মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ধারক শর নিষিদ্ধ বস্তু

-মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আলগালিব
يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ
رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ-
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ
وَالْبَغْضَاء فِيْ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللهِ
وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُم مُّنْتَهُوْنَ-
আল্লাহ
বলেন
, হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, পূজার বেদী
ও ভাগ্য নির্ধারক শর সমূহ শয়তানের নাপাক কর্ম বৈ কিছুই নয়
অতএব
এগুলো থেকে বিরত হও
তাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবেশয়তান
তো কেবল চায়
, মদ
ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর
স্মরণ ও ছালাত হ
তে
তোমাদেরকে বাধা প্রদান করতে
অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি? (মায়েদাহ
৫/৯০-৯১)
উপরোক্ত
আয়াতে প্রধান চারটি হারাম বস্ত্ত হ
তে
বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
উল্লেখ্য যে, সূরা
মায়েদাহ কুরআনের শেষ দিকে নাযিল হওয়া সূরা সমূহের অন্যতম
অতএব
এখানে যে বস্ত্তগুলি হারাম ঘোষিত হয়েছে
, সেগুলি আর মনসূখ হয়নিফলে
তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত চিরন্তন হারাম হিসাবে গণ্য
অসংখ্য
নিষিদ্ধ বস্ত্তর মধ্যে এখানে প্রধান চারটির উল্লেখ করার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে
, এ চারটি
হারাম বস্ত্ত আরও বহু হারামের উৎস
অতএব এগুলি বন্ধ হলে অন্যগুলিও বন্ধ হয়ে যাবে
১. الْخَمْرُ অর্থ মদ خَمَرَ يَخْمُرُ خَمْرًا অর্থ سَتَرَ গোপন করাওড়নাকে
আরবীতে
খেমার (خِماَرٌ) বলা হয় এজন্য যে, তা মহিলাদের
মাথা ও বুক আবৃত করে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনخَمِّرُوا الآنِيَةَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا তোমরা তোমাদের পাত্র সমূহ ঢেকে রাখ এবং তার
উপরে আল্লাহর নাম স্মরণ কর
[1] ওমর ফারূক
(রাঃ) বলেন
الْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ   মদ তাই, যা মানুষের বিবেককে আচ্ছন্ন করে[2] সে সময় আরব
দেশে আঙ্গুর
, খেজুর, মধু, গম ও যব সহ
পাঁচটি বস্ত্ত থেকে মদ তৈরী হ
[3] তবে
প্রধানতঃ আঙ্গুর থেকেই সচরাচর মদ তৈরী হ
যেমন
বলা হয়েছে
النَّيُّ مِنْ مَاءِ الْعِنَبِ إِذَا غَلاَ
وَاشْتَدَّ وَبَلَغَ حَدَّ الْإِسْكَارِ-
 মদ
ল আঙ্গুরের কাঁচা রস যখন পচে
গরম হয় এবং ফুলে ফেনা ধরে যায় ও চূড়ান্ত নেশাকর অবস্থায় পৌঁছে যায়

আঙ্গুরের
কাঁচা রস পচে ফেনা ধরে গেলে তাতে নেশা সৃষ্টি হয়
, যাতে মানুষের স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি লোপ
পেয়ে যায়
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পচা-সড়া জিনিষ দিয়ে মদ
তৈরী হয়
যেমন বাংলাদেশে পচা পান্তা, পচা খেজুর
রস
, তালের
রস ইত্যাদি দিয়ে দেশী মদ ও তাড়ি বানানো হয়
এছাড়াও
রয়েছে তামাক
, গাঁজা, আফিম
প্রভৃতি বহু প্রাচীন মাদক সমূহ
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি
ব্যবহার করে হিরোইন
,
ফেন্সিডিল, ইয়াবা
ট্যাবলেট
, পেথিড্রিন
ইনজেকশন ইত্যাদি নানাবিধ নেশাকর বস্ত্ত নামে-বেনামে তৈরী হচ্ছে
যা
সবই এক কথায় মাদক দ্রব্য বা মদ
মদ সাময়িকভাবে দেহের মধ্যে
উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও চূড়ান্তভাবে তা মানুষকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করে
মদ
হারাম হওয়ার বিবরণ
ইসলাম
মানুষের স্বভাবধর্ম
মানুষ সাধারণত নেশার গোলামতাই
মানুষের স্বভাব বুঝে আল্লাহ ক্রমধারা অনুযায়ী এটাকে নিষিদ্ধ করেছেন
শিশুকে
বুকের দুধ ছাড়াতে মা যেমন ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেন
, স্নেহশীল
পালনকর্তা আল্লাহ তেমনি বান্দাকে মদের কঠিন নেশা ছাড়াতে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন
করেছেন
সে সময় আরবরা ছিল দারুণভাবে মদে অভ্যস্তমদ্যপান
ছিল সে যুগে আভিজাত্যের প্রতীক
আরব-আজম সর্বত্র ছিল এর ব্যাপক
প্রচলন
তাই ইসলাম প্রথমে তার অনুসারীদের মানসিকতা
তৈরী করে নিয়েছে
তারপর চূড়ান্তভাবে একে নিষিদ্ধ করেছেআর
যখনই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে
, তখনই তা বাস্তবায়িত হয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেএজন্য
কোন যবরদস্তি প্রয়োজন হয়নি
মদ
নিষিদ্ধের জন্য পরপর তিনটি আয়াত নাযিল হয়
বাক্বারাহ
২১৯
, নিসা
৪৩ ও সবশেষে মায়েদাহ ৯০-৯১
প্রতিটি আয়াত নাযিলের মধ্যে
নাতিদীর্ঘ বিরতি ছিল এবং মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের অবকাশ ছিল
প্রতিটি
আয়াতই একেকটি ঘটনা উপলক্ষে নাযিল হয়
যাতে মানুষ নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব
উপলব্ধি করে তাকে সহজে গ্রহণ করে নেয়
যেমন (১)
কিছু ছাহাবী এসে মদের অপকারিতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন
এবং এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ কামনা করেন
তখন নাযিল
হয়
,
يَسْأَلُوْنَكَ
عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ
لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا- (البقرة
২১৯)-
তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেআপনি
বলে দিন যে
,
দু
টির মধ্যে রয়েছে বড় পাপ ও
মানুষের জন্য রয়েছে কিছু উপকারিতা
তবে এ দুটির পাপ এ দুটির
উপকারিতার চাইতে অধিক
(বাক্বারাহ
২/২১৯)
এ আয়াত নাযিলের ফলে বহু লোক মদ-জুয়া ছেড়ে দেয়তবুও
কিছু লোক থেকে যায়
অতঃপর
(২) একদিন এক ছাহাবীর বাড়ীতে মেযবানী শেষে মদ্যপান করে একজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন
অন্যজন
ছালাতে ইমামতি করতে গিয়ে সূরা কাফিরূণে
 نَحْنُ نَعْبُدُ
مَا تَعْبُدُونَ
পড়েনযার অর্থ আমরা ইবাদত করি তোমরা যাদের ইবাদত কর[4] যাতে আয়াতের
মর্ম একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায়
তখন আয়াত নাযিল হয়,
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ
سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ- (النساء 43)-
 হে
মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না
যতক্ষণ
না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার
(নিসা ৪/৪৩)
আয়াত নাযিলের পর মদ্যপায়ীর সংখ্যা আরও হরাস পায়
পরে
(৩) একদিন জনৈক ছাহাবীর বাড়ীতে খানাপিনার পর মদ্যপান শেষে কিছু মেহমান অজ্ঞান হয়ে
পড়েন
এ সময় জনৈক মুহাজির ছাহাবী নিজের বংশ গৌরব
কাব্যাকারে বলতে গিয়ে আনছারদের দোষারোপ করে কবিতা বলেন
তাতে
একজন আনছার যুবক তার মাথা লক্ষ্য করে উটের হাড্ডি ছুঁড়ে মারেন
তাতে
তার নাক মারাত্মকভাবে আহত হয়
পরে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকট পেশ করা হয়
তখন সূরা মায়েদাহর আলোচ্য
আয়াতদ্বয় নাযিল হয়
[5]
হযরত
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন
, ছাহাবী আবু ত্বালহা আনছারীর বাড়ীতে মেযবানী
শেষে
ফাযীহ
(
الفضيح ) নামক
উন্নতমানের মদ্যপান চলছিল
এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
পক্ষ থেকে একজন ঘোষক উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে যান
 أَلاَ إِنَّ الْخَمْرَ قَدْ حُرِّمَتْ হুঁশিয়ার
হও! মদ হারাম করা হয়েছে
[6]
ওমর
ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে
, মদ সম্পর্কে তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে
বলেন
اللهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِى الْخَمْرِ بَيَانًا
شَافِيًا
 হে আল্লাহ!
আমদেরকে মদ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন
পরে
বাক্বারাহ ২১৯ আয়াত নাযিল হয়
তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে
ডেকে আয়াতটি শুনিয়ে দেন
তখন ওমর (রাঃ) পুনরায় পূর্বের
ন্যায় দো
আ করেনতখন
নিসা ৪৩ আয়াতটি নাযিল হয়
তখন পূর্বের রাসূল (ছাঃ) তাকে
ডেকে আনেন ও আয়াতটি শুনিয়ে দেন
কিন্তু ওমর (রাঃ) পুনরায়
পূর্বের ন্যায় দো
আ করেনতখন
মায়েদাহ ৯০-৯১ আয়াতদ্বয় নাযিল হয়
তখন ওমর (রাঃ)-কে ডেকে এনে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে শুনিয়ে দেন
এবারে তিনি খুশী হয়ে বলে ওঠেনانْتَهَيْنَا এখন আমরা
বিরত হলাম
(অর্থাৎ আর দাবী করব না)[7] আবু
মায়সারাহ বলেন
, মদ
নিষিদ্ধের আয়াত নাযিল হয়েছিল ওমর (রাঃ)-এর কারণে (কুরতুবী
, মায়েদাহ ৯০)
ত্বীবী
বলেন
, সূরা
মায়েদাহর অত্র আয়াতে মদ নিষিদ্ধের পক্ষে ৭টি দলীল রয়েছে
।-
(১) মদকে رِجْسٌ বলা হয়েছেযার
অর্থ নাপাক বস্ত্ত (২) একে
مِنْ عَمَلِ
الشَّيْطَانِ 
 বা শয়তানী কাজ বলা হয়েছে, যা করা
নিষিদ্ধ (৩) বলা হয়েছে
 فَاجْتَنِبُوهُ তোমরা
এ থেকে বিরত হও
আল্লাহ
যা থেকে বিরত থাকতে বলেন
,
তা নিঃসন্দেহে হারাম (৪) বলা হয়েছে لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ
 যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও
অর্থাৎ
যা থেকে বিরত থাকার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে
, তা অবশ্যই নিষিদ্ধ (৫) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ
الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ
শয়তান
মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়
অর্থাৎ যার মাধ্যমে এগুলি সৃষ্টি
হয়
, তা
নিঃসন্দেহে হারাম (৬) বলা হয়েছে
وَيَصُدَّكُمْ
عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ
 আল্লাহর
স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখে
এক্ষণে
যার মাধ্যমে শয়তান এই দুষ্কর্মগুলি করে
, তা অবশ্যই নিষিদ্ধ (৭) فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ অতএব
তোমরা কি নিবৃত্ত হবে
? অর্থ انتهوا তোমরা
নিবৃত্ত হও
অতএব
আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের যে কাজ হ
তে
বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে হারাম
[8]
উল্লেখ্য
যে
, নিসা
৪৩ আয়াতটির শানে নুযূলে হযরত আলী (রাঃ) সূরা কাফিরূণ যোগ-বিয়োগ করে পড়েছিলেন বলে
যে বর্ণনা এসেছে
, তাতে
সনদ ও মতন দু
ক্ষেত্রেই
পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে
যেমন মুনযেরী বলেন, অন্য সনদে
এসেছে যে
, সুফিয়ান
ছওরী এবং আবু জা
ফর রাযী
আত্বা ইবনুস সায়েব হতে বর্ণনা করেছেন
অথচ এখানে
এসেছে
, সুফিয়ান
ছওবী আত্বা ইবনুস সায়েব থেকে বর্ণনা করেছেন
অতঃপর মতনে
ইখতেলাফ এই যে
, আবুদাঊদের
বর্ণনায় (হা/৩৬৭১) এসেছে যে
, আলী ও আব্দুর রহমান বিন আওফকে জনৈক আনছার
ছাহাবী দাওয়াত দেন
অতঃপর খানাপিনা শেষে আলী (রাঃ)
মাগরিবের ছালাতে ইমামতি করেন ও সূরা কাফেরূণে ভুল করেন
অন্যদিকে
তিরমিযীর বর্ণনায় (হা/৩০২৬) এসেছে
, আব্দুর রহমান বিন আওফ আলী (রাঃ)-কে দাওয়াত
দেন
যেখানে তাঁকে ইমামতিকে এগিয়ে দেওয়া হয় এবং
তিনি সূরা কাফেরূণে যোগ-বিয়োগ পড়েন
নাসাঈতে এসেছে ইমামতি করেন
আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)
আবুবকর আল-বাযযার-এর বর্ণনায়
এসেছে
, তাঁরা
জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন ও তিনি ছালাতে ইমামতি করেন
বর্ণনায়
উক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি
অন্য হাদীছে এসেছে فَتَقَدَّمَ بَعْضُ الْقَوْمِ فَصَلَّى بِهِمْকওমের জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যান ও ইমামতি করেন[9]
ইবনু
জারীরের বর্ণনায় এসেছে
,
আব্দুর রহমান বিন আওফ ইমামতি করেন এবং আয়াত গোলমাল করে পড়েন أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ- وَأَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ- আমি ইবাদত করি যাদের তোমরা ইবাদত কর এবং
তোমরা ইবাদত কর আমি যার ইবাদত করি
[10] হাকেম-এর
বর্ণনায় এসেছে
, আলী
(রাঃ) বলেন
,
دَعَانَا رَجُلٌ
مِنْ الْأَنْصَارِ قَبْلَ تَحْرِيمِ الْخَمْرِ فَحَضَرَتْ صَلاَةُ الْمَغْرِبِ
فَتَقَدَّمَ رَجُلٌ فَقَرَأَ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ فَأُلْبِسَ
عَلَيْهِ، فَنَزَلَتْ لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى
تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ الآية- هذا حديث صحيح ولم يخرجاه- وقال الذهبي : صحيح-
আমাদেরকে জনৈক আনছার ব্যক্তি দাওয়াত দেন মদ
হারাম হওয়ার পূর্বে
এমন সময় মাগরিবের ছালাতের
ওয়াক্ত হয়ে যায়
তখন জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যায় ও ছালাতে সূরা
কাফিরূণ পাঠ করে
কিন্তু তাতে যোগ-বিয়োগ করেতখন
নাযিল হয় সূরা নিসা ৪৩ আয়াতের প্রথমাংশ
ইমাম
হাকেম বলেন
, হাদীছটি
ছহীহ
কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা
করেননি
ইমাম
যাহাবীও হাদীছটিকে
ছহীহ
বলেছেনঅতঃপর
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকেম বলেন
,
وَفِي هَذَا
الْحَدِيثِ فَائِدَةٌ كَبِيرَةٌ وَهِيَ أَنَّ الْخَوَارِجَ تَنْسُبُ هَذَا
السُّكْرَ وَهَذِهِ الْقِرَاءَةَ إِلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيِّ بْنِ أَبِي
طَالِبٍ دُونَ غَيْرِهِ وَقَدْ بَرَّأَهُ اللهُ مِنْهَا فَإِنَّهُ رَاوِيُ
الْحَدِيْثِ-
অত্র হাদীছে বহু উপকারিতা রয়েছেআর
তা এই যে
, (আলীর
দুশমন) খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে আমীরুল মুমেনীন আলী
ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধ করে
, অন্যের দিকে নয়অথচ
আল্লাহ তাঁকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন
কেননা তিনিই
এই হাদীছের রাবী
[11] অতএব
ব্যাপারটিতে হযরত আলী (রাঃ) বা কোন একজন ছাহাবীকে নির্দিষ্ট করা ঠিক হবে না
২. الْمَيْسِرُ অর্থ জুয়া يَسَرَ يَيْسِرُ يَسْرًا জুয়া খেলা, অনুগত হওয়া, সহজ হওয়া, বাম দিক
থেকে আসা ইত্যাদি
 يسر لي كذا إذا
وجب
 ওয়াজিব
হওয়া
 الياسر أي الجازر অর্থ কসাই, গোশত
বন্টনকারী
জাহেলী
আরবে নিয়ম ছিল যে
, তারা
উট যবহ করত
অতঃপর তা ২৮ বা ১০ ভাগ করতঅতঃপর
তাতে তীরের মাধ্যমে লটারী করত
কোন তীর অংশহীন থাকতকোন
তীরে দুই বা তিন অংশ চিহ্ন দেওয়া থাকত
অতঃপর
সেগুলি একটা পাত্রে রেখে নাড়াচাড়া করে সেখান থেকে এক একটা তীর বের করে নিতে বলা হ
ফলে যার
তীরে বেশী উঠত
, সে
বেশী অংশ নিত
আর যার তীর অংশবিহীন থাকত, সে খালি
হাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে ফিরে যেত (মিছবাহুল লুগাত)
এভাবে
তীর দ্বারা গোশতের অংশ বণ্টন করা থেকেই
 الياسر হয়েছেঅর্থ اللاعب بالقِداحতীরের মাধ্যমে জুয়া খেলুড়ে বা জুয়াড়ী
(কুরতুবী
, বাক্বারাহ
২১৯)
বস্ত্ততঃ জুয়ার মাধ্যমে প্রতারণা করে অন্যের
মাল সহজে হাছিল করা হয় বলে একে
মাইসির (الميسر) বলা হয়
সাঈদ
ইবনুল মুসাইয়িব বলেন
,
জাহেলী যুগে উটের গোশতের ভাগ একটি বা দুটি
বকরীর বিনিময়ে বিক্রি হ
যুহরী
রাজ থেকে বর্ণনা করেন যে, মাল ও ফলের
ভাগও মানুষ ক্রয় করত ভাগ্য নির্ধারণী তীর
নিক্ষেপের মাধ্যমে
(
তাফসীর ইবনু কাছীর)ইমাম মালেক (রহঃ) সাঈদ ইবনুল
মুসাইয়িব হতে বর্ণনা করেন
نَهَى عَنْ
بَيْعِ الْحَيَوَانِ بِاللَّحْمِ
 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গোশতের বিনিময়ে পশু বিক্রয়
করতে নিষেধ করেছেন
[12] ইমাম মালেক
(রহঃ) বলেন
, মাইসির দুধরনেরএকটি হল খেলা-ধুলা (اللهو)অন্যটি
, জুয়া (القِمار)খেলা-ধুলার মাইসির হ, নারদ (পাশা খেলা), শাতরাঞ্জ
(দাবা খেলা) ও সবরকমের খেলা-ধুলা
আর জুয়ার মাইসির হ, মানুষ যেসব বিষয়ে বাজি ধরে ও জুয়া খেলেহযরত
আলী (রাঃ) বলেন
, শতরঞ্জ
বা দাবা খেলা মাইসিরের অন্তর্ভুক্ত (কুরতুবী
, ইবনু কাছীর)রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ
يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ
 যে ব্যক্তি
নারদশীর (পাশা) খেলল
,
সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তের মধ্যে নিজের হাত ডুবালো[13] তিনি বলেনمَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ যে ব্যক্তি নারদশীর খেলল, সে আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল
[14]
উপরোক্ত
খেলা দু
টি পারস্য
দেশীয়
যা আরবদের মধ্যে চালু হয়যাতে
জুয়া মিশ্রিত ছিল
মাইসির
নিষিদ্ধ হওয়ার মূল কারণ হল জুয়াযার মাধ্যমে অর্থের লোভে মানুষ
ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হয়
এই সাথে অনর্থক খেলা-ধূলাকেও
মাইসির-এর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে
উল্লেখ্য
যে
, খেলা-ধূলা
বিষয়ে শরী
আতের
দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নরূপ:
(১) হারাম : (ক) যে
সম্পর্কে শরী
আতে স্পষ্ট
নিষেধাজ্ঞা এসেছে
যেমন- দাবা, পাশা
ইত্যাদি (খ) যে খেলায় প্রাণীর ছবি
, নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনা থাকে (গ) যে খেলা
ঝগড়া-বিবাদ ও নোংরামিতে প্ররোচিত করে (ঘ) যে খেলায় অহেতুক অর্থের ও সময়ের অপচয় হয়
(২) জায়েয : (ক) সৈনিকদের
কুচ-কাওয়াজ
, অস্ত্র
চালনা
, তীর
নিক্ষেপ ইত্যাদি
[15] (খ) সাতার কাটা[16]
(৩) শর্তাধীনে
জায়েয :
 (ক)
যদি ঐ খেলার সাথে জুয়া যুক্ত না থাকে (খ) যদি ঐ খেলা কোন ফরয কাজে বাধা না হয়
যেমন
ছালাত
, ছিয়াম
প্রভৃতি (গ) যদি ঐ খেলা কোন ওয়াজিব কাজে বাধা না হয়
যেমন
পিতা-মাতার আনুগত্য
,
পারিবারিক দায়িত্ব পালন, লেখা-পড়া ও জ্ঞানার্জন প্রভৃতি (ঘ) যদি ঐ
খেলায় কোন অপব্যয় না থাকে (ঙ) যদি ঐ খেলায় অধিক সময়ের অপচয় না হয় (চ) যদি ঐ খেলা
ইসলামী শালীনতা বিরোধী না হয়
যেমন হাঁটুর উপরে কাপড় তোলা, মেয়েদের
প্রকাশ্যে খেলা করা ইত্যাদি
স্বাস্থ্যরক্ষার
জন্য দৈনিক কিছু সময়ের জন্য শরীর চর্চা ও নির্দোষ খেলা-ধূলা ইসলামে জায়েয
এতদ্ব্যতীত
স্রেফ আনন্দ-ফূর্তির জন্য খেলা-ধূলা ইসলামে অনুমোদিত নয়
আল্লাহ
বলেন
الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا
وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فَالْيَوْمَ نَنْسَاهُمْ كَمَا نَسُوا
لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ-
 যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্ত্ততে
পরিণত করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছিল
, আজকে আমরা
তাদের ভুলে যাব
যেমন তারা এদিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল
এবং তারা আমার আয়াত সমূহকে অস্বীকার করেছিল
(রাফ ৭/৫১)
মদ, জুয়া
নিষিদ্ধের কারণ হিসাবে মায়েদাহ ৯১ আয়াতে আল্লাহ বলেন যে
, শয়তান এর
মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে
ও ছালাত হতে তোমাদের বিরত রাখে
অতএব
যেসব খেলা পরস্পরে শত্রুতা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং ছালাত ও আল্লাহর স্মরণ থেকে
বিরত রাখে
, সে
সব খেলায় আর্থিক জুয়া থাক বা না থাক
, তা অবশ্যই নিষিদ্ধ এবং তা মাইসির-এর
অন্তর্ভুক্ত
ক্বাসেম বিন মুহাম্মাদ বলেনكُلُّ مَا أَلْهَى عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ، فَهُوَ
مِنَ الْمَيْسِرِ-
 প্রত্যেক
বস্ত্ত যা আল্লাহর স্মরণ হতে এবং ছালাত হ
তে
মানুষকে ভুলিয়ে রাখে
,
সেটাই মাইসির
(
তাফসীর ইবনু কাছীর)
ইমাম
কুরতুবী বলেন
, প্রত্যেক
খেলা যা আপোষে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এবং ছালাত ও আল্লাহর স্মরণ থেকে
বিরত রাখে
, তা
মদ্যপানের ন্যায় এবং তা হারাম হওয়া ওয়াজিব
আর এটা জানা
কথা যে
, মদ
মানুষকে নেশাগ্রস্তকরে
কিন্তু জুয়া নেশাগ্রস্ত করে নাএতদসত্ত্বেও
এদু
টিকে আল্লাহ সমভাবে হারাম
করেছেন মর্মগত দিক দিয়ে দু
টির
পরিণতি একই হওয়ার কারণে
দ্বিতীয়তঃ স্বল্প পরিমাণ মদ
মাদকতা আনে না
, যেমন
দাবা ও পাশা খেলা মাদকতা আনে না
তবুও অল্প পরিমাণ মদ যেমন হারাম
বেশী পরিমাণের ন্যায়
ঐসব খেলাও তেমনি হারামতৃতীয়তঃ
মদ্যপানের পর মাদকতা আসে ও তা ছালাত থেকে উদাসীন করে
পক্ষান্তরে
খেলার শুরুতেই উদাসীনতা আসে
, যা হৃদয়ের উপর মদের ন্যায় আচ্ছন্নতা নিয়ে আসেফলে
মদ ও খেলার ফলাফল একই হওয়ার কারণে একইভাবে দু
টিকে
হারাম করা হয়েছে
[17] অতএব উপরোক্ত শর্তাদি পাওয়া গেলে সকল ধরনের
খেলা-ধূলা হারাম বলে গণ্য হবে
এইসব কাজে অর্থ দিয়ে, সময় ও শ্রম
দিয়ে
, বুদ্ধি
ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা ও উৎসাহিত করা অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতা করার শামিল
যা
ইসলামে নিষিদ্ধ
 (মায়েদাহ
৫/২)
আল্লাহ বলেনإِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَئِكَ كَانَ
عَنْهُ مَسْئُوْلاً
 নিশ্চয়ই
তোমার কান
, চোখ
ও হৃদয় প্রত্যেকটি সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন তুমি জিজ্ঞাসিত হবে

(
বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৬)
৩. اَلْأَنْصَابُ একবচনে النَّصَبُ নিদর্শন হিসাবে দাঁড় করানো কোন ঝান্ডা বা
স্তম্ভ
(মিছবাহ)একবচনে النُّصُبُ তে
পারে
যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেوَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِযা
বেদীতে যবহ করা হয়
(মায়েদাহ ৩)ইবনু
আববাস
, মুজাহিদ, আত্বা
প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন
,هِيَ حِجَارَةٌ كَانُوْا يَذْبَحُوْنَ
قَرَابِيْنَهُمْ عِنْدَهَا
 এটি হ
সেই সব পাথর
, যেখানে
জাহেলী যুগের আরবরা পশু কুরবানী করত (ইবনু কাছীর)
ইবনু
জুরায়েজ বলেন
, লোকেরা
মক্কায় এগুলি যবহ করত
অতঃপর বায়তুল্লাহর সামনে এগুলির
রক্ত ছিটিয়ে দিত ও গোশত বেদীর মাথায় রাখত
এ সময় কাবার চারদিকে ৩৬০টি এরূপ বেদী ছিল (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)এগুলির
মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য কামনা করত
ইসলাম আসার
পর এগুলিকে হারাম ঘোষণা
যদিও যবহের সময় তার উপরে
আল্লাহর নাম নেওয়া হয় (ইবনু কাছীর)
কেননা এর ফলে ঐ পাথরকে সম্মান
করা হয় (কুরতুবী)
যা স্থানপূজার শিরকের অন্তর্ভুক্ত
বর্তমান
যুগে বিভিন্ন পীর-আউলিয়ার কবরে
হাজত
দেওয়ার নামে যেসব পশু বিসমিল্লাহ
বলে যবহ করা হয়,
তা উক্ত শিরকের অন্তর্ভুক্তযা স্পষ্টভাবে হারামএকইভাবে
শহীদ বেদী
, শহীদ
মিনার
, স্মৃতিসৌধ
ইত্যাদি যেখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়
, সবই এর অন্তর্ভুক্ত
৪. اَلْأَزْلاَمُ একবচনে زَلَمٌ বা زُلَمٌ অর্থ পাখনা বিহীন তীর, ভাগ্য
নির্ধারণী তীর
এখানে জুয়ার তীর বা শরযার
মাধ্যমে জাহেলী যুগের আরবরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করত
ইবনু
কাছীর বলেন
, আরবদের
নিকট
আযলাম
ছিল দুধরনেরএকটি
ছিল ভাল-মন্দ নির্ধারণ করার জন্য
অন্যটি ছিল জুয়াঅত্র
আয়াতে জুয়াকে হারাম করা হয়েছে
এর বিপরীতে ভাল-মন্দ নির্ধারণে
আল্লাহর শুভ ইঙ্গিত কামনা করে ছালাতুল ইস্তিখারাহ আদায়ের নির্দেশ এসেছে হাদীছে
[18] ফলে উভয়
অবস্থায়
আযলাম
নিষিদ্ধ করা হ
অন্য
আয়াতে একে
 فِسْقٌ অর্থাৎ পাপকর্ম বলা হয়েছেযেমন
আল্লাহ বলেন
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ
الْخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ
وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ
إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا
بِالْأَزْلاَمِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ
 তোমাদের উপর
হারাম করা হ
ল মৃত
প্রাণী
, (প্রবাহিত)
রক্ত
, শূকরের
গোশত
, যা
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গীত হয়েছে… এবং জুয়ার তীর দ্বারা যেসব অংশ তোমরা
নির্ধারণ করে থাক
এসবই পাপ কর্ম
(
মায়েদাহ ৩)ইবনু জারীর বলেনالاستقسام অর্থ طلب القسم অংশ
দাবী করা
জাহেলী
যুগে
আযলাম
ছিল তিন ধরনেরযেমন একটি তীরে লেখা থাকত إِفْعَلْ তুমি করএকটিতে লেখা থাকত لاَ تَفْعَلْ করো নাআরেকটিতে কিছুই লেখা থাকত নাঅতঃপর
যে ব্যক্তি যেটা তুলত
,
সেটাকেই সে আল্লাহর নির্দেশ মনে করতকিন্তু যখন
খালিটা হাতে উঠত
, তখন
সে পুনরায় লটারি করত
যতক্ষণ না আদেশ বা নিষেধের তীর
হাতে আসত (ইবনু কাছীর)
মক্কা
বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা
বা
গৃহে প্রবেশ করে ইবরাহীম ও ইসমাঈলের মূর্তিতে তাদের হাতে ধরা ভাগ্যতীর দেখতে পান
তিনি
সেগুলি হটিয়ে দিয়ে বললেন
لَقَدْ عَلِمُوْا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ আল্লাহ ওদের ধ্বংস করুনওরা
ভাল করেই জানে যে
,
দু
জন ব্যক্তি কখনোই এভাবে ভাগ্য
নির্ধারণ করতেন না
[19]
বর্তমান
যুগে পাখির মাধ্যমে বা রাশি গণনার মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়
কেউ
শান্তির প্রতীক মনে করে পায়রা উড়িয়ে শুভ কামনা করেন
কেউ
বিশেষ কোন দিন বা সময়কে শুভ ও অশুভ গণ্য করেন
কেউ
মৃত পীরের খুশী ও নাখুশীকে মঙ্গল বা অমঙ্গলের কারণ বলে ধারণা করেন
এসবই
আযলামের
অন্তর্ভুক্ত যা নিষিদ্ধ এবং স্পষ্টভাবে শিরক
আলোচ্য
আয়াতে বর্ণিত চারটি বস্ত্তর মধ্যে প্রধান হ
মদচাই
তা প্রাকৃতিক হৌক বা রাসায়নিক হৌক
প্রাকৃতিক মদ যেমন, পানীয় মদ, তাড়ি, আফিম, গাঁজা, চরস, হাশিশ, মারিজুয়ানা
ইত্যাদি এবং তামাক ও যাবতীয় তামাকজাত দ্রব্য
রাসায়নিক
মদ
, যেমন
হেরোইন
, ফেনসিডিল, কোকেন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, ইয়াবা, সীনেগ্রা, আইসপিল এবং
সকল প্রকার মাদক দ্রব্য
এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের ও
বিভিন্ন নামের অগণিত বাংলা মদ ও বিদেশী মদ
মাদকের
কুফল :
বর্তমান
বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তামাকজাত দ্রব্য এবং মাদক
দ্রব্য
যা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের
ভবিষ্যৎ তরুণ-তরুণীদের জীবন ও পরিবার এবং ধ্বসিয়ে দিচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের
ভিত্তিমূল
সেই সাথে মাদক ব্যবসা বর্তমান বিশ্বে তৃতীয়
বৃহত্তম ও সবচেয়ে
 
লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হওয়ায় চোরাকারবারীরা এই ব্যবসায়ের প্রতি বেশী ঝুঁকে
পড়েছে
তাছাড়া ভৌগলিক কারণে এবং রাজনৈতিক ও
প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মাদক পাচারের আন্তর্জাতিক রুট
অধিকন্তু
পার্শ্ববর্তী বৃহৎ রাষ্ট্রটি ইচ্ছাকৃতভাবে এদেশের উঠতি বয়সের তরুণদের ধ্বংস করার
নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য তাদের সীমান্তে অসংখ্য হেরোইন ও ফেনসিডিল কারখানা
স্থাপন করেছে এবং সেখানকার উৎপাদিত সব মাদক দ্রব্য এদেশে ব্যাপকভাবে পাচার করছে
উভয় দেশের চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে
এছাড়া স্থল, নৌ ও বিমান
পথের কমপক্ষে ৩০টি রুট দিয়ে এদেশে মাদক আমদানী ও রফতানী হচ্ছে
ফলে
দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে
সরকারী
মাদক অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট মাদকাসক্তের ৯০ শতাংশই কিশোর
, যুবক ও
ছাত্র-ছাত্রী
যাদের ৫৮ ভাগই ধূমপায়ী৪৪
ভাগ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত
মাদকাসক্তদের
গড় বয়স কমতে কমতে এখন ১৩ বছরে এসে ঠেকেছে
আসক্তদের ৫০
শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩৭ বছরের মধ্যে
এইসাথে বিস্ময়কর তথ্য হল এই যে, দেশের মোট মাদকসেবীর অর্ধেকই উচ্চ শিক্ষিতএভাবে
ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও দিন-মজুর
, বাস-ট্রাক, বেবীট্যাক্সি ও রিকশাচালকদের মধ্যেও রয়েছে
ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তি
আর এটা জানা কথা যে, মাদকাসক্তি
ও সন্ত্রাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত
বর্তমান
বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি তামাকসেবীর
মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ হল নারীবাংলাদেশের
৪৩ ভাগ লোক তামাকসেবী
আর তামাক ব্যবহারকারীদের শতকরা
৫৮ ভাগ হ
ল পুরুষ ও
২৯ ভাগ নারী
ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবী নারীর সংখ্যা শতকরা ২৮
এবং পুরুষের সংখ্যা ২৬
অর্থাৎ নারীরা তামাক-জর্দা-গুল
ইত্যাদি বেশী খায় এবং পুরুষেরা বিড়ি-সিগারেট বেশী খায়
সম্ভবতঃ
লোক-লজ্জার ভয়ে নারীরা প্রকাশ্য ধূমপান থেকে বিরত থাকে
কিন্তু
পুরুষদের মধ্যে এই লজ্জা দিন-দিন কমে যাচ্ছে
এমনকি
দাড়ি-টুপীওয়ালা ব্যক্তিও এখন প্রকাশ্যে ধূমপানে লজ্জাবোধ করে না
ফলে
তাদের দেখাদেখি সাধারণ লোকেরা আরও বেশী উৎসাহিত হচ্ছে
নিঃসন্দেহে
ঐসব দাড়িওয়ালা ধূমপায়ীরা অন্যদের চেয়ে বেশী পাপের অধিকারী হবে
ধূমপানে
বিষপান
কেননা বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় নিকোটিনসহ
৪০০০-এর মত রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে
যারা
এগুলো খায় তারা টাকা দিয়ে স্রেফ বিষ কিনে খায়
এজন্য
নিকোটিনকে
খুনী
বলা হয়কেননা সে প্রথমে ধূমপায়ীর স্বাস্থ্যহানি ঘটায়অতঃপর
তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়
অথচ গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা ৯৮ জন
মাদকাসক্ত শুরুতে ধূমপানের মাধ্যমেই নেশার জগতে প্রবেশ করেছে
অনেকে
সখের বশে
, কেউ
বন্ধু-বান্ধবের চাপে
,
কেউ হতাশায় ভুগেমদ ও জুয়ার মধ্যে কিছু উপকারিতা
থাকার পরেও আল্লাহ তা হারাম করেছেন
অথচ তামাক ও ধূমপানে কোনই উপকার
নেই
বরং শতকরা একশ ভাগই ক্ষতি এবং সবটাই অপচয়ধূমপায়ীরা
বছরে কোটি কোটি টাকা স্রেফ ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়
এরা
শয়তানের গোলাম
আল্লাহ বলেন, অপচয়কারীরা
শয়তানের ভাই
(বনু ইস্রাঈল ১৭/২৭)ফলে
তামাক ও ধূমপান মদ ও জুয়ার চেয়েও নিকৃষ্ট
আর যারা
এগুলি খায়
, তারা
কতদূর জঘন্য
, সহজে
অনুমেয়
তামাক গাছ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকরএই
গাছ মাটির এমন কিছু উপাদানকে নষ্ট করে দেয়
, যা অন্যান্য ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে বাধার
সৃষ্টি করে
সকলেই জানেন যে, তামাক গাছ
ছাগল
, কুকুর
এমনকি শূকরেও খায় না
অথচ মানুষে খায়তামাক
ও ধূমপান এমন এক খাদ্য
,
যা ক্ষুধা মেটায় না,
পুষ্টিও যোগায় নাযা কেবল জাহান্নামীদের খাদ্যের
সাথেই তুলনীয়
যেখানে আল্লাহ বলেছেনلاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ যা
তাদের পুষ্ট করবে না
,
ক্ষুধাও মিটাবে না (গাশিয়াহ
৮৮/৭)
মাদকের
কুফল শারীরিক
, মানসিক, সামাজিক ও
অর্থনৈতিক সবদিকেই রয়েছে
এর (১) শারীরিক (Physical) কুফলের
মধ্যে প্রধান হ
, (ক) ফুসফুস
আক্রান্ত হওয়া
ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, হৃৎপিন্ড বড় হওয়া, হার্ট ব্লক, হার্ট
অ্যাটাক ইত্যাদি
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের ফলে ফুসফুস
ও মুখগহবরের ক্যান্সার সহ ২৫ প্রকার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

ছাড়াও ধূমপায়ীদের আশপাশের অধূমপায়ীগণ ঐসব রোগ হওয়ার ৩০ শতাংশ ঝুঁকির মধ্যে থাকে
। (খ)
পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র আক্রান্ত হওয়া
ফলে অরুচি, এ্যাসিডিটি, আমাশয়, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন
ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ হয় (গ) প্রজননতন্ত্র আক্রান্ত হওয়া
ফলে
যৌনক্ষমতা হরাস
, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী
বা খুঁৎওয়ালা
  সন্তান
জন্মদান
, সিফিলিস, গণোরিয়া, এইডস
প্রভৃতি দূরারোগ্য ব্যাধির সম্ভাবনা দেখা দেয়
এছাড়াও
বিভিন্ন চর্মরোগ হ
তে পারেসর্বোপরি
শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হরাস পায়
ফলে
যেকোন সময় যেকোন ধরনের জীবাণু দ্বারা সহজেই একজন মাদকসেবী আক্রান্ত হয়
অনেক
মাদকদ্রব্য আছে
, যা
সেবনে কিডনী বিনষ্ট হয়
মস্তিষ্কের লক্ষ লক্ষ সেল ধ্বংস
হয়ে যায়
কোন চিকিৎসার মাধ্যমে যা সারানো সম্ভব হয় নাএর
ফলে লিভার সিরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়
, যার চিকিৎসা দুরূহ
বিশেষজ্ঞদের
মতে মাদক ও ভেজাল খাদ্যের কারণেই মরণব্যাধি লিভার ও ব্লাড ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে
দ্রুত বেগে
ফলে এখুনি বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি লোক
ক্যান্সারের আক্রান্ত
অতএব সাবধান!
(২) মানসিক (Mental) :
মাদকের
প্রভাবে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ফলে
তার মধ্যে পাগলামি
, অমনোযোগিতা, দায়িত্বহীনতা, অলসতা, উদ্যমহীনতা, স্মরণশক্তি
হরাস
, অস্থিরতা, খিটখিটে
মেযাজ
, আপনজনের
প্রতি অনাগ্রহ এবং স্নেহ-ভালোবাসা কমে যাওয়া ইত্যাদি আচরণ প্রতিভাত হয়
(৩) সামাজিক
(
Social) :
প্রাথমিকভাবে
তার বন্ধুদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়
বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও
ছোটদের প্রতি স্নেহ কমে আসে
অতঃপর সে ক্রমে নানাবিধ
অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে
সে যেকোন সুযোগে অপরাধ জগতে
প্রবেশ করে
হেন কোন অপকর্ম নেই, যা তার
দ্বারা সাধিত হয় না
দুষ্ট লোকেরা টাকার বিনিময়ে
সর্বদা এদেরকেই ব্যবহার করে থাকে
এরা সর্বদা মানুষের ঘৃণা কুড়ায়
ও সমাজে নিগৃহীত হয়
(৪)
অর্থনৈতিক (
Economic)
:
বিশ্বব্যাংকের
হিসাব মতে প্রতি বছর কেবল তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী ২০০ বিলিয়ন ডলার (১৬২০০
বিলিয়ন টাকা) ক্ষতি হয়
২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী
যুক্তরাষ্ট্রে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপনে ১ হাযার ৩০০ কোটি ডলারের বেশী
ব্যয় হয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব
মতে বিশ্বে প্রতিদিন ৪৪ হাযার লোক তামাকজনিত কারণে এবং বছরে ৫০ লক্ষ লোক ধূমপানের
কারণে মারা যায়
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি পরিসংখ্যানে দেখা
গেছে যে
, প্রতি
বছর মাদকদ্রব্য
, খুন, রাহাযানি, আত্মহত্যা, সড়ক ও বিমান
দুর্ঘটনা ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী মৃত্যু হয় ধূমপানের
কারণে
উপরে
বর্ণিত শুধুমাত্র তামাক জনিত মাদকের ক্ষতির হিসাবের সাথে অন্যান্য মাদক দ্রব্য ও
জুয়ার হিসাব যোগ করলে দেখা যাবে যে
, বিশ্বের সকল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে সিংহভাগ
ক্ষতি হয় মদ ও জুয়ার কারণে
বর্তমান যুগে ক্রিকেট জুয়া যার
শীর্ষে অবস্থান করছে
অথচ মানুষ যদি আল্লাহর
নিষেধাজ্ঞা মানত
, তাহলে তারা এই চূড়ান্ত ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে
যেত
মাদক
ও ধূমপান বিষয়ে শারঈ নির্দেশ
আল্লাহ
বলেন
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ
عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ
 (নিরক্ষর নবী
মুহাম্মাদ) মানুষের জন্য সকল পবিত্র বস্ত্ত হালাল করেন এবং সকল নোংরা বস্ত্ত হারাম
করেন
(রাফ
৭/১৫৭)
মাদক
ও ধূমপান নিঃসন্দেহে খবীছ ও ক্ষতিকর বস্ত্ত
অতএব তা
হারাম
যারা বলেন, তামাক, জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেট হারাম হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে কুরআনে
নেই
অতএব তা হালাল কিংবা খুব বেশী হলে মাকরূহ, যা খেতে
বাধা নেই
এদের উদাহরণ ঐ ডায়াবেটিস রোগীর মত, যে
ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞার ভয়ে চিনি খায় না
কিন্তু
রসগোল্লা ছাড়ে না
আসলে বিড়ি-সিগারেট ও
তামাক-জর্দা এইসব লোকদের বুদ্ধি বিভ্রম ঘটিয়ে দিয়েছে
সেকারণ
এরা জ্ঞান থাকতেও জ্ঞানহীন
আল্লাহ
বলেন
وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না
(
বাক্বারাহ ২/১৯৫)মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের চাইতে
মানুষকে ধ্বংসে নিক্ষেপকারী আর কোন বস্ত্ত আছে
? অতএব হে মানুষ! তোমার পালনকর্তার কঠোর
নির্দেশ মেনে চলো
মাদক ও তামাক ছেড়ে দাওআল্লাহর
নিকট তওবা করো
সুস্থ জীবনে ফিরে এসো
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন
, আল্লাহ
তোমাদের তিনটি ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হন
। (ক) অনর্থক কথা-বার্তা (খ) অধিক
হারে প্রশ্ন করা (গ) মাল-সম্পদ নষ্ট করা
[20] তামাক সেবন
ও ধূমপানে স্রেফ মাল বিনষ্ট হয়
অতএব তা হারাম। (২)
তিনি বলেন
, যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে
, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়[21] ধূমপায়ী তার
স্ত্রী-সন্তান
, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব
ও আশ-পাশের লোকদের কষ্ট দেয় ও তাদের ক্ষতি করে
চিকিৎসা
বিজ্ঞানীদের মতে ধূমপায়ী নিজে এবং তার অধূমপায়ী সাথী (
Second hand Smoker) সমানভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়
। (৩) তিনি বলেনلاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ক্ষতিগ্রস্ত
হয়ো না এবং অন্যের ক্ষতি করো না
[22] ধূমপায়ীরা
সর্বদা নিজের ও অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
অতএব
তা নিঃসন্দেহে হারাম
। (৪) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হালাল
স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট
এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে
সন্দেহপূর্ণ বিষয়াবলী
যা অনেক মানুষ জানে নাঅতএব
যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয় সমূহ পরিহার করল
, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করলআর
যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হ
, সে হারামে
লিপ্ত হ
[23] (৫) তিনি
বলেন
دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيْبُكَ তুমি সন্দিগ্ধ বিষয় ছেড়ে নিঃসন্দেহ বিষয়ের
দিকে ধাবিত হও
[24] অতএব হে
অজুহাত দানকারী তামাকসেবী ও অতি যুক্তিবাদী ধূমপায়ী! ফিরে এসো আল্লাহর পথে
তওবা
কর খালেছ ভাবে
মাদক
নিষিদ্ধ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী সমূহ :
১.
জাবের (রাঃ) হ
তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ প্রত্যেক
নেশাকর বস্ত্ত হারাম
[25]
২.
আয়েশা (রাঃ) হ
তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ প্রত্যেক পানীয় যা নেশাগ্রস্ত করে, তা হারাম[26]
৩.
জাবের (রাঃ) হ
তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন
مَا أَسْكَرَ
كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ
 যার বেশীতে
মাদকতা আনে
, তার
অল্পটাও হারাম
[27]
৪.
আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন
,
আমার বন্ধু (মুহাম্মাদ) আমাকে অছিয়ত করেছেন যে, তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে
কেটে টুকরা টুকরা করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
তুমি
ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ত্যাগ করবে না
কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
ছালাত ত্যাগ করে
, তার
উপর থেকে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যায়
আর তুমি
মদ্যপান করবে না
কেননা মদ হ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ সকল
অনিষ্টের মূল
[28]
৫.
আনাস (রাঃ) বলেন
, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মদের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তিকে লা
নত
করেছেন
। (১) মদ প্রস্ত্ততকারী  (২) মদের
ফরমায়েশ দানকারী (৩) মদ পানকারী (৪) মদ বহনকারী (৫) যার প্রতি মদ বহন করা হয় (৬)
যে মদ পান করায় (৭) মদ বিক্রেতা (৮) মদের মূল্য ভোগকারী (৯) মদ ক্রয়কারী (১০) যার
জন্য মদ ক্রয় করা হয়
[29]
মদ্যপানের
দুনিয়াবী শাস্তি :
(ক) জাবের
(রাঃ) হ
তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فَاجْلِدُوْهُ فَإِنْ عَادَ
فِىْ الرَّابِعَةِ فَاقْتُلُوْهُ- قَالَ: ثُمَّ أُتِىَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ فِى الرَّابِعَةِ فَضَرَبَهُ
وَلَمْ يَقْتُلْهُ-
 যে ব্যক্তি
মদ পান করে
, তাকে
বেত্রাঘাত কর
যদি চতুর্থবার পান করে, তবে তাকে
হত্যা কর
তিনি বলেন, পরে অনুরূপ একজন ব্যক্তিকে রাসূল (ছাঃ)-এর
নিকট আনা হ
লে তিনি
তাকে প্রহার করেন
কিন্তু হত্যা করেননি[30]
(খ) সায়েব
বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন
,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে এবং আবুবকর ও ওমরের যুগের প্রথম দিকে কোন মদ্যপায়ী
আসামী এলে তাকে আমরা হাত দিয়ে
, চাদর দিয়ে, জুতা ইত্যাদি দিয়ে পিটাতামঅতঃপর
ওমরের যুগের শেষ দিকে তিনি ৪০ বেত্রাঘাত  করেন
কিন্তু
যখন মদ্য পান বৃদ্ধি পেতে থাকে
, তখন তিনি ৮০ বেত্রাঘাত করেন[31] অন্য
বর্ণনায় লাঠি ও কাঁচা খেজুর ডালের কথা এসেছে
এমনকি
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিজে তার মুখে মাটি ছুঁয়ে মেরেছেন
, সেকথাও
এসেছে
[32]
উল্লেখ্য
যে
, অবিবাহিত
যেনাকারের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত কুরআন দ্বারা নির্ধারিত
[33] সেকারণেই
মদ্যপানের শাস্তি তার নীচে রাখা হয়েছে
এটির পরিমাণ
আদালতের এখতিয়ারাধীন বিষয়
আদালত মদ্যপায়ীর পাপের মাত্রা
বুঝে শাস্তির মাত্রায় কমবেশী করতে পারেন
সঙ্গে সঙ্গে
এটা জানা আবশ্যক যে
,
ইসলামী দন্ডবিধির লক্ষ্য হ
ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধন
সেকারণ দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির
জন্য সুন্দরভাবে তওবা করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং পরে যাতে সে পুনরায় ঐ পাপ
না করে
, সেরূপ
সামাজিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে
একবার অপরাধী সাব্যস্ত হলে সে যেন সারা জীবন আইনের চোখে দাগী অপরাধী
হিসাবে গণ্য না হয়
আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন
,
একবার এক মদ্যপায়ীকে আনা হলে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে মারার জন্য আমাদের হুকুম দিলেন
তখন
আমাদের মধ্যে কেউ তাকে হাত দিয়ে
, কেউ কাপড় দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে মারলঅতঃপর
তিনি বললেন
, ওকে
তোমরা তিরষ্কার কর
তখন লোকেরা তাকে উদ্দেশ্য করে
বলতে লাগল
مَا اتَّقَيْتَ اللهَ؟ مَا خَشِيتَ اللهَ؟ وَمَا
اسْتَحْيَيْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟
 তুমি কি আল্লাহকে ভয় কর না?
তুমি কি আল্লাহর শাস্তির ভয় পাও
না
? আল্লাহর
রাসূল থেকে কি তুমি লজ্জাবোধ কর না
? ইত্যাদিঅতঃপর
যখন লোকটি ফিরে যাচ্ছিল
,
তখন একজন লোক বলে ফেললأَخْزَاكَ اللهُ আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন!
একথা শুনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলে উঠলেনلاَ تَقُولُوا هَكَذَا وَلاَ تُعِينُوا عَلَيْهِ الشَّيْطَانَ তোমরা এরূপ বলো নাতোমরা
তার উপরে শয়তানকে সাহায্য করো না
বরং
তোমরা বল
اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمَّ ارْحَمْهُ হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর!
হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহম কর[34] অনুরূপ
বারবার মদ্যপানের শাস্তিপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে জনৈক ব্যক্তি অভিসম্পাৎ করলে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন
,
তোমরা ওকে অভিসম্পাৎ করো নাআল্লাহর কসম! আমি জানি সে
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে
[35]
এতে
বুঝা যায় যে
, ইসলামী
দন্ডবিধির লক্ষ্য হ
ল ব্যক্তির
নৈতিক সংশোধন
শাস্তিপ্রাপ্ত হলে এবং তওবা করলে ঐ ব্যক্তি নির্দোষ হিসাবে
গণ্য হবে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিবাহিত ব্যভিচারীকে রজম অর্থাৎ
প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার পর নিজে তার জানাযা পড়েছেন
[36]
মদ্যপানের
পরকালীন শাস্তি :
১.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ
তে
বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন
كُلُّ مُسْكِرٍ
خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِى الدُّنْيَا فَمَاتَ
وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ لَمْ يَشْرَبْهَا فِى الآخِرَةِ
প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই মদ এবং প্রত্যেক
মাদকই হারাম
আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিয়মিত মদ পান করেছে
এবং তা থেকে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করেছে
, আখেরাতে সে ব্যক্তি তা পান করবে না[37] অর্থাৎ সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে না
২.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ
তে
বর্ণিত
, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন
مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِى الدُّنْيَا، ثُمَّ لَمْ
يَتُبْ مِنْهَا، حُرِمَهَا فِى الآخِرَةِ
 যে
ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করল
অথচ তওবা করল নাআখেরাতে
সে তা থেকে বঞ্চিত হ
[38]
৩.
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ
তে
বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
إِنَّ عَلَى
اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ
طِينَةِ الْخَبَالِ، قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ قَالَ :
عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ-
 আল্লাহ
ঐ ব্যক্তির জন্য ওয়াদাবদ্ধ যে ব্যক্তি নেশাকর বস্ত্ত পান করে তাকে
ত্বীনাতুল খাবাল
পান করাবেনছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কি
বস্ত্ত হে আল্লাহর রাসূল
?
তিনি বললেন, জাহান্নামীদের
দেহের ঘাম অথবা দেহনিঃসৃত রক্ত-পূঁজ
[39]
পক্ষান্তরে
জান্নাতবাসীদের আপ্যায়নের জন্য যে সুরা পরিবেশন করা হবে
, সে বিষয়ে
আল্লাহ বলেন
يُسْقَوْنَ مِنْ رَحِيقٍ مَخْتُومٍ- خِتَامُهُ مِسْكٌ
وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ- وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيمٍ-
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ-
 তাদেরকে
মোহরাংকিত বিশুদ্ধতম শারাব পান করানো হবে
যার মোহর হবে কস্ত্তরীরঅতএব
প্রতিযোগীরা এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করুক
(শুধু
তাই নয়) এতে মিশ্রণ থাকবে তাসনীমের
সেটা একটি ঝর্ণা, যা থেকে
নৈকট্যশীল বান্দারা পান করবে
(মুত্বাফফেফীন
৮৩/২৫-২৮)
ঐ শারাবের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেনيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ- بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ
وَكَأْسٍ مِنْ مَعِينٍ- لاَ يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلاَ يُنْزِفُونَ-
জান্নাতীদের সেবায় রত থাকবে চির কিশোররাপানপাত্র, কুঁজা ও
বিশুদ্ধ শারাবের পেয়ালা সমূহ নিয়ে
সেই শারাব পানে কোন শিরঃপীড়া হবে না বা তারা
জ্ঞানহারাও হবে না
(ওয়াক্বিআহ ৫৬/১৭-১৯)অথচ
মদখোর হতভাগারা দুনিয়ায় পচা মদ খেয়ে আখেরাতের বিশুদ্ধতম শারাব থেকে বঞ্চিত হবে
হাঁ, দুনিয়ায়
এইসব পচা-সড়া মদ-তাড়ি খেয়ে অভ্যস্তদের জন্য জাহান্নামেও অনুরূপ দেহনিঃসৃত পচা
রক্ত-পুঁজ পানীয় হিসাবে খেতে দেওয়া হবে
যেমন আল্লাহ
বলেন
لاَ يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلاَ شَرَابًا-
إِلاَّ حَمِيمًا وَغَسَّاقًا-
 সেদিন তারা
সেখানে কোনরূপ শীতলতা কিংবা কোন পানীয় পাবে না
ফুটন্ত পানি ও দেহ নিঃসৃত রক্ত ও পূঁজ ব্যতীত
(
নাবা ৭৮/২৪-২৫; হা-কক্বাহ
৬৯/৩৬
; মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৬৩৯)
আর খাদ্য হিসাবে তারা পাবে তীব্র
যন্ত্রণাদায়ক ও বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত যাক্কূম বৃক্ষ (ওয়াকি
আহ ৫৬/৫২) ও বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত শুকনা যরী
ঘাসযা তাদেরকে পুষ্ট করবে না, ক্ষুধাও
মেটাবে না
(গাশিয়াহ ৮৮/৬-৭)
অতএব
হে মাদকাসক্ত হতভাগা! যেকোন মুহূর্তে পরকালের ডাক এসে যাবে
আর
শুরু হবে কবরে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
অতএব দুনিয়ার এই সাময়িক ফূর্তি
ছেড়ে দাও
খালেছ তওবা করে ফিরে যাও তোমার পালনকর্তা
আল্লাহর দিকে
তিনি তোমার তওবা কবুল করবেনএই
তওবার বিনিময়ে তুমি পেতে পার জান্নাতের বিশুদ্ধতম শারাব
আল্লাহ
তোমাকে তওবা করার তাওফীক দান করুন! আমীন!!
২য়
শাস্তি :
 আব্দুল্লাহ
ইবনে ওমর (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন
مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ لَهُ
صَلاَةً أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا
 যে ব্যক্তি
একবার মদ্য পান করে
,
আল্লাহ ৪০ দিন পর্যন্ত তার ছালাত কবুল করেন না (অর্থাৎ সে
ছালাতের ছওয়াব পায় না)
এভাবে পরপর তিনদিন যদি সে মদ
পান করে ও তিনবার তওবা করে
, তবু আল্লাহ তার তওবা কবুল করেনকিন্তু
চতুর্থবার যদি সে মদ পান করে
, তাহলে
তার ৪০ দিনের ছালাত তো কবুল হয় না
উপরন্তু তার তওবা আর কবুল হবে
না
এছাড়া পরকালে আল্লাহ তাকে নাহরে খাবাল (وَسَقَاهُ مِنْ نَهْرِ الْخَبَالِ) অর্থাৎ
জাহান্নামীদের দেহনিঃসৃত রক্ত ও পূঁজের দুর্গন্ধময় নদী হ
তে পান করাবেন[40] আর মদ খাওয়াটাই হল এর কারণমদের
পরিমাণ কম হৌক বা বেশী হৌক
তাতে নেশা হৌক বা না হৌকমদে
অভ্যস্ত যারা
, তাদের
অল্প মদে মাদকতা আসে না
অনুরূপভাবে অল্প তামাক ও
ধূমপানে মাদকতা আসে না
কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব তার
দেহে ঠিকই পড়ে
সেকারণ জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
مَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ যার বেশী পরিমাণ নেশা আনয়ন করে, তার অল্প
পরিমাণও হারাম
[41]
আখেরী
যামানায় মদ :
(ক) আনাস
(রাঃ) হ
তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ
الْعِلْمُ ، وَيَكْثُرَ الْجَهْلُ وَيَكْثُرَ الزِّنَا ، وَيَكْثُرَ شُرْبُ
الْخَمْرِ
 ক্বিয়ামতের
আলামত সমূহের মধ্যে অন্যতম হ
, ইলম উঠে
যাবে
, মূর্খতা
বেড়ে যাবে
, যেনা
বৃদ্ধি পাবে
, মদ্যপান
বিস্তার লাভ করবে
[42]
(খ) আবু
মালেক আশ
আরী বলেন, তিনি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে
لَيَشْرَبَنَّ
نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا
 আমার উম্মতের কিছু লোক বেনামীতে মদ্যপান করবে[43]
(গ)
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ
তে
বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন
إِنَّ أُمَّتِيْ
يَشْرِبُوْنَ الْخَمْرَ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ ، يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ
اِسْمِهَا-
 আমার উম্মত
আখেরী যামানায় মদ্যপান করবে
তারা একে অন্যভাবে নামকরণ করবে[44]
উক্ত
হাদীছ সমূহের বাস্তবতা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি
অতএব
মাদকের আগ্রাসী থাবা থেকে সমাজকে বাঁচানোর পথ আমাদের বের করতেই হবে
নইলে
আগামী বংশধর শেষ হয়ে যাবে
প্রতিরোধের
উপায় :
মাদকতা
প্রতিরোধের উপায় মূলতঃ দু
টি
: নৈতিক ও প্রশাসনিক
প্রত্যেকটিই দুভাগে বিভক্ত
১.
নৈতিক প্রতিরোধ :
 যা
দু
ভাবে হতে পারে-
(ক) মানবিক
মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা :
পিতা-মাতা, গুরুজন, শিক্ষক ও
বয়স্কদের উপদেশের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব
বর্তমানে
সেক্যুলার কিছু ব্যক্তি ও দু
একটি
সংবাদপত্র
মাদককে না
বলো
অভিযান করে থাকেনঅনেকে
সেমিনার ও টিভিতে টকশো করেন
এগুলোতে যে আসলেই কোন কাজ হয় না, বরং কেবল
মিডিয়ায় ছবি ও নাম প্রকাশ হয়
, এটা উদ্যোগীরা ভালভাবেই জানেনবরং
এইসব ছবি দেখিয়ে বহু মদ্যপায়ী ও মদ চোরাচালানী আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে
(খ) ধর্মীয়
মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা :
এটাই
ল এর প্রধান চিকিৎসাএকমাত্র
আল্লাহভীতিই মানুষকে এ শয়তানী খপপর থেকে মুক্ত করতে পারে
আখেরাতে
জবাবদিহিতা এবং জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় মানুষকে মাদকের কুহক থেকে দ্রুত
মুক্তি দিতে পারে
মদ নিষিদ্ধের আয়াত নাযিল হওয়ার
পর মুসলমানদের অবস্থা কিরূপ পরিবর্তিত হয়েছিল
, একটু পরেই আমরা তা বিস্তারিত তুলে ধরব
ইনশাআল্লাহ
২.
প্রশাসনিক প্রতিরোধ :
নৈতিক
চিকিৎসার পাশাপাশি প্রশাসনিক প্রতিরোধ অবশ্যই যরূরী
এটি
দু
ভাবে হতে পারেএক-
রাষ্ট্রীয় এবং দুই-সামাজিক
(ক)
রাষ্ট্রীয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এজন্য প্রথমদিকে মদ্যপায়ীকে সর্বসমক্ষে হাত দিয়ে
, খেজুরের ডাল
দিয়ে বা জুতা দিয়ে মারতে বলতেন ও তাকে তিরষ্কার ও নিন্দা করতে বলতেন
যাতে
সে লজ্জিত হয় ও ভীত হয়
মদের পাত্র সমূহ ভেঙ্গে ফেলা হয়তৈরী
করা ও আমদানী করা সব মদ ফেলে দেওয়া হয়
মদ তৈরীর
সকল সরঞ্জাম বিনষ্ট করা হয় ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
পরে
আবুবকর (রাঃ)-এর যুগে ৪০ বেত ও ওমর (রাঃ)-এর খিলাফতের শেষ দিকে ৮০ বেত মারার বিধান
জারি করা হয়
বর্তমান যুগেও বিচার বিভাগকে এর বিরুদ্ধে
কঠোর ভূমিকা নিতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে মদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে
সাথে
সাথে মদ তৈরী
, সেবন, বহন ও
তামাক-গাঁজা ইত্যাদির উৎপাদন ও তামাকজাত দ্রব্যের বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে
। (খ)
সামাজিক প্রতিরোধ : মানুষ সামাজিক জীব
তাকে সমাজে
বসাবস করতে হয়
যে সমাজে সে বাস করে, তারা যদি
তার মাদক সেবনকে ঘৃণা করে ও তাকে বয়কট করে
, তাহলে
সে লোকলজ্জার ভয়ে হ
লেও এই
বদভ্যাস ত্যাগ করবে
এ কারণেই মদ্যপায়ীর শাস্তি
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) জনসমক্ষে দিতেন
সমাজের প্রাথমিক ইউনিট হল পরিবারপরিবারের
সদস্যরা যদি তাকে ঘৃণা করে
, তাতেই কাজ বেশী হয়কিন্তু
যদি পরিবার ব্যর্থ হয়
,
তখন প্রতিবেশীরা ও সমাজনেতারা তাকে সামাজিক শাস্তির মুখোমুখি করবেনা
পারলে তাকে একঘরে করবে
তার সাথে বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য
ও যাবতীয় সামাজিক লেনদেন বন্ধ করবে
যতক্ষণ না সে তওবা করে ভাল হয়ে
যায়
সর্বদা লক্ষ্য হবে ব্যক্তির সংশোধন
যদি
কোন মুসলমান মদ্যপায়ী হয়
,
তবে তার তওবা করার মোক্ষম সুযোগ হ
রামাযান মাস
কারণ এ মাসে ছিয়াম অবস্থায় সে সারাদিন অভুক্ত
থাকে
আল্লাহর ভয়ে সে গোপনে এক গ্লাস পানিও পান করে
না
অতএব এ সময় তাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, যে আল্লাহর
ভয়ে সারাদিন হালাল খাদ্য ও
  পানীয় গ্রহণ করিনি, সেই আল্লাহর
ভয়ে ইফতারের পর থেকে সাহারী পর্যন্ত এই সময়টুকু কি আমি হারাম খাদ্য ও পানীয় তথা মদ
ও মাদক দ্রব্য পরিহার করতে পারব না
? আল্লাহ সবই দেখছেন ও শুনছেন (ত্বোয়াহা
২০/৪৬)
,
বিশ্বাসটুকু দৃঢ় থাকলেই মদ ত্যাগ করা সহজেই সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ
শুধু
প্রয়োজন তওবা করার দৃঢ় মানসিকতা ও আল্লাহর ভয়
আর
যদি মাদকসেবী নাস্তিক ও বিধর্মী হয়
, তবে কেবলমাত্র দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই তাকে
মদ পরিত্যাগ করতে হবে
যদিও তা স্থায়ী হবার সম্ভাবনা
খুবই ক্ষীণ
অন্যান্য
প্রতিকার ব্যবস্থা :
নৈতিক
ও প্রশাসনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সাথে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা যেতে
পারে
যেমন-
(১) সৎ ও
আদর্শবান যুবসংগঠন বা ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া
যারা
সর্বদা সাথীদের ও অন্যান্যদের মধ্যে মাদক বিরোধী চেতনা জাগরূক রাখবে এবং এর
বিরুদ্ধে প্রচার অব্যাহত রাখবে
(২) শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে মাদক ও ধূমপানের বিরুদ্ধে পাঠ দান করা এবং শিক্ষা সিলেবাসে
কুরআন-হাদীছের উদ্ধৃতিসহ পৃথক অধ্যায় সংযোজন করা
(৩)
চিকিৎসকগণ তাদের রোগীদের কাছে মাদক ও ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরলে তা দ্রুত
ফলদান করে এবং জনগণ দ্রুত এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারে
(৪) আলেম ও
খতীবগণ যদি কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে তাদের শ্রোতা ও মুছল্লীদের সম্মুখে মাদক ও
ধূমপানের অপকারিতা ও পরকালীন শাস্তির কথা তুলে ধরেন
, তাহলে
দ্রুত সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে
যা অনেক সময়
রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রশাসনের চাইতে সহজে এবং দ্রুত ফল দান করে থাকে
(৫) আকাশ
সংস্কৃতির নীল দংশন থেকে সন্তানদের বাঁচানোর জন্য মোবাইল
, কম্পিউটার, টিভির নীল
ছবি থেকে তওবা করতে হবে
নিজের চোখ ও কানকে সর্বাগ্রে
মুসলমান বানাতে হবে
যাতে ঐ দুটি খোলা জানালা দিয়ে মনের গহীনে কোন নোংরা
বস্ত্ত প্রবেশ না করে
যা যেকোন সময়ে মানুষের
নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে
বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার ও
সমাজনেতাদেরকে এদিকে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে
যেন
তরুণ সমাজ বিপথে না যায়
দুটি শিক্ষণীয় ঘটনা :
১.
ছাহাবী আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন
, যেদিন মদ হারাম ঘোষিত হয়, সেদিন আমি
আবু ত্বালহার বাড়ীতে মেহমানদের মদ পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলাম
সেদিন
ফাযীহ (الْفَضِيْخُ) নামক উন্নত মানের মদ পরিবেশিত হচ্ছিলএমন
সময় ঘোষণা শোনা গেল
أَلاَ إِنَّ الْخَمْرَ قَدْ حُرِّمَتْ সাবধান হও! মদ  হারাম করা হয়েছেসাথে সাথে মদের বড় বড় কলসীগুলো
সব রাস্তায় ফেলে দেওয়া হ
বাড়ীওয়ালা
আবু ত্বালহা বললেন
, তুমি
বের হও এবং ওগুলিকে জ্বালিয়ে দাও
তখন আমি সব জ্বালিয়ে দিলামএসময়
মদীনার অলি-গলিতে মদের স্রোত বয়ে গেল
আমাদের কেউ
ওযূ করল
কেউ গোসল করলকেউ
গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে পেটের ভিতরকার সবকিছু বমি করে ফেলে দিল
অতঃপর
আমরা সবাই মসজিদে গেলাম
তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)
আমাদেরকে সূরা মায়েদাহ ৯০ ও ৯১ আয়াত দু
টি
পাঠ করে শুনালেন
তখন একজন বলে উঠল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমাদের মধ্যে যারা মদ পান করেছে অথবা মৃত্যু বরণ করেছে
, তাদের উপায়
কি হবে
? তখন
মায়েদাহ ৯৩ আয়াতটি নাযিল হয়
যেখানে বলা হয় لَيْسَ عَلَى الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
جُنَاحٌ فِيْمَا طَعِمُوْا إِذَا مَا اتَّقَوْا
 যারা
ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য তাতে কোন গোনাহ নেই
, যতটুকু তারা
খেয়েছে
, যদি
তারা সংযত হয়
… (মায়েদাহ ৫/৯৩)[45]
(২) ১৯২০
সালের জানুয়ারী মাসে আমেরিকার সিনেট মদ্য নিবারক আইন

(Prohibition law)
পাস করেকিন্তু
১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে উক্ত আইন বাতিল করে
এই আইনটি
কার্যকর করতে গিয়ে মদের অপকারিতা বুঝানোর জন্য প্রকাশিত বই-পুস্তিকার পৃষ্ঠা
সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটির মত
আর ব্যয় হয়েছে মোট ৬৫ কোটি
পাউন্ডের মত
এছাড়া ১৪ বছরে ২০০ লোক নিহত হয়
লাখ ৩৪ হাযার ৩৩৫ জন কারারুদ্ধ হয়
নিষিদ্ধ ঘোষণার পূর্বে আমেরিকায়
মদ চোলাইয়ের অনুমোদিত দোকানের সংখ্যা ছিল ৪০০
কিন্তু
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর মাত্র ৭ বছরের মধ্যে ৭৯
,৪৩৭ জন কারখানা মালিককে গ্রেফতার করা হয় এবং
৯৩
,৮৩১টি
মদের দোকান বাযেয়াফত করা হয়
এটি ছিল সর্বমোট কারখানা ও
দোকানের এক দশমাংশ
কেবল নিউইয়র্ক শহরেই নিষিদ্ধ
ঘোষণার পূর্বে যেখানে মদ্যপানে রোগাক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭৪১ জন ও মৃতের সংখ্যা
ছিল ২৫২ জন
সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে ১৯২৬ সালে
রোগাক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাযারে এবং মৃতের সংখ্যা সাড়ে সাত হাযারে পৌঁছে
যায়
এতদ্ব্যতীত দেশে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাযানি, যেনা-ব্যভিচার
ও সন্ত্রাস এত বেড়ে যায় যে
,১৯৩৩ সালের সরকারী রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকার
প্রতি তিনজনে একজন পেশাদার অপরাধী
তবে হত্যাকান্ডের অপরাধ আরও
বেড়ে শতকরা সাড়ে তিনশ
ভাগে উন্নীত
হয়েছে
প্রিয়
পাঠক! পৃথিবীর দুই গোলার্ধের দু
টি
সমাজচিত্র সামনে রাখুন ও দু
টি
সংস্কার প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করুন
প্রথমটি হল খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধের ঘটনাযখনকার
মানুষ নারী ও মদে চুর হয়ে থাকত
আরবী ভাষায় কেবল মদের ২৫০টির মত
শব্দ ছিল
এতেই বুঝা যায়, মদ তাদের সমাজকে কিভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলঅথচ
সেই মানুষগুলিকে মদ থেকে ফিরানোর জন্য কোন প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন হয়নি
কোন
যুক্তি-তর্কের অবতারণা করতে হয়নি
আল্লাহর হুকুম জানতে পারার সাথে
সাথে তারা মদ পান রত অবস্থায় মদের পাত্র ছুঁড়ে ফেলে দিল
গলায়
আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করে দিল
মদের কলসীগুলো সাথে সাথে ভেঙ্গে
গুড়িয়ে দিল ও জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল
মদীনার
অলিতে-গলিতে মদের স্রোত বয়ে গেল
যারা মদ ছাড়তে চায়নি,তাদের জন্য
শাস্তির ব্যবস্থা করা হ
সমাজ
জীবন থেকে মদ বিদায় নিল
অথচ
আধুনিক সভ্যতার কেন্দ্রস্থল বলে খ্যাত আমেরিকার গৃহীত
বিশ্ব ইতিহাসের বৃহত্তম সংস্কার প্রচেষ্টা
একেবারেই নিষ্ফল প্রতিপন্ন হকারণ
এটা ছিল স্রেফ জনমতের উপর নির্ভরশীল
যা সদা পরিবর্তনশীলএখানে
চিরস্থায়ী কোন এলাহী নির্দেশনা ছিল না
আখেরাতে
মুক্তি ও চির শান্তির কোন গ্যারান্টি সেখানে ছিল না
ফলে
স্রেফ দুনিয়াবী স্বার্থে গৃহীত এই বৃহত্তম দুনিয়াবী প্রচেষ্টা দুনিয়াপূজারী
নেতাদের হাতেই ব্যর্থ হ
চৌদ্দ
বছর পূর্বে তারা যেটাকে হারাম ঘোষণা করেছিল
, তারাই তাকে পুনরায় হালাল করলগণতন্ত্রের
কাছে স্থায়ী সত্য বলে কিছু নেই
নফসরূপী শয়তানের পূজা করাই এর
ধর্ম
আর মদ হ
শয়তানের সবচেয়ে বড় বাহন
উম্মুল ফাওয়াহেশ
(১) মদকে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
উম্মুল
ফাওয়াহেশ
বা সকল
নির্লজ্জতার উৎস
বলেছেনআব্দুল্লাহ
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন
,
سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صـ يَقُولُ : الْخَمْرُ أُمُّ الْفَوَاحِشِ وَأَكْبَرُ الْكَبَائِرِ مَنْ
شَرِبَهَا وَقَعَ عَلَى أُمِّهِ وَعَمَّتِهِ وَخَالَتِهِ-
আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মদ হল সকল নির্লজ্জতার উৎস এবং সকল পাপের মধ্যে
সবচেয়ে বড় পাপ
যে ব্যক্তি মদ পান করে, সে তার মা, খালা, ফুফু সকলের
উপর পতিত হয়
[46]
(২) উক্ত
মর্মে হযরত ওছমান গণী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে
, তিনি বলেনاجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাককেননা
এটি হ
ল সকল নিকৃষ্ট কর্মের উৎসমনে রেখ তোমাদের পূর্বেকার একজন
সাধু ব্যক্তি সর্বদা ইবাদতে রত থাকত এবং লোকালয় থেকে দূরে থাকত
একদা
এক বেশ্যা মেয়ে তাকে প্রলুব্ধ করল
তার কাছে সে তার দাসীকে পাঠিয়ে
দেয়
সে গিয়ে বলে যে, আমরা আপনাকে
আহবান করছি একটি ব্যাপারে সাক্ষী থাকার জন্য
তখন
সাধু লোকটি দাসীটির সাথে গেল
যখনই সে কোন দরজা অতিক্রম করত, তখনই তা
পিছন থেকে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হ
এভাবে
অবশেষে একজন সুন্দরী মহিলার কাছে তাকে পৌঁছানো হ
যার
কাছে একটি বালক ও এক পাত্র মদ ছিল
তখন ঐ মহিলাটি তাকে বলল, আমি আপনাকে
সাক্ষ্য করার জন্য ডাকিনি
বরং ডেকেছি আমার সাথে যেনা করার
জন্য
অথবা এই বালকটিকে আপনি হত্যা করবেন অথবা এই
এক পেয়ালা মদ পান করবেন
সাধু লোকটি তখন মদ পান করলঅতঃপর
বলল
, আরো
দাও
অতঃপর সে মাতাল হয়ে গেলফলে
সে উক্ত নারীর সাথে অপকর্ম করল এবং ঐ বালকটিকেও হত্যা করল
অতএব
তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক
 فَإِنَّهَا
وَاللهِ لاَ يَجْتَمِعُ الإِيْمَانُ وَالْخَمْرُ إِلاَّ لَيُوْشِكُ أَنْ يُخْرِجَ
أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ
 কেননা মদ ও
ঈমান কখনো একত্রে থাকতে পারে না
বরং একটি আরেকটিকে বের করে দেয়[47]
উপরের
আলোচনায় একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে
, ব্যক্তি ও সমাজকে ধ্বংস করার জন্য কেবলমাত্র
মদই যথেষ্ট
অতএব ব্যক্তি জীবনে কঠোরভাবে ইসলামী অনুশাসন
মেনে চলার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা অতীব যরূরী
আল্লাহ
আমাদের সহায় হৌন
আমীন!


[1]. মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/৪২৯৪
; আল-আদাবুল
মুফরাদ
, হা/১২৩৪
[2]. বুখারী
হা/৪৬১৯
; মুসলিম
হা/৩০৩২
; মিশকাত
হা/৩৬৩৫
[3]. বুখারী, আবূদাঊদ
হা/৩৬৬৯
[4]. তিরমিযী
হা/৩০২৬
[5]. মুসলিম
হা/১৭৪৮
; বায়হাক্বী
৮/২৮৫
[6]. বুখারী
হা/২৪৬৪
, মুসলিম
হা/১৯৮০
; আবুদাঊদ
হা/৩৬৭৩
[7]. আবুদাঊদ
হা/৩৬৭০
; তিরমিযী
হা/৩০৪৯
; ছহীহাহ
হা/২৩৪৮
; আওনুল
মা
বূদ হা/৩৬৫৩ পানীয় সমূহ অধ্যায়
[8]. আওনুল মাবূদ হা/৩৬৫৩-এর ব্যাখ্যা
[9]. আওনুল মাবূদ হা/৩৬৫৪-এর ব্যাখ্যা
[10]. ইবনু জারীর
হা/৯৫২৫
; তাফসীর
ইবনু কাছীর
, নিসা
৪৩
[11]মুস্তাদরাকে
হাকেম হা/৩১৯৯
,
২/৩০৭ পৃঃ
[12]. মুওয়াত্ত্বা
হা/৬৪
, সনদ
হাসান
; বায়হাক্বী
৫/২৯৬
, তিনি
বলেন
, হাদীছটি
মুরসাল ছহীহ
[13]. মুসলিম
হা/২২৬০
; ইবনু
মাজাহ হা/৩৭৬৩
; মিশকাত
হা/৪৫০০
ছবি সমূহ
অনুচ্ছেদ
[14]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/৪৫০৫ সনদ হাসান
[15]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/৩৮৭২
জিহাদ
অধ্যায়
[16]. ত্বাবারাণী, ছহীহাহ
হা/৩১৫
[17]. তাফসীর
কুরতুবী
, মায়েদাহ
৯০
[18]. বুখারী, আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ
প্রভৃতি
, মিশকাত
হা/১৩২৩ ঐচ্ছিক ছালাত অনুচ্ছেদ-৩৯
[19]. আহমাদ, বুখারী
হা/৪২৮৮
[20]. মুসলিম
হা/৪৫৭৮
; আহমাদ
হা/৯০৩৪
[21]. বুখারী
হা/৬০১৮
[22]. ইবনু মাজাহ
হা/২৩৪০
; ছহীহাহ
হা/২৫০
[23]. মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/২৭৬২
ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়
[24]. আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ; মিশকাত
হা/২৭৭৩
[25]. মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৬৩৯
দন্ডবিধি
সমূহ
অধ্যায়-১৭ অনুচ্ছেদ-৬
[26]. মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/৩৬৩৭
[27]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/৩৬৪৫
[28]. ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান; মিশকাত
হা/৫৮০
ছালাত
অধ্যায়
[29]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/২৭৭৬
[30]. তিরমিযী
হা/১৪৪৪
, নাসাঈ, মিশকাত
হা/৩৬১৭
[31]. বুখারী, মিশকাত
হা/৩৬১৬
[32]আবুদাঊদ
হা/৪৪৮৭
; মিশকাত
হা/৩৬২০
[33]নূর ২৪/২; মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/৩৫৫৫-৫৮
দন্ডবিধি
সমূহ
অধ্যায়
[34]. আবুদাঊদ, মিশকাত
হা/৩৬২১
; বুখারী, মিশকাত
হা/৩৬২৬
[35]. বুখারী, মিশকাত
হা/৩৬২৫
[36]মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/৩৫৬০-৬১
[37]. মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৬৩৮
[38]. বুখারী
হা/৫৫৭৫
, মুসলিম
হা/২০০৩
[39]. মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৬৩৯
[40]. তিরমিযী, মিশকাত
হা/৩৬৪৩-৪৪
[41]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/৩৬৪৫
; বঙ্গানুবাদ
হা/৩৪৭৮
[42]. মুত্তাফাক্ব
আলাইহ
, মিশকাত
হা/৫৪৩৭
ফিৎনা সমূহ
অধ্যায়-২৭, ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ
অনুচ্ছেদ-২
[43]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/৪২৯২
; ছহীহাহ
হা/৯০
[44]. ত্বাবারাণী
কাবীর
; ছহীহাহ
হা/৯০
[45]. বুখারী
হা/৪৬২০
তাফসীর
অধ্যায়; ইবনু
জারীর হা/১২৫২৭
; তাফসীর
ইবনু কাছীর
[46]. নাসাঈ
হা/৫৬৬৬-৬৭
; বায়হাক্বী
৮/২৮৭-২৮৮
[47]. দারাকুৎনী
হা/৪৫৬৫
; ছহীহাহ
হা/১৮৫৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top