দ্বীন ও দুনিয়া আলাদা কোন বিষয়বস্তু নয়। দ্বীন দ্বারা দুনিয়া একই রেখাতে পরিচালিত হবে। আর যারা আলাদা করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকির ও পরকালের বিষয়ে চিন্তা করা ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকা এবং কোন কোন সময় তা ছেড়ে দেয়া ও দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত থাকা জায়েয রয়েছে। তবে হ্যা বৈষয়িক বিষয়ে চলাফেরা করার জন্য সৎসঙ্গ অপরিহার্য। এই সৎসঙ্গ পাওয়া সম্ভব দ্বীনি পরিবেশে দ্বীনদার বন্ধুদের সাহচার্যে। আর এটা সম্ভব জামাআতবদ্ধ জীবন যাপনের ফলে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সন্তান-সন্ততি সকলের প্রভাব রয়েছে এই দ্বীনি পরিবেশের। যেকোন মূল্যে আমার আপনার ধরে রাখা উচিৎ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাতিব হানযালাহ আল উসাইয়িদী (রাযিঃ) বলেন, একদা আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, হানযালাহ্ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ তুমি কি বল্ছ? হানযালাহ্ (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত জাহান্নামের কথা শুনিয়ে দেন, যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখছি। সুতরাং আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্নিকটে থেকে বের হয়ে আপনজন স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যাই তখন আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম আমারও একই অবস্থা। নিশ্চয়ই আমরা এ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করবো।
তারপর আমি এবং আবু বকর (রাযিঃ) রওনা করলাম এবং এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা কী?
আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দেন, যেন আমরা তা সরাসরি দেখতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হতে বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সেসময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জীবন আমি তার কসম করে বলছি! আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়, যদি তোমরা সবসময় এ অবস্থায় অনড় থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকরে পড়ে থাকতে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহ করত। কিন্তু হে হানযালাহ! এক ঘণ্টা (আল্লাহর যিকরে) আর এক ঘণ্টা (দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করবে) অর্থাৎ আস্তে আস্তে (চেষ্টা কর)। এ কথাটি রাসূল (সাঃ) তিনবার বললেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হানযালাহ (রাযিঃ) বলেন, আমরা এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে ওয়ায করলেন এবং জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি গৃহে আসলাম এবং সন্তান-সন্ততিদের সাথে খেল-তামাশা করলাম এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করলাম। এরপর আমি বাড়ি থেকে রওনা করলাম। পথে আবু বাকর (রাযিঃ) এর সাথে দেখা করলাম। আমি তার সাথে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমিও তো এমনই করি, যেমন তুমি বললে। তারপর আমরা দু’জনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। তারপর তিনি বললেন, তা কী? তারপর আমি আমার সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। এরপর আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমিও তো এমনই করি যেমন হানযালাহ করেছে।
রাসূল (ছাঃ) বললেন, ” يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً وَلَوْ كَانَتْ تَكُونُ قُلُوبُكُمْ كَمَا تَكُونُ عِنْدَ الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُسَلِّمَ عَلَيْكُمْ فِي الطُّرُقِ ” ’হে হানযালাহ! কিছু সময় আল্লাহর স্মরণের জন্য এবং কিছু সময় দুনিয়াবী কাজের জন্য। ওয়ায নাসীহাতের মুহুর্তে তোমাদের মন যেমন থাকে, সবসময় যদি তা এ রকম থাকত তবে ফেরেশতাগণ অবশ্যই তোমাদের সাথে মুসাফাহ করত। এমনকি প্রকাশ্যে রাস্তায় তারা তোমাদের সালাম করত’ (মুসলিম হা/২৭৫০)।