যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৫ম কিস্তি)

(লেখক : ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব)…..

বিদ্বানদের নিকটে শায়খ আলবানীর গ্রহণযোগ্যতা :

ইলমে হাদীছের ময়দানে শায়খ আলবানী (রহঃ) যে অবদান রেখেছেন, সমকালীন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ একবাক্যে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর অবদান মূল্যায়ন করেছেন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-

(১) সঊদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (১৯১৩-১৯৯৯ খ্রি.) বলেন, لا أعلم تحت قبة الفلك في هذا العصر أعلم من الشيخ ناصر ‘আসমানের নীচে এই যুগে শায়খ নাছের-এর চেয়ে ইলমে হাদীছে অধিক জ্ঞানসম্পন্ন আর কাউকে আমি জানি না’।[1]

অন্যত্র তিনি বলেন,الشيخ معروف لدينا بحسن العقيدة، والسيرة، ومواصلة الدعوة إلى الله سبحانه، مع ما يبذله من الجهود المشكورة في العناية بالحديث الشريف، وبيان الصحيح من الضعيف من الموضوع، وما كتبه في ذلك من الكتابات الواسعة كلُه عمل مشكور، ونافع للمسلمين. نسأل الله أن يضاعف مثوبته، ويعينه على مواصلة السير في هذا السبيل، وأن يكلل جهوده بالتوفيق والنجاح

‘শায়খ আলবানী আমাদের নিকটে সুন্দর আক্বীদা, উত্তম জীবনচরিত ও আল্লাহর পথে নিরবচ্ছিন্ন দাঈ হিসাবে পরিচিত। তিনি হাদীছ শরীফের প্রতি গুরুত্বারোপ, যঈফ ও জাল হাদীছ থেকে ছহীহ হাদীছকে পৃথকভাবে উপস্থাপন এবং এক্ষেত্রে ব্যাপক গ্রন্থরাজি রচনার ব্যাপারে যে পরিশ্রম করেছেন, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয় এবং মুসলমানদের জন্য খুবই উপকারী। আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর ছওয়াব বহুগুণ বাড়িয়ে দেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে এপথে জীবন অতিবাহিত করার সুযোগ দান করেন এবং তাঁর প্রচেষ্টাকে সৌভাগ্য ও সফলতার মুকুটে সুসজ্জিত করেন’।[2]

(২) ইয়ামানের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদে‘ঈ (১৯৩৭-২০০১ খ্রি.) বলেন,إن الشيخ محمد ناصر الدين الألباني حفظه الله تعالي لا يوجد له نظير في علم الحديث… والذي أعتقده وأدين لله به أن الشيخ محمد ناصر الدين الألباني حفظه الله من المجددين الذين يصدق عليهم قول الرسول : إن الله يبعث لهذه الأمة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها أمر دينها-

‘ইলমে হাদীছের ময়দানে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানীর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করুন। …আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তিনি ঐসকল মুজাদ্দিদগণের অন্যতম, যাঁদের সম্পর্কে রাসূল (ছা.)-এর বাণী যথার্থ বলে বিবেচিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক শতাব্দীতে একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার সাধন করেন’।

তিনি বলেন, ‘শায়খ আলবানীর ব্যাপারে তিন প্রকারের মানুষ দেখা যায়। (ক) একদল মানুষ তাঁর অন্ধ অনুসরণ করে তাঁর পক্ষ থেকে আগত সবকিছুই গ্রহণ করে। (খ) একদল তাঁকে ও তাঁর জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে। (গ) মধ্যপন্থী একদল মানুষ তাঁকে মুসলিম ওলামায়ে কেরামের মধ্যে একজন আলেম হিসাবে গণ্য করে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা এই যুগে মানুষের মাঝে ছহীহ সুন্নাহর প্রচার ও বিদ‘আতের অপনোদনের জন্য দান করেছেন। তারা বিশ্বাস করে যে, তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক হ’তে পারে, ভুলও হ’তে পারে। কোন বিষয় তিনি জানতে পারেন, নাও জানতে পারেন। তবে তারা এটা বিশ্বাস করে যে, বর্তমানে ইলমে হাদীছের ময়দানে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তাই তারা তাঁর অন্ধ অনুসরণ না করে তাঁর রেখে যাওয়া জ্ঞানসম্ভার ও গ্রন্থরাজি থেকে ফায়দা হাছিল করে। আর ওলামায়ে কেরামের ব্যাপারে আমাদের পূর্ববর্তীগণ এই নীতিই অনুসরণ করতেন’।[3]

(৩) সঊদী আরবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ও সুনান আবূদাঊদের ব্যাখ্যাতা শায়খ আব্দুল মুহসিন আববাদ (জন্ম ১৯৩৪ খ্রি.) বলেন, لا أعلم له نظيرا في هذا العصر في العناية بالحديث وسعة الاطلاع فيه، ‘বর্তমান যুগে হাদীছের খেদমতে এবং তাতে গভীর জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তাঁর সমতুল্য কেউ আছে বলে আমার জানা নেই’।[4]

তিনি বলেন, الألباني في زماننا أستطيع أن أقول أنه مثل أحمد في زمانه… فكما قيل في أحمد أقول الآن: إذا رأيتم الرجل يتكلم في الألباني فإنه متهم في دينه… بل وأستطيع أن أقول أنه ليس من أهل السنة وليس من السلفية في شيء ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আলবানী আমাদের যুগে ঐরূপ, ইমাম আহমাদ (রহ.) স্বীয় যুগে যেরূপ ছিলেন। …অতএব ইমাম আহমাদের ব্যাপারে যেমন বলা হ’ত, আলবানীর ব্যাপারে আমি একই কথা বলব, যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে আলবানীর বিরুদ্ধে বলতে দেখবে, নিশ্চয়ই সে তার দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত। …বরং আমি বলব যে, সে আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার মধ্যে সালাফী মানহাজের কিছুই নেই’।[5]

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আলবানী থেকে সতর্ক করে। তার অর্থ সে ব্যক্তি সঠিক জ্ঞান ও সুন্নাহর ময়দানে পৌঁছানো থেকে সতর্ক করে। কেননা শায়খ আলবানী সুন্নাহ ও হাদীছে অসাধারণ খেদমত পেশ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর পূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল সুন্নাহর দিকে পৌঁছানোর পথকে সহজ করা এবং তা জ্ঞানান্বেষীদের নাগালের মাঝে পৌঁছে দেওয়া’।[6]

তাঁর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রখ্যাত বিদ্বান শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী সকলের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন! তাকে ক্ষমা করুন! সুন্নাহর খেদমতে তাঁর ব্যাপক পরিশ্রম রয়েছে। সালাফগণের আক্বীদা ও মানহাজকে তিনি প্রবলভাবে রক্ষা করেছেন। প্রত্যেক শারঈ জ্ঞান অন্বেষণকারীই তাঁর গ্রন্থরাজি ও রচনাবলীর মুখাপেক্ষী। সেখানে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে, রয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞান। তাঁর ব্যাপক লেখনী খুবই প্রসিদ্ধ। অধিকাংশ লাইব্রেরীতে তাঁর গ্রন্থরাজি অল্প হ’লেও বিদ্যমান। গবেষণা ও লেখালেখিতে এবং ওলামায়ে কেরামের বক্তব্যের দিকে ফিরে যাওয়া ও তা থেকে ফায়দা হাছিলের ব্যাপারে তিনি মনোযোগী ছিলেন। বাস্তবে এধরনের একজন আলেমের মৃত্যু মুসলমানদের জন্য বড় ধরনের ঘাটতি, বিপদ ও দ্বীনের মধ্যে ফাটল সদৃশ’।[7] 

(৪) ইথিওপীয় বিদ্বান ও সুনান নাসাঈ ও তিরমিযীর ব্যাখ্যাতা শায়খ মুহাম্মাদ আলী আদম আছয়ূবী (১৩৬৬ হি.) বলেন, وله اليد الطولى في معرفة الحديث تصحيحا وتضعيفا ‘হাদীছের ছহীহ-যঈফ নির্ণয়ে তাঁর গভীর মনীষা রয়েছে’।

(৫) সঊদী আরবের প্রখ্যাত ফক্বীহ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-উছায়মীন (১৯২৭-২০০১ খ্রি.) বলেন,

فالذي عرفته عن الشيخ من خلال اجتماعي به وهو قليل، أنه حريص جداً على العمل بالسنة، ومحاربة البدعة، سواء كانت في العقيدة أم في العمل- أما من خلال قراءاتي لمؤلفاته، ففد عرفت عنه ذلك، وأنه ذو علم جم في الحديث رواية ودراية، وأن الله قد نفع فيما كتبه كثيراَ من الناس من حيث العلم، ومن حيث المنهاج، والاتجاه في علم الحديث، وهذه ثمرة كبيرة للمسلمين ولله الحمد،

‘শায়খের সাথে স্বল্প সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে আমি যা বুঝেছি তা হ’ল, আক্বীদা-আমল উভয় ক্ষেত্রে সুন্নাহ ভিত্তিক আমল ও বিদ‘আতের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ব্যাপারে তিনি খুবই একাগ্রচিত্ত। আর তাঁর রচনাবলী অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে আমি তাঁর ব্যাপারে যা জেনেছি তা হ’ল, হাদীছের রেওয়ায়াত ও দেরায়াতে তিনি প্রভূত পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রচনাবলীর মাধ্যমে জ্ঞানগত ও মূলনীতিগত দিক দিয়ে এবং ইলমে হাদীছের প্রতি অভিমুখী হওয়ার ব্যাপারে বহু মানুষকে উপকৃত করেছেন। এটা মুসলমানদের জন্য বড় ধরনের অর্জন। অতএব সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য’।[8]

(৬) সঊদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আলে শায়খ (১৮৯৩-১৯৬৯ খ্রি.) বলেন, ناصر الدين الألباني هو صاحب سنة ونصرة للحق ومصادمة لأهل الباطل، ‘নাছিরুদ্দীন আলবানী সুন্নাতের অনুসারী ও সহযোগী, হকের সহায়তাকারী এবং বাতিলপন্থীদের প্রতিহতকারী’।[9] 

(৭) প্রফেসর ড. লুৎফী ছাববাগ[10] (১৯৩০-২০১৭ খ্রি.) বলেন, أعظم محدث في هذا العصر .. وقف حياته علي خدمة السنة المطهرة تعليما وتأليفا وتخريجا وتحقيقا.. ‘তিনি এযুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ। … যিনি শিক্ষকতা, লেখনী, তাখরীজ ও তাহকীকের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পবিত্র সুন্নাতের খিদমতে বিলিয়ে দিয়েছেন’।[11]

(৮) সঊদী আরবের প্রখ্যাত মুহাক্কিক শায়খ হাম্মাদ আল-আনছারী (১৩৪৩-১৪১৮ হি.) বলেন,وهو واسع الإطلاع في علم الحديث، ‘ইলমুল হাদীছের ব্যাপারে আলবানী প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী’।[12]

(৯) হিন্দুস্তানী মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুছ ছামাদ শারফুদ্দীন (১৯০১-১৯৯৬ খ্রি.) তাঁর ব্যাপারে লিখতে গিয়ে বলেন,بأنه أكبر عالم في الحديث في العصر الحاضر ‘তিনি বর্তমান যুগে ইলমে হাদীছের সবচেয়ে বড় বিদ্বান’।[13]

(১০) সঊদী আরবের স্থায়ী ফৎওয়া পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর ব্যাপারে বলা হয়েছে, واسع الاطلاع في الحديث، قوي في نقدها، والحكم عليها بالصحة أو الضعف- ‘তিনি হাদীছের ময়দানে এবং হাদীছ সমালোচনা ও তার ব্যাপারে ছহীহ বা যঈফ-এর হুকুম পেশ করার ক্ষেত্রে প্রশস্ত ও শক্তিশালী জ্ঞানের অধিকারী’।[14]

(১১) মরক্কোর প্রখ্যাত মুহাক্কিক ও ফক্বীহ শায়খ মুহাম্মাদ ইবনুল আমীন বূখাবযাহ (জন্ম ১৯৩২ খ্রি.) বলেন, ‘আমি পূর্ণ সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, (আমি যা বলব সে ব্যাপারে আল্লাহই আমার যিম্মাদার) আমি বহু ওলামায়ে কেরামের সাথে মিলিত হয়েছি, যাদের নিকটে আমি জ্ঞানান্বেষণ করেছি। কিন্তু শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীর মত ইলম ও ইখলাছ, ইলমুল হাদীছের উপর গভীর ও সূক্ষ্ম জ্ঞান, গবেষণা ও বিতর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা, উপরন্তু সালাফে ছালেহীনের মত জীবনধারা আর কারো মাঝে দেখিনি’।[15]

(১২) শায়খ আহমাদ ইবনু ইয়াহইয়া আন-নাজমী (১৯২৮-২০০৮ খ্রি.) বলেন, الشيخ محمد ناصر الدين الألباني المحدث الكبير والعالم الشهير، صاحب التآليف النافعة والةخريجاة المفيدة، سوري الموطن سلفي العقيدة، بذل جهدا في التخريج لا يوازنه فيه أحد فجزاه الله خيراً- ‘নাছিরুদ্দীন আলবানী বড় মাপের একজন মুহাদ্দিছ, প্রসিদ্ধ আলেম, অনেক উপকারী গ্রন্থাবলী ও তাখরীজ সমূহের রচয়িতা, সিরিয়ার অধিবাসী এবং সালাফী আক্বীদায় বিশ্বাসী। তাখরীজের ক্ষেত্রে তিনি যে প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন, যা পরিমাপ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন’।[16]

(১৩) মিসরের বিশিষ্ট বিদ্বান ও বিখ্যাত গ্রন্থ ফিক্বহুস সুন্নাহ -এর রচয়িতা সাইয়েদ সাবিক্ব (১৯১৫-২০০০ খ্রি.) একবার ‘দা‘ওয়াতুল ইসলাম’ নামে তাঁর একটি গ্রন্থ আলবানীকে হাদিয়া প্রেরণ করেন এবং তার উপরে লেখেন, ‘আমার ভাই উস্তায মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীর জন্য শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতাপূর্ণ উপহার; যিনি আমলদার আলেম ও মুহাদ্দিছ’।[17] 

(১৪) শায়খ হুমূদ ইবনু আব্দিল্লাহ আত-তুওয়াইজিরী (১৩৩৪-১৪১৩ হি.) বলেন, ‘সুন্নাহর ময়দানে আলবানী একজন মহান বিদ্বান। তাঁর ব্যাপারে সমালোচনা করার অর্থ সুন্নাহর সমালোচনাকে সহায়তা করা’।

(১৫) শায়খ মুহাম্মাদ রবী‘ ইবনুল হাদী আল-মাদখালী (জন্ম : ১৯৩২ খ্রি.) বলেন, ‘শায়খ আলবানী এ যুগে ইলমে হাদীছের অন্যতম মহান বিদ্বান। বরং সেই প্রভুর কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি ব্যতীত কোন রব নেই, বর্তমান যুগে এই মানুষটির তুলনায় সুন্নাতে রাসূলের এত বেশী খিদমত আর কেউ করেননি। এমনকি তাঁর নিকটবর্তীও কেউ নেই’।

(১৬) প্রখ্যাত ইরাক্বী ফক্বীহ ড. আব্দুল কারীম যায়দান (১৯১৭-২০১৪ খ্রি.) তাকে ‘যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ’ বলে সম্বোধন করেছেন।[18]

(১৭) মক্কাস্থ উম্মুল ক্বোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইবনু ওমর বাযমূল বলেন, ‘এ যুগে তিনি হাদীছের শায়খ। তাকে محدث الشام লক্বব দেওয়া হয়। যদি বলা হয় محدث الدنيا তবে তিনিই এর উপযুক্ত হকদার’।[19]

(১৮) ইরাকের প্রখ্যাত মুহাক্কিক প্রফেসর ড. বাশশার আ‘ওয়াদ (জন্ম ১৯৪০ খ্রি.) বলেন, ‘শায়খ আলবানী সুন্নাতে নববীর ব্যাপারে যে বিশাল অবদান রেখেছেন, সেজন্য তাকে অন্ততপক্ষে ‘মুহাদ্দিছুল ‘আছর’ লক্ববে সম্বোধন করা আবশ্যক’।[20]

(১৯) ভারতের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মুছত্বফা আ‘যমী (১৯৩২-২০১৭ খ্রি.) ছহীহ ইবনু খুযায়মার তাহক্বীক্ব করার পর আলবানীর নিকটে তা পুনরায় নিরীক্ষণের অনুরোধ জানান। ফলে আলবানী কাজটি সম্পাদন করেন। মুছত্বফা আ‘যমী বলেন, ‘আমি বুখারী ও মুসলিমের হাদীছ ব্যতীত ইবনু খুযায়মায় সংকলিত অন্য হাদীছসমূহের উপর ছহীহ, হাসান, যঈফ-এর হুকুম লাগানোর পর এ ব্যাপারে আরও আশ্বস্ত হওয়ার মনস্থ করি। তাই আমি প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ উস্তায মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীর নিকটে বইটি পুনর্নিরীক্ষণ করার জন্য বিশেষত আমার সংযুক্ত টীকাসমূহ দেখার জন্য অনুরোধ জানাই। আল্লাহর শুকরিয়া তিনি আমার চাওয়া গ্রহণ করেন। অতঃপর উক্ত গ্রন্থে গৃহীত মানহাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, فإذا خالفني الأستاذ ناصر الدين في التصحيح والتضعيف، أثبت رأيه، ثقة مني به علما ودينا ‘যখন উস্তায নাছিরুদ্দীন ছহীহ বা যঈফ সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আমার বিপরীত করেছেন, তখন আমি তাঁর সিদ্ধান্তকেই গ্রহণ করেছি। কারণ তাঁর ইলম ও দ্বীনদারীর ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে’।[21]

(২০) পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ ইরশাদুল হক আছারী (জন্ম ১৯৪৮ খ্রি.) বলেন, নিকট অতীতে যেসকল সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা স্থায়ী প্রসিদ্ধি দান করেছেন এবং স্বীয় বান্দাদের অন্তরে তাঁদের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন সৌভাগ্যবান হ’লেন ইমাম আল্লামা মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী। আল্লাহ তাঁর অসীম দয়ার চাদরে তাঁকে আবৃত করুন। তার দ্বারা কত অসংখ্য মানুষ যে উপকৃত হয়েছেন, তাদের সংখ্যা স্রেফ আল্লাহ-ই জানেন।[22]

(২১) প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব (জন্ম : ১৯৪৮খ্রি.) বলেন, ‘শায়খ আলবানী হাদীছ শাস্ত্রবিদগণের নিকটে এমন একটি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য নাম, যে কোন হাদীছের শেষে صححه الألباني ‘আলবানী এটিকে ছহীহ বলেছেন’ -এরূপ মন্তব্য থাকলেই সকলে হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান। মুহাদ্দিছ আলবানীর বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতার এটাই বড় প্রমাণ’।[23]

এছাড়া সঊদী আরবের গ্রান্ড মুফতী আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ আলে শায়খ, শায়খ ছালেহ ফাওযান আল-ফাওযান, শায়খ মুহাম্মাদ আল-গাযালী, ড. ইউসুফ আল-কারযাভী, শায়খ আলী তানতাভী, শায়খ মুছত্বফা যারক্বাসহ সমসাময়িক অনেক বিদ্বান একজন মুহাদ্দিছ হিসাবে তাঁর প্রভূত ইলমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।[24]

রচনাবলী :

নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) বহু গ্রন্থ প্রণেতা ছিলেন। তাঁর কৃত তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও রচনাবলী বিশ্বময় ওলামায়ে কেরাম থেকে শুরু করে সর্বসাধারণের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত রচনাবলীর সংখ্যা ২৩১টি।[25] তবে সিরীয় গবেষক ড. আব্দুর রাযযাক আসওয়াদের মতে ২৩৮টি।[26] এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা এবং ফৎওয়াসমুহের রেকর্ডকৃত ক্যাসেটের সংখ্যা সাত সহস্রাধিক, যেগুলোর সমন্বয়ে রিয়াদের দারুল মা‘আরেফ থেকে প্রায় ৪০ খন্ডের একটি সংকলন প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।[27]

শায়খ ইরশাদুল হক আছারী বলেন, নাছিরুদ্দীন আলবানী পাঁচ ডজনের কাছাকাছি গ্রন্থ ইলমী উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে গেছেন, যেগুলো মুদ্রিত হয়েছে। তন্মধ্যে ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ’ সাত খন্ডে ও ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ’ চৌদ্দ খন্ডে সমাপ্ত। কিছু ভলিউম দুই-তিন খন্ডে বিভক্ত। এভাবে এই সিলসিলা বৃহদায়তন ত্রিশ খন্ডে সমাপ্ত। ‘ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি আহাদীছি মানারিস সাবীল’ আট খন্ডে রচিত। এগুলো ব্যতীত আরো গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ ছাড়া অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও প্রায় চার ডজনের বেশী। তাঁর ফৎওয়াসমূহও ত্রিশ খন্ডে সংকলিত হয়েছে, যা প্রকাশিতব্য। তাঁর ছাত্ররা তাঁর জীবন ও চিন্তাধারার সমর্থনে যে সকল গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং যেগুলো মুদ্রিত হয়েছে, তাঁর সংখ্যা ৭৪। মুসলিম বিশ্বের নামী-দামী ব্যক্তিগণ তাঁর সম্পর্কে যে প্রশংসা করেছেন, সেগুলো স্বয়ং এক বিশাল রেজিস্টার। …এজন্য যদি বলা হয় যে, নিকট অতীতে দ্বীনে হানীফ-এর যতটুকু খিদমত শায়খ আলবানী (রহ.) আঞ্জাম দিয়েছেন এবং সেগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে যা কিছু লেখা হয়েছে তা অন্যের ভাগ্যে কমই জুটেছে, তাহ’লে তা অতিশয়োক্তি হবে না।[28]

মৌলিক হাদীছগ্রন্থসমূহের তাখরীজ :

হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণেই শায়খ আলবানীর অধিকাংশ লেখনী পরিচালিত হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর প্রধান রচনা হ’ল ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ’ এবং ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ’। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অনেক হাদীছ গ্রন্থের তাখরীজ ও তা‘লীক্ব করেছেন। যেমন- সুনানুল আরবা‘আহ তথা আবূদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; মুনযিরীকৃত আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ইমাম বুখারী সংকলিত আল-আদাবুল মুফরাদ; ইমাম সুয়ূত্বী সংকলিত আল-জামে‘উছ ছাগীর, ইবনু আবী আছেম সংকলিত কিতাবুস সুন্নাহ, ইমাম ত্বাবারাণী সংকলিত আল-মু‘জামুছ ছাগীর ইত্যাদি।

বিভিন্ন গ্রন্থের তাখরীজ ও তা‘লীক :

তিনি হাদীছ, ফিক্বহ, আক্বীদা ও আমলসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে রচিত বহু গ্রন্থের হাদীছসমূহ তাখরীজ করেছেন এবং প্রয়োজনীয় টীকা সংযোজন করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উপকারী, বিস্তারিত এবং ফিক্বহী মাসআলা-মাসায়েলে পরিপূর্ণ গ্রন্থ হ’ল ইবনু যওবান হাম্বলী রচিত ‘মানারুস সাবীল’ নামক ফিক্বহ গ্রন্থের তাখরীজ ‘ইরওয়াউল গালীল’। ৮ খন্ডে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে তিনি মোট ২৭০৭টি হাদীছের তাখরীজ করেছেন। এতদ্ব্যতীত তাঁর তাখরীজ ও তা‘লীক্বকৃত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে খত্বীব তাবরীযী সংকলিত মিশকাতুল মাছাবীহ, সাইয়েদ সাবেক রচিত ফিক্বহুস সুন্নাহ, ইবনু কাছীর রচিত সীরাতুন নববিইয়াহ, ইমাম ত্বাহাবীর শারহূল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাবিইয়াহ, মুহাম্মাদ গাযালী রচিত ফিক্বহুস সীরাহ, ইবনু তায়মিয়াহ রচিত আল-কালিমুত ত্বাইয়িব ও আল-ঈমান, ড. ইউসুফ কারযাবী রচিত আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম প্রভৃতি।

আক্বীদা ও ফিক্বহ বিষয়ক রচনা :

ছহীহ-যঈফ পৃথকীকরণের সাথে সাথে তাঁর লেখনীর মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত ও জাল-যঈফ হাদীছের কবল থেকে রক্ষা করা এবং সকল প্রকার সংকীর্ণতা এবং কুসংস্কারের গন্ডি ছিন্ন করে সালাফে ছালেহীনের বিশুদ্ধ পথে পরিচালিত করা। এ ব্যাপারে তিনি ছোট বড় অনেক বই রচনা করেছেন। যেমন- মানযিলাতুস সুন্নাহ ফিল ইসলাম, ফিতনাতুত তাকফীর, আল-হাদীছু হুজ্জিয়াতুন বি নাফসিহী ফিল ‘আকাইদে ওয়াল আহকাম, আত-তাওয়াসসুল আনওয়া‘উহূ ওয়া আহকামুহু, উজূবুল আখ্যি বি আহাদীছিল আহাদ ফিল ‘আক্বীদাহ ইত্যাদি।

ফিক্বহী মাসায়েল বিষয়ক অনেক গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। সেখানে সংকলিত সকল হাদীছও তাখরীজ করেছেন। যেমন ছালাত সম্পর্কিত ছিফাতু ছালাতিন্নবী, হজ্জ সম্পর্কিত মানাসিকুল হাজ্জ, জানাযা সম্পর্কিত আহকামুল জানায়েয, বিবাহ সম্পর্কিত আদাবুয যিফাফ প্রভৃতি।

বিবিধ :

হাদীছ ও ইলমুর রিজাল সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও বিভিন্ন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত গ্রন্থসমূহের সূচীপত্র তৈরীতে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি মুস্তাদরাক হাকেম, ইমাম বুখারীর আত-তারীখুল কাবীর প্রভৃতি গ্রন্থের সূচীপত্র তৈরী করেছেন। এছাড়া মাকতাবা যাহিরিয়া, মাকতাবা ব্রিটানিয়া, মাকতাবাতুল আওক্বাফ প্রভৃতি লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত গ্রন্থরাজি ও মূল পান্ডুলিপিসমূহের সূচীপত্র তৈরী করেছেন।

বিভিন্ন গ্রন্থের সংক্ষিপ্তকরণেও তিনি অবদান রেখেছেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে উপকারী এবং প্রভূত ফায়েদা ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংকলনটি হ’ল- মুখতাছার ছহীহুল বুখারী। এছাড়া রয়েছে ছহীহ মুসলিম, শামায়েলে মুহাম্মাদী প্রভৃতি গ্রন্থের সংক্ষেপণ।

এছাড়া রয়েছে সমকালীন বিভিন্ন মতাদর্শের বিদ্বানগণের প্রদত্ত ফৎওয়া ও বইপত্রের জবাবে লিখিত রচনাবলী, বিভিন্ন মজলিসে প্রদত্ত ফৎওয়াসমূহের সংকলন, ধারাবাহিক দরস ও বিভিন্ন স্থানে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে সংকলিত বইসমূহ।

এক্ষণে তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত মৌলিক রচনাবলী, তাহক্বীক্ব ও তাখরীজকৃত গ্রন্থসমূহ এবং তাঁর রচনা ও বক্তব্য থেকে সংকলিত গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হ’ল।-

তাহক্বীক্ব ও তাখরীজ বিষয়ক রচনাবলী

১. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ ওয়া আছারুহুস সাইয়েআহ ফিল উম্মাহ : সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ এবং সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণের ক্ষেত্রে শায়খ আলবানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তন্মধ্যে ‘যঈফাহ’-তে তিনি বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থে সংকলিত এবং সমাজে অধিক প্রসিদ্ধ যঈফ ও জাল হাদীছসমূহ সবিস্তারে বিশ্লেষণের প্রয়াস পেয়েছেন। আক্বীদা, আহকাম, আখলাক, আদব প্রভৃতি বিষয়ে ৭১৬২টি তাহক্বীক্বকৃত হাদীছ এখানে সংকলন করা হয়েছে।

মূলতঃ এটি সিরিয়ার দামেশক থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘আত-তামাদ্দুনুল ইসলামী’-তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন।[29] পত্রিকায় প্রকাশের সময়ই প্রবন্ধগুলো সমসাময়িক আলেম-ওলামা, হাদীছ গবেষক ও আম জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেকারণ পরবর্তীতে এটি ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনসহ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়। যঈফ ও মাওযূ‘ হাদীছ বিষয়ে আধুনিক যুগে যত গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তার মধ্যে এটাকে অন্যতম বিস্তারিত ও তথ্যবহূল আলোচনা সমৃদ্ধ গ্রন্থ হিসাবে গণ্য করা হয়।[30] 

উক্ত গ্রন্থে শায়খ আলবানী হাদীছের হুকুম পেশের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী নির্দিষ্ট কোন মুহাদ্দিছের অন্ধ অনুসরণ করেননি। বরং হাদীছ বিশারদগণের অনুসৃত মূলনীতি সমূহের অনুসরণে সূক্ষ্ম গবেষণা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছহীহ-যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। এক্ষেত্রে প্রথমে তিনি হাদীছের মতন উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বিস্তারিত আলোচনায় যে হুকুম সাব্যস্ত হয়েছে, সেটা একক শব্দে উল্লেখ করেছেন। তারপর যে যে গ্রন্থে হাদীছটি সংকলিত হয়েছে তা সনদসহ উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সেই হাদীছের ব্যাপারে পূর্ববর্তী মুহাক্কিকগণ কী হুকুম পেশ করেছেন, তা উল্লেখ করেছেন। এরপর বর্ণনাকারীদের মধ্যে দোষযুক্ত রাবীদের নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাদের ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য পেশ করেছেন এবং ইমামদের বক্তব্যসমূহ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রাবীদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।

একই হাদীছ অন্য সনদে বর্ণিত হয়ে থাকলে তা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তার অবস্থা বর্ণনা করে সমালোচনা পেশ করেছেন। সাথে সাথে সেগুলো মুতাবা‘আত[31] বা শাওয়াহেদ[32] হওয়ার যোগ্য কি-না তা আলোচনা করেছেন। বিশেষত এক্ষেত্রেই হাদীছ শাস্ত্রে আলবানীর গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সূক্ষ্মদৃষ্টি ফুটে উঠেছে।

কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি আলোচ্য হাদীছের আক্বীদা বা আমলগত দিকসমূহ তুলে ধরেছেন। কখনো তার পরিবর্তে কাছাকাছি মর্মের ছহীহ হাদীছ এনেছেন। যেমন অসীলা সংক্রান্ত মাওযূ‘ হাদীছের আলোচনা শেষে শরী‘আতসম্মত অসীলার আলোচনা পেশ করেছেন।[33]

তাহক্বীক্বের পাশাপাশি কখনো তিনি হাদীছ সংশ্লিষ্ট ফায়েদা ও ফিক্বহী আলোচনা তুলে ধরেছেন। যেমন ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ[34], নারী স্পর্শে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে কি-না[35], জুম‘আর পূর্বের সুন্নাত[36] ইত্যাদির আলোচনা। কোন কোন স্থানে উছূলে হাদীছের বিভিন্ন আলোচনা উঠে এসেছে। যেমন- ইবনু হিববান কর্তৃক অপরিচিত রাবীদের বিশ্বস্তকরণ,[37] দুর্বল হাদীছের উপর আমলের বিধান[38], জারহ কখন তা‘দীলের উপর অগ্রগামী হবে?,[39] অধিকসংখ্যক তুরুকের ভিত্তিতে হাদীছ শক্তিশালী করণের বিধান[40] ইত্যাদি।

সনদের ত্রুটি বর্ণনার সাথে সাথে মতনের বিভিন্ন ত্রুটির কারণেও অনেক হাদীছকে তিনি দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। যেমন কুরআনের বিরোধী হওয়া, শক্তিশালী হাদীছের বিরোধী হওয়া, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিষয়ের বিরোধী হওয়া এবং বাস্তবতা বিরোধী হওয়া ইত্যাদি।

পাঠক যেন খুব সহজে কাঙ্খিত বিষয়টি খুঁজে নিতে পারে, সেজন্য প্রত্যেক খন্ডের শেষে সমৃদ্ধ সূচীপত্র সংযোজন করেছেন, যা কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ফিক্বহী অধ্যায় অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সূচী, আরবী বর্ণমালার ধারাবাহিকতায় এবং ফিক্বহী অধ্যায়ের ভিত্তিতে যঈফ হাদীছসমূহের সূচী, আরবী হরফের ধারাবাহিকতায় ছহীহ হাদীছ ও আছারসমূহের সূচী এবং গ্রন্থে সংকলিত রাবীগণের সূচী।

কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন বাতিল মতবাদ যেমন শী‘আ[41], ছূফী[42], ক্বাদিয়ানী[43]-এর বিরুদ্ধে আলোচনা পেশ করেছেন। কখনো বিভিন্ন মাসআলার ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিদ্বানদের সাথে তাঁর মতদ্বৈততার ইলমী জবাব দিয়েছেন। যেমন শায়খ আব্দুল্লাহ ছিদ্দীক্ব আল-গুমারী[44], শায়খ হাবীবুর রহমান আ‘যমী[45], শায়খ আহমাদ শাকির[46], শায়খ হাম্মাদ আনছারী[47] ও শায়খ মুহাম্মাদ নাসীব রিফা‘ঈ[48] প্রমুখ।

সিলসিলা যঈফাহ গ্রন্থটি রচনার ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী মূলত হাদীছ সংশ্লিষ্ট গ্রন্থসমূহ থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন। এছাড়া মুছত্বলাহুল হাদীছ, তাফসীর, তাখরীজ, ফিক্বহ, তারীখ প্রভৃতি বিষয়ক গ্রন্থাবলী থেকেও সহযোগিতা নিয়েছেন।

১৯৭৮ সালে ‘মাকতাবুল ইসলামী’ থেকে এর প্রথম খন্ডটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে রিয়াদের মাকতাবাতুল মা‘আরেফ থেকে শায়খ সা‘দ রাশীদের তত্ত্বাবধানে এর প্রকাশনা কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০০৪ সালে এর সর্বশেষ তথা ১৪তম খন্ডটি প্রকাশ পায়। আলবানী স্বীয় জীবদ্দশায় ৭ম খন্ড তথা ৩৪০০ হাদীছ পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণ করতে সক্ষম হন। অতঃপর তাঁর মৃত্যুর পর বাকী খন্ডসমূহ তাঁর কিছু ছাত্রের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। ১৪ খন্ডে মোট তাহক্বীক্বকৃত হাদীছের সংখ্যা ৭১৬২টি।

২. সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ ওয়া শাইয়ুম মিন ফিক্বহিহা ওয়া ফাওয়াইদিহা : এই গ্রন্থটিও মূলতঃ মাসিক ‘আত-তামাদ্দুনুল ইসলামী’-তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন। এখানে তিনি কেবল ছহীহ হাদীছসমূহ সংকলন করেছেন এবং ছহীহ সাব্যস্তের কারণ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করেছেন। এভাবে তিনি বর্জনযোগ্য হাদীছের পাশাপাশি অনুসরণযোগ্য হাদীছ পেশ করে প্রকারান্তরে যেন রোগসমূহ বর্ণনার পাশাপাশি তার চিকিৎসাও তুলে ধরেছেন। সিলসিলা যঈফাহ-এর মত প্রথমে তিনি মুহাদ্দিছগণের নীতির অনুসরণে ও মুছত্বলাহুল হাদীছের মানদন্ডে হাদীছের সনদ, তুরুক, শাওয়াহেদ, মুতাবা‘আত ও রাবীদের ব্যাপারে প্রয়োজনমত কখনো সংক্ষেপে, কখনো বিস্তারিতভাবে আলোচনা পেশ করেছেন। কখনো আলোচনা এক পৃষ্ঠায় সমাপ্ত হয়েছে। কখনো তা ২৫ পৃষ্ঠাও অতিক্রম করেছে। এক্ষণে গ্রন্থটির কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল। যেমন-

(ক) আলবানী এখানে মূলতঃ ঐসকল হাদীছ সংকলন করেছেন, যেগুলোর বিশুদ্ধতা নিরূপণে বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। সেকারণে সংকলিত অধিকাংশ হাদীছ কুতুবে সিত্তাহ (বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ) ব্যতীত অন্যান্য হাদীছগ্রন্থ থেকে চয়নকৃত। বুখারী ও মুসলিম থেকে অল্প যে হাদীছসমূহ সংকলন করেছেন, তাও ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত রেওয়ায়াতের অতিরিক্ত অংশের বিশুদ্ধতা নিরূপণের জন্য আনা হয়েছে।

(খ) কোন হাদীছের সনদ ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয়ের বা যেকোন একজনের শর্ত মোতাবেক হ’লে তিনি তা পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। (গ) বহু দুর্বল হাদীছকে তিনি শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতের সহযোগিতায় ছহীহ সাব্যস্তের প্রয়াস পেয়েছেন। (ঘ) প্রয়োজনীয় স্থানে তিনি শাব্দিক বিশ্লেষণ, হাদীছ সংশ্লিষ্ট ফায়েদা ও ফিক্বহী আলোচনা তুলে ধরেছেন।

(ঙ) হাদীছের মধ্যে কোন শায, মুনকার বা ভিত্তিহীন শব্দ বা বাক্য থাকলে অথবা কোন রাবীর পক্ষ থেকে ভুলবশত যুক্ত হয়ে থাকলে, তিনি তা তুলে ধরেছেন এবং খন্ডনের প্রয়াস পেয়েছেন। (চ) কোন হাদীছ ছহীহ সাব্যস্তের পর যেসব বিদ্বান ঐ হাদীছকে যঈফ বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করেছেন এবং দলীল-প্রমাণের আলোকে তা খন্ডন করেছেন।

(ছ) কোন হাদীছের ক্ষেত্রে যদি নিজের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের বিপরীত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন, তবে পূর্বে প্রদত্ত সিদ্ধান্তের স্থান পৃষ্ঠা নম্বর সহ উল্লেখ করে তা থেকে ফিরে আসার কারণ উল্লেখ করেছেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকটে স্বীয় ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। (জ) কখনো মানহাজগত বিষয় যেমন আহলেহাদীছগণের মর্যাদা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা, সালাফী দাওয়াতের সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ[49] ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছেন।

প্রতি খন্ডে ৫০০টি হাদীছ হিসাবে ৯ খন্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থে মোট তাহক্বীক্বকৃত হাদীছের সংখ্যা ৪০৩৫টি। জীবদ্দশায় ৬টি খন্ড অর্থাৎ ৩০০০টি হাদীছ পর্যন্ত এবং মৃত্যুর পর ৭ম ও ৮ম খন্ড পর্যন্ত রিয়াদের মাকতাবাতুল মা‘আরেফ থেকে প্রকাশিত হয়।[50] এছাড়া পরবর্তীতে আলবানীর ঘনিষ্ট ছাত্র শায়খ মাশহূর ইবনু হাসান ছহীহাহ-এর হাদীছসমূহকে সংক্ষিপ্তভাবে ফিক্বহী বাব ভিত্তিক মোট ২৮টি অধ্যায়ে সাজিয়ে ৮৮৪ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ সংকলন করেন। এখানে তিনি কেবল মূল হাদীছ ও বর্ণনাকারী ছাহাবীর নাম এবং প্রত্যেক হাদীছের শেষে ছহীহাহ-এর হাদীছ নম্বর উল্লেখ করেছেন। ২০০৪ সালে মাকতাবাতুল মা‘আরেফ থেকে এটি প্রকাশিত হয়।

৩. ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি আহাদীছি মানারিস সাবীল : আল্লামা ইবরাহীম ইবনু যাওবান হাম্বলী (১৮৫৮-১৯৩৫ খ্রি) লিখিত ‘মানারুস সাবীল ফী শারহিদ দালীল’-গ্রন্থে উদ্ধৃত হাদীছসমূহের সনদের উপর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে রচিত এই গ্রন্থটি তাখরীজুল হাদীছের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে গণ্য করা হয়। সূচীপত্রসহ গ্রন্থটি মোট ৯ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাখরীজের সাথে সাথে ফিক্বহী গবেষণায় আলবানী যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, অত্র গ্রন্থটি তার জীবন্ত দলীল।

গ্রন্থটির শুরুতে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পেশ করেছেন। সেখানে তিনি গ্রন্থটি রচনার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে মুসলিম সমাজে যঈফ হাদীছের কুপ্রভাব তুলে ধরেছেন এবং মাযহাবী গোঁড়ামির বেড়াজাল থেকে সমাজকে বের করতে আনতে যঈফ হাদীছসমূহ যাচাই-বাছাই করার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। অতঃপর মোট ২৭০৭টি হাদীছের তাখরীজ পেশ করেছেন। প্রত্যেকটি হাদীছ উল্লেখ করে প্রথমে তিনি তার হুকুম (তথা ছহীহ, হাসান বা যঈফ) বর্ণনা করেছেন। তারপর কোন কোন গ্রন্থে হাদীছটি সংকলিত হয়েছে খন্ড ও পৃষ্ঠা নম্বরসহ উল্লেখ করেছেন। ভিন্ন তুরুকে হাদীছটির শাওয়াহেদ-মুতাবা‘আত থাকলে তা তাখরীজসহ পেশ করেছেন। কোন ইমাম ও হাফেয অন্য তুরুক না পাওয়ার কারণে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত পেশ করলে তা দলীল-প্রমাণসহ খন্ডন করেছেন। এছাড়া রাবীগণের অবস্থা ও তাদের সম্পর্কে রিজাল শাস্ত্রবিদগণের মন্তব্য তাদের গ্রন্থের উদ্ধৃতিসহ উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে হাদীছটি সম্পর্কে অন্যান্য মুহাদ্দিছদের মতামত উদ্ধৃত করেছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা নিরূপণে অক্ষম হলে, কোন সিদ্ধান্ত পেশ না করে কেবল বিশেষজ্ঞদের তাহক্বীক্ব তুলে ধরেছেন।[51]

তবে তিনি মানারুস সাবীল-এর কিছু হাদীছ ও আছার তাখরীজ করেননি। পরবর্তীতে সেগুলো একত্রিত করে তাখরীজসহ শায়খ ছালেহ ইবনু আব্দিল আযীয আলুশ শায়খ[52] পৃথক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।[53]

৪. ছহীহ ওয়া যঈফুত তারগীব ওয়াত-তারহীব : মিসরীয় বিদ্বান হাফেয আব্দুল আযীম মুনযিরী (রহঃ)[54] রচিত ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ নামক ফিক্বহী অধ্যায় ভিত্তিক সাজানো হাদীছ সংকলনটি অত্যন্ত উপকারী একটি গ্রন্থ। কেবল নেকআমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান ও পরকালীন শাস্তি থেকে ভীতিপ্রদর্শন সংক্রান্ত হাদীছসমূহ নিয়ে এটি সংকলিত হয়েছে। আলবানী উক্ত গ্রন্থের উপর স্বীয় ছাত্রদের নিয়মিতভাবে দরস দিতেন। এসময় সেখানে তিনি বহু যঈফ ও জাল হাদীছ লক্ষ্য করেন। ফলে গ্রন্থটি তাহক্বীক্ব ও তাখরীজ করার জন্য মনস্থ করেন।

মূল হস্তলিখিত পান্ডুলিপির উপর তিনি তাহক্বীক্ব করেন এবং মাকতাবা মুনীরিইয়াহ থেকে প্রকাশিত এর সুপরিচিত সংকলনটির সাথে তা সংযুক্ত করেন। কারণ উক্ত সংকলনটিতে বহু ইলমী ভুল ও বিকৃতি এবং কোন কোন স্থানে মূল পান্ডুলিপি থেকে অংশবিশেষ বাদ পড়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁর নিকটে ধরা পড়ে। তাই তিনি এর মধ্যকার ভুল-ত্রুটিসমূহ গভীরভাবে অনুসন্ধান করে মূল পান্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে পুরো গ্রন্থটিই সংস্কার করেন এবং ছহীহ ও যঈফ হাদীছসমূহ পৃথক করেন। অতঃপর পৃথকভাবে ছহীহ হাদীছসমূহ নিয়ে ৩ খন্ডের ‘ছহীহুত তারগীব’ ও যঈফ হাদীছসমূহ নিয়ে ২ খন্ডে ‘যঈফুত তারগীব’ নামে বইটি প্রকাশ করেন। যেখানে তাহক্বীক্বকৃত হাদীছের সংখ্যা মোট ৬০২৩টি। যার মধ্যে ছহীহ ৩৭৭৫টি এবং যঈফ ২২৪৮টি। 

বইটির ভূমিকায় তিনি যঈফ হাদীছের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা এবং মুনযিরীর তাছহীহের উপর তিনি কেন নির্ভর করেননি, তার কারণসমূহ সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। বর্তমানে রিয়াদের মাকতাবাতুল মা‘আরেফ কর্তৃক এটি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া একই প্রকাশনা থেকে তাহক্বীক্বসহ ছহীহ ও যঈফ সকল হাদীছ একত্রিত করে এক খন্ডে একটি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে আলবানীর ঘনিষ্ট ছাত্র শায়খ আবূ ওবায়দা মাশহূর ইবনু হাসান কিছু ভুল-ত্রুটি সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন। ১৮৬৯ পৃষ্ঠার এই সংস্করণটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়।

[ক্রমশঃ]

[1]. ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রায্যাক আসওয়াদ, আল-ইত্তিজাহাতুল মু‘আছারাহ ফী দিরাসাতিস সুন্নাহ, পৃ. ৩৬০।

[2]. ইমাম আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াকিফ ওয়া ‘ইবার, পৃ. ২১৭।

[3]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৫৫৫-৫৬।

[4]. কুতুবু ও রাসাইলু আব্দিল মুহসিন আল-‘আববাদ, পৃ. ৩০৪।

[5]. শায়খ ফাল্লাহ ইসমাঈল মুনকাদার প্রদত্ত বক্তব্য থেকে গৃহীত।https://www.youtube.com/watch?v=_ RQEYMrHK7k,

[6]. আব্দুল মুহসিন আল-‘আববাদ, শারহু আবী দাঊদ, ২৩/৪৪০; অডিও ক্লিপ নং (২৯৭) ৬১। ইউটিউব লিংক- https:/www.youtube. com/watch?v=mZkEwVehjxM,

[7]নাছিরুদ্দীন আলবানী; মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ, পৃ. ৩৪-৩৫।

[8]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৫৪৩।

[9]. ফাতাওয়া ওয়া রাসাঈলুশ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শায়খ (মক্কা : মাতবা‘আতুল হুকূমাহ, ১ম প্রকাশ, ১৩৯৯ হি.), ৪/৯২।

[10]. রিয়াদস্থ মালিক স‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উলূমুল কুরআন ওয়াল হাদীছ বিভাগের সাবেক প্রফেসর।

[11]. মাজাল্লাতুদ দাওয়াহ, ২/১৭১৫, গৃহীত : ইমাম আলবানী হায়াতুহু, দা‘ওয়াতুহু ওয়া জুহূদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ, পৃ. ১৪৯।

[12]. কাওকাবাতুম মিন আইম্মাতিল হুদা, পৃ. ২২৯।

[13]. মুহাম্মাদ ঈদ আববাসী, বিদ‘আতুত তা‘আছছুবিল মাযহাবী (আম্মান : আল-মাকতাবুল ইসলামী, তাবি), পৃ. ২৫৪।

[14]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ৪/৪৭৩।

[15]. মুহাম্মাদ ইবনুল আমীন বুখাবযাহ, মিন যিকরিইয়াতী মা‘আশ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী, https://www.alukah.net/culture /0/923

[16]. কাওকাবাতুম মিন আইম্মাতিল হুদা, পৃ. ২৫৭।

[17]. হুছূলুত তাহানী বিল কুতুবিল মুহদাতি ইলা মুহাদ্দিছিশ শাম মুহাম্মাদ আল-আলবানী, ১/২৭৮।

[18]. আব্দুল কারীম যায়দান, মাজমূ‘আতু আবহাছিল ফিক্বহিইয়াহ (কায়রো : আশ-শিরকাতুল মুত্তাহিদাহ, তাবি), পৃ. ২৯১।

[19]. আব্দুল করীম খুযায়ের, আল-হিম্মাহ ফী তলাবুল ইলম (অডিও ক্লিপ),http://www.ahlalhdeeth.com/vb/archive/index .php/t-38742.html,

[20]. ভিডিও সাক্ষাৎকার লিংক- https://www.youtube.com /watch?v=f93dCHu03VE.

[21]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা, তাহকীক : ড. মুছত্বফা আ‘যমী, ভূমিকা দ্র., পৃ. ৩২।

[22]. আল্লামা আলবানী পার শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব কী নাওয়াযশাত পার এক নযর, প্রবন্ধ (সাপ্তাহিক ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, বর্ষ ৬৬, সংখ্যা ৩৯-৪৩, ২০১৪ খ্রি.)। লিংক- http://www.mediafire.com/file/xcf1leicktmkec3,

[23]. মাসিক আত-তাহরীক, ৩য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯ খ্রি., পৃ. ৩২।

[24]. ইমাম আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াকিফ, পৃ. ২১৭-২৩০।

[25]. আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আশ-শামরানী, ছাবাতু মুআল্লাফাতিল মুহাদ্দিছিল কাবীর মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (দাম্মাম : দারু ইবনিল জাওযী, ১ম প্রকাশ, ১৪২২ হি.), পৃ. ৯২।

[26]. আল-ইত্তিজাহাতুল মু‘আছারাহ ফী দিরাসাতিস সুন্নাহ, পৃ. ৩৮৩; নাছিরুদ্দীন আলবানী; মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ, পৃ. ৫৫-৯৫।

[27]. আব্দুল বাসিত আল-গারীব, আত-তাম্বীহাতুল মালীহাহ ‘আলা মা তারাজা‘আ ‘আনহুল আল্লামা মুহাদ্দিছ আল-আলবানী মিনাল আহাদীছিয যঈফাহ আবিছ ছহীহাহ, (দাম্মাম : দারুদ দাবী, ১ম প্রকাশ, ২০০০ খ্রি.), পৃ. ১৭।

[28]. আল্লামা আলবানী পার শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব কী নাওয়াযশাত পার এক নযর। http://www.mediafire.com/file/xcf1leicktmkec3

[29]. ২৬ শা‘বান ১৩৭৪ হিজরীতে তিনি প্রথম প্রবন্ধটি রচনা করেন। এর ৫ বছর পর তিনি ‘ছহীহাহ’-এর প্রবন্ধসমূহ রচনা শুরু করেন। দ্র. নূরুদ্দীন ত্বালিব, মাক্বালাতুল আলবানী (রিয়াদ : দারু আত্বলাস, ১ম প্রকাশ, ২০০০ খ্রি.), পৃ. ১৯।

[30]. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ, ১/৪০, ৪৩।

[31]. শব্দগত বা অর্থগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত একাধিক হাদীছের মূল রাবী তথা ছাহাবী যদি একজনই হন, তাহ’লে সেগুলিকে একে অপরের মুতাবা‘আত বলা হয়।

[32]. কোন হাদীছ যদি একাধিক ছাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয় এবং বর্ণনাগুলি যদি শব্দগত বা অর্থগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহ’লে সেগুলিকে একে অপরের শাওয়াহেদ বলা হয়। দ্র. ড. ছুবহী ছালেহ, ‘উলূমুল হাদীছ ওয়া মুছতালাহুহূ, পৃ. ২৪২।

[33]. পূর্বোক্ত, ১/৯৪, হা/ ২৫।

[34]. পূর্বোক্ত, ২/৪২, ২/৪২০।

[35]. পূর্বোক্ত, ২/৪২৮।

[36]. পূর্বোক্ত, ৩/৪৫, ৩/৮২।

[37]. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ, ২/৩২৮।

[38]. পূর্বোক্ত, ৩/২২।

[39]. পূর্বোক্ত, ৭/১৪।

[40]. পূর্বোক্ত, ৫/১৩৩।

[41]. পূর্বোক্ত, ১/৫২৫।

[42]. পূর্বোক্ত, ১/৬৭, ৩৬৪০।

[43]. পূর্বোক্ত, ২/৭২, ৬/৫২।

[44]. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ, ৩/৮, ৬/৪৯।

[45]. পূর্বোক্ত, ৭/৭৬, ৭/৪৩৫।

[46]. পূর্বোক্ত, ৪র্/২৩২, ৫/১৬।

[47]. পূর্বোক্ত, ৩/৩১৯।

[48]. পূর্বোক্ত, ৫/৯৪।

[49]. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ, ১/১২৪, হা/৪৭।

[50]. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ, (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরেফ, ১ম প্রকাশ, ২০০২ খ্রি.), ৭-৯/৩, ভূমিকা দ্রষ্টব্য।

[51]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, পৃ. ৮-১১।

[52]. সঊদী আরবের প্রখ্যাত আলেম ও সাবেক ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী (১৪২০- ১৪৩৯ হি.)।

[53]. আত-তাকমীল লিমা ফাতা তাখরীজুহূ মিন ইরওয়াইল গালীল (রিয়াদ : দারুল ‘আছিমাহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৬ খ্রি.।

[54]. সিরীয় বংশোদ্ভূত যাকীউদ্দীন আব্দুল আযীম আল-মুনযিরী ১১৮৫ খ্রিষ্টাব্দে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন এবং কায়রোর দারুল হাদীছ কামেলিয়ায় পড়াশুনা করেন। তিনি ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’সহ ‘মুখতাছার ছহীহ মুসলিম’, ‘আত-তাকমিলাহ’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিসরে মৃত্যুবরণ করেন। দ্র. আল-আ‘লাম, পৃ. ৪/৩০; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, পৃ. ২৩/৩১৯।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top