-লিলবর আল-বারাদী
ভূমিকা : মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে দুনিয়াবী স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। সাথে সাথে জীবন পরিচালনার জন্য চিরন্তন সংবিধান কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ পাশে দিয়েছেন। যাতে করে মানুষ বিপথগামী না হয়। এই সংবিধান মতে যারা জীবন সংসার পরিচালনা করে তারা মুমিন। আর যারা নিজের প্রবৃত্তি অনুসারে চলে তারা মুমিন হতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلاَ تَتَّبِعُواْ أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّواْ مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيْراً وَضَلُّواْ عَن سَوَاء السَّبِيْلِ ‘তোমরা সেসব জাতির খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না, যারা আগেভাগেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা অনেক লোককে পথহারা করে দিয়েছে আর তারা নিজেরাও সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে’ (মায়েদাহ ৫/৭৭)। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا ‘অক্ষম-মূর্খ সেই ব্যক্তি যে নিজের মনকে তার প্রবৃত্তি বা খেয়ালখুশির কথামতো চলতে দেয়’। (হাকেম, আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৪২৬০)
এমর্মে সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেছেন, يَا نَفْسُ تُوْبِىْ فَإِنَّ الْمَوْتَ قَدْ حَانَا * وَاعْصِ الْهَوَى فَالْهَوَى مَا زَالَ فَتَّانَا ‘হে মন! তুমি তওবা করো, কেননা মরণ তো অতি নিকটে। আর খেয়াল-খুশির বাধ্য হবে না, কেননা খেয়াল-খুশি তো সব সময় ফিৎনা সৃষ্টিকারী’। (খেয়াল-খুশির অনুসরণ : মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক, মাসিক আত-তাহরীক, ১৮ বর্ষ, ১ সংখ্যা, অক্টোবর ২০১৪) বর্তমানে মানব জাতি নিজের অবস্থানের কথা ভুলে গিয়েছে। নিজের প্রবৃত্তি অনুসরণে দিবস ও সাংস্কৃতির নামে বেহায়া অশ্লীলতার প্রতি ঝুঁকে গেছে। আর এরই অন্যতম পহেলা বৈশাখ বা বর্ষ বরণ।
বাংলা নববর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : ১৫৫৬ সালে শুরু হয়েছেলি বাংলা সনরে প্রর্বতন। মোগল সম্রাট জালালউদ্দীন মোহাম্মদ আকবররে সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার রাজস্ব র্কমর্কতা আমির ফতহেউল্লাহ সিরাজী প্রথম ১৫৫৬ সালে উৎসব হিসেবে নববর্ষ পালন করার নির্দেশ দেন। একই ধারাবাহিকতায় ১৬০৮ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীররে নির্দেশে সুবদোর ইসলাম খা চিশতি ঢাকাকে যখন রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলেন, তখন থেকেই রাজস্ব আদায় ও ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য বাংলা বছররে পহলো বৈশাখকে উৎসবরে দিন হিসেবে পালন শুরু করনে। (প্রথম আলো, ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ইং)
স¤্রাট আকবর যখন দরবারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীকে দিয়ে নতুন ফসলী সন বের করান, তার মাথায় ছিল রাজস্ব আদায়ের সুবিধা। এটি যখন চালু হয় তখন গ্রেগরিয়ান বা তথাকথিত খ্রীস্টীয় বর্ষপঞ্জিতে ১৫৮৪। একে কার্যকর করা হয় আটাশ বছর আগের সময় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে, যা ছিল আকবরের সিংহাসনে বসার আনুষ্ঠানিক বছর। তখন হিজরী ৯৬৩। মধ্য এশিয়া থেকে নিয়ে আসা চন্দ্র হিজরী সন ফসল কাটার সময়ের সঙ্গে না মেলাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য অসুবিধাজনকই বিবেচিত হচ্ছিল; তাই নতুন কিছুর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই ফসলী সন রাজত্বের পূর্বাঞ্চলে কালক্রমে বাংলা সনের নাম নেয়; এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কালে-কালে তা শুধু বৃহত্তর বাংলাতেই নয়, বাঙালিরা যেখানে আছে, ত্রিপুরা, আসাম, বিহারসহ সর্বত্র ও বাইরের ডায়াস্পোরায়, সবখানে তা জীবনের অংশ হয়ে গেছে। বাদশাহ সুনিশ্চিত ভাবে ভাবেননি তিনি এক ভবিষ্যৎ জাতিগোষ্ঠীর জন্য তাদের সবচেয়ে বড় ধর্ম নিরপেক্ষ উৎসবের ভিত্তি রচনা করে যাচ্ছেন।
ঐতিহাসিক তথ্যে আছে যে, সম্রাট আকবরের অনুকরণে সুবদোর ইসলাম চিশতি তার বাসভবনরে সামনে সব প্রজার শুভ কামনা করে মিষ্টি বিতরণ এবং নববর্ষ উৎসব পালন করতনে। সেখানে সরকারী সুবেদার হতে শুরু করে জমিদার, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপস্থতি থাকত। প্রজারা খাজনা নিয়ে আসত সেই উপলক্ষে সেখানে খাজনা আদায় ও হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি চলত মেলায় গান-বাজনা, গরু-মোষের লড়াই, কাবাডি খেলা ও হালখাতা অনুষ্ঠান। (উইকিপিডিয়া)
পহেলা বৈশাখ : পহেলা বৈশাখ শব্দগত ভাবে পহেলা + বৈশাখ দুটি আলাদা শব্দ থেকে নেয়া। পহেলা উৎপত্তিগত ভাবে উর্দু শব্দ পেহেলী থেকে পহেলা, অর্থ হচ্ছে প্রথম (ভারতে পয়লা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বাংলা পয়লা বৈশাখ কথাটি পহেলা হিসাবে চালু রয়েছে তবে এখনো পয়লা ও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়) আর বৈশাখ শব্দ যা কি’না এসেছে বিশাখা নক্ষত্রে সূর্য্যরে একটি অবস্থান কে বুঝান হয়েছে। পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। এদেশে বর্তমানে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে মোট ৩টি সন গণনা পদ্ধতি চালু আছে। হিজরী বা আরবী সন, বাংলা বা ফসলী সন ও ইংরেজি বা গ্রেগোরিয়ান সনটি। এই পহেলা বৈশাখকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়। তন্মধ্যে হিন্দুয়ানী গুণে গুণান্বিত স¤্রাট আকবর উদ্ভাবিত মিকশ্চার ধর্ম ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’র মত সব ধর্মের অংশগ্রহণে একটি সার্বজনীন (!) উৎসব পালন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে ‘পহেলা বৈশাখ’ মূলতঃ হিন্দুদের তথা অমুসলিমদের উৎসব। কেননা এতে বয়েছে- ১. হিন্দুদের ঘটপূজা ২. গণেশ পূজা ৩. সিদ্ধেশ্বরী পূজা ৪. ঘোড়ামেলা ৫. চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা ৬. চড়ক বা নীল পূজা ৭. গম্ভীরা পূজা ৮. কুমীরের পূজা ৯. অগ্নিপূজা ১০. ত্রিপুরাদের বৈশুখ ১১. মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব ১২. চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি) ১৩. হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা ১৪. মজূসী তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ ১৫. হিন্দুদের বউমেলা ১৬. হিন্দুদের মঙ্গলযাত্রা ১৭. হিন্দুদের সূর্যপূজা।
১. বৈশাখী প্রভাতের ঊদিত সূর্য পূজা : বাংলাভাষীরা অবশ্যম্ভাবীভাবেই নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য রবীন্দ্রনাথের এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ গানটিকে বেছে নিয়েছেন। জাতীয় সংগীত বাদে আর কোনো বাংলা গান এতবার এত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। আসলে গানটি বৈশাখী অনুষ্ঠানের এক ধরনের এনথেম-এ পরিণত হয়েছে। চারুশিল্পীদের রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে এই গানের মাধ্যমে প্রভাতের উদীয়মান সূর্য পূজার মাধ্যমে স্বাগত জানায়। এই দিনে অনৈসলামিক বিভিন্ন উৎসবে মুসলিম ও অমুসলিম পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে।
২. নতুন পোশাকে আকর্ষণীয় সাজসজ্জা : পহেলা বৈশাখকে ঈদের মত মর্যাদা দিয়ে জাতীয়ভাবে নতুন পোশাক পরিধান করে যেখানে প্রিন্ট করা থাকে তবলা, বেহালা, হারমনিয়াম, একতারা, বাউল, সন্ন্যাসীদের মত নানা ছবি। আর এতে মনে করা হয় যে, এটা বাঙালীদের সবচেয়ে বড় জাতীয় উৎসব! হিন্দুদের বারো মাসে ১৩ পূজার আদলে কোন মুসলিমের জন্য ‘পহেলা বৈশাখ’কে আরেকটি বাৎসরিক উৎসবের দিন ধার্য করা জায়েয নেই। ইদানিং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের অতি তোড়জোড় দেখে মনে হয় তারা এটাকে দেশের মানুষের প্রধান উৎসব হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং অনেকক্ষেত্রে প্রকাশ্যে ঘোষণাও করছে।
৩. শরীরে উল্কি অংকন ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি তৈরি : উল্কি (Tattoo) হচ্ছে এক ধরনের শিল্প, যেখানে অমোচনীয় কালি শরীরের ত্বকের রং পরিবর্তন করার জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ত্বকের ওপরাংশে প্রয়োগ করা হয়। উল্কি মানুষের শরীর সাজানোর একটি অংশ, এবং প্রাণীদের ক্ষেত্রে উল্কিকরণ করা হয় মূলত নির্ধারণ ও ব্র্যান্ডিং-এর জন্য। বিশ্বজুড়েই উল্কি প্রচলন দেখা যায়। জাপানের আদি জাতিগোষ্ঠী আইনু ঐতিহ্যবাহীভাবে তাঁদের মুখে উল্কি ব্যবহার করে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে অনেক যুবক-যুবতীরা তদের গালে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে উল্কি অঙ্কন করে। উল্কি অঙ্কনের ক্ষেত্রে বিপরীত লিঙ্গের হাত ব্যবহার করা হয়। যা প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতেও উল্কি অঙ্কন ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়াও বিভিন্ন জীবজন্তু ও প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়। এগুলোকে বৈশাখী প্রেমিকরা নিজেদের মুখোশ তৈরী করে বানর, হনুমান, বাঘ, ভাল্লুক ইত্যাদি বেশে সাজে এবং এগুলো নিয়েই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। যদিও ইসলামে উল্কি অংকন ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি কিংবা জীবন্ত বস্তুর ছবি তৈরি করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৪. মঙ্গল শোভাযাত্রা : প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঢাকার রমনা পার্কে ছায়ানট আয়োজিত প্রাদোষিক সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং একে ঘিরে আয়োজিত অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা মানুষকে নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করতে থাকে এবং নাগরিক আবহে সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। (রমনার বটমূলে জাতীয় উৎসবে, নওয়াজেশ আহমদ, দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ২০০৮) । সেই বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীগণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে। শোভাযাত্রার অনতম আকর্ষণ বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমীর ও ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জাসহ বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। (পহেলা বৈশাখ উদযাপিত, দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ এপ্রিল ১৯৮৯। পৃ. ৭)। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। (মাহবুব জামাল শামীম, একান্ত সাক্ষাৎকার, ৩১ মার্চ ২০০৯।) ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নামে আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও অজ্ঞ মানুষের ন্যায় বর্তমান যুগে তথাকথিত শিক্ষিত মহল বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের মুখোশ পরে, অশ্লীল নৃত্য ও ঢাক ঢোল পিটিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে এবং একে লক্ষ্য করে মঙ্গল লাভের আশা করে। অথচ এটা স্পষ্ট শিরক।
৫. মিলন মেলা : শালীন মেয়েরাও পহেলা বৈশাখের নামে অর্ধ নগ্ন হয়ে বের হয়। গরমের দিনে তথাকথিত পহেলা বৈশাখের সাদা শাড়ি ঘামে ভিজে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত নোংরাভাবে প্রকাশিত হয়। তাছাড়াও নারী-পুরুষ ঢলাঢলির মাধ্যমে ব্যভিচারের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র তৈরি হয় পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিতে। যুবতী মেয়েদের হাতে পান্তা ইলিশ খেয়ে মনের নোংরা চাহিদা মেটানো। বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে তরুণ-তরুণীরা জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয়ে নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশ গল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়পনা ও নগ্নতায় জড়িয়ে পড়ে। এ হ’ল বৈশাখের বাস্তব চিত্র। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় আনন্দ পার্টি বা মিলন মেলা। মিলন মেলায় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ পরিলক্ষিত হয়। এই সব পার্টিতে আয়োজকরা নিজেদের ব্যবসার জন্য ভাড়া করে আনে কল গার্ল। আর এদের মধ্যে কিছু হাই সোসাইটি গার্লও থাকে। পানিয় হিসাবে থাকে দেশী বিদেশী মদ। পার্টিতে কিছু স্পেশাল টিকেট থাকে, যার মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এই টিকেট কিনলে বিশেষ কিছু সুবিধা ভোগ করতে দেয়া হয়। তন্মধ্যে একটি হলো পার্টি শেষে শহরের হাই সোসাইটি গার্লদের সাথে রাত্রি যাপন করা। এরা কোন এক ভদ্র ফ্যামিলির সন্তান। কোন সভ্য শিক্ষিত মা-বাবার কলিজার টুকরো। শুধু মাত্র নেশাগ্রস্থ হওয়ার কারণে নিজের নেশার চাহিদা মেটাতে এক রাতের জন্য নিজেকে বিক্রি করে। আরও বেশি টাক দিলে পাওয়া যায় মেয়েদের। কিছুক্ষণের মধ্যে নাচতে নাচতে তাল হারিয়ে ফেলে তরুণ তরুণীরা। শুরু হয় যত প্রকারের নোংরামি। এই পার্টিগুলোর কমন দৃশ্য হচ্ছে একটা গ্রুপে ১০-১৫ টা ছেলে থাকে মাঝখানে ২-৩ টা মেয়ে থাকে। তারপর দল বেঁধে নাচে। অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের অনেকেই গার্ল-ফ্রেন্ড নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতে পার্টিতে আসে। আবার অনেকে আসে একাকী। একাকী যারা আসে, তাদের জন্যই পার্টিতে থাকে চিয়ার্স গার্লরা। উচ্চবিত্ত পুরুষরাই থাকে চিয়ার্স গার্লদের মূল টার্গেট। আয়োজকরাই ইশারায় চিয়ার্স গার্ল দের চিনিয়ে দেয় তাদেরকে। ব্যাস, তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে বেড পর্যন্ত যাবার জন্য শুরু হয় দর কষাকষি। অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ চিয়ার্স গার্লই ইয়াবা আসক্ত। ফিগার ঠিক রাখা ও রাত জাগার জন্য তারা নিয়মিতই ইয়াবা সেবন করে। এদের অনেকেই আবার মাদক সিন্ডিকেটের ডিলার বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে জন্ম নেয় এক একজন ঐশী । যে কিনা নেশা করতে করতে এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিল যে, সে নিজের পিতামাতাকে হত্যা করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি।
এই উৎসবে সমাজে দায়-দায়িত্বহীন অবাধ অবৈধ যৌনতার প্রসার ঘটে এবং বিবাহ নামক পবিত্র দায়িত্বপূর্ণ সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বৈধ যৌন সম্পর্কের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আধুনিক প্রগতির নামে যুবক যুবতীরা নতুনত্ব খুজে। ফলে মানব সমাজ ও সভ্যতা ধীরে ধীরে দায়-দায়িত্বহীন অসভ্য-বর্বর পাশবিক সমাজের দিক দ্রুত ধাবিত হয়। ফলে মনুষত্ব হারিয়ে পশুত্ব বরণ করে নেয়। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক পবিত্র বন্ধন শিথীল হয়ে যায় এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধাহীন অশ্লীলতা মারাত্মক সয়লাবে কলুষিত সমাজে ধর্ষণ, পরকীয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, অবৈধ গর্ভপাত, আত্মহত্যা, মানসিক বিকৃতি, সংসার ভাঙ্গন ও অবৈধ সন্তানের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে।
৬. পান্তা-ইলিশ ভোজে একদিনের বাঙ্গালী : পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর পান্তা-ইলিশ ভোজন করে এক দিনের বাঙ্গালী হওয়া কোন কালেই বাঙ্গালী সংস্কৃতি ছিল না। অথচ রমনার বটমূল থেকে শুরু করে বাংলার আনাচে-কানাচে পান্তা-ইলিশের হিড়িক পড়ে যায়। ফলে অপচয় হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মাটির সাকনিতে পান্তা বিক্রয় করা হয় ১০০-৫০০ টাকায় এবং ইলিশ ৫০০- ১২০০০ টাকায়। আর হুজুগে বাঙ্গালীরা তা উৎফুল্লচিত্তে ক্রয় করতে প্রতিযোগিতা শুরু করে। শুধু অপচয় আর অপচয়! বাংলাদেশের এই মৌসুমটা ইলিশের প্রজননের সময়। সরকারীভাবে নিষেধ থাকলেও পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতে ও অধিক মুনাফার আশায় জেলেদের মাছ ধরা কিন্তু থেমে থাকে না। বৈশাখের সকালে তথাকথিত সংস্কৃতি প্রিয় বাঙ্গালীরা খুব আরাম করে পান্তা আর ডিম ওয়ালা ইলিশ ও জাটকা খাচ্ছে। এতে ভেঙ্গে যাচ্ছে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র, ধ্বংস হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অন্যদিকে বিরাট অংশ অপচয় হচ্ছে।
ইসলামী দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ : প্রকৃতপক্ষে পহেলা বৈশাখ মুসলমানদের সাংস্কৃতি নয়। এটা হচ্ছে মজুসীদের নওরোজ পালনের অনুষ্ঠান। সাথে সাথে হিন্দু-মুশরিকদের ঘটপূজা, বৌদ্ধদের উল্কি অঙ্কন। ফলে আজ তারা নওরোজ বা নববর্ষ পালন উপলক্ষে পান্তা খায়, গান বাজনা করে, র্যালী করে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে, মিছিল করে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গে উল্কি আঁকে, ডুগডুগি বাজিয়ে নেচে নেচে হৈহুল্লোড় করে, পুরুষরা ধুতি ও কোণাকাটা পাঞ্জাবী যা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক তা পরে, মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধে, শাঁখা পরে, কপালে লাল টিপ ও চন্দন এবং সিথিতে সিঁদুর দেয়, বেপর্দা, বেহায়া হয়-যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। বিজাতীয় অশ্লীল, নোংরা, পাপ সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ দ্বীন ইসলাম বিরোধী। যারা পহেলা বৈশাখ পালন করবে তারা কুফরী করবে। এগুলো কাবীরা গুনাহর অন্তর্ভূক্ত।
ইসলামী শরী‘আতে যেকোন ধরনের নববর্ষ পালন করা হারাম ও বিদ‘আত। ইসলামে কোন নির্দিষ্ট দিবস পালনের সম্মতি বা বিধান নেই। এটা মুসলিমদের সংস্কৃতিও নয়। আর এই অনৈসলামিক সংস্কৃতি পালন করে মানুষ নিজেকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। মুসলমান আধুনিক প্রগতির নামে বিজাতীয় মতবাদকে মেনে নিতে পারে না। কেননা ইহা জান্নামে যাবার উসিলা হতে পারে। সুতরাং তাদের কোন মতামত ও সাদৃশ্য মুসলমানদের সমাজে থাকতে পারে না। এমর্মে রাসূল (ছা:) বলেন, যে ব্যক্তি যে জাতির (কওম) সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের দলভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়; বঙ্গানুবাদ হা/৪১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি অনুষ্ঠান (সময় ও স্থান) নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, যা তাদেরকে পালন করতে হয়’ (হজ্জ ২২/৬৭)। মূলতঃ দুই ঈদ ব্যতীত মুসলিমদের অন্য কোন ধর্মীয় উৎসব নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুসলিমদের দু’টি আনন্দের দিন ১. ঈদুল ফিতর ও ২. ঈদুল আযহা (ছহীহ বুখারী হা/৫৫৭১)।
আমরা যদি দ্বীন ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিকে বুকে ধারন করি, তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হব। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (বিধান) তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম’ (আহমাদ হা/১৭২০৯; তিরমিযী হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪)।
বৈশাখ’ উদযাপন ‘বর্ষবরণ’ অনৈসলামী প্রথা থেকে মুসলিমকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন মদীনাবাসীদের দু’টি উৎসব পালন করতে দেখে তিনি তাদের বলেন, তোমাদের এ দু’টি দিন কেমন? তারা বলল, জাহেলী যুগে আমরা এ দু’দিন উৎসব পালন করতাম (অর্থাৎ সৌরবর্ষের প্রথম দিন এবং ‘মেহেরজান’ অর্থ বছরে যেদিন রাত্রি-দিন সমান হয়)। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এ দু’দিনের পরিবর্তে দু’টি উত্তম উৎসব দান করেছেন। আর তা হ’ল ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা’ (আবুদাঊদ হা/১১৩৪, মিশকাত হা/১৪৩৯, ‘ছালাতুল ঈদায়েন’ অধ্যায়)।
মুবারকপুরী বলেন, ‘উক্ত হাদীছ দ্বারা নবী করীম (ছাঃ) উক্ত দুই দিন ব্যতীত অন্য দিনে যাবতীয় উৎসব রহিত করেছেন এবং তার মুকাবিলায় উক্ত দু’টি দিনকে সাব্যস্ত করেছেন। মাযহার বলেন, ‘নওরোয’ (নববর্ষ) ও মেহেরজান সহ কাফিরদের অন্যান্য উৎসবকে সম্মান প্রদর্শন করা যে নিষিদ্ধ উক্ত হাদীছে তার দলীল রয়েছে’। ইবনু হাজার বলেন, ‘মুশরিকদের উৎসব সমূহে খুশী করা কিংবা তাদের মত উৎসব করা উক্ত হাদীছ দ্বারা অপসন্দনীয় প্রমাণিত হয়েছে’। শায়খ আবু হাফছ আল-কাবীর নাসাফী হানাফী বলেন, ‘এসব দিনের সম্মানার্থে মুশরিকদের যে ব্যক্তি একটি ডিমও উপঢৌকন দিল, সে আল্লাহর সাথে কুফরী করল’। কাযী আবুল মাহাসেন হাসান বিন মানছূর হানাফী বলেন, ‘এ দিনের সম্মানার্থে কেউ যদি ঐ সব মেলা থেকে কোন বস্তু ক্রয় করে কিংবা কাউকে কোন উপঢৌকন দেয়, সে কুফরী করল। এমনকি সম্মানার্থে নয় বরং সাধারণভাবেও যদি এই মেলা থেকে কিছু ক্রয় করে কিংবা কাউকে এই দিন কিছু উপঢৌকন দেয়, তবে সেটিও মাকরূহ’ (মির‘আত শরহ মিশকাত, ‘ছালাতুল ঈদায়েন’ অধ্যায় ৫/৪৪-৪৫ পৃঃ)।
সাংস্কৃতির নামেই হোক আর ধর্মের নামেই হোক এই দুই উৎসব ছাড়া বাকি সব ধরণের উৎসবই পরিত্যাজ্য। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে আমরা অজান্তেই বহু পাপে নিমজ্জিত হচ্ছি। অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলের বিষμিয়ায় তারা আজ জর্জরিত। মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে জন্তু জানোয়ারের মুখোশ পরে, অশ্লীল নৃত্য ও ঢাক ঢোল পিটিয়ে যাত্রা করে থাকে এবং এর মাঝে জীবনের মঙ্গল কামনা করে। অথচ এটা সকল শুভ অশুভ, কল্যাণ অশল্যানের মালিক আল্লাহ সুবানাহু তা’আলা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শুনে রাখ! তাদের অশুভ আলামতের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহরই হাতে রয়েছে। অথচ এরা জানে না’ (আ‘রাফ ৭/১৩১)। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘অশুভ আলামত বা দুর্ভাগ্যের ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলতঃ শিরক করল’ (মুসনাদে আহমাদ ২/২২০)।
পহেলা বৈশাখকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি তৈরী করা এবং বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ তৈরী করে বানর, হনুমান, বাঘ, ভাল্লুক ইত্যাদি ঢঙে বাহারী রঙে সেজে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। আর যুবক যুবতীরা শরীরে উল্কি অংকন করে থাকে। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে নারী দেহে কিছু অঙ্কন করে এবং অন্যের দ্বারা করিয়ে নেই উভয়ের প্রতি আল্লাহ্র অভিশাপ’ (বুখারী হা/৫৯৩৩; মুসলিম হা/৫৬৮৭)। আবার ইসলামে প্রতিকৃতি কিংবা জীবন্ত বস্তুর ছবি তৈরি করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে (জীবন্ত বস্তুর) ছবি তৈরিকারীরা (মুসলিম হা/৫৬৫৯)। অন্যত্র বলেছেন, যে কেউ ছবি তৈরি করল, আল্লাহ তাকে (ক্বিয়ামতের দিন) ততক্ষণ শাস্তি দিতে থাকবেন, যতক্ষণ না সে এতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে কখনই তা করতে সমর্থ হবে না’ (বুখারী হা/২২২৫; মুসলিম হা/২১১০)।
অথচ ইসলামী বিধান মোতাবেক তা নিষিদ্ধ হারাম। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞভাবে অনর্থক কথা (বাদ্য-বাজনা) μয় করে এবং তাকে আনন্দ-ফূর্তি হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (লুক্বমান ৩১/৬)। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক এমন হবে যারা যেনা, সিল্ক (পুরুষের জন্য), মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী ২/৮৩৭ পৃঃ)।
মানব জাতির জন্য অশ্লীল বাদ্য গান বাজনা, অবৈধ যৌনাচার হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ’ (সূরা আল-ইসরা-১৭/৩২)। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোনভাবেই এই অশ্লীলতার নিকটে গমন করা যাবে না, এসম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটবর্তী হবে না, তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা অপ্রকাশ্যে হোক’ (সুরা আনআম-৬/১৫১)। আর পান্তা-ইলিশের নামে যে অপচয় করা হয় তা শয়তানের কর্ম বৈ কিছুই নয়।
মহান আল্লাহ তা‘আলা ‘তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় কর না, তিনি অপচয়কারীদের পসন্দ করেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। অন্যত্র আল্লাহ ‘যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই…’ (বানী ইসরাঈল ১৭/২৭)। এধরণের অপসংস্কৃতির নামে বিলাসিতা আর লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় না করে যদি অসহায় গরীব-দুঃখীদের সাহাযার্থে খরচ করা হত তাহলে কতইনা ভাল হত!
শেষ কথা : এখান থেকে এটাই প্রতিয়মাণ হয়, অমুসলিমদের উৎসবের সাথে মুসলমানদের কোনরূপ সম্পর্ক রাখা কিংবা সহযোগিতা করা জায়েয নয়। বৈশাখ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি মূলতঃ হিন্দুয়ানী প্রথা থেকে এসেছে। সুতরাং বিরত থাকা আবশ্যক।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ; ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, বাদশাহ আকবর নিজে বাঙালি বা বাংলাদেশী বা তার মাতৃভাষা বাংলা ছিলো না। আর বর্তমানে প্রচলিত বাংলা সন প্রকৃতপক্ষে মোগল বাদশাহ আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত ফসলী সন। তাহ’লে কি করে তার প্রবর্তিত ফসলী সন, বাংলা সন ও বাঙালিদের সন হতে পারে? ফসলী সন গণনা শুরুহয় ৯৬৩ হিজরীতে। আর উদ্ভব ঘটে ৯৯৩ হিজরীতে। যা ৫০০ বছরও অতিবাহিত হয়নি। তাহলে তা কি করে হাজার বছরের ঐতিহ্য হতে পারে? আবার বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক, বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ টিভির এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,‘পহেলা বৈশাখে পান্তা- ইলিশ বাংলাদেশের কোন সংস্কৃতি নয়।(দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ এপ্রিল ২০১৫)।
পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীকে উলংগ করে যুবকেরা হৈহুল্লোড় করে, ধর্ষন করে, নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যা অপ্রত্যাশিত। মানুষ দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তর উন্নত শিখরে পৌছে, নিজেকে প্রগতিবাদী হিসেবে দাবী তুলে নগ্নতাকে আলিঙ্গন করে প্রসূত শিশুর মত হতে বিভিন্ন দেশে ঐক্য করেছে যে, আমরা চিরন্তন নগ্ন থাকতে চায়। তাহলে কি তারা হিউম্যান থেকে এনিম্যালে পরিণত হতে চলেছে? আর এটা কি প্রগতির নামে প্রহসন নয়?
তাই আসুন! বিজাতীয় অপসাংস্কৃতির কালো আগ্রাসন থেকে নিজে ও সন্তানদের দুরে রাখার জন্য সার্বজনীন প্রগতিবাদ শাশ্বত দ্বীন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন, আমিন।
লেখাটি ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে মার্চ-এপ্রিল/17 সংখ্যাতে।