স্বামীকে কষ্ট দিয়ো না

মুমিন স্বামীর অবাধ্য হওয়া কুফরী। স্বামী তার স্ত্রীর পরিচালক এবং অভিভাবক, সে যে কোনো কাজে তাকে আহবান করে সে আহবানে তাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক, বিশেষ করে তার জৈবিক চাহিদা পূরণের আহবানে তাকে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে। অত্র হাদীস সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। সে যদি চুলায় রুটি তৈরিতেও লিপ্ত থাকে আর সে ছাড়া বিকল্প কোনো লোক না থাকে তবু তা মূলতবী রেখে স্বামীর আহবানে সাড়া দিবে। ইবনুল মালিক বলেন, এ রুটি যদি স্বামীর হয় তবেই এ হুকুম। কারণ স্বামী জানছে যে, সে রুটি তৈরিতে ব্যস্ত, এ সময় ডাকলে তার ক্ষতি হবে, তবু সে যখন ডাকছে, তখন তার ডাকে সাড়া দিতে হবে। কিন্তু কোন মহিলা তার স্বামীর সাথে খারাপ আচরণ করে অথবা স্বামীকে অসন্তুষ্ট রাখে। সেই মহিলা যতই তাহাজ্জুদ গুজারী, নফল ছিয়াম পালনকারী ও দ্বীনদারী হৌক না কেন, তার ছালাত কবুল হবে না। আবূ উমামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির ছালাত তাদের কান ডিঙ্গায় না (অর্থাৎ কবুল হয় না)।

(১) পলায়নকারী দাস, যতক্ষণ না সে তার মালিকের নিকটে ফিরে আসে। 

(২) সেই মহিলা, যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত কাটায়।

(৩) এবং সেই ইমাম, যাকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না’ (তিরমিযী হা/৩৬০, মিশকাত হা/১১২২)।

অন্য হাদীসে এসেছে, কোনো স্বামী নিজ প্রয়োজনে স্বীয় স্ত্রীকে ডাকলে, সে যেন তৎক্ষণাৎ তার ডাকে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলার পাশে (গৃহকর্মীর কাজে) ব্যস্ত থাকে(তিরমিযী হা/১১৬০, সহীহ আল জামি‘ হা/৫৩৪, মিশকাত হা/৩২৫৭)।

বাযযার কিতাবে যায়দ ইবনু আরকাম-এর সূত্রে হাদীসটি এভাবে এসেছে : কোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানায় আহবান করে সে যেন (সাথে সাথে) তার ডাকে সাড়া দেয়, যদি সে জাঁতার খিলের উপরও বসা থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৬০)

মু’মিন নেককার জান্নাতী বান্দাকে যদি তার দুনিয়ার স্ত্রী কষ্ট দেয় তখন তার জন্য নিযুক্ত জান্নাতের ঐ হূরী‘ঈন স্ত্রী তা জানতে পারে। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

لاَ تُؤْذِى امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِى الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لاَ تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللَّهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا.

‘পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই (জান্নাতের) বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার (ভাবী) স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না। তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন’ (তিরমিযী হা/১১৭৪; মিশকাত হা/৩২৫৮; আহমাদ হা/২২১৫৪; ছহীহুল জামি‘ হা/৭১৯২)।

মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ‘‘হূরি‘ঈন’’ বা আয়তনয়না হূর দিবেন। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আমি জান্নাতীদেরকে হূরি‘ঈনদের সাথে জোড়া মিলিয়ে দিবো’’- (সূরা আদ্ দুখান ৪৪ : ৫৪)। অর্থাৎ বিয়ে দিয়ে দিবো। হূরি‘ঈন হলো অতীব উজ্জ্বল সাদা কালো মিশ্রিত, প্রশস্ত ও আনতচক্ষু বিশিষ্ট বা (ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট) অত্যন্ত সুশ্রী, অন্যন্য সুন্দরী জান্নাতের নারী।

মু’মিন নেককার জান্নাতী বান্দাকে যদি তার দুনিয়ার স্ত্রী কষ্ট দেয় তখন তার জন্য নিযুক্ত জান্নাতের ঐ হূরী‘ঈন স্ত্রী তা জানতে পারে। হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। এখানে (قَاتَلَكِ اللّٰهُ)-এর ব্যাখ্যা হলো : «لَعَنَكِ عَنْ رَحْمَتِه وَأَبْعَدَكِ عَنْ جَنَّتِه» আল্লাহ তোমাকে তাঁর রহমাত থেকে বঞ্চিত করুন। এবং তাঁর জান্নাত থেকে দূরে রাখুন। সে তো সামান্য কয়দিনের মেহমানস্বরূপ তোমার নিকট গিয়েছে মাত্র, এরপর আমাদের নিকট ফিরে আসবে। তুমি তো তার প্রকৃত সঙ্গী নও, আমরাই তার প্রকৃত সঙ্গী, সুতরাং তোমরা তাকে কষ্ট দিও না।

অত্র হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে যেখানে স্বামীর অবাধ্যচারীদের প্রতি মালায়িকার (ফেরেশতাদের) লা‘নাতের কথা বলা হয়েছে। এ জাতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, ‘‘মালা-য়ি আ‘লা-’’ বা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু মালাক (ফেরেশতা) দুনিয়াবাসীর কাজকর্মের খবর রাখেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৭৪)

জাহান্নামী ব্যক্তিরা দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জগতে সবচেয়ে বেশী লাঞ্চিত হবে। যদিও তারা দুনিয়াতে নিজেদেরকে মহা সম্মানিত মনে করে। তবে আফসোসের বিষয় হ’ল জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হবে নারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,غَيْرَ أَنَّ أَصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ ، وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ ‘জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাতে যারা প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই নারী’(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ ‘জাহান্নামে উঁকি মেরে দেখলাম যে, এর অধিকাংশই হ’ল নারী’(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৪)।

স্বামীর অবাধ্যতা ও ভাল ব্যবহার অস্বীকার করা হ’ল কুফরী। বিবাহের পর স্বামীই তার স্ত্রীর মূল অভিভাবক। অতএব স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করা জায়েয হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূললুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে দীর্ঘ রুকুু, ক্বিয়াম ও সিজদাসহ সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করি এবং ছালাত শেষে লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হ’তে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। জওয়াবে তিনি বলেন,إِنِّى رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُودًا، وَلَوْ أَصَبْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا، وَأُرِيتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ. ‘আমি জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়াতে থাকা পর্যন্ত অবশ্যই তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। সেখানে দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী’। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে অধিকাংশ নারী? তিনি বলেন, بِكُفْرِهِنَّ. ‘তাদের কুফরীর কারণে’। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি বলেন, يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ، لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ، ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ. ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয়ে থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারু প্রতি সারা জীবন সদাচারণ করো, অতঃপর সে তোমা হ’তে সামান্য ত্রুটি পায়, তাহ’লে বলে ফেলে, তোমার কাছে থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না’(বুখারী হা/১০৫২; মুসলিম হা/৯০৭; মিশকাত হা/১৪৮২; নাসাঈ হা/১৪৯৩; আহমাদ হা/১৭১১, ৩৩৭৪; ইবনে হিবক্ষান হা/১৩৭৭)।

আর স্বামীর সাথে কুফরী করা স্ত্রীরা জাহান্নামী হবে। অন্যত্র এসেছে, রাসূল (ছাঃ) জনৈকা মহিলাকে বলেন,فَانْظُرِى أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ. ‘লক্ষ্য রেখো, তোমার স্বামীই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’(আহমাদ হা/১৯০২৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২)। স্বামীর নিকটে অকারণে তালাক্ব কামনাকারিনী স্ত্রী জান্নাতে যাবে না। হযরত ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ اخْتَلَعَتْ مِنْ زَوْجِهَا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ لَمْ تَرِحْ رَائِحَةَ الجَنَّةِ ‘যে মহিলা তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক্ব কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না’(তিরমিযী হা/১১৮৬; ছহীহ হাদীছ)।

স্বামী হলো রতন,

অবহেলা না করে করিও যতন।

স্ত্রী হলো পুষ্প কাননের কোমল ফুল,

মহারাণী করে রাখিও তারে করো না কভু ভুল।

সন্তান হলো সংসারের সেতু বন্ধন,

বুকে টেনে সদা তারে করিও আপন।

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে,

স্বামীকে সম্মান করিও সদা স্বজ্ঞানে।

স্বামী হলো জান্নাত বা জাহান্নামের দ্বার,

কুফরী করিও না কভু অনুরোধ আমার।

সংসার হোক সুখের নীড় সদা দিনে রাতে,

পণ করো দৃঢ়ভাবে একত্রে রবে জান্নাতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top