মুমিন ব্যক্তির মর্যাদার মানদণ্ড ‘তাক্বওয়া’

তাক্বওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ ও অমানুষের মর্যাদার মানদন্ড হ’ল তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো সত্যিকারের ভয়’ (আলে ইমরান ৩/১০২)। অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পনণ যে অধিক মুত্তাক্বী’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)

তাক্বওয়াই হ’ল প্রকৃত দ্বীন। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতে শুনেছি, وَمِلَاكُ الدِّينِ الْوَرَعُ ‘দ্বীনের মূল হ’ল তাক্বওয়া’।[ছহীহুল জামি হা/১৭২৭; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৫৫] তাক্বওয়া ব্যতীত অহির জ্ঞানেরও কোন মূল্য নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ‘নিশ্চয় তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল’ (ফাত্বের ৩৫/২৮)

দ্বীনের জ্ঞানই প্রকৃত ইলম। আর প্রকৃত ইলমের স্বরূপ তাক্বওয়া। আর অধিক ইলম অর্জনকারী তাক্বওয়াশীল বান্দায় রূপান্তর হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতে শুনেছি, রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَفَضْلٌ فِي عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِي عِبَادَةٍ ‘অধিক ইবাদত করার চেয়ে অধিক ইলম অর্জন করা উত্তম’।[ছহীহুল জামি হা/১৭২৭; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৫৫]

 তাক্বওয়ার পরিচয় :

তাক্বওয়া (تقوى) অর্থ  বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে, দ্বীনদারি, ধার্মিকতা, পরহেজগারি, আল্লাহভীতি, আত্মশুদ্ধি, আল্লাহ ও সত্যের প্রতি সচেতন এবং পরিজ্ঞাত হওয়া, ধর্মপরায়ণতা, আল্লাহকে যথাযথ ভয় করা ইত্যাদি বোঝায়।  

পরিভাষায়, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর সাথে শিরক পরিহার করে এবং তাঁর যথাযথ আনুগত্যে কাজ করে এমন বিশ্বাসী’- যাদের বলা হয় মুত্তাক্বী  (مُتَّقِينَ) । এরা দ্বীনের তথা কুরআন-সুন্নাহর আদেশ-নিষেধ যথাযথ ভাবে পালন করে। একদিন জনৈক ব্যক্তি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে তাক্বওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, أَخَذْتَ طَرِيْقًا ذَا شَوْكٍ؟ ‘তুমি কি কখনো কাঁটাযুক্ত পথে চলেছ? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কীভাবে চলেছ? লোকটি বলল, إِذَا رَأَيْتُ الشَّوْكَ عَدَلْتُ عَنْهُ أَوْ جَاوَزْتُهُ أَوْ قَصُرْتُ عَنْهُ ‘আমি কাঁটা দেখলে তা এড়িয়ে চলি। অথবা ডিঙিয়ে যাই অথবা দূরে থাকি’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, ذَاكَ التَّقْوَى ‘এটাই হ’ল তাক্বওয়া’ (বায়হাক্বী, যুহদুল কাবীর ১/৩৫০, হা/৯৭৩; সনদে হিশাম বিন যিয়াদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে)।অর্থাৎ, অন্যায় ও মন্দ পথগুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখে সাবধানে হকের পথ চলাই আল্লাহকে ভয় করে চলা। ইবনু কাছীর বলেন, তাক্বওয়ার মূল অর্থ হ’ল ‘অপসন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকা’।

বংশ নয়, তাক্বওয়া মর্যাদার মানদণ্ড :

যে ব্যক্তিকে তার মন্দ ‘আমল পরকালের সৌভাগ্যমণ্ডিত স্থানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবে অথবা সৎ ‘আমলে যার অগ্রগামিতা তাকে পিছিয়ে রাখবে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ, দৈহিক বিশাল আকারের গঠন উচ্চ বংশ মর্যাদা আল্লাহর কাছে কোন কাজে আসবে না। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন,  وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نسبه ‘যার কর্ম তাকে পিছে সরিয়েছে, তার বংশ মর্যাদা তাকে আগে বাড়াতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)

অন্যত্র এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু’ (বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৬৯)

’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  «أَنْسَابُكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمَسَبَّةٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنُو آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تملؤوه لَيْسَ لِأَحَدٍ عَلَى أَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِدِينٍ وَتَقْوًى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلًا» ‘তোমাদের বংশ পরিচয় এমন জিনিস নয় যে, তোমরা এর কারণে অন্যকে মন্দ বলবে। তোমরা সবাই এক আদমের সন্তান। পাল্লার সমান পাল্লা। কোন একদিক পূর্ণ করে নিতে পারো না। দীন ও আল্লাহভীতি ছাড়া তোমাদের কারো ওপর কারো মর্যাদা নেই। এক ব্যক্তি মন্দ ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে দাম্ভিক, অশ্লীলভাষী ও কৃপণ (বায়হাক্বী’, ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ হা/৫১৪৬, সিলসিলা ছহীহাহ্ হা/১০৩৮,মিশকাত হা/৪৯১০)।

যে ব্যক্তি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শির্ক থেকে দূরে থাকে এবং কাবীরা ও ছগীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকে সেই প্রকৃত মর্যাদাবান। সকল আদম সন্তানের মাঝে কমতি রয়েছে। আর সকলে ক্ষতিগ্রস্ত তবে মুক্তাক্বী ও পূর্ণ দীনদার ব্যক্তি ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالْعَصْرِ * إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ * إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে…’’- (আল ‘আসর ১-৩)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

জাহেল বা মূর্খতাপূর্ণ আচরণে নিজেকে গর্বিত মনে করে সে প্রকৃত পক্ষে সে একজন গল্ডমুর্খ। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, «مَنْ تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَعِضُّوهُ بِهَنِ أَبِيهِ وَلَا تُكَنُّوا»  ‘যে ব্যক্তি নিজেকে জাহিলিয়্যাতের গৌরবে গৌরবান্বিত করে, তার দ্বারা তার পিতৃ-পুরুষের লজ্জাস্থানকে কর্তন করাও। আর এ কথাগুলো তাকে ইঙ্গিতে নয়; বরং পরিষ্কার ভাষায় বলে দাও (সিলসিলা ছহীহাহ্ হা/২৬৯, মিশকাত হা/৪৯০২)।

(وَلَا تُكَنُّوا) অর্থাৎ এ কথাগুলো অস্পষ্ট বা ইঙ্গিত দিয়ে নয়, বরং স্পষ্টভাবে তাদেরকে জানিয়ে দাও। যাতে করে তাদের শিক্ষা হয় যে, এটা কত জঘন্য কাজ। যাতে তারা বিরত থাকে। এও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি, কৃষ্টি-কালচার যেমন গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা ও মানুষের মান-সম্মান নষ্ট করার মতো কাজ চালু করতে চায়। এছাড়াও নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, অহংকার ছড়িয়ে দিতে চায় তাকে স্মরণ করিয়ে দাও যে, তার পিতা মূর্তি পূজা করত, যিনা করত, মদ পান করত। এছাড়াও অনেক খারাপ কাজ করত। আর তাকে এ কথাগুলো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিবে। কোন প্রকারের ইঙ্গিত করে নয়। যাতে সে মানুষের সামনে লজ্জিত হয়ে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি তাঁর সেসব পিতৃপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করে। যারা জাহিলিয়্যাতের যুগে মারা গেছে, তাকে বল যে, তুমি তোমার মৃত পিতৃপুরুষদের লজ্জাস্থানকে কর্তন করে মুখে তুলে দাও এবং মুখ বন্ধ করে দাও। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

তাক্বওয়াশীল ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত :

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার্থিব সম্পদ দুনিয়ায় মানুষের মর্যাদা-সম্মান বৃদ্ধির একটি উপায়। পক্ষান্তরে আখিরাতের মর্যাদা একান্তই তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির মধ্যে নিহিত। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে অধিক তাক্বওয়াশীল’ (আল হুজুরাত ৪৯/১৩)। যার তাক্বওয়া নেই, তার দ্বীন নেই।

 হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ধন-সম্পদ হলো মান-মর্যাদা এবং আল্লাহভীরুতা দয়া-দাক্ষিণ্য। (তিরমিযী হা/৩২৭১,  মিশকাত হা/৪৯০১)। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক হলো, দুনিয়ার সম্মানের পাশাপাশি আখিরাতের জীবনও যেন সুখের হয়, মুক্তি লাভ হয় তা ভাবা উচিত। সে অনুপাতে ‘আমল করা উচিত। যেমনটি আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও আমাদেরকে কল্যাণ দান করবেন আর আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান’’ (বাকারাহ্ ২/২০১)।

সকল উপদেশের মূল হচ্ছে তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ প্রদান করা। তাক্বওয়া মানুষকে সকল প্রকার অপছন্দনীয় কথা ও কাজ হতে বিরত রাখতে পারে এবং তাক্বওয়া মানুষের সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে। তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ, আর তা এই যে, আল্লাহ কর্তৃক সকল নির্দেশের বাস্তবায়ন এবং সকল নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ছাহাবীগণ উপদেশ চাইলে নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে তাক্বওয়াশীল হতে বলেন, ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) আমাদের ছালাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ করে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন, যাতে চক্ষু সমূহ অশ্রু প্রবাহিত করল এবং অন্তর সমূহ ভীত-বিহক্ষল হল। এ সময়ে এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! এ মনে হচ্ছে বিদায় গ্রহণের শেষ উপদেশ। আমাদের আরও কিছু উপদেশ দিন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার, তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং নেতার কথা শুনতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি, নেতা বা ইমাম হাবশী গোলাম হলেও। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অল্প দিনের মধ্যেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে শক্তভাবে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাহর বাইরে নতুন কথা হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’ (আবু দাউদ, মিশকাত হা/১৬৫)

তাক্বওয়াশীল ব্যক্তি জান্নাতি :

জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতির ন্যূনতম পন্থা হলো উত্তম চিন্তা। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম চরিত্র বা উত্তম আচরণ। প্রতিটি সৃষ্টিজীবের সাথে উত্তম আচরণ করা। সৎ চরিত্র এবং উত্তম আচরণের ন্যূনতম পন্থা হলো তাদের কষ্ট দান থেকে বিরত থাকা, আর সর্বোচ্চ পর্যায় হলো যে কষ্ট দেয় তার সাথে ভালো আচরণ করা এবং তার প্রতি ইহসান করা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ” أتدرون ما أكثر ما يدخل الناس الجنة ؟ تقوى الله وحسن الخلق . أتدرون ما أكثر ما يدخل الناس النار ؟ الأجوفان : الفم والفرج “ ‘তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, দু’টো গহ্বর; একটি মুখ, অপরটি জননেন্দ্রিয়। (তিরমিযী হা/২০০৪, মিশকাত হা/৪৮৩২)

এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নাকারে কথা উপস্থাপনা করার উদ্দেশ্য হলো এ কথার প্রভাব যেন ভালোভাবে মানুষের হৃদয়ে  বসে যায়।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপভাবেই প্রশ্নাকারে উত্থাপন করেছেন যে, কোন বস্তু মানুষকে অধিকহারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। এখানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার উত্তরে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দু’টি গহ্বর অর্থাৎ মানব দেহের দু‘টি গহবর যা মানুষকে অধিকারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।

মানবদেহের এ গহ্বর দু’টি হলো মুখ এবং যৌনাঙ্গ। কেননা মানুষ অধিকাংশ সময় এ দু’টির কারণে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং তার পরিণামে সে জাহান্নামের অধিকারী হয়ে যায়।

‘আল্লামা ত্বীবী (تَقْوَى اللهِ) ‘আল্লাহভীতি’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ এ বাক্যটি আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে এবং নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে উত্তম মুআমলাহর দিকে ইশারা করছে। অনুরূপ (حُسْنُ الْخُلُقِ) ‘হুসনু খুলুক’ দ্বারা সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি উত্তম আচরণের দিকে ইশারা করছে। এ দু’টি উত্তম বৈশিষ্ট্যই মানুষকে জান্নাতের অধিকারী করে থাকে। এর বিপরীতে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা মুখ এবং যৌনাঙ্গকে তার মোকাবেলায় তৈরি করেছেন। জিহ্বাকে মুখের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শারী‘আতের সকল নির্দেশিত কাজে তার হিফাযাত যেমন জরুরী তেমনি সকল হালাল খাদ্য খাওয়াও তাকওয়ার শীর্ষস্তর।

অনুরূপ যৌনাঙ্গের হিফাযাতও দ্বীনের সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ একটি স্তর। আল্লাহ মু’মিনদের নিদর্শন ও গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ‘‘আর যারা তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযাতকারী’’- (সূরাহ্ আল মু’মিন ৪০ : ০৫)। শাহ্ওয়াত বা প্রবৃত্তির তাড়নার প্রাধান্যকালে যিনার সকল উপকরণ ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বিরত রাখা সিদ্দীক্বীনদের দরজায় পৌঁছার শামিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৪)

1 thought on “মুমিন ব্যক্তির মর্যাদার মানদণ্ড ‘তাক্বওয়া’”

  1. Mohammad Mosarraf Dorani

    জাজাকাল্লাহ খাইরান সুন্দর আল্লাহ আতিক আল আফিয়াত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top