তোমাদেরকে যদি গুনাহর দিকে ডাকা হয় তবে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাও, কেননা আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, সংকীর্ণ নয়। সুতরাং যারা দুনিয়াতে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে সবর করে এবং পাপ কাজ থেকে সংযম অবলম্বন করে, আল্লাহর কাছে দাবী ব্যতিরেকেই সবরকারীরা তাদের সওয়াব পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰهِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ‘বল, ‘হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই’ (যুমার ৩৯/১০)।’.
.
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, «يَوَدُّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ الْبَلَاءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالْمَقَارِيضِ» . ‘কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সাওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত ‘ (তিরমিযী হা/২৪০২, মিশকাত হা/১৫৭০)।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ. মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী হা/৫৬৪১, মুসলিম হা/২৫৭৩)।
রাসূল (ছা.) বলেন, যে ব্যক্তি চাওয়া হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন, আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেয়া হয়নি (বুখারী হা/১৪৬৯)।
—–
ঈমান ও তাকওয়ার পথে কষ্ট অনিবার্য এবং প্রবৃত্তি ও আত্মার চাহিদাকেও কুরবানী করা অবধারিত। যার জন্য ধৈর্যের দরকার। এই জন্য ধৈর্যশীলদের মাহাত্ম্যও বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান এমন অপরিসীম ও অগণিত রূপে দেওয়া হবে যা কোন ওজন বা হিসাবের যন্ত্র দ্বারা ওজন বা হিসাব করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তাদের পুরস্কার অপরিমিত হবে। কারণ যার হিসাব করা যায়, তার একটি সীমা থাকে আর যার কোন সীমা ও শেষ নেই,তা গণনা করা অসম্ভব। এটি ধৈর্যের এমন বৃহৎ মাহাত্ম্য যা অর্জন করার চেষ্টা প্রত্যেক মুসলিমকে করা উচিত। কারণ অধৈর্য হয়ে হা-হুতাশ, ক্ষোভ প্রকাশ বা কান্না-কাটি করে কষ্ট ও বিপদ দূর করা যায় না, যে কল্যাণ ও বাঞ্ছিত জিনিস লাভে বঞ্চনা আসে, তা অর্জন করা যায় না এবং যে অপছন্দনীয় অবস্থা এসে যায়, তা দূর করা সম্ভব হয় না। অতএব মানুষের উচিত, সবর করে সেই বৃহৎ সওয়াবের অধিকারী হওয়া, যা আল্লাহ তাআলা সবরকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল (সেজদা : ২৪)। অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্যে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিন্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না (দাহর : ২৪)। অতএব, আপনি সবর করুন। আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে (রূম : ৬০)।
বর্তমানে আমি নিজেই এমন কিছু মানুষের সাথে মিশেছি এবং তাদের দেখেছি। এমন অবস্থা দেখে তাদেরকে আমি বলেছিলাম।
(১) আল্লাহ আপনার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। আপনি কত বড় মুমিন হয়েছেন!
(২) পরীক্ষা এ কারণে হতে পারে যে, আপনি ঈমানের উপর অবিচল থাকবেন না আবারও ফিরে যাবেন যে পথ থেকে এসেছেন সেই পথে।
(৩) আল্লাহ আপনার ধন-সম্পদ থেকে হারামকে সরিয়ে দিয়ে পবিত্র করতে চাইছেন। এমনকি স্বাস্থ্যহানী ঘটিয়ে আইয়ূব (আঃ)-এর মত পরীক্ষা নিচ্ছেন।
(৪) মানসিক দুঃখ কষ্ট দ্বারা আল্লাহ আপনার ধর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন এবং বিগত পাপের কাফফারা উঠে যাচ্ছে। কেননা, দুঃখ-কষ্ট মানুষের পাপ মোচন করে। আর কষ্টের পরেই সুখ রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তার বান্দাকে দুঃখ-কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে কল্যাণ কামনা করেন।
(৫) মানুষ যখন দ্বীনে ফিরে তখন অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন তার থেকে দূরে সরে যায়। কেননা, তারা তাদের প্রত্যাশা থেকে বিমূখ হয়। এমনকি তারা নানা প্রকার মানসিক কষ্ট দিতে লজ্জাবোধ করে না
.
পরিশেষে, দ্বীনের উপর অবিচল থাকা অতিব কষ্টকর হলেও তা মেনে নিতে হবে বিনা বাক্যে। কেননা এটা আল্লাহর হুকুম, তার দাসত্ব করা ফরয। অন্ধকার থেকে আলোতে, তাগুত ছেড়ে দ্বীনে, হারাম ছেড়ে হালাল গ্রহণ করা অনেক কঠিন হেতু প্রতিনিহিত আল্লাহর একান্ত সাহায্য কারমনা করা উচিৎ এবং আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে অভিভাবক গ্রহণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীন ইসলামের উপর অবিচল থাকার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।