হে যুবক, যৌবনকে হক্বে পথে পরিচালিত করুন!

মানুষের জীবনকে চারটি স্তরে বিভক্ত করা যায়। শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য। তন্মধ্যে যৌবন হলো পূর্ণ মানব জীবনের মধ্যকাল এবং শ্রেষ্ঠ সময়। এটা যৌবনকাল মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানব জীবনের চারটি কালের মধ্যে যৌবনকাল অন্যতম। মানুষের জীবনের সকল কল্যাণের সময়, আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবার সময়, নিজেকে পুণ্যের আসনে সমাসীন করার সময় এ যৌবনকাল। এসময় নিজের ইজ্জতকে হেফাযত করা অতিব জরুরী। কারণ এসময় মানুষ আবেগে পড়ে নানা প্রকার পাপে জড়িয়ে পড়ে। অথচ এ গরুত্বপূর্ণ সময় নিজেকে হেফাযত করা।

আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক তরুণ যুবক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে যেনা করার অনুমতি দিন। একথা শুনে উপস্থিত লোকজন তার নিকটে এসে তাকে ধমক দিয়ে বলল, থাম! থাম! রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খুব নিকটে এসে বসল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা (অন্যের সাথে যেনা করা) পসন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! মানুষেরা এটা তাদের মায়েদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তোমার কন্যার জন্য কি তা পসন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষ এটা তাদের মেয়েদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন ব্যক্তিই এটা তাদের বোনদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমার ফুফুর জন্য কি এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন পুরুষ এটা তাদের ফুফুদের জন্য পসন্দ করবে না।

তিনি বললেন, তবে তোমার খালার জন্য কি এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষ এটা তাদের খালাদের জন্য পসন্দ করবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি তার ওপর হাত রেখে দো‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দাও, তার হৃদয় পবিত্র করে দাও এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাযত করো’। এরপর ঐ যুবক আর কারো (কোন মহিলার) প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি (মুসনাদে আহমাদ হা/২২২৬৫; সিলসিলা ছহীহা হা/৩৭০)

যুবকদেরকে আল্লাহ আরশের ছায়া দান করবেন :

সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী হ’ল ঐ যুবক যে, তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। যৌবনের সকল কামনা-বাসনা, সুখ-শান্তির ঊর্ধ্বে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাকেই সে কেবলমাত্র কর্তব্য মনে করত। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

: سَبْعَةٌ يُّظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ الله عز وجل، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ حُسْنٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ : إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ-

 ‘সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তাঁর ছায়া দিবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে, (৩) সে ব্যক্তি, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, (৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়, (৫) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং (৬) ঐ ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না, তার ডান হাত কি দান করে। (৭) এমন ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে’। (বুখারী, হা/১৪২৩, ৬৩০৮; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০১)

পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে এসম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার বলেন, তাদের এ ভালোবাসা দীনের জন্যই অটুট থাকে, দুনিয়ার কোন কারণে বিচ্ছিন্ন করে না। শুধুমাত্র মৃত্যুই বিচ্ছিন্ন করে। আল্লাহকে ভয় করা সম্পর্কে ‘ইয়ায (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে বংশীয় মর্যাদাওয়ালী ও সুন্দরী রমণীকে নির্দিষ্ট করেছেন। তার প্রতি অত্যধিক আগ্রহ ও তাকে পাওয়াটা কঠিন হওয়ার কারণে। আর সে এমন মহিলা যার মধ্যে বংশীয় মর্যাদা ও সুন্দর উভয়টির সমাবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে নিজের দিকে নিজেই আহবানকারিণী। এ রকম মহিলা তার ইচ্ছা বা আকাঙক্ষায় পৌঁছার ক্ষেত্রে কষ্ট থেকে বিমুখ আর এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটা একমাত্র আল্লাহর ভয়ের জন্য হয়ে থাকে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের স্তর এবং মহান আনুগত্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার নিজস্ব ছায়ায় আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে এ ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করেছেন।

বিচার দিবসে অবশ্যই পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে :

ক্বিয়ামতের দিন এই যৌবনকাল সম্পর্কে মানুষকে জওয়াবদিহি করতে হবে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,  لاَ تَزُوْلُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمُرِهِ فِيْمَ أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَ أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيْمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيْمَا عَلِمَ-  ‘ক্বিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পা তার প্রভুর সম্মুখ থেকে একটুকুও নড়াতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। (১) সে তার জীবনকাল কি কাজে শেষ করেছে, (২) তার যৌবনকাল কোন কাজে নিয়োজিত রেখেছিল, (৩) তার সম্পদ কোন উৎস থেকে উপার্জন করেছে, (৪) কোন কাজে তা ব্যয় করেছে এবং (৫) যে জ্ঞান সে অর্জন করেছে, তার উপর কতটা আমল করেছে’।(তিরমিযী হা/২৪১৬, মিশকাত হা/৫১৯৭)

‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যৌবন সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন হলো – যৌবনের শক্তি এবং সামর্থ্যের সময়ের শক্তিমান ‘ইবাদাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা। হতে পারে প্রবৃত্তির অদম্য ইচ্ছার বাস্তবায়ন সম্পর্কে প্রশ্ন। সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে এজন্য যে, এটা কি সে হালাল পথে উপার্জন করেছে না হারাম পথে, আর কোন পথেই বা তা ব্যয় করেছে? অর্থাৎ এ অর্থ কি সে আল্লাহর ইবাদাত বা পুণ্যময় কাজে ব্যয় করেছে না তার নাফরমানী কাজে ব্যয় করেছে?  পঞ্চম প্রশ্ন হলো – সে তার ইলম অনুপাতে ‘আমল করেছে কিনা? 

‘আল্লামাহ্ মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে অন্য চারটি প্রশ্নের বাক্যরীতি পরিবর্তন করে। ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, এর দ্বারা সম্ভবত উদ্দেশিত বিষয়টি স্পষ্ট করা। 

‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাক্যরীতির এই পরিবর্তন বিষয়টির গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে হয়েছে। কেননা ‘ইলম হলো সকল ‘আমলের প্রাক-প্রতিষ্ঠান কারণ কোন ‘আমালই ‘ইলম নামক ফাউন্ডেশন ছাড়া দাঁড়াতে পারে না। অবশ্য আমলহীন ইলমও মূল্যহীন। 

সম্ভবত এখানে সাধারণ ‘ইলমের কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় আল্লাহর জাত ও সিফাত সম্পর্কে জানা হলো ঈমানের মৌলতত্ত্বের ‘ইলম যা দীনের মূলভিত্তি। অতএব তা জানা সকলের জন্য ফরযে আইন। (মিক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪১৬, সহীহ আল জামি হা. ৭২৯৯) 

আছহাবে উখদূদ-এর যুবকের ঘটনা :

দ্বীনে হক্বের জন্য কুরআনে বর্ণিত আছহাবে উখদূদের ঐতিহাসিক ঘটনায় বনী ইসরাঈলের এক যুবক নিজের জীবন দিয়ে জাতিকে হক্বের রাস্তা প্রদর্শন করে গেলেন। ছোহায়েব রূমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  ‘প্রাক-ইসলামী যুগের জনৈক বাদশাহর একজন জাদুকর ছিল। জাদুকর বৃদ্ধ হয়ে গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য একজন বালককে তার নিকটে জাদুবিদ্যা শেখার জন্য নিযুক্ত করা হয়। বালকটির নাম আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছামের। তার যাতায়াতের পথে একটি গীর্জায় একজন পাদ্রী ছিল। বালকটি দৈনিক তার কাছে বসত। পাদ্রীর বক্তব্য শুনে সে মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু তা চেপে রাখে। একদিন দেখা গেল যে, বড় একটি হিংস্র জন্তু (সিংহ) রাস্তা আটকে দিয়েছে। লোক ভয়ে সামনে যেতে পারছে না। বালকটি মনে মনে বলল, আজ আমি দেখব, পাদ্রীর দাওয়াত সত্য, না জাদুকরের দাওয়াত সত্য। সে একটি পাথরের টুকরা হাতে নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর দাওয়াত তোমার নিকটে জাদুকরের বক্তব্যের চাইতে অধিক পসন্দনীয় হয়, তাহ’লে এই জন্তুটাকে মেরে ফেল, যাতে লোকেরা যাতায়াত করতে পারে’। অতঃপর সে পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং জন্তুটি সাথে সাথে মারা পড়ল। এখবর পাদ্রীর কানে পৌঁছে গেল। তিনি বালকটিকে ডেকে বললেন, ‘হে বৎস! তুমি আমার চাইতে উত্তম। তুমি অবশ্যই সত্বর পরীক্ষায় পড়বে। যদি পড়ো, তবে আমার কথা বলো না’। বালকটির কারামত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার মাধ্যমে অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেত। কুষ্ঠরোগী সুস্থ হ’ত এবং অন্যান্য বহু রোগী ভাল হয়ে যেত।

ঘটনাক্রমে বাদশাহর এক সভাসদ ঐ সময় অন্ধ হয়ে যান। তিনি বহুমূল্য উপঢৌকনাদি নিয়ে বালকটির নিকটে আগমন করেন। বালকটি তাকে বলে, ‘আমি কাউকে রোগমুক্ত করি না। এটা কেবল আল্লাহ করেন। এক্ষণে যদি আপনি আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাহ’লে আমি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করব। অতঃপর তিনিই আপনাকে সুস্থ করবেন’। মন্ত্রী ঈমান আনলেন, বালক দো‘আ করল। অতঃপর তিনি চোখের দৃষ্টি ফিরে পেলেন। পরে রাজদরবারে গেলে বাদশাহর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমার পালনকর্তা আমাকে সুস্থ করেছেন। বাদশাহ বলেন, তাহ’লে আমি কে? মন্ত্রী বললেন, ‘না। বরং আমার ও আপনার পালনকর্তা হ’লেন আল্লাহ’। তখন বাদশাহর হুকুমে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি উক্ত বালকের নাম বলে দেন। বালককে ধরে এনে একই প্রশ্নের অভিন্ন জবাব পেয়ে তার উপরেও চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। ফলে এক পর্যায়ে সে পাদ্রীর কথা বলে দেয়। তখন বৃদ্ধ পাদ্রীকে ধরে আনলে তিনিও একই জওয়াব দেন। বাদশাহ তাদেরকে সে ধর্ম ত্যাগ করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। তখন পাদ্রী ও মন্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় করাতে চিরে তাদের মাথাসহ দেহকে দু’ভাগ করে ফেলা হয়। এরপর বালকটিকে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার হুকুম দেয়া হয়। কিন্তু তাতে বাদশাহর লোকেরাই মারা পড়ে। অতঃপর তাকে নদীর মধ্যে নিয়ে নৌকা থেকে ফেলে দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মারার হুকুম দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও বালক বেঁচে যায় ও বাদশাহর লোকেরা ডুবে মরে। দু’বারেই বালকটি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিল, ‘হে আল্লাহ! এদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন যেভাবে আপনি চান’।

পরে বালকটি বাদশাহ্কে বলে, আপনি আমাকে কখনোই মারতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি আমার কথা শুনবেন। বাদশাহ বললেন, কি সে কথা? বালকটি বলল, আপনি সমস্ত লোককে একটি ময়দানে জমা করুন। অতঃপর একটা তীর নিয়ে আমার দিকে নিক্ষেপ করার সময় বলুন, باسم الله رب الغلام ‘বালকটির পালনকর্তা আল্ল­াহর নামে’। বাদশাহ তাই করলেন এবং বালকটি মারা গেল। তখন উপস্থিত হাযার হাযার মানুষ সমস্বরে বলে উঠল, ‘আমরা বালকটির প্রভুর উপরে ঈমান আনলাম’। তখন বাদশাহ বড় বড় গর্ত খুঁড়ে বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে সবাইকে হত্যা করল। নিক্ষেপের আগে প্রত্যেককে ধর্ম ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তির কথা বলা হয়। কিন্তু কেউ তা মানেনি। শেষ দিকে একজন মহিলা তার শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ইতস্ততঃ করছিলেন। হঠাৎ কোলের অবোধ শিশুটি বলে ওঠে, ‘শক্ত হও হে মা! কেননা তুমি সত্যের উপরে আছো’। তখন বাদশাহর লোকেরা মা ও ছেলেকে এক সাথে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে। ঐদিন ৭০ হাযার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। (আহমাদ, মুসলিম হা/৩০০৫; তিরমিযী হা/৭৩৩৭)

হক্বের ওপর অবিচল থাকার দো‘আ :

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.

উচ্চারণ : রাব্বানা লা-তুঝিগ্ ক্বুলূবানা বা‘দা ইয্ হাদায়তানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুন্কা রাহমাতান, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহ্হা-ব।

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তর সমূহকে বক্র করো না। আর তুমি আমাদেরকে তোমার পক্ষ হ’তে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদান করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বাধিক দানকারী’(আলে ইমরান ৩/৮)।

মুমিনের উচিৎ অল্পে তুষ্ট থাকা ও না পাওয়ার জন্য ধর্য্য ধারন করা। তবে মানুষ ভুল করে অনেক কিছুই চাই, যা জীবনে অপূরণীয় হয়ে থাকে। দুনিয়াতে তা না পেলে আখিরাতে পাওয়ার কামনা থাকা উচিৎ। হে আল্লাহ! আজ যারা দ্বীনের খাতিরে আমাকে ভালবাসে আমিও তাকে ভালবাসি একমাত্র দ্বীনের জন্য তোমার সম্মানে। তুমি আখিরাতে তাদের সাথে আমার হাশর-নাশর রেখো। তুমি আমাকে অকৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করিও না। আমার জন্য যা কল্যাণকর তুমি তা আমার নছীবে রেখো। আর যা অকল্যাণকর তা আমা থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। সর্বপরি, আল্লাহ আমাদের দ্বীনি ভাই ও বোনদের হক্বের ওপর অবিচল থেকে সৎ আমল করার তাওফীক্ব দান করো, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top