মানব জীবনে বিপদ-আপদের যতগুলো ক্ষেত্র আছে, তার মধ্যে অসুস্থতা অন্যতম। দুনিয়াবী জীবনে মানুষ যে কত বড় অসহায়, তার বাস্তব উপলব্ধি ঘটে অসুস্থ অবস্থায়। এমত পরিস্থিতিতে কোন শত্রুও যদি দেখা করতে আসে বা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে, তবে সে তাকে আর শত্রু মনে করে না। সে তখন তার নিকটে পরম বন্ধুতে পরিণত হয় এবং তার অন্তরে ঐ শত্রুর জন্য আলাদা একটা স্থানও তৈরী হয়ে যায়। তাই রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বা সাধ্যমত তার দেখ-ভাল করা ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির একটা বড় উপায়। রুগ্ন ব্যক্তির দেখা-শোনার বিষয়টি ইসলামী শরী‘আত ও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عُوْدُو الْمَرِيْضَ، وَاتَّبِعُوا الْجَنَائِزَ، تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ ‘রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাবে এবং জানাযার অনুসরণ করবে (কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করবে) তাহ’লে তা তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮১, হাদীছ ছহীহ।
একজন মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের হক্ব বা কর্তব্য সম্পর্কে যে কয়েকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে عِيَادَةُ الْمَرِيْضِ তথা ‘রোগীর পরিচর্যা’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়াও ক্বিয়ামতের ময়দানে রুগ্ন ব্যক্তির পক্ষে মহান আল্লাহ নিজেই ফরিয়াদী হয়ে আদম সন্তানকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি পরিচর্যা করনি’। মুসলিম হা/২৫৬৯; মিশকাত হা/১৫২৮। রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সহজ উপায়। যতক্ষণ পর্যন্ত রুগীর পরিচর্যা করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি রহমতের মাঝে অবস্থান করে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيْضًا خَاضَ فِى الرَّحْمَةِ، حَتَّى إِذَا قَعَدَ اسْتَقَرَّ فِيْهَا. ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন রুগীর পরিচর্যা করে, সে রহমতের মধ্যে ডুব দেয়, এমনকি সে যখন সেখানে বসে পড়ে, তখন তো রীতিমতো রহমতের মধ্যেই অবস্থান করে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২২, হাদীছ ছহীহ। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে জান্নাতের ফলমূলের বাগানে অবস্থান করে। مَنْ عَادَ أَخَاهُ এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كَانَ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ. ‘যে ব্যক্তি তার কোন রুগ্ন ভাইকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলের মধ্যে অবস্থান করবে’। আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২১, হাদীছ ছহীহ । অনুরূপ إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا عَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ لَمْ يَزَلْ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ، قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا خُرْفَةُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ جَنَاهَا. ‘মুসলমান যখন তার রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ‘খুরফার’ মধ্যে অবস্থান করতে থাকে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জান্নাতের খুরফা কি? উত্তর দিলেন, তাঁর ফলমূল’। মুসলিম হা/২৫৬৮, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৮৯৯। রুগ্নকে পরিচর্যাকারী ব্যক্তির একজন আহবানকারী ডেকে বলে তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيْضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِى اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً. ‘কোন ব্যক্তি কোন রুগ্ন ব্যক্তির পরিচর্যা করলে অথবা আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে, একজন আহবানকারী (অন্য বর্ণনায় রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা) তাকে ডেকে ডেকে বলে, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পদচারণা উত্তম হয়েছে এবং জান্নাতে তুমি একটি ঘর তৈরি করে নিয়েছ’। তিরমিযী হা/২০০৮, হাদীছ হাসান; মিশকাত হা/৫০১৫।
শুধু বন্ধু নয় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য অসুস্থ হলে তাদের দেখতে যেতে হবে এবং তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দোআ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسلِمٍ يَعُوْدُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِىَ وَإِنْ عَادَه عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَه خَرِيْفٌ فِىْ الْجَنَّةِ. আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘এমন কোন মুসলমান নেই যে সকাল বেলা কোন মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর সন্ধ্যা বেলা কোন রোগী দেখতে যায় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান সুনির্ধারিত করে দেয়া হয়’।১১. তিরমিযী হা/৯৬৯, হাদীছ ছহীহ, আবূদাউদ, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৯০০। রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ করতেন- أَذْهِبِ الْبَأسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لاَشِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا. ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর, রোগ-মুক্তি দান কর। তুমিই রোগ-মুক্তি দানকারী। তোমার রোগ-মুক্তি ছাড়া কোন রোগ-মুক্তি নেই। এমন রোগ-মুক্তি কোন রোগ বাকী রাখে না’।১২. বুখারী হা/৫৬৭৫, ৫৭৫০; মিশকাত হা/১৫৩০।