এ ব্যবস্থা আল্লাহর তাকদীরকে প্রতিহত করতে পারবে না। তিনি যা চাবেন তাই হবে———– পরিশেষে তা তাদের জন্য বদনজর হতে প্রতিরোধক হিসেবেই আল্লাহর হুকুমে কাজ হয়েছিল——- সংক্ষিপ্ত । (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ২/৪৮৫)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ অর্থঃ কাফিররা যখন উপদেশ বাণী (কুরআন) শ্রবণ করে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়িয়ে ফেলতে চায় এবং বলেঃ সে তো এক পাগল। (সূরা কলামঃ ৫১)
হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, (لَيُزْلِقُونَكَ) “তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রুগী বানিয়ে দিবে যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাযত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে। যেমন এ ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)
(গ) বদনজর সম্পর্কে সাহাবীদের মন্তব্য :
১। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।
২। আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ استعيذوا بالله من العين فإن العين حق তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)
৩। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا ‘বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)
৪। আসমা বিনতে উসাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ نعم فلو كان شئ سابق القضاء لسبقته العين অর্থঃ হ্যাঁ! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮)
৫। আবু যর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ان العين لتولع بالرجل بإذن الله حتى يصعد حالقا فيتردى منه ইমাম আহমদ ও আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন । এই হাদীসের সারমর্ম হল, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল। (শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেনঃ ৮৮৯)
৬। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ العين حق تستنزل الحالق অর্থঃ বদ নজর ত্যি তা যেন মানুষকে উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়। (ইমাম আহমদ ও তা রানী আলবানী হাসান বলেছেনঃ ১২৫০)
৭। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ العين تدخل الرجل القبر وتدخل الجمل القدر অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে । (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯)
অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয় ।
৮ । জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ أكثر من يموت من أمتي بعد قضاء الله وقدره بالعين অর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে। (মুসনাদে বাযযার)
৯ । আয়েশা সিদীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বদ নজর থেকে বাচার জন্যে ঝাড়-ফুক করার নির্দেশ দিতেন। (বুখারীঃ ১০/১৭০, মুসলিমঃ ২১৯৫)
১০ । আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নজর থেকে হেফাযত ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ও ক্ষত বিশিষ্ট রোগ থেকে রক্ষার জন্যে ঝাড়-ফুকের অনুমতি প্রদান করেছেন। (মুসলিমঃ ২১৯৬)
১১। উম্মে সালমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ঘরে এক মেয়ে শিশুর চেহারায় দাগ দেখে তিনি বলেছেন যে, তার চেহারায় বদ নজরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাকে ঝাড়-ফুক করাও। (বুখারীঃ ১/১৭১, মুসলিমঃ ৯৭)
১২। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলে হাযমকে সাপে দংশিত ব্যক্তির ঝাড়-ফুকের অনুমতি প্রদান করেছেন। আর আসমা বিনতে উমাইসকে বললেন, কি ব্যাপার আমার ভাইয়ের সান্তানদেরকে দুর্বল দেখছি, তাদের কি কিছু হয়েছে? আসমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন না, কিছু হয়নি তবে বদ নজর তাদেরকে দ্রুত লেগে যায়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুক করাও অতঃপর তাকে তার সামনে নিয়ে আসা হলোঃ তিনি বলেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুক কর। (ইমাম মুসলিম রেওয়ায়েত করেছেনঃ ২১৯৮)
(ঘ) বদনজর সম্পর্কে সালাফদের মতামত :
ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেনঃ বদ নজরের প্রতিক্রিয়া হওয়া সত্য যা আল্লাহর নির্দেশেই হয়ে থাকে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)
* হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেনঃ বদনজরের মূল বিষয় হল কোন উত্তম বস্তুকে কোন নিকৃষ্ট চরিত্রের ব্যক্তি হিংসার চোখে দেখে । যার ফলে সেই মানুষ অথবা যে কোন প্রাণী, যে কোন ধরণের বস্তুর ক্ষতিসাধিত হয় । (ফতহুল বারীঃ ১০/২০০)
* ইবনে আসীর (রহঃ) বলেনঃ বলা হয় (اصابت فلانا عين) অর্থাৎ অমুককে চোখ লেগেছে এটা তখন বলা হয়, যখন কারো প্রতি কোন শক্র অথবা হিংসুক দৃষ্টিপাত করে, আর এর ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।” (আন নিহায়াঃ ৩/৩২)
* হাফেজ ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ কতিপয় ব্যক্তিবর্গ নিজের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে বদ নজরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন এবং তারা বলেছেন যে, এর কোন সত্যতা নেই এটা কেবল কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। যুগ যুগের জ্ঞানীজনেরা একে অস্বীকার করেনি, যদিও তারা তার কারণ ও দিক নিয়ে মতভেদ করেছেন।
তিনি আরও বলেন যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের শরীর ও আত্মায় বিভিন্ন প্রকারের ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক ক্রিয়াশীল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর এদের ভেতর অপরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। আর কোন জ্ঞানী ব্যক্তি শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আত্মার প্রতিক্রিয়ার অস্বীকার করতে পারবে না, কেননা এটা এমন একটি বিষয় যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে পরিলক্ষিত ও অনুভব করতে পারি। যেমন মানুষের চেহারা লাল রং ধারণ করে যখন তার দিকে কোন লজ্জাকারী ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ে। তেমনি ভাবে ভয়ের কিছু দেখলে হলদে রং ধারণ করে। আর লোকজন বাস্তবে দেখতে পেয়েছে যে, বদ নজরের জন্যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর এসব আত্মার প্রভাবে হয়ে থাকে। আর যেহেতু আত্মার সম্পর্ক চোখের সাথে খুবই গভীর এজন্য এটাকে চোখ লাগা বলা হয় কিন্তু চোখের নিজস্ব এমন কোন প্রভাব নেই বরং প্রতিক্রিয়া কেবল আত্মার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর আত্মার মতা, প্রকৃতি ও এর গুণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সুতরাং হিংসুক থেকে হিংসার মাধ্যমে হিংসাকৃতের উপর স্পষ্ট কষ্টের প্রভাব পড়ে।
এজন্য আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন হিংসাকারীদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
বদনজর কখনও যোগাযোগে হয় আর কখনও সামনা সামনি হয় কখনও দৃষ্টিপাতে, আবার কখনও আত্মার দ্বারা ঘায়েল করে আর কখনও এর প্রভাব বদ দুআ ও তাবীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর কখনও ধ্যানের মাধ্যমে হয়।
পূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, বদ নজর কেবল দৃষ্টির দ্বারা হয় না বরং কখনও অন্ধ ব্যক্তিরও বদ নজর লাগে আর তা এভাবে যে, তার সামনে কারো প্রশংসা বর্ণনা করা হয় আর তা শুনে অন্ধ ব্যক্তির আত্মা সেই প্রশংসিত ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার লাভ করে । এটা একটা বিষাক্ত তীরের ন্যায় যা বদ নজরকারী ব্যক্তির আত্মা হতে বের হয়ে অন্য ব্যক্তির উপর আঘাত হানে। আর এই তীরের লক্ষ্য বস্তু কখনও সঠিক হয় আবার কখনও হয় না। এর একটি উদাহরণ এমন যেমন কোন আক্রমণকারী এমন বক্তির উপর যদি আক্রমণ করে, যার গায়ে সুরক্ষিত যুদ্ধ পোশাক থাকে তবে আঘাতে তার শরীর আহত হবে না। তেমনি যদি দু’আ পড়ে সে যদি সুরক্ষিত থাকে তবে ক্রীয়া হবে না। আর যদি খালি গায়ে থাকে তবে আঘাত তার শরীরে হবে। আর কখনও এমন হয় যে, তীর ব্যবহারকারীর তীর শক্রর উপর আঘাত না হেনে বরং তীর ব্যবহারকারীর শরীরকেই উল্টো আঘাত করে বসে। তেমিনভাবে কখনও বদ নজর যে লাগায় উল্টো তার উপর আঘাত হানতে পারে। আর কখনও বা অনিচ্ছায় নদ নজর লেগে যায়।
অতএব এর প্রকৃতি হলো বদ নজরকারীর আশ্চর্য হয়ে চোখ লাগানো এরপর তার খবীস আত্মা তার অনুসরণ করে যা তার বিষাক্ত দৃষ্টিকে সহযোগিতা করে। কখনও মানুষ নিজেকেই বদনজরে মেরে থাকে, কখনও তার ইচ্ছার বাইরেও বদনজর লেগে থাকে। (যাদুল মা’আদ থেকে সংক্ষিপ্তাকারেঃ ১/১৬৫)
(ঙ) বদ নজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য :
১ । প্রত্যেক বদ নজরওয়ালা হিংসুক; কিন্তু প্রত্যেক হিংসুক বদ নজর ওয়ালা নয়। এজন্য সূরা ফালাকে হিংসাকারীর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। যাতে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে সে বদ নজর থেকেও রক্ষা পায়। আর এটিই হলো কুরআনের ব্যাপকতা এবং তার মোজেযা ও অলংকারিত্ব।
২। হিংসার মূল বিষয় হল বিদ্ধেষ এবং অপরের নেয়ামত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হয়ে থাকে। অন্যদিকে বদ নজরের মূল বিষয় হল অন্যের কোন কিছুকে খুব ভাল মনে করা।
৩ । হিংসা এবং বদ নজরের পরিণাম একই যার ফলে উভয়ই ক্ষতিসাধনের কারণ হয়ে থাকে; কিন্তু উভয়ের উৎসের পার্থক্য রয়েছেঃ হিংসার উৎস অন্তরের জ্বলন সৃষ্টি হওয়া এবং সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর বদ নজরের উৎস চোখের দৃষ্টি শক্তির খারাপ প্রভাব এজন্য নজর দ্বারা এমন সব জিনিসও প্রভাবিত হয় যার উপর হিংসার ক্ষেত্র নেই যেমন জড় পদার্থ, প্রাণীসমূহ, উদ্ভিদসমূহ এবং চাষাবাদ ও সম্পদ। আর কখনও নিজের নজর নিজেকেই লেগে যায়। কোন ব্যক্তি যখন কোন বস্তুকে আশ্চর্যের সাথে এবং গভীর দৃষ্টিতে দেখে এবং সাথে সাথে তার আত্মা ও অন্তর এক প্রকারের চাঞ্চল্যের অবস্থা সৃষ্টি হয় তখন তা দ্বারা বদ নজর লেগে থাকে।
৪ । হিংসার প্রভাব ভবিষ্যতের কোন ভাল জিনিসের উপরও হয়ে থাকে আর বদ নজরের প্রভাব বর্তমান উপস্থিত বিষয়ের উপর হয়ে থাকে।
৫। কোন ব্যক্তি নিজেকে এবং নিজের সম্পদকে হিংসার দৃষ্টিতে দেখে না, তবে তার নিজের সম্পদসমূহে ও শরীরে নিজের বদনজর লেগে যেতে পারে।
৬। হিংসা নিকৃষ্ট হৃদয়ের মানুষ থেকেই হয়। প্রকারান্তরে বদ নজর নেক ব্যক্তির দ্বারাও হয়ে থাকে। যখন সে কোন বস্তুকে খুব বেশী পছন্দ করে ফেলে অথচ সে সেটার ধ্বংস চায় না। এর উদাহরণ আমের বিন রাবীয়ার ঘটনা যখন সাহাল বিন হুনাইফকে তার নজর লেগে যায় অথচ আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রথম যুগের মুসলমান ও আহলে বদরের অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত নজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য যারা বর্ণনা করেছেন তারা হলেনঃ ইবনে জাওযী, ইবনে কাইয়্যিম, ইবনে হাজার, নববী (রহঃ) ও প্রমুখ। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলের প্রতি দয়া ও রহমত করুন।
মুসলমানদের উচিত যখন কোন কিছু দেখে পছন্দ হয়ে যায়; তখন বরকতের দু’আ করা, সেই বস্তু নিজের হোক অথবা অন্যের কেননা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমেরকে বলেছিলেন, তুমি তার জন্যে (সাহাল বিন হুনাইফের জন্যে) বরকতের দু’আ করনি? কেননা এই দু’আ বদ নজর থেকে সুরক্ষা হয়ে থাকে।
(চ) জ্বীনদেরও বদ নজর আছে :
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জ্বিনের নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং এরপর মানুষের বদ নজর থেকেও পানাহ চাইতেন; সুতরাং যখন সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হল তখন অন্য দু’আ ছেড়ে দিয়ে এই সূরাদ্বয় দিয়ে প্রার্থনা করতেন। (ইমাম তিরমিয়ী চিকিৎসা বিষয়ক অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেনঃ ২০৫৯, ইবনে মাযাহঃ ৩৫১১, আর আলবানী এটাকে সহীহ বলেছেন।)
২। উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ঘরে একটি বালিকা দেখলেন, যার মুখমণ্ডলে জ্বিনের বদনজরের কাল দাগ। তা দেখে তিনি বলেনঃ তাকে ঝাড়-ফুক কর কেননা তাকে জিনের বদনজর লেগেছে।” (বুখারীঃ ২০১০/১৭১ ও মুসলিমঃ ২১৯৭)
উপরোক্ত হাদীসদ্বয় হতে বুঝা যায়, মানুষ হতে যেমন বদনজর লাগে অনুরূপ জ্বিন হতেও লাগে। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সে যখন পোশাক খুলবে, আয়না দেখবে বা সে যে কর্ম করবে তখন যেন দু’আযিকির পড়ে যাতে সে নিজের, মানুষের ও জিনের বদনজর বা অন্য কোন কষ্ট হতে নিরাপদ বা সংরক্ষিত থাকতে পারে।
(ছ) বদ নজর লাগার চিকিৎসা :
সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-এর পুত্র আবূ উমামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আমির ইবনু রবী’আহ্ (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-কে গোসল করতে দেখলেন এবং (তার মসৃণ দেহ দেখে) বলে উঠলেন : আল্লাহর কসম! আজকের মতো আমি কোনদিন দেখিনি এবং পর্দার আড়ালে রক্ষেত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও (সাহল-এর চামড়ার মতো) এরূপ দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর (তার মুখ হতে এ শব্দগুলো বের হওয়ায়) সাহল সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং (এ অবস্থায়) তাঁকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি কাউকেও তার সম্পর্কে অভিযুক্ত করো? লোকেরা বলল : আমরা ’আমির ইবনু রবী’আহ্-এর ওপর সন্দেহ করি।
বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় তার নিন্দা করে বললেনঃ তোমাদের কেউ তার আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দু’আ করলে না কেন? তুমি (তোমার শরীরের কিছু অঙ্গ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ’আমির নিজের মুখমণ্ডলে, উভয় হাত কনুই পর্যন্ত, উভয় পা হাঁটু হতে অঙ্গুলির পার্শ্ব এবং ইযারের ভিতরের অঙ্গ ধুয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে নিলেন, অতঃপর সে পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হলো। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে লোকজনের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্ট ছিল না। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
আর ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক রিওয়ায়াত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে বললেনঃ বদনযর একটি সত্য ব্যাপার। সুতরাং তুমি সাহল-এর জন্য উযূ করো। ’আমির তার জন্য উযূ করলেন। ( শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩২৪৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৭৪৭, নাসায়ী’র কুবরা ৭৬১৯, ত্ববারানী ৫৪৪১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১০৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৫৭২)।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ (بَرَّكْتَ) অর্থাৎ যদি তুমি বলতে بارك الله عليك আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দান করুন। তবে বদনযর তাকে প্রভাব ফেলতে পারত না। এটা মহান আল্লাহর ঐ বাণীর মতো- وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ‘‘যখন তুমি বাগানে প্রবেশ করলে তখন যদি তুমি বলতে মা-শা-আল্লাহ (আল্লাহ যা চান) আল্লাহর শক্তি ছাড়া আর কারও শক্তি নেই…’’- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ৩৯)।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ أَلَا بَرَّكْتَ হলো নির্দিষ্ট তার জন্য অর্থাৎ তুমি যদি তার জন্য বারাকাতের দু‘আ করতে।
(وَدَاخِلَةَ إِزَارِه) (তার লুঙ্গির ভিতরাংশ) শারহুস্ সুন্নাহ্র মধ্যে এসেছে, লুঙ্গির ভিতর ধোয়া নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ গিয়েছেন লজ্জাস্থান ধোয়ার দিকে। আবার কেউ কেউ গিয়েছেন রান ও নিতম্বের দিকে। আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার লুঙ্গির ভিতরাংশ দ্বারা বুঝানো হয়েছে তার লুঙ্গির পাশে শরীরের ডান দিকের অংশকে, যা তিনি ধৌত করেছিলেন। এ রকম ব্যাখ্যা করা হয়েছে কতিপয় হাদীসের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে।
(فتَوَضَّأ لَهٗ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উলামার নিকট বদনযরকারীর উযূর বর্ণনা এরূপ- তার নিকট এক পেয়ালা পানি নিয়ে আসা হবে, তবে পাত্রটি মাটিতে রাখা হবে না। পাত্র থেকে সে এক চুল্লি পানি নিয়ে কুলি করবে, তারপর সেই পানি ঐ পাত্রে ফেলবে। আবার পানি নিয়ে মুখমণ্ডলে ধৌত করবে। অতঃপর বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাত কব্জিসহ ধৌত করবে। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত কব্জিসহ ধৌত করবে। অতঃপর বাম হাতে নিয়ে ডান কনুই ধৌত করবে, অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম কনুই ধৌত করবে আর কনুই ও কব্জির মাঝের জায়গা ধৌত করবে না। তারপর তার ডান পা ধৌত করবে। অতঃপর বাম পা ধৌত করবে। তারপর তার ডান হাঁটু ধৌত করবে, অতঃপর বাম হাঁটু ধৌত করবে পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী। আর এ সকল কাজ করবে পাত্রের মধ্যে। অতঃপর লুঙ্গির ভিতরে ধৌত করবে। যখন এভাবে পরিপূর্ণভাবে কাজ শেষ হবে তখন তার পিছন দিক দিয়ে গিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিতে হবে।
মাযূরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উযূ করার এ আদেশটি ওয়াজিব। তাই বদনযরকারীকে সঠিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট এ উযূ করতে বাধ্য করা হবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কেউ কেউ বলেন, যখন জানা যায় অমুকের বদনযর লাগে তখন তার থেকে দূরে থাকবে। ইমামের উচিত জনতার সমাবেশে যেতে তাকে বাধা দিবে। বাড়ীতে থাকার জন্য তাকে নির্দেশ দিবে। যদি সে লোক দরিদ্র হয় তবে তার জন্য যে পরিমাণ রিজিক প্রয়োজন তা তাকে দিবে। আর মানুষের থেকে তার কষ্টকে বন্ধ করে দিবে। তার ক্ষতি পিঁয়াজ রসুন ভক্ষণকারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা খেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, যেন তাতে মুসলিমদের কষ্ট না হয়। আল্লাহই ভালো জানেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(১) বদ নজরের গোসলের পদ্ধতি :
ইবনে শিহাব যুহরী বলেন, গোসলের পদ্ধতি যা আমরা আমাদের উলামাদের নিকট থেকে শিখেছি তা হলঃ যে ব্যক্তির পক্ষ হতে নজর লেগেছে তার সামনে এক পাত্র পানি দেয়া হবে। এরপর সেই ব্যক্তি পানি নিয়ে পাত্রে কুলি করবে। এরপর পাত্রে নিজের মুখ ধুবে। বাম হাতে ঢেলে ডান হাতের কজি ও ডান হাতে ঢেলে বাম হাতের কজি পর্যন্ত একবার করে ধৌত করবে, তারপর বাম হাত দিয়ে ডান কুনুই এবং ডান হাত দিয়ে বাম কনুইয়ে ঢালবে। এরপর বাম হাতে ডান পায়ে আর ডান হাতে বাম পায়ে ঢালবে। এরপর বাম হাতে ডান পায়ের হাঁটু আর ডান হাতে বাম পায়ের হাঁটুতে ঢালবে। আর সব যেন পাত্রে হয়। এরপর লুঙ্গী বা পায়জামার ভেতরের অংশ পাত্রে ধৌত করবে নিচে রাখবে না । অতঃপর সকল পানি রোগীর মাথায় একবারে ঢালবে। (ইমাম বায়হাকীর সুনানে কুবরাঃ ৯/২৫২)
১। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নজর লাগা সত্য, আর কোন কিছু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে তা বদ নজর হত। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে যখন (এর জন্য) গোসল করতে বলা হয় তখন সে যেন গোসল করে। (ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেনঃ ৫/৩২)
২। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন যে, [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে] নজর যে ব্যক্তি লাগিয়েছে তাকে ওযু করতে বলা হত। আর সেই ওযু করা পানি দিয়ে নজর লাগা ব্যক্তিকে গোসল দেয়া হত।” (আবু দাউদঃ ৩৮৮০ সহীহ সূত্র)
উল্লেখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা নজরকৃত ব্যক্তির জন্য বদ নজরকারীর ওযু ও গোসল সাব্যস্ত হয়।
(২) চিকিৎসার দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
রোগীর মাথায় হাত রেখে নিম্নের দু’আ পড়ুনঃ
بسم الله أرقيك ولله يشفيك من كل داء يؤذيك ومن كل نفس أو عين حاسد الله يشفيك بسم الله أرقيك
অর্থঃ আল্লাহর নামে তোমায় ঝাড়-ফুক করছি। আর আল্লাহই তোমাকে কষ্টদায়ক রোগ থেকে মুক্তি দিবেন। আর সকলের অনিষ্ট ও হিংসুক বদ নজরকারীর অনিষ্ট থেকে তোমাকে আরোগ্য দিবেন। আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ছি। (মুসলিমঃ ২১৮৬)
(৩) চিকিৎসার তৃতীয় পদ্ধতিঃ
রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দু’আ পড়ুনঃ
بسم الله يبريك من كل داء يشفيك ومن شر حاسد اذا حسد ومن شر كل ذى عين
অর্থঃ আল্লাহর নামে ঝাড়ছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করবেন এবং তিনিই প্রত্যেক রোগ থেকে তোমাকে আরোগ্য দিবেন এবং হিংসাকারীর হিংসার অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে এবং সকল বদ নজরের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তোমায় রক্ষা করুক। (মুসলিমঃ ২১৮৬)
(৪) রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দু’আ পড়ুনঃ
اللهم رب الناس أذهب البأس واشف أنت الشافي لا شفاء إلا شفاؤك شفاء لا يغادر سقما
অর্থঃ হে আল্লাহ! মানবজাতির প্রভু তার কষ্ট দূর করে দাও এবং সুস্থ করে দাও। কেবল তুমিই রোগমুক্তির মালিক তোমার চিকিৎসা ব্যতীত আর কোন চিকিৎসা নেই তুমি এমন সুস্থ করে দাও যেন কোন রোগ না থাকে। (বুখারী কিতাবুত ত্বিব)
(৫) চিকিৎসার পঞ্চম পদ্ধতিঃ
বদনজরের রোগীর ব্যথার স্থানে হাত রেখে নিম্নের সূরা গুলো পড়ে ঝাড়বেঃ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাসঃ
(قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ)
(قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلَٰهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ)
পরিশেষে, বদ নজর থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য দোআগুলো পাঠ করতে হবে এবং মানুষের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। মানুষের সামনে আপনার সফলতা তুলে ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা সফল মানুষের হিংসা করে সাধারণ বোকা ও গাধা টাইপের কিছু মূর্খ মানব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অন্যের হিংসার রোষানল থেকে হেফাযত করুন এবং বদ নজরের কুপ্রভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।

























