— প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুহতারাম আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ وَمَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ، ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার কি? আমি ও দুনিয়া তো একজন পথিকের মত। যে একটি গাছের ছায়া তলে বসে আছে। ছায়া চলে যাবে এবং তাকে ছেড়ে যাবে’।[1] এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের তুলনা সেতুর এ প্রান্ত ও অন্য প্রান্তের ন্যায়। দুনিয়াতে মানুষ প্রতি পদে পদে সেতু পার হয়ে চলেছে। যখন যেখানেই তার মৃত্যু হবে, তখন সেখানেই সে তার জীবন সেতুর শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবে। আর কবর হ’ল আখেরাতের প্রথম মনযিল। এখানে মুক্তি পেলে সে ক্বিয়ামতের চূড়ান্ত বিচারে মুক্তি পাবে। অতএব বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য অপর প্রান্তে তথা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছানোর আগেই যথাযথ পাথেয় সঞ্চয় করা। যার মাধ্যমে সে জান্নাতের চিরস্থায়ী ফলাফল পেয়ে ধন্য হবে।
আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘পুরুষ হৌক নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।
সমাজ জীবনে সৎকর্মশীল মানুষের সংখ্যা কম হ’লেও অপ্রাপ্য নয়। বরং বলা চলে যে, কম সংখ্যক এই লোকগুলির জন্যই সমাজ এখনো টিকে আছে। তবে সৎকর্মশীল মানুষের মধ্যে সুখী জীবনের অধিকারী হয় কেবল তারাই যারা আখেরাতে হিসাব দানের বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়। যা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বলতেকি যেকোন পরিস্থিতিতে মানুষকে সৎকর্মশীলতার উপর দৃঢ় রাখে তার আখেরাত বিশ্বাস। এটা না থাকলে ঝুঁকির মুখে পদস্খলন ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। নিম্নে আমরা আখেরাত বিশ্বাসের বাস্তব ফলাফল সমূহ উল্লেখ করব।-
১. মানুষ শরী‘আতের ফায়ছালা হাসিমুখে গ্রহণ করে :
মা‘এয আসলামী, গামেদী মহিলা প্রমুখ স্বেচ্ছায় এসে মৃত্যুদন্ডের মত কঠিন শাস্তি চেয়ে নিয়েছেন কেবল আখেরাতে মুক্তি লাভের আশায়।[2] আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)। এখানে ফায়ছালা মেনে নেওয়ার জন্য আখেরাত বিশ্বাসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা আখেরাতের স্বার্থেই মানুষ দুনিয়াবী স্বার্থ ত্যাগ করে।
২. এটি না থাকলে মানুষ সত্য বিমুখ হয় :
সত্যচ্যুত মানুষ পথভ্রষ্ট হয় ও তওবা না করলে জাহান্নামী হয়। আল্লাহ বলেন,إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُمْ مُنْكِرَةٌ وَهُمْ مُسْتَكْبِرُونَ ‘তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন। অতঃপর যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর হয় সত্যবিমুখ এবং তারা হয় অহংকারী’ (নাহল ১৬/২২)।
খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননরত ক্ষুধাতাড়িত ছাহাবীদের উৎসাহ দিয়ে পেটে পাথর বাঁধা রাসূল উৎসাহ দেন নিম্নোক্ত কবিতা গেয়ে -اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! কোন আরাম নেই আখেরাতের আরাম ছাড়া’। ‘অতএব তুমি ক্ষমা কর আনছার ও মুহাজিরদেরকে’ (বুখারী হা/৪০৯৮)। এখানে তিনি কোন দুনিয়াবী লাভের কথা বলেননি। স্রেফ আখেরাতের কথা বলেছেন। যাতে তারা সত্যবিমুখ না হয়ে যায়।
৩. নেকীর কাজে একাগ্রতা সৃষ্টি হয় :
দুনিয়াতে বড় কোন সাফল্যের মূলে থাকে সাধনা ও একাগ্রতা। আর সেটি সবচেয়ে যোরদার করে আখেরাতে সাফল্য লাভের আকাংখা। আল্লাহ বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকে না’ (শূরা ৪২/২০)।
হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ هَمَّهُ جَعَلَ اللهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ جَعَلَ اللهُ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَمْلَهُ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مَا قُدِّرَ لَهُ ‘আখেরাত যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে, আল্লাহ তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তার বিক্ষিপ্ত বিষয়গুলিকে সমাধান করে দেন। আর দুনিয়া তার কাছে তুচ্ছ হয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া যার একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে, আল্লাহ তার অভাবসমূহ সামনে এনে দেন। আর তার সমস্যাগুলিকে বিক্ষিপ্ত করে দেন। অথচ তার নিকট কিছুই আসে না অতটুকু ব্যতীত যতটুকু তার তাক্বদীরে নির্ধারিত আছে’ (তিরমিযী হা/২৪৬৫)।
৪. সৎকর্মে দৃঢ়তা সৃষ্টি করে :
বদরের যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) কম্যান্ড দেন,قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ ‘তোমরা দাঁড়িয়ে যাও জান্নাতের পানে। যার প্রশস্ততা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল ব্যাপী বিস্তৃত’। এ নির্দেশ শুনে ছাহাবী ওমায়ের ইবনুল হুমাম আনছারী বলে ওঠেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের প্রশস্ততা কি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল ব্যাপী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, ছাড়! ছাড়! (বাখ, বাখ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি এরূপ বললে কেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার আশায়। তিনি বলেন, فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই তুমি তার অধিবাসী’। তখন ওমায়ের স্বীয় কোষ থেকে কতগুলি খেজুর বের করলেন ও তা খেতে থাকলেন। কিছু পরে বললেন, لَئِنْ أَنَا حَيِيْتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ، ‘আমি যদি এই খেজুরগুলো খাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে অবশ্যই সেটি হবে দীর্ঘ হায়াত’। অতঃপর তিনি বাকী খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন’।[3]
৫. বিপদে ধৈর্য ধারণের শক্তি বৃদ্ধি পায় :
আল্লাহ বলেন,قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘বল, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। (মনে রেখ,) যারা এ দুনিয়ায় সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরস্কার পাবে অপরিমিতভাবে’ (যুমার ৩৯/১০)। মক্কায় নির্যাতিত অবস্থায় ইয়াসির পরিবারকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, صَبْرًا يَا آلَ يَاسِرٍ، فَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْجَنَّةُ ‘ধৈর্য ধর হে ইয়াসির পরিবার! নিশ্চয়ই তোমাদের ঠিকানা হ’ল জান্নাত’ (হাকেম হা/৫৬৪৬)। ইমাম আওযাঈ (৮৮-১৫৭ হি.) বলেন, তাদের আমল ওযন করা হবে না ও পরিমাপ করা হবে না’। আল্লাহ বলেন, وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَّحَرِيرًا ‘দুনিয়াতে ধৈর্যধারণের পুরস্কার স্বরূপ সেদিন তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোষাক দান করবেন’ (দাহর ৭৬/১২)। তিনি আরও বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে হ’ল সফলকাম। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,سَتَجِدُونَ أُثْرَةً شَدِيدَةً فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوُا اللهَ وَرَسُولَهُ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فَإِنِّى عَلَى الْحَوْضِ ‘তোমরা আমার পরে অত্যাচারী শাসকদের পাবে। তখন তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। যতক্ষণ না তোমরা আমাকে হাউয কাওছারের নিকটে সাক্ষাত পাও’ (বুখারী হা/৪৩৩১)।
‘আত্বা বিন আবী রাবাহ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে একজন জানণাতী মহিলাকে দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তখন তিনি বললেন, এই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাটি, সে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসেছিল। অতঃপর বলেছিল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পার, তাতে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর তুমি চাইলে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে পারি, যেন তিনি তোমাকে অরোগ্য দান করেন। মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তবে ঐ অবস্থায় যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়, সেজন্য আপনি দো‘আ করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) তার জন্য দো‘আ করলেন’।[4]
৬. সর্বাবস্থায় আল্লাহভীতি অর্জন :
আখেরাত বিশ্বাস মানুষকে সর্বাবস্থায় আল্লাহভীরু বানায় এবং সে প্রবৃত্তির তাড়না থেকে সংযত থাকে। আল্লাহ বলেন, وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى، فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى، ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামী হ’তে বিরত রেখেছে, জান্নাত তার ঠিকানা হবে’ (নাযে‘আত ৭৯/৪০-৪১)। পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়া বনু ইস্রাঈলের তিন যুবকের একজন তার প্রেমিকার সাথে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মেয়েটির কথায় আল্লাহ থেকে ভীত হয় এবং বিরত হয়। গুহায় ঐ বিপদের সময় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে সে বলে,اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّى فَعَلْتُ ذَلِكَ مِنْ خَشْيَتِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে আমি কেবল তোমার ভয়ে সেদিন উক্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত হয়ে ছিলাম, তাহ’লে তুমি আমাদেরকে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দাও’। তখন আল্লাহর হুকুমে পাথর সরে যায় এবং গুহা মুখ খুলে যায়। অতঃপর তারা তিনজন বেরিয়ে আসে (বুখারী ফাৎহুল বারী হা/৩৪৬৫)।
ওমর (রাঃ) যখন আততায়ী কর্তৃক যখমী হন এবং জীবন সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়েন, তখন তিনি বলেন,لَوْ أَنَّ لِى طِلاَعَ الأَرْضِ ذَهَبًا لاَفْتَدَيْتُ بِهِ مِنْ عَذَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ قَبْلَ أَنْ أَرَاهُ ‘যদি পৃথিবী ভরা স্বর্ণ আমার থাকত এবং তা দিয়ে আখেরাতে আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যেত, তাহ’লে আমি সেটাই করতাম, উক্ত শাস্তি দেখার পূর্বে’ (বুখারী হা/৩৬৯২)। ইবনুল জাওযী বলেন, ওমরের মত মানুষের আল্লাহভীতি আর তোমাদের মত মানুষের নিশ্চিন্ততা দেখে আমি বিস্মিত হই![5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً- ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তাহ’লে তোমরা কাঁদতে বেশী, হাসতে কম’।[6]
খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয (৯৯-১০১ হিঃ) একদিন কাঁদতে থাকেন। তখন স্ত্রী ফাতেমা ও পরিবারের সবাই কাঁদতে শুরু করে। এক সময় স্ত্রী তাঁকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন আমি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর বিচার দেখছি। তিনি একদলকে জান্নাতে পাঠাচ্ছেন ও এক দলকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন। হায়! যদি আমি সেদিন জাহান্নামীদের দলভুক্ত হয়ে যাই! বলেই তিনি চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান’।[7] আল্লাহ বলেন,وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ- ‘আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান’ (রহমান ৫৫/৪৬)।
৭. অল্পে তুষ্ট থাকার গুণ অর্জিত হয় :
একদিন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলেন। সে সময় তাঁর মাথার নীচে ছিল একটা খেজুর পাতা ভরা চামড়ার বালিশ। আর পিঠে ও পার্শ্বদেশে ছিল চাটাইয়ের দাগ। এটা দেখে ওমর কেঁদে উঠলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? ওমর বললেন,إِنَّ كِسْرَى وَقَيْصَرَ فِيمَا هُمَا فِيهِ وَأَنْتَ رَسُولُ اللهِ ‘পারস্য সম্রাট কিসরা ও রোম সম্রাট ক্বায়ছার কি অবস্থায় আছে, আর আপনি কি অবস্থায় আছেন। অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الآخِرَةُ- ‘তুমি কি চাওনা যে, তাদের জন্য হৌক দুনিয়া ও তোমার জন্য হৌক আখেরাত!’[8]
৮. অধিক পাওয়ার আকাংখা দমিত হয় :
একদিন রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমরের কাঁধে হাত রেখে বলেন,كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ- وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ : إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ- ‘তুমি দুনিয়াতে বসবাস কর একজন আগন্তকের মত অথবা একজন পথিকের মত’। ইবনু ওমর বলতেন, রাত হ’লে তুমি সকালের আশা করো না এবং সকাল হ’লে তুমি রাতের আশা করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার আগে তুমি তোমার জীবনকে কাজে লাগাও’।[9]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ لاَ الْفَقْرُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، وَتُهْلِكُكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ- ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের দরিদ্রতাকে ভয় পাই না। বরং আমি ভয় পাই তোমাদের উপর দুনিয়ার প্রশস্ততাকে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে প্রশস্ত হয়েছিল। ফলে তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে, যেমন তারা লিপ্ত হয়েছিল। আর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করেছিল’।[10]
তিনি বলেন,مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِى غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِيْنِهِ- ‘দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে (রাখাল অনুপস্থিত থাকা অবস্থায়) ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশী ধ্বংসকর নয়, যত না বেশী ধ্বংসকর মাল ও মর্যাদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য’।[11]
আবু আব্দুর রহমান আস-সালামী বলেন, আলী (রাঃ) একবার কূফায় দেওয়া এক ভাষণে বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ طُولُ الْأَمَلِ، وَاتِّبَاعُ الْهَوَى، فَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ فَيُنْسِي الْآخِرَةَ، وَأَمَّا اتِّبَاعُ الْهَوَى فَيُضِلُّ عَنِ الْحَقِّ، أَلاَ إِنَّ الدُّنْيَا قَدْ وَلَّتْ مُدْبِرَةً وَالْآخِرَةُ مُقْبِلَةٌ، وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلاَ تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلاَ حِسَابٌ وَغَدًا حِسَابٌ وَلاَ عَمَلٌ- ‘হে জনগণ! আমি তোমাদের দু’টি জিনিসকে সবচেয়ে বেশী ভয় পাই, অধিক পাওয়ার আকাংখা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ। অধিক পাওয়ার আকাংখা তোমাদেরকে আখেরাত ভুলিয়ে দিবে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ তোমাদেরকে সত্য গ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দিবে। সাবধান! দুনিয়া পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে এবং আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে একদল মানুষ। অতএব তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার গোলাম হয়ো না। কেননা আজকের দিনটি কর্মের দিন, যেখান ফলাফল নেই। আর কালকের দিনটি ফলাফলের দিন, যেখানে কর্ম নেই’ (বায়হাক্বী শো‘আব হা/১০৬১৪)। অতএব তোমরা সম্মুখে আগত চিরস্থায়ী ঠিকানার জন্য কাজ কর এবং যা ফিরে যাচ্ছে, সেদিকে তাকিয়ো না। ঈসা (আঃ) বলেন,
مَنْ ذَا الَّذِي يَبْنِي عَلَى مَوْجِ الْبَحْرِ دَارًا
تِلْكُمُ الدُّنْيَا فَلاَ تَتَّخِذُوهَا قَرَارًا
‘কোন্ ব্যক্তি আছে যে সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর বাড়ী তৈরী করবে?’ ওগুলি তো দুনিয়া। অতএব তাকে তোমরা স্থায়ী নিবাস হিসাবে গ্রহণ করো না’।[12]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলতেন,مَا مِنْكُمْ إِلَّا ضَيْفٌ وَعَارِيَةٌ، وَالضَّيْفُ مُرْتَحِلٌ، وَالْعَارِيَةُ مُؤَدَّاةٌ إِلَى أَهْلِهَا- ‘তোমরা সবাই মেহমান। আর তোমাদের সম্পদগুলি সব ধারের বস্ত্ত। মেহমান চলে যাবে, আর সম্পদ সব তার মালিকের কাছে ফিরে যাবে’।[13]
খালীদ আল-‘আছরী বলেন, আমরা সবাই মৃত্যুতে বিশ্বাস রাখি। অথচ তার জন্য কোন প্রস্ত্ততি নেই না। আমরা প্রত্যেকে জান্নাতে বিশ্বাস রাখি। অথচ তার জন্য কোন আমল করি না। আমরা প্রত্যেকে জাহান্নামে বিশ্বাস করি। অথচ তা থেকে বাঁচার জন্য ভীত হই না। তাহলে তোমরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছ? মৃত্যুর জন্য? মনে রেখ এটাই তোমাদের জন্য আখেরাতের প্রথম মনযিল। সেখানে তোমাদের ভাল হ’তে পারে, মন্দও হ’তে পারে। অতএব হে আখেরাতের পথিকগণ! তোমরা এগিয়ে চলো তোমাদের প্রতিপালকের দিকে সুন্দরভাবে (ছিফাতুছ ছাফওয়া ৩/২৩১)।
৯. আখেরাত বিশ্বাস মযলূমের জন্য সান্ত্বনার স্থল :
হে যালেম! তুমি ভেবো না যে, আল্লাহ তোমার যুলুম দেখেননি। তুমি ভেবো না যে, আল্লাহ তোমার থেকে উদাসীন! তোমার সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। ঐ শোন তোমার প্রতিপালকের গুরু গম্ভীর সতর্কবাণী,وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ، مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ- ‘তুমি অবশ্যই একথা ভেবো না যে, যালেমরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষুসমূহ বিস্ফারিত হবে। যেদিন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ভীত-বিহবল চিত্তে তারা দৌড়াতে থাকবে। নিজেদের দিকে দৃষ্টি ফেরাবার সময় তাদের হবে না। যেদিন কঠিন ভয়ে তারা শূন্যহৃদয় হয়ে যাবে’ (ইব্রাহীম ১৪/৪২-৪৩)। তিনি বলেন,الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ ‘আজ প্রত্যেককে তার কর্মফল দেওয়া হবে। আজ কোন যুলুম নেই। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী’ (গাফের/মুমিন ৪০/১৭)।
হযরত জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সমুদ্রের মুহাজিরগণ (হাবশায় হিজরতকারী প্রথম দল) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলে তিনি বলেন, তোমরা হাবশায় যেসব অনিষ্টকারী বিষয় সমূহ দেখেছ তা কি আমার নিকট ব্যক্ত করবে না? তাদের মধ্য থেকে এক যুবক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একদিন আমরা বসা ছিলাম। এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে সেখানকার এক বৃদ্ধা মহিলা মাথায় পানি ভর্তি কলস সহ যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তাদের এক যুবক তার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। ফলে সে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গেল এবং কলসটি ভেঙ্গে গেল। তখন বৃদ্ধা উঠে দাঁড়িয়ে যুবকের দিকে তাকিলে বলল, হে প্রতারক! তুমি অচিরেই জানতে পারবে যখন আল্লাহ বিচারের আসনে বসবেন। আগে-পিছের সকল মানুষকে সমবেত করবেন এবং হাত-পাগুলো তাদের কৃতকর্মের বর্ণনা দিবে, তখন তুমিও জানতে পারবে সেদিন তোমার ও আমার অবস্থা কি হবে’। জাবের (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ বৃদ্ধা সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। আল্লাহ সেই উম্মতকে কিভাবে পাপ থেকে পবিত্র করবেন, যাদের সবলদের নিকট থেকে দুর্বলদের অধিকার আদায় করে দেওয়া হয় না’।[14]
১০. ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে :
মাক্কী জীবনের অধিকাংশ সূরা নাযিল হয়েছে আখেরাত বিশ্বাসের উপর। যার ফলে আখেরাত পিয়াসী একদল ঈমানদার মানুষ তৈরী হয়। আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, ইবনু মাস‘ঊদ, বেলাল, খাববাব, আম্মার, মুছ‘আব প্রমুখ জান্নাতপাগল নিখাদ মানুষগুলির হাতেই পুরা আরব জাহানে আমূল পরিবর্তন আসে। যা সর্বাত্মক সমাজ বিপ্লবের সূচনা করে। যার ঢেউ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ইসলাম বিশ্বধর্মে পরিণত হয়। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামতের আগে সারা বিশ্ব ইসলামের করতলগত হবে। যা সম্ভব হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে কেবল আখেরাতে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উদগ্র বাসনার কারণে। যখন যে সমাজে সত্যিকারের আখেরাত পিয়াসী একদল মুমিন তৈরী হয়, তখন সেই সমাজে আমূল পরিবর্তন আসে এবং সমাজ বিপ্লব সাধিত হয়।
আল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ ‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)।
বস্ত্ততঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর ৭ দিন মতান্তরে ২১ দিন পূর্বে এটাই ছিল পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ আয়াত। অতএব হে মানুষ শেষ বিচারের দিনকে ভয় কর। সেদিন তোমার সকল কর্মের কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। যেদিন তোমার ঈমান ও আমল ছাড়া কোন কিছুই কাজে আসবে না।
কবি আবুল ‘আতাহিয়াহ (১৩০-২১৩ হি.) বলেন,
إِنَّ يَومَ الحِسابِ يَومٌ عَسيرُ + لَيسَ لِلظالِمينَ فيهِ نَصيرُ
فَاِتَّخِذْ عُدَّةً لِمُطَّلَعِ القَبرِ + وَهَولِ الصِراطِ يا مَنصورُ
‘নিশ্চয়ই শেষ বিচারের দিন বড়ই কঠিন দিন, সেদিন
যালেমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না’। ‘অতএব
হে বিজয়ী! তুমি কবরে যাওয়ার পূর্বে এবং পুলছিরাতের ভয়াবহ
দৃশ্য আসার পূর্বে পাথেয় সঞ্চয় কর’।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের আখেরাত বিশ্বাসকে দৃঢ় কর এবং তার জন্য আমাদেরকে দ্রুত পাথেয় সঞ্চয়ের তাওফীক দাও- আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/২৩৭৭; ইবনু মাজাহ হা/৪১০৯; মিশকাত হা/৫১৮৮।
[2]. মুসলিম হা/১৬৯৫; মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘দন্ডবিধিসমূহ’ অধ্যায়; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৭৯৮-৯৯ পৃ.।
[3]. মুসলিম হা/১৯০১ (১৪৫); মিশকাত হা/৩৮১০, রাবী আনাস (রাঃ)।
[4]. বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭৬; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫০৫।
[5]. আবু নু‘আইম ইছফাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/৩১৪।
[6]. বুখারী হা/৬৬৩৭; মিশকাত হা/৫৩৩৯, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[7]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৩৬৮।
[8]. বুখারী হা/৪৯১৩; মুসলিম হা/১৪৭৯; মিশকাত হা/৫২৪০।
[9]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪, রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।
[10]. বুখারী হা/৬৪২৫; মুসলিম হা/২৯৬১; মিশকাত হা/৫১৬৩, রাবী আমর বিন ‘আওফ (রাঃ)।
[11]. তিরমিযী হা/২৩৭৬; মিশকাত হা/৫১৮১, সনদ ছহীহ।
[12]. ইবনু আবীদ্দুনিয়া, আয-যুহ্দ ক্রমিক ৩৪৭, পৃ. ১৫৯।
[13].ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৫৩৩; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৯৯।
[14]. ইবনু মাজাহ হা/৪০১০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫০৫৮।