জান্নাতের হুর সম্পর্কে কিছু কথা

জান্নাতিদের বয়স হবে ৩০ অথবা ৩৩ বছর। সকলে হবেন যুবক-যুবতী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, “‏ يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلاَثِينَ أَوْ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِينَ سَنَةً ‏”‏ ‏ ‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের শরীরে লোম থাকবে না, দাঁড়ি-গোফও থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। তারা হবে ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের যুবক’ (তিরমিযী হা/২৫৪৫)। হূর সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা পাওয়া যায় না। তবুও সংক্ষেপে আলোচনা করা হ’ল- প্রশ্ন : জান্নাতে পুরুষ পাবেন হুর, কিন্তু নারীরা কী পাবেন (?)
‘হূর’ (حُوْرٌ) শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ। এটি জান্নাতী পুরুষদের জন্য নির্ধারিত। তবে জান্নাতী মহিলাদের জন্য অবশ্যই জান্নাতী স্বামী হবেন। যদিও তাদেরকে হূর বলা হবে না। নারীদের প্রতি পুরুষদের অধিক আসক্তির কারণে কুরআনে পুরুষদের জন্য হূরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জান্নাতী নারীদের জন্য তাদের স্বামীর ব্যাপারে কুরআন চুপ রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কোন স্বামী থাকবে না। বরং বনু আদমের মধ্য থেকেই তাদের স্বামী থাকবেন (ফাতাওয়া উছায়মীন নং ১৭৮, ২/৫৩)।
আল্লাহ সেদিন বলবেন, ‘তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীগণ সন্তুষ্টচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ কর’ (যুখরুফ ৪৩/৭০)। দুনিয়াতে নারী ও পুরুষ পরস্পরের কাম্যবস্ত্ত হিসাবে জান্নাতেও প্রত্যেকে তা পাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য সেখানে রয়েছে, যা কিছু তোমাদের মন চাইবে এবং যা কিছু তোমরা দাবী করবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩১)।
নিচের হাদীছের মত পুরুষদেরকে নিয়ে কোন হাদীছ তো দেখি না যে নারীর হুড়ারা কী বলছে?
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
لاَ تُؤْذِى امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِى الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لاَ تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللَّهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا.
‘পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই (জান্নাতের) বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার (ভাবী) স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না। তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন’* (তিরমিযী হা/১১৭৪; মিশকাত হা/৩২৫৮; আহমাদ হা/২২১৫৪; ছহীহুল জামি‘ হা/৭১৯২)

ব্যাখ্যা: মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ‘‘হূরি‘ঈন’’ বা আয়তনয়না হূর দিবেন। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আমি জান্নাতীদেরকে হূরি‘ঈনদের সাথে জোড়া মিলিয়ে দিবো’’- (সূরা আদ্ দুখান ৪৪ : ৫৪)। অর্থাৎ বিয়ে দিয়ে দিবো। হূরি‘ঈন হলো অতীব উজ্জ্বল সাদা কালো মিশ্রিত, প্রশস্ত ও আনতচক্ষু বিশিষ্ট বা (ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট) অত্যন্ত সুশ্রী, অন্যন্য সুন্দরী জান্নাতের নারী।

মু’মিন নেককার জান্নাতী বান্দাকে যদি তার দুনিয়ার স্ত্রী কষ্ট দেয় তখন তার জন্য নিযুক্ত জান্নাতের ঐ হূরী‘ঈন স্ত্রী তা জানতে পারে।

হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। এখানে (قَاتَلَكِ اللّٰهُ)-এর ব্যাখ্যা হলো : «لَعَنَكِ عَنْ رَحْمَتِه وَأَبْعَدَكِ عَنْ جَنَّتِه» আল্লাহ তোমাকে তাঁর রহমাত থেকে বঞ্চিত করুন। এবং তাঁর জান্নাত থেকে দূরে রাখুন। সে তো সামান্য কয়দিনের মেহমানস্বরূপ তোমার নিকট গিয়েছে মাত্র, এরপর আমাদের নিকট ফিরে আসবে। তুমি তো তার প্রকৃত সঙ্গী নও, আমরাই তার প্রকৃত সঙ্গী, সুতরাং তোমরা তাকে কষ্ট দিও না।

অত্র হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে যেখানে স্বামীর অবাধ্যচারীদের প্রতি মালায়িকার (ফেরেশতাদের) লা‘নাতের কথা বলা হয়েছে। এ জাতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, ‘‘মালা-য়ি আ‘লা-’’ বা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু মালাক (ফেরেশতা) দুনিয়াবাসীর কাজকর্মের খবর রাখেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৭৪)


যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতি কোন অবিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেবেন। (মাজমাউল ফাৎওয়া ১৫/৩)

আসলে জান্নাতি নারীকে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। আর স্বামী স্ত্রী জান্নাতী হলে এক সাথেই থাকবেন। এটা আমার জ্ঞানের মতামত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top