আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে আদম (আঃ)-এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের অধীনস্থদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও’ (নূর ২৪/৩২)।
বিবাহের গুরুত্ব :
বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তার দৃষ্টিকে সংযত করে যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ- ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম’।[বুখারী/৫০৬৫; মুসলিম/১৪০০; মিশকাত/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়; বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, تَزَوَّجُوا الْوَدُوْدَ الْوَلُوْدَ فَإِنِّىْ مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ ‘তোমরা স্নেহপরায়ণ বেশী সন্তান জন্ম দানকারিণীকে বিবাহ কর। কেননা আমি বেশী উম্মত নিয়ে (ক্বিয়ামতের দিন) গর্ব করব’।[আবূদাউদ হা/২০৫০; নাসাঈ হা/৩২২৭; ইরওয়াউল গালীল হা/১৭৮৪; মিশকাত হা/৩১৯১]
বিবাহ করা সুন্নাত :
রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’।[বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১; মিশকাত হা/১৪৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮]
পাত্রী নির্বাচনে চারটি গুণ অগ্রাধিকার দাও :
বিয়ের ক্ষেত্রে যে চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা উচিৎ। সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘সাধারণতঃ মেয়েদের চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা হয়- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তোমরা ধার্মিক মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। অন্যথায় তোমাদের উভয় হস্ত অবশ্যই ধূলায় ধূসরিত হবে’।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়]
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা :
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা রাখা উচিৎ। কিন্তু আমরা মনে করি তা ধন-সম্পদের সমতা। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সমতা ভিন্ন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَانْكِحُوا الأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ ‘তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা দেখে বিবাহ কর’।[ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭]
তবে বিবাহে সমতা হবে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আল্লামা নাছীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,ولكن يجب أن نعلم أن الكفاءة إنما هي في الدين والخلق فقط ‘তবে জানা আবশ্যক যে, সমতা হচ্ছে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে’।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭-এর আলোচনা দ্র.]
কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَرْضَوْنَ دِيْنَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوْهُ ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে বিবাহ দাও’।[তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০]
বড়ই আফসোসের বিষয়, বর্তমানে আমরা দ্বীনের সমতা বাদ দিয়ে বৈষয়িক বিষয়ে সমতা খুঁজে ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দিতে ইচ্ছুক। কারণ আমাদের লক্ষ্য আখিরাত নয়, বরং দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছি। সুখ-শান্তি ধন-সম্পদে নয়, দ্বীনদারিত্বের মধ্যেই রয়েছে। এটা খুব কম কম মানুষই অনুধাবন করে থাকে। অতএব হে যুবক! তোমরা অভাব মুক্ত হতে চাও তাহলে বিবাহ করে নাও। আল্লাহ বিবাহের কারণে দরিদ্রকে সম্পদশালী করে থাকেন। আল্লাহ বলেন, إِنْ يَكُوْنُوْا فُقَرَاء يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ- ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন’ (নূর ২৪/৩২)। ** শর্ত প্রযোজ্য : প্রকৃত মুমিন হতে হবে।
স্বামীর হক্ব আদায় করতে পারলে বিয়ে করো, নতুবা অবিবাহিতা থাকো। আবূ সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহ্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, هَذِهِ ابْنَتِي أَبَتْ أَنْ تَزَوَّجَ، فَقَالَ: أَطِيعِي أَبَاكِ كُلُّ ذٰلِكَ تُرَدِّدُ عَلَيْهِ مَقَالَتَهَا، فَقَالَتْ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَتَزَوَّجُ حَتَّى تُخْبِرَنِي مَا حَقُّ الزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ، فَقَالَ: حَقُّ الزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ لَوْ كَانَتْ بِهِ قُرْحَةٌ، فَلَحَسَتْهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ، فَقَالَتْ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا، فَقَالَ: لَا تُنْكِحُوهُنَّ إِلَّا بِإِذْنِهِنَّ. ‘হে আল্লাহ্র আসূল! আমার এই মেয়েটি বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। (কী করা যায়।) আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, ‘‘তুমি তোমার আববার কথা মেনে নাও। মেয়েটি বলল, আপনি বলুন, স্ত্রীর উপর তার স্বামীর হক কী? তিনি বললেন, স্বামীর এত বড় হক আছে যে, যদি তার নাকের দুই ছিদ্র থেকে রক্ত-পুঁজ বের হয় এবং স্ত্রী তা নিজের জিভ দ্বারা চেঁটে (পরিষ্কার করে), তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না! যদি মানুষের জন্য মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত হত, তাহলে আমি স্ত্রীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামী কাছে এলে তাকে সিজদা করে। যেহেতু আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর এত বড় মর্যাদা দান করেছেন। মেয়েটি বলল, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন! দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে আমি বিয়েই করব না। নবী (ছাঃ) বললেন, তোমরা ওদের অনুমতি ছাড়া ওদের বিবাহ দিয়ো না। মুস্তাদারিক হাকিম হা/২৭৬৭; ছহীহুল জামি‘ হা/৩১৪৮।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।