সকল কাজ নিয়াতের উপর নির্ভরশীল

নিয়াত অর্থ মনন করা, মনে মনে সংকল্প বা ইচ্ছা পোষণ করা। ইহা এমন একটি অদৃশ্য বিষয় যা কেবল কোন ব্যক্তির ক্বলব বা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। মানুষ যেমন ইচ্ছা করবে তার প্রতিদানও অনুরূপ হবে। আল্লাহ তা‘আলা যখন বিচারের মাঠে বান্দার আমলের বিচার করবেন, তখন তিনি এই নিয়াতের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিচার কার্য পরিচালনা করবেন। নিয়াত হ’ল কর্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,  إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ. (متفقٌ على صحته) “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যাবতীয় কর্ম নিয়াত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল’’। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (দেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।” (বুখারি হা/১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, মুসলিম হা/১৯০৭, তিরমিযী হা/১৬৪৭, নাসাঈ হা/৭৫, ৩৪৩৭, ৩৭৯৪, আবু দাউদ হা/২২০১, ইবনু মাজাহ হা/৪২২৭, আহমদ হা/১৬৯, ৩০২)

নিয়াতের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ বলেন— رب عمل صغير تعظمه النية، ورب عمل كبير تصغره النية. ‘নিয়াত অনেক ক্ষুদ্র আমলকে মহৎ আমলে রূপান্তরিত করে। পক্ষান্তরে, নিয়াত অনেক বৃহৎ আমলকেও ক্ষুদ্র আমলে পরিণত করে দেয়’। [মুখতাসারু জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা-১৫।]

নিয়াতের উপর আমলের পূর্ণতা ও পরিশুদ্ধতা নির্ভরশীল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ ، وَمَنْ يُرَائِى يُرَائِى اللَّهُ بِهِ . ‘যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের ইচ্ছায় নেক আমাল করে আল্লাহ তা’আলাও তার কৃতকর্মের অভিপ্রায়ের কথা লোকেদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতা (লোক দেখানোর নিয়াত) উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকেদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন (বুখারী হা/৬৪৯৯; মুসলিম হা/২৯৮৬; মিশকাত হা/৫৩১৬; আহমাদ হা/২০৪৭০)
ইবনু রজব হাম্বালী (৭৩৬-৭৯৫হি.) (রহিঃ) বলেন, وَرَائِحَةُ الْرِيَاءِ كَدُخَانِ الْحِطَبِ، يَعِلُوْ إِلَى الْجَو ثُمَّ يَضْمِحَل وَتَبْقِى رَائحته الكَرِيْهَة ‘রিয়া বা লৌকিকতা (লোক দেখানোর) ঘ্রাণ (উপমা) হ’ল কয়লার ধুঁয়োর ন্যায়। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু তার দূর্গন্ধ কেবল অবশিষ্ট থাকে(মাজমূঊর রাসায়িল, পৃষ্ঠা-৭৫৮)

নোট : এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন। এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থ সহিহ বুখারিতে সাত জায়গায় বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও কর্মের প্রতিদান নিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত- সে কথা প্রমাণ করা।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিয়াতকে পরিশুদ্ধ করার তাওফীক্ব দান করুন এবং মুখলেছ বান্দা হিসেবে কবূল করুন, আমীন।

1 thought on “সকল কাজ নিয়াতের উপর নির্ভরশীল”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top