ফিৎরাত :
ফিৎরাত দ্বারা স্বভাবগত দ্বীন ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে মুসলিম ফিৎরাতের ওপর সৃষ্টি করেছেন। যদি পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশগত কোন কিছুর মন্দ প্রভাব না পড়ে,তবে প্রতিটি জন্মগ্রহণকারী শিশু ভবিষ্যতে মুমিন মুসলমান হবে। কিন্তু পারিবারিক অভ্যাসগতভাবেই পিতা-মাতা তাকে ইসলাম বিরোধী বিষয়াদি শিক্ষা দেয়। ফলে ফিৎরাতের স্বভাব পরিবর্তন হয় এবং সে ইসলামের উপর কায়েম হ’তে পারে না।
হেদায়াত বা ইসলাম গ্রহণের স্বাভাবিক যোগ্যতা আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দান করেছেন। যেমন তিনি বলেন, فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ ‘তুমি তোমার চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে ধর্মের উপরে দৃঢ় রাখ। এটাই হ’ল আল্লাহর দেয়া স্বভাবধর্ম (ফিতরাত)। যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই হ’ল সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা’ (রূম ৩০/৩০)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيْمَةُ بَهِيْمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّوْنَ فِيْهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُوْلُ (فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ).‘সকল মানব শিশুরই ফিৎরাত (স্বভাব ধর্ম)-এর ওপর জন্ম হয়। তারপর তার পিতা ও মাতা তাকে ইয়াহূদী,নাছারা অথবা অগ্নি উপাসক করে ফেলে। যেমন জানোয়ার পূর্ণ বাচ্চার জন্ম দেয়। তোমরা কি তার মধ্যে কোন ত্রুটি পাও? পরে তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। আল্লাহর প্রকৃতির (ফিৎরাতের) অনুসরণ কর, তিনি যে ফিৎরাত (প্রকৃতি) মোতাবেক মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দ্বীন’।[বুখারী হা/১৩৫৮, ৪৭৭৫; মিশকাত হা/৯০]
ফিতরত বলে যোগ্যতা বোঝানো হয়েছে। ফিত্বরাতের অর্থ হলো আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টাকে চিনবার যে যোগ্যতা দিয়েছেন সেই অবস্থার নামই ফিত্বরাত। সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানকে যদি তার ফিতরাতের উপর ছেড়ে দেয়া হত এবং তার পিতা-মাতা বা অন্য কোন দিক থেকে প্রভাবিত করা না হত তাহলে সে সত্য দ্বীনকেই আঁকড়িয়ে থাকতো। তা বাদ দিয়ে অন্য দিকে যেত না এবং এ দীন ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করত না।
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্রষ্টাকে চেনার ও তাঁকে মেনে চলার যোগ্যতা নিহিত রেখেছেন। এর ফলে মানুষ ইসলাম গ্ৰহণ করে যদি সে যোগ্যতাকে কাজে লাগায়। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
ঈমান :
‘ঈমান’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো অন্তরে বিশ্বান, মুখে স্বীকৃতি দেয়া, সত্যায়ন করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ : আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতে, ‘ঈমান’ হ’ল অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম, যা আনুগত্যে বৃদ্ধি ও গুনাহে হ্রাস হয়। প্রথম দু’টি মূল ও শেষেরটি হ’ল শাখা, যেটা না থাকলে পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না (ইবনু মান্দাহ, কিতাবুল ঈমান ১/৩৩১)।
ঈমানদার :
ঈমানের তৃতীয় ধাপ, কর্মে বাস্তবায়নের নাম পরিপূর্ণ ঈমান। আর বাস্তবায়নকারীর নাম মুমিন বা ঈমানদার।
ইমাম কুরতুবী বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘ঈমান বিল গায়েব’ বলতে ‘ঈমানে শারঈ’ বুঝানো হয়েছে, যা হাদীছে জিব্রীলে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে ‘ঈমান কি?’ জিব্রীলের এমন প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন,أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. قَالَ صَدَقْتَ ‘তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপরে, তাঁর কিতাব সমূহের উপরে, তাঁর রাসূলগণের উপরে, বিচার দিবসের উপরে এবং তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে’। জিব্রীল বলেন, আপনি সঠিক বলেছেন’(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২)।
মুখে স্বীকৃতি দেয়া ব্যক্তি মুমিন। মু‘আবিয়াহ ইবনুল হাকাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, ‘আমার এক দাসী ছিল। সে ওহোদ ও জাওয়ানিয়্যাহ এলাকায় আমার বকরী চরাত। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম, বকরীপাল থেকে একটি বকরী নেকড়ে নিয়ে গেছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মতো একজন মানুষ। তাদের মতো আমিও রাগে তাকে চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম)। কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হ’ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি তাকে (দাসীকে) মুক্ত করে দিব? তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে হাযির করলাম। তিনি তাকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আকাশে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, কেননা সে একজন মুমিনা নারী’(মুসলিম হা/৫৩৭, ‘মাসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৩০৩)।
তাক্বওয়া :
তাক্বওয়া অর্থ ভয় করা, পরহেয করা। ইবনু কাছীর বলেন, তাক্বওয়ার মূল অর্থ হ’ল التوقي ما يكره ‘অপসন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকা’। ছোট ও বড় সকল পাপ পরিত্যাগ করাকে তাক্বওয়া বলে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর সত্যিকারের ভয়’ (আলে ইমরান ৩/১০২)।
একদিন জনৈক ব্যক্তি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে তাক্বওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,أَخَذْتَ طَرِيْقًا ذَا شَوْكٍ؟ ‘তুমি কি কখনো কাঁটাযুক্ত পথে চলেছ? লোকটি বলল, হাঁ। তিনি বললেন, কিভাবে চলেছ? লোকটি বলল, إِذَا رَأَيْتُ الشَّوْكَ عَدَلْتُ عَنْهُ أَوْ جَاوَزْتُهُ أَوْ قَصُرْتُ عَنْهُ ‘আমি কাঁটা দেখলে তা এড়িয়ে চলি। অথবা ডিঙিয়ে যাই অথবা দূরে থাকি’। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, ذَاكَ التَّقْوَى ‘এটাই হ’ল তাক্বওয়া’(বায়হাক্বী, যুহদুল কাবীর ১/৩৫০, সনদে হিশাম বিন যিয়াদ আছেন, যাঁর মধ্যে দূর্বলতা রয়েছে)।
মুত্তাক্বী :
মুত্তক্বীদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‘যারা গায়েবে বিশ্বাস করে ও ছালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যে রূযী দান করেছি, তা থেকে ব্যয় করে’ (বাক্বারাহ ২/৩)।
অত্র আয়াতে মুত্তাক্বীদের অন্যতম তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যথা- ১. অদৃশ্যে বিশ্বাস ২. সালাত কায়েম করা এবং ৩. আল্লাহর পথে ব্যয় করা।
যাদের ইলমের সঠিক বুঝ রয়েছে, কেবল তারাই দ্বীনের জ্ঞানী ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘বান্দাগণের মধ্যে আল্লাহকে ভয় করে কেবল তারাই যারা জ্ঞানী’ (ফাত্বির ৩৫/২৮)। আর এই সঠিক বুঝ মুত্তাক্বী ব্যক্তিরাই অর্জন করে থাকেন। আর এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও পুরস্কার। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيْرٌ ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের প্রভুকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার’ (মুলক ৬৭/১২)।
একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীগণের মাঝে অবস্থানকালে বলেন,وَدِدْتُ أَنِّيْ لَقِيْتُ إِخْوَانِيْ ‘আমি আমার ভাইদের সাথে সাক্ষাতের আকাংখা পোষণ করছি।’ ছাহাবীগণ বললেন, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন,أَنْتُمْ أَصْحَابِيْ وَلَكِنْ إِخْوَانِيْ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِيْ وَلَمْ يَرَوْنِيْ ‘তোমরা আমার সাথী। আর আমার ভাই হ’ল তারা, যারা আমাকে না দেখেই আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে’(আহমাদ হা/১২৬০১; ছহীহাহ হা/২৮৮৮)।
ইসলাম :
ইসলাম শব্দের অর্থ মেনে নেয়া, আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা, সম্পাদন করা ইত্যাদি। ইসলামের মূল স্তম্ভ বা খুঁটি হলো ৫টি। যথা- মুখে স্বীকৃতি, ছালাত আদায় করা, ছিয়াম পালন করা, যাকাত প্রদান করা ও হজ্জ সম্পাদন করা।
উল্লেখ্য যে, ইসলামের ঐ পাঁচটি মূল স্তম্ভকে যথাযথভাবে প্রতিপালনকারী ব্যক্তিকে মুসলিম বলা হয়। আর মুসলিম ঐসকল ব্যক্তি যারা অদৃশের প্রতি না দেখেই অকপটে ইলাছের সাথে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং ইসলামের ঐ পাঁচটি মূল স্তম্ভ যথাসাধ্য প্রতিপালন করে থাকেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ ، وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ. ‘ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. ছালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের ছিয়াম পালন করা (বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১৬; মিশকাত হা/৪)।
মুসলিম :
দ্বীনের প্রতি প্রত্যেক আত্মসমর্পণকারী মুমিনকেই মুসলিম হয়। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা বিধান তথা আদেশ নিষেধ যথাযথভাবে পালনকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে মুসলিম বলা হয়।
ঈমান ও ইসলাম শব্দদ্বয় একই সঙ্গে আবার পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয়। তখন আবার পৃথক পৃথক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তখন অভ্যন্তরীণ ইখলাছপূর্ণ বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়, আর বাহ্যিক আমলকে ইসলাম বলা হয় এবং ইসলাম পালনকারী হলো মুসলিম। তবে এ ব্যাপারে মিল্লাতে ইবরাহিমীর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি তার দ্বীনের নাম ‘ইসলাম’ রেখেছিলেন এবং স্বীয় উম্মতকে ‘উম্মতে মুসলিমাহ’ নামে অভিহিত করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বেছে নিয়েছেন। দ্বীনের ভিতর তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা চাপিয়ে দেননি। এটাই তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দ্বীন, আল্লাহ তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বেও, আর এ কিতাবেও (ঐ নামই দেয়া হয়েছে) যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা সাক্ষী হও মানব জাতির জন্য। কাজেই তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও আর আল্লাহকে আঁকড়ে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না উত্তম অভিভাবক আর কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (হজ্জ ২২/৭৮)।
লোকজনের বাহ্যিক বিষয়ই ধর্তব্য, আভ্যন্তরীণ বিষয় ধর্তব্য নয়। অতএব যে ব্যক্তি ধর্মীয় নিদর্শনের প্রকাশ ঘটাবে তার প্রতি সে ধর্মের বিধিবিধান কার্যকরী হবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا، وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا، وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا، فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ ‘যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় ছালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহকৃত প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম’ (বুখারী হা/৩৯১-৯৩; মিশকাত হা/১৩)।
উল্লেখ্য, আল্লাহর বিধান অস্বীকারকারী কুফরী করে তাকে কাফের বলে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে যা শির্ক একে মুশরেক বলে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আনুগত্য করে সে মুসলিম।
নবীগণের স্বীকৃতি :
আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদেরকে মুসলিম হতে বলেছেন ।
(১) নূহ (আঃ)ও এই ঘোষণা দিয়েছেন, {وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ} অর্থাৎ, আমাকে হুকুম করা হয়েছে যে, আমি যেন আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)-দের অন্তর্ভুক্ত থাকি’ (ইউনুস ৭২)
(২) ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে এসেছে যে, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বললেন, أَسْلِمْ (আত্মসমর্পণ কর।), তখন তিনি বললেন, {أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ} বিশ্ব-জগতের প্রতিপালকের কাছে আমি আত্মসমর্পণ করলাম।’’ (বাক্বারাহ ২/১৩১)
(৩) ইবরাহীম এবং ইয়াকূব عليهما السلام তাঁদের সন্তানদের অসিয়ত করেছিলেন, {فَلاَ تَمُوْتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ} অর্থাৎ, আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করো না। (বাক্বারাহ ২/১৩২)
(৪) ইউসুফ (আঃ) দু’আ করেছিলেন, {تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا} অর্থাৎ, তুমি আমাকে আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হিসাবে মৃত্যু দান করো। (ইউসুফ 12/১০১)
(৫) মূসা (আঃ) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, {فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْا إِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ} অর্থাৎ, তাঁরই উপর ভরসা কর; যদি তোমরা মুসলিম হও। (ইউনুস 10/৮৪)
(৬) ঈসা (আঃ)-এর সহচররা বলেছিলেন, {وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ} অর্থাৎ, তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (মায়েদাহ 5/১১১)
(৭) মুহাম্মাদ (সা.)-কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বলো, আমি কি আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবক বানিয়ে নেব, অথচ তিনিই খাওয়ান, তাঁকে খাওয়ানো হয় না, বল আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের / আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম হই, আর তুমি কিছুতেই মুশরিকদের মধ্যে শামিল হবে না (আনআম ৬/১৪)।
অন্যত্র বলেন, বলো, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। তাঁর কোন শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমিই সর্বপ্রথম মুসলিম / আত্মসমর্পণকারী (আনআম ৬/১৬২-১৬৩)।
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি আহবান করে বলেন, ‘হে হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে করা উচিৎ এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ কর না’ (আলে-ইমরান ৩/১0২)।
লেখাগুলো সংক্ষিপ্ত আকার তুলে ধরা হয়েছে ……