ইয়াজূজ মাজূজ সম্প্রদায় আদম (আঃ)-এর বংশধর। তারা ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে ঈসা (আঃ)-এর সময় পৃথিবীতে উত্থিত হবে। শাসক যুলক্বারনাইন তাদেরকে এখন প্রাচীর দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন (কাহফ ১৮/৯৪-৯৮)। ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে তারা সেদিন বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না। এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে, দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব। তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন। একদা ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে তারা সবাই মারা যাবে ও পচে দুর্গন্ধ হবে। আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে
ইয়াজুজ-মাজুজ মানব সন্তান :
ইয়াজুজ-মাজুজ মানব সম্প্রদায়ভুক্ত। মানুষের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য এদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَهَلۡ نَجۡعَلُ لَكَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَهُمۡ سَدًّا তারা বলল, ‘হে যুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়া’জূজ ও মা’জূজ যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাই আমরা কি আপনাকে এ জন্য কিছু খরচ দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটা প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন’? তারা বলল, ‘হে যুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়া’জূজ ও মা’জূজ যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাই আমরা কি আপনাকে এ জন্য কিছু খরচ দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটা প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন’? (আল-কাহফ ১৮/৯৪)।
দুনিয়ার মানবের মত তারাও নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর সন্তান-সন্ততি। নুহের মহাপ্লাবনের পর দুনিয়াতে যত মানুষ আছে এবং থাকবে, তারা সবাই নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর সন্তান-সন্ততি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِينَ ‘আর তার বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম (আস-সাফফাত ৩৭/)। ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, তারা ইয়াফেসের বংশধর’(মুসনাদে আহমাদঃ ৫/১১) এ কারণেই তাকে ابو البشر الثانى বা ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয় (নবীদের কাহিনী ১/৫৩ পৃ:)। আর তিনিই ছিলেন পৃথিবীর প্রথম রাসূল (মুত্তাফাক্ব আলাইহ্, মিশকাত হা/৫৫৭২)। পৃথিবীর সমস্ত মানব জাতি একই ভূখন্ডে বসবাস করত এবং পরবর্তী কালে তাদের চাহিদামত পৃথিবীর বিভিন্ন চারণভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে (সীরাতে সারওয়ারে আলম ২/৬ পৃঃ)। ইয়াফেসের বংশ থেকে (বুলগারিয়ার) স্বাক্বালিবা, (তুর্কিস্তানের) তুর্কী, খাযার এবং ইয়া’জুজ-মা’জুজ ইত্যাদি জাতির জন্ম হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
প্রতিরোধ প্রাচীর নির্মাণ :
যুলকারনাইন যখন পূর্ব দিকে গেলেন সেখানে একটি জাতিকে পেলেন তারা অভিযোগ করল যেন তাদেরকে ইয়াজুজ-মাজুজের যুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। ইবন আব্বাস, মুজাহিদ ও কাতাদা বলেন, এটি যেন ইটের মত ব্যবহার করা হয়েছিল। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ গিরিপথ বন্ধ করার জন্য নির্মিতব্য প্রাচীর ইট-পাথরের পরিবর্তে লোহার পাত ব্যবহার করা হয়েছিল। গলিত সীসা বা লোহা বা তামা। অর্থাৎ লোহার পাতকে খুব গরম করে ওর উপর গলিত সীসা বা লোহা বা তামা ঢেলে দেওয়ায় সেই পাহাড়ী রাস্তার মাঝের প্রাচীর এত মজবুত হয়ে গেল যে, য়্যা’জূজ-মা’জূজের পক্ষে তা ভেঙ্গে অন্যান্য মানুষের বসতিতে আসা অসম্ভব হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সে বলল, ‘আমার রব আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, সেটাই উত্তম। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব’। ‘তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও’। অবশেষে যখন সে দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী জায়গা সমান করে দিল, তখন সে বলল, ‘তোমরা ফুঁক দিতে থাক’। অতঃপর যখন সে তা আগুনে পরিণত করল, তখন বলল, ‘তোমরা আমাকে কিছু তামা দাও, আমি তা এর উপর ঢেলে দেই’। এরপর তারা (ইয়া’জূজ ও মা’জূজ) প্রাচীরের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারল না এবং নিচ দিয়েও তা ভেদ করতে পারল না। সে বলল, ‘এটা আমার রবের অনুগ্রহ। অতঃপর যখন আমার রবের ওয়াদাকৃত সময় আসবে তখন তিনি তা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন। আর আমার রবের ওয়াদা সত্য’। (আল-কাহফ ১৮/৯৫-৯৮)।
এই প্রাচীর যদিও অত্যন্ত মজবুত করে বানানো হয়েছে; যার উপর চড়ে কিংবা যাতে ছিদ্র করে এদিকে আসা তাদের সম্ভবপর নয়, তবুও আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি যখন এসে যাবে, তখন তিনি সেটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে মাটি বরাবর করে ফেলবেন। ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে অর্থাৎ কিয়ামতের নিকটবর্তী য়্যা’জূজ-মা’জূজের বের হবার সময় এসে পড়বে; যেমন এ কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। একটি হাদীসে এসেছে, নবী (সাঃ) ঐ প্রাচীরের সামান্য ছিদ্রকে ফিতনার নিকটবর্তী সময় বলে উল্লেখ করেছেন। (বুখারী ৩৩৪৬, মুসলিম ২২০৮
প্রতিরোধ প্রাচীর খনন করে বের হওয়া:
আল্লামা ইবনে কাসীর বলেন, ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর খনন করার কাজটি তখন শুরু হবে, যখন তাদের আবির্ভাবের সময় নিকটবর্তী হবে। কুরআনে বলা হয়েছে যে, এই প্রাচীর ছিদ্র করা যাবে না। এটা তখনকার অবস্থা, যখন যুলকারনাইন প্রাচীরটি নির্মান করেছিলেন। কাজেই এতে কোন বৈপরীত্য নেই। তাছাড়া কুরআনে তারা ছিদ্র পুরোপুরি করতে পারছে না বলা হয়েছে, যা হাদীসের ভাষ্যের বিপরীত নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ঘুম থেকে এমন অবস্থায় জেগে উঠলেন যে, তার মুখমণ্ডল ছিল রক্তিমাভ এবং মুখে এই বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিলঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আরবদের ধ্বংস নিকটবর্তী! আজি ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীরে এতটুকু ছিদ্র হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী মিলিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখান। যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ আমি এ কথা শুনে বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ লোক জীবিত থাকতেও কি ধ্বংস হয়ে যাবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, ধ্বংস হতে পারে; যদি অনাচারের আধিক্য হয় ৷ [বুখারীঃ ৩৩৪৬, মুসলিমঃ ২৮৮০]।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ ইয়াজুজ-মাজুজ প্রত্যেহ যুলকারনাইনের দেয়ালটি খুঁড়তে থাকে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা এ লৌহ-প্রাচীরের প্রান্ত সীমার এত কাছাকাছি পৌছে যায় যে, অপরপাশ্বের আলো দেখা যেতে থাকে। কিন্তু তারা একথা বলে ফিরে যায় যে, বাকী অংশটুকু আগামী কাল খুঁড়ব। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা প্রাচীরটিকে পূর্ববৎ মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে নেন। পরের দিন ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর খননে নতুনভাবে আত্মনিয়োগ করে। খননকার্যে আত্মনিয়োগ ও আল্লাহ্ তা’আলা থেকে মেরামতের এ ধারা ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যতদিন ইয়াজুজ-মাজুজকে বন্ধ রাখা আল্লাহর ইচ্ছা রয়েছে। যেদিন আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে মুক্ত করার ইচ্ছা করবেন, সেদিন ওরা মেহনত শেষে বলবেঃ আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা আগামী কাল অবশিষ্ট অংশটুকু খুঁড়ে ওপারে চলে যাব। (আল্লাহর নাম ও তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভর করার কারণে সেদিন ওদের তাওফীক হয়ে যাবে।) পরের দিন তারা প্রাচীরের অবশিষ্ট অংশকে তেমনি অবস্থায় পাবে এবং তারা সেটুকু খুঁড়েই প্রাচীর ভেদ করে ফেলবে। [তিরমিযিঃ ৩১৫৩, ইবনে মাজাহঃ ৪১৯৯, হাকিম মুস্তাদরাকঃ ৪/৪৮৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫১০, ৫১১]।
আব্দুর রহমান ইবনে ইয়ায়ীদের বর্ণনায় ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনীর আরো অধিক বিবরণ পাওয়া যায়। তাতে রয়েছেঃ তবরিয়া উপসাগর অতিক্রম করার পর ইয়াজুজ-মাজুজ বায়তুল মোকাদ্দাস সংলগ্ন পাহাড় জাবালুল-খমরে আরোহণ করে ঘোষণা করবেঃ আমরা পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীকে হত্যা করেছি। এখন আকাশের অধিবাসীদেরকে খতম করার পালা। সেমতে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহর আদেশে সে তীর রক্তরঞ্জিত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবে। (যাতে বোকারা এই ভেবে আনন্দিত হবে যে, আকাশের অধিবাসীরাও শেষ হয়ে গেছে।) [মুসলিমঃ ২৯৩৭]।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন যে, ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাবের পরও বায়তুল্লাহর হজ্ব ও উমরাহ অব্যাহত থাকবে। [বুখারীঃ ১৪৯০]।
দাজ্জালের আগমন, ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ ও ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার ও শেষ পরিণতি :
দাজ্জাল দুনিয়াতে আবির্ভাবের পরে চল্লিশ দিন বেঁচে থাকবেন। চল্লিশ দিনের একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর অবশিষ্ট দিনগুলো হবে তোমাদের বর্তমান দিনের মত। ‘ঈসা আলায়হিস সালাম বায়তুল মাক্বদিস মাসজিদে অবতরণ করবেন। বায়তুল মাক্বদিস দামিস্ক শহরের অন্তর্গত, অতএব এটাই সঠিক মত। অতঃপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম বাবে লুদ্দ নামক স্থানে দাজ্জালকে ধরে হত্যা করে ফেলবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, আওনুল মা’বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৪৩১৩)।
নাওয়াস ইবনু সাম’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের আলোচনাকালে বললেন, যদি তার আগমন ঘটে আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকি, তখন তোমাদের মধ্যে আমিই তার সাথে দলীল-প্রমাণে বিজয়ী হব। আর আমি যদি বিদ্যমান না থাকি এবং তার আগমন ঘটে, তখন তোমাদের প্রত্যেক লোকই সরাসরি দলীল-প্রমাণে তার মোকাবিলা করবে। তখন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলাই হবেন সাহায্যকারী। সে হবে, একজন জোয়ান, মাথার চুল কোঁকড়ানো, ফোলা চক্ষুবিশিষ্ট। আমি তাকে (ইয়াহূদী) আবদুল উযযা ইবনু কত্বান-এর সাথে তুলনা করতে পারি। অতএব যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সামনে সূরাহ্ আল কাহফ-এর শুরুর আয়াতগুলো পাঠ করে।
অপর এক বর্ণনা আছে যে, সে যেন তার সামনে সূরা কাহফ-এর প্রথমাংশ হতে পাঠ করে। কেননা এ আয়াতগুলো তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিতনাহ্ হতে নিরাপদে রাখবে। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে বের হবে এবং চলার পথে ডানে ও বামে (’র অঞ্চলসমূহ) ক্ষতিকর ফাসাদ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা (ঈমান ও আক্বীদায়) দীনের উপর দৃঢ় থাকবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে কতদিন জমিনে অবস্থান করবে? তিনি (সা.) বললেন, চল্লিশ দিন। তবে তখনকার একদিন হবে এক বছরের সমান এবং একদিন হবে এক মাসের সমান আর একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান। আর অন্যান্য দিনগুলো হবে তোমাদের স্বাভাবিক দিনগুলোর মতো। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আচ্ছা বলুন তো, সেই একদিন, যা এক বছরের সমান হবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জমিনে তার চলার গতি কি পরিমাণ দ্রুত হবে? তিনি (সা.) বললেন, সে মেঘের মতো, যার পিছনে প্রবল বাতাস রয়েছে। অতঃপর সে কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে (তার অনুসরণে) আহ্বান করবে। অতএব লোকেরা তার প্রতি ঈমান আনবে। তখন সে আকাশকে নির্দেশ করবে, ফলে জমিন (ঘাস ফসলাদি) উৎপাদন করবে। লোকেদের গবাদিপশু সন্ধ্যায় যখন ফিরবে, তখন উচ্চ কুঁজবিশিষ্ট এবং দুধে ওলান ভর্তি (অবস্থায়) কোমর টেনে ফিরবে। অতঃপর সে (দাজ্জাল) অপরদিকে আহ্বান করবে, কিন্তু তারা তার দাবি অস্বীকার করবে। তখন সে তাদের নিকট থেকে ফিরে আসবে। অতএব সে কওমের লোকেরা মহাদুর্ভিক্ষে নিপতিত হবে। ফলে তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। অতঃপর সে (দাজ্জাল) একটি অনাবাদ পতিত জায়গা অতিক্রম করবে এবং তাকে লক্ষ্য করে বলবে, তোমার ভিতরে যে সমস্ত রয়েছে তা বের করে দাও। অতঃপর উক্ত ধন-সম্পদ এমনিভাবে তাদের পেছনে ছুটতে থাকবে, যেমনিভাবে মৌমাছির দল তাদের সরদার মৌমাছির পিছনে ছুটে চলে।
অতঃপর দাজ্জাল যৌবনে পূর্ণাঙ্গ এক যুবককে তার প্রতি আহ্বান করবে, (কিন্তু তার প্রতি অস্বীকারের দরুন) দাজ্জাল তাকে তরবারির আঘাতে দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলবে এবং উভয় খণ্ডকে এত দূরে দূরে নিক্ষেপ করবে যে, একটি নিক্ষিপ্ত তীরের দূরত্ব পরিমাণ তাদের মধ্যে ব্যবধান হবে। অতঃপর সে উভয় খণ্ডকে নিজের কাছে ডাকবে, ফলে ঐ যুবক জীবিত হয়ে তার সামনে উপস্থিত হবে, তখন তার মুখমণ্ডল হাস্যোজ্জল হয়ে উঠবে। যখন সে এ সকল কাণ্ডে লিপ্ত, ঠিক এমনি সময়ে আল্লাহ তা’আলা হঠাৎ ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে (আকাশ হতে) পাঠাবেন এবং তিনি দামিশকের পূর্ব প্রান্তের শ্বেত মিনারা হতে হলুদ রঙের দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় দুজন মালাকের (ফেরেশতার) পাখায় হাত রেখে অবতরণ করবেন।
তিনি যখন মাথা নিচু করবেন তখন ফোটা ফোটা ঘর্ম ঝরবে, আর যখন মাথা উঁচু করবেন তখন তা স্বচ্ছ মুক্তার মতো ঝরতে থাকবে। যে কোন কাফির তার শ্বাস-বায়ু তাঁর দৃষ্টির প্রান্তসীমা পর্যন্ত পৌছে যাবে। এ অবস্থায় তিনি দাজ্জালকে অনুসন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তিনি তাকে (বায়তুল মাক্বদিসের) ’লুদ্দ’ নামক দরজার কাছে পেয়ে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর এমন একটি সম্প্রদায় ’ঈসা (আঃ)-এর কাছে আসবে যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের ফিতনাহ হতে নিরাপদে রেখেছিলেন। তখন তিনি তাদের মুখমণ্ডলে হাত ফিরাবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য কি পরিমাণ সুউচ্চ মর্যাদা রয়েছে সে সুসংবাদও প্রদান করবেন। এদিকে তিনি এ সমস্ত কাজে লিপ্ত থাকতেই আল্লাহ তা’আলা ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট এ সংবাদ পাঠাবেন যে, আমি আমার এমন কিছু সংখ্যক বান্দা সৃষ্টি করে রেখেছি, যাদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা কারো নেই। অতএব তুমি আমার বান্দাদেরকে ’তুর’ পর্বতে নিয়ে সংরক্ষণ (একত্রিত) কর। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুজ ও মাজুজকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু জায়গা থেকে নিচে জমিনে নেমে দ্রুত বিচরণ করতে থাকবে এবং তাদের প্রথম দল ’ত্ববারিয়্যাহ’ নদী (সিরিয়ার একটি নদী) অতিক্রম করবে এবং তারা এটার সবটুকু পানি পান করে ফেলবে। ফলে তাদের সর্বশেষ দল সে স্থান অতিক্রম করার সময় বলবে, হয়তো কোন সময় এখানে পানি ছিল। অতঃপর তার সামনে অগ্রসর হয়ে ’খমার’ নামক পাহাড় পর্যন্ত পৌছবে। এটা বায়তুল মাক্বদিসের নিকটে অবস্থিত পাহাড়। এখানে পৌঁছে তারা বলবে, জামিনে যারা বসবাস করত, ইতোমধ্যে আমরা নিশ্চিত সকলকে হত্যা করে ফেলেছি! এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে।
আর আল্লাহ তা’আলা তাদের তীরগুলোকে রুক্তমাখা অবস্থায় তাদের দিকে ফিরিয়ে দেবেন। এ সময়। আল্লাহর নবী (ঈসা আলায়হিস সালাম) ও তার সঙ্গীগণকে তূর পর্বতে মারাত্মক দুরাবস্থায় অবরোধ করা হবে। অর্থাৎ তারা ভীষণ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হবেন। এমনকি তাদের কারো জন্য একটি গরুর মাথা এ যুগের একশত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) অপেক্ষা বেশি মূল্যবান হবে। এই চরম অবস্থায় আল্লাহ নবী ’ঈসা আলায়হিস্ সালাম এবং তার সঙ্গীগণ আল্লাহর দিকে রুজু হবেন (এবং ইয়াজুজ ও মাজুজ-এর ধ্বংসের জন্য দু’আ করবেন) অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘাড়ের উপর বিষাক্ত কীটের ’আযাব অবতীর্ণ করবেন। (এটা উট, বকরির নাকের মধ্যে জন্মে) ফলে তারা মুহূর্তের মধ্যে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ’ঈসা (আঃ) ও তার সঙ্গীগণ পর্বত থেকে নিচে জমিনে অবতরণ করবেন। কিন্তু ইয়াজুজ ও মাজুজ-এর মরদেহের চর্বি ও দুর্গন্ধ হতে মুক্ত, এমন একবিঘত জমিনও খালি পাবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলার কাছে ফরিয়াদ করবেন
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বখতী উটের ঘাড়ের মতো লম্বা লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট পাখির ঝাঁক পাঠাবেন। পাখির দল তাদের মরদেহসমূহকে তুলে নেবে এবং যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করবে। অবশ্য অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, তাদেরকে ’নহবল’ নামক স্থানে নিয়ে ফেলে দিবে এবং মুসলিমগণ তাদের ধনুক, তীর এবং তীর রাখার কোষসমূহ সাত বছর পর্যন্ত লাকড়িস্বরূপ জ্বালাতে থাকবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ব্যাপক বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। যার কারণে জনবসতির কোন একটি অংশ, চাই তা মাটির ঘর হোক কিংবা পশমের হোক বাদ থাকবে না, ধৌত করে পরিষ্কার করে দিবে। অবশেষে তা আয়নার মতো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তারপর জমিনকে বলা হবে, তোমার ফল-ফলাদি বের করে দাও এবং তোমার কল্যাণ ও বরকত ফিরিয়ে আনো। ফলে সে সময় এক দল লোক একটি ডালিম পরিতৃপ্ত হয়ে খাবে এবং তার খোসা দ্বারা লোকেরা ছায়া লাভ করবে। আর দুগ্ধের মধ্যে বরকত দান করা হবে। এমনকি একটি উষ্ট্রীর দুধ একদল লোকের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি গাভীর দুধ এক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি বকরির দুধ একটি পরিবারের লোকের জন্য যথেষ্ট হবে। ঠিক এমনি সময়ে হঠাৎ একদিন আল্লাহ তা’আলা একটি সিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত করবেন। তা তাদের বগল স্পর্শ করবে এবং উক্ত বায়ু প্রতিটি মু’মিন মুসলিমের আত্মা কবয করবে, অতঃপর কেবলমাত্র পাপী ও মন্দ লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে, আর তারা গাধার মতো পরস্পর দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদের ওপরেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসলিম হা/২৯৩৭, তিরমিযী হা/২২৪০, আবূ দাউদ হা/৪৩২১, ইবনু মাজাহ হা/৪০৭৫, মিশকাত হা/৫৪৭৫)